- শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও রপ্তানির পরিমাণ আশানুরূপ বাড়েনি
- দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা পর্যালোচনার তাগিদ ব্যবসায়ীদের
- ৩০ শতাংশের বেশি পণ্য আমদানি হয় চীন থেকে
চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হলেও দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি এখন পাহাড়সম। তবে চীনা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হলে বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে রপ্তানিও। অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে শুল্কহার ধাপে ধাপে কমানোর শর্তে বাংলাদেশ এই চুক্তিটি করতে পারে। যদিও দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা পর্যালোচনার তাগিদ দিচ্ছেন দেশি ব্যবসায়ীরা।
চীন বাংলাদেশের আমদানির প্রধান উৎস। দেশের ৩০ শতাংশের বেশি পণ্য আমদানি হয় চীন থেকে। জাতিসংঘের সংস্থা আঙ্কটাড-এর তথ্যমতে, ২০২৪ সালে দেশটি বাংলাদেশে প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে, চীনে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি কয়েক বছর ধরেই ৮০ কোটি ডলারের নিচে সীমাবদ্ধ। চীন ৯৮ শতাংশ পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও আমদানির তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ আশানুরূপ বাড়েনি। চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের (সিইএবি) সভাপতি হান কুন বলেন, ‘বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ পণ্য উৎপাদন সক্ষমতা চীনের। তাই অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও চীনের নানা পণ্য আমদানি করে। বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার আশঙ্কা থেকে এফটিএকে ভয় পাওয়া যৌক্তিক নয়। বরং চীনের শুল্কমুক্ত যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ একটি বড় ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হতে পারে।’ চীন বাংলাদেশকে ২০১৪ সালে এফটিএর প্রস্তাব দেওয়ার পর ২০১৬ সালে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। দুই দেশ যৌথভাবে এই চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সমীক্ষাও শেষ করেছে। এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার বলেন, ‘১০–১২ বছরের মধ্যে আস্তে আস্তে ট্যারিফ কমালে চীন তখন বাংলাদেশের জন্য একটা বড় বাজার হবে। শুধু চীন নয়, পূর্ব এশিয়াতেও বাজার বড় হচ্ছে।’ বাংলাদেশ চীনের বাজারে মূলত বস্ত্র ও পোশাক, হিমায়িত মাছ, চামড়া ও পাটসহ নির্দিষ্ট কিছু পণ্য রপ্তানি করে। বিপরীতে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্প কাঁচামাল থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য হাজারো পণ্য আমদানি হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এফটিএ সইয়ের আগে অংশীজনদের সঙ্গে কার্যকর মতবিনিময় জরুরি। আইবিএফবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন রশীদ বলেন, ‘আমাদের পণ্যগুলো আমরা চীনে রপ্তানি করতে পারব কি না, তা নিয়ে ভাবতে হবে। এছাড়া আমাদের সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি থেকে কী কী রপ্তানি করা সম্ভব, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। এফটিএ বা পিটিএ যেটাই হোক, আলোচনার টেবিলে আমাদের দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। চীন আশা করছে, ২০২৬ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের সঙ্গে এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হবে।




















