০৯:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম মেডিকেলে ১৫০ শয্যার বার্ন ইউনিটের প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের জানুয়ারীতে শুরু হতে যাচ্ছে

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:৪০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০২৩
  • 90
চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রামে নির্মিত হতে যাওয়া বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট আগামী বছরের জানুয়ারী মাসে প্রকল্পের কাজ মাঠ পর্যায়ে শুরু হতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকার প্রায় এক একর জমিতে নির্মিত হবে ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিট। সংশ্রিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে দাপ্তরিক কাজ অনেক এগিয়েছে।  বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকালে চীন সরকারের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল হাসপাতাল এলাকায় পরিদর্শনে এসে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা আরও জানান, চলতি মাসেই আনা হবে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় মালামাল।  পরিদর্শণে আসা দলটি এখান থেকে ফিরে গিয়ে বার্ন ইউনিটের বিষয়ে প্রতিবেদন নিজ সরকারের কাছে প্রদান করবেন। তারপর  প্রকল্পের কাজ শুরু হবে পুরোদমে। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা ডা. সামন্ত লাল সেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প এ বার্ন ইউনিট। কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এটা নিয়ে কথা হয়েছে। এই প্রকল্পের দ্রুত অগ্রগতির জন্য আগামী সপ্তাহেও জরুরি মিটিং আছে। যত দ্রুত এই হাসপাতালের কাজ শুরু করা যায় তার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছেন। দুই থেকে তিন মাসের মতো লাগতে পারে দাপ্তরিক কাজ শেষ করতে। এরই মধ্যে চীনারা তাদের ইকুয়েপমেন্ট-ফার্নিচার এসব নিয়ে আসবে।’ তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করার  প্রায় দুই বছরের মধ্যে হাসপাতাল তৈরি হবে। আশা করছি,  দেড় বছরের মধ্যে ভালো কিছু হবে। আমার জীবদ্দশায় যাতে এটা দেখে যেতে পারি।’ চুক্তির ২২ মাসের মধ্যে হাসপাতাল তৈরির কাজ শেষ হলে সেই হিসাবে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে জানান সংশিষ্টরা।
যেমন হবে বিশেষায়িত বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট—
১৫০ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মধ্যে থাকছে শিশুদের জন্য ৫টিসহ মোট ২০টি বার্ন আইসিইউ বেড, ২৫টি এইচডিইউ বেড এবং ৩টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। রোগী আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য থাকবে তিনটি রাস্তা। ছয়তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে প্রথম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি, দ্বিতীয় তলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি), নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয় তলায় হাইডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), চতুর্থ এবং পঞ্চম তলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড, ষষ্ঠতলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে অফিস।
এদিকে, সম্পূর্ণ হাসপাতাল চীনা সরকার তৈরি করলেও এটি পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগ করবে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘তারা হাসপাতালের অবকাঠামোগত নিমার্ণ, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র দিবে। জনবল, এবং অন্যান্য ওষুধপত্র আমাদের। সেগুলোর জন্য ডিপিপিতে প্রতিবছর কত লাগবে সেসব নিয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আমরা আশা করছি শিগগিরই প্রকল্প পাস হয়ে যাবে। তারপর অন্যান্য কাজ এগিয়ে নিতে পারবো।’ প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬টি শয্যা নিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু করে চমেক। এটিকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট বলা হলেও এর অস্তিত্ব নেই হাসপাতালের অর্গানোগ্রামে। এমনকি নেই অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ আলাদা অবকাঠামোতে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার। এরপর চীনা প্রতিনিধি দল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। এরপরের কয়েক বছরে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও হাসপাতাল নিমার্ণের আটকে ছিল স্থান নির্বাচনেই। শেষমেষ গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্র তৈরির জন্য চমেক হাসপাতাল এলাকার গোঁয়াছি বাগান এলাকায় স্থান নির্বাচন করে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের জানায় চীন সরকার। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চট্টগ্রামে এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, ভবনের নকশা অনুযায়ী সবকিছু পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই করে চীনা প্রতিনিধিদল। গত ৩০ মার্চ এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।
জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রাম মেডিকেলে ১৫০ শয্যার বার্ন ইউনিটের প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের জানুয়ারীতে শুরু হতে যাচ্ছে

আপডেট সময় : ০৫:৪০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০২৩
চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রামে নির্মিত হতে যাওয়া বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট আগামী বছরের জানুয়ারী মাসে প্রকল্পের কাজ মাঠ পর্যায়ে শুরু হতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকার প্রায় এক একর জমিতে নির্মিত হবে ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিট। সংশ্রিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে দাপ্তরিক কাজ অনেক এগিয়েছে।  বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকালে চীন সরকারের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল হাসপাতাল এলাকায় পরিদর্শনে এসে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা আরও জানান, চলতি মাসেই আনা হবে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় মালামাল।  পরিদর্শণে আসা দলটি এখান থেকে ফিরে গিয়ে বার্ন ইউনিটের বিষয়ে প্রতিবেদন নিজ সরকারের কাছে প্রদান করবেন। তারপর  প্রকল্পের কাজ শুরু হবে পুরোদমে। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা ডা. সামন্ত লাল সেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প এ বার্ন ইউনিট। কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এটা নিয়ে কথা হয়েছে। এই প্রকল্পের দ্রুত অগ্রগতির জন্য আগামী সপ্তাহেও জরুরি মিটিং আছে। যত দ্রুত এই হাসপাতালের কাজ শুরু করা যায় তার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছেন। দুই থেকে তিন মাসের মতো লাগতে পারে দাপ্তরিক কাজ শেষ করতে। এরই মধ্যে চীনারা তাদের ইকুয়েপমেন্ট-ফার্নিচার এসব নিয়ে আসবে।’ তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করার  প্রায় দুই বছরের মধ্যে হাসপাতাল তৈরি হবে। আশা করছি,  দেড় বছরের মধ্যে ভালো কিছু হবে। আমার জীবদ্দশায় যাতে এটা দেখে যেতে পারি।’ চুক্তির ২২ মাসের মধ্যে হাসপাতাল তৈরির কাজ শেষ হলে সেই হিসাবে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে জানান সংশিষ্টরা।
যেমন হবে বিশেষায়িত বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট—
১৫০ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মধ্যে থাকছে শিশুদের জন্য ৫টিসহ মোট ২০টি বার্ন আইসিইউ বেড, ২৫টি এইচডিইউ বেড এবং ৩টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। রোগী আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য থাকবে তিনটি রাস্তা। ছয়তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে প্রথম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি, দ্বিতীয় তলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি), নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয় তলায় হাইডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), চতুর্থ এবং পঞ্চম তলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড, ষষ্ঠতলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে অফিস।
এদিকে, সম্পূর্ণ হাসপাতাল চীনা সরকার তৈরি করলেও এটি পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগ করবে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘তারা হাসপাতালের অবকাঠামোগত নিমার্ণ, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র দিবে। জনবল, এবং অন্যান্য ওষুধপত্র আমাদের। সেগুলোর জন্য ডিপিপিতে প্রতিবছর কত লাগবে সেসব নিয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আমরা আশা করছি শিগগিরই প্রকল্প পাস হয়ে যাবে। তারপর অন্যান্য কাজ এগিয়ে নিতে পারবো।’ প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬টি শয্যা নিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু করে চমেক। এটিকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট বলা হলেও এর অস্তিত্ব নেই হাসপাতালের অর্গানোগ্রামে। এমনকি নেই অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ আলাদা অবকাঠামোতে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার। এরপর চীনা প্রতিনিধি দল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। এরপরের কয়েক বছরে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও হাসপাতাল নিমার্ণের আটকে ছিল স্থান নির্বাচনেই। শেষমেষ গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্র তৈরির জন্য চমেক হাসপাতাল এলাকার গোঁয়াছি বাগান এলাকায় স্থান নির্বাচন করে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের জানায় চীন সরকার। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চট্টগ্রামে এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, ভবনের নকশা অনুযায়ী সবকিছু পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই করে চীনা প্রতিনিধিদল। গত ৩০ মার্চ এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।