০৬:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হরতাল-অবরোধে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশা খালি হাতে ফিরছে বাড়িতে

ফজরের আজানের সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ বাইশাইকেলে পাড়ি দিয়ে এসেছেন রাজশাহী নগরীতে। দুপুর পর্যন্ত তীব্র
রোদে-গরমে শরীরের ঘাম ঝরিয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব দিনমজুর কাজেম আলী। তবুও কাজের খোঁজ পাননি। অবশেষে মন খারাপ করে রওয়ানা হয়েছেন বাড়ির পথে। খালি হাতে বাড়ি গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের কী বলে বুঝ দেবেন তা জানা নেই তার।
মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর ভদ্রার মোড়ে কথা হয় কাজেম আলীর। এ সময় তার চোখে-মুখে ছিল কষ্টের ছাপ। কাজেমের মতো ক্ষুুধার্ত মানুষের কাছে রূপ,
লাবণ্য, সৌন্দর্য, আনন্দ সবকিছুই মূল্যহীন। কারণ, ক্ষুধার জ্বালা যে বড় জ্বালা! সন্তানদের ক্ষুধার জ্বালা মেটাতেই প্রায় প্রতিদিনই রাজশাহী নগরীতে আসেন কাজেম আলী।

চলতি মাসের প্রথম থেকেই সারা দেশে চলছে হরতাল-অবরোধ। এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কাজেম আলীর মতো অসংখ্যা শ্রমজীবীদের। কাজ না থাকায় বেকার হয়ে হতাশায় ভরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। এমনই কথা বলছিলেন কাজেম আলী, “‘হরতাল-অবরোধ শুরু হয়েছে।
কাজকামে টান ধরিছে। আসছি আর চলি (চলে) যাচ্ছি। কাম হচে (হচ্ছে) না।’ এমনভাবে আক্ষেপ করে কথা বলছিলেন তিনি। কাজেম আলীর সাথে
থাকায় আরো কয়েকজন শ্রমবীবী রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তাদের দাবি, এমনিতেই প্রতিদিন কাজ হয় না। তার পরে
হরতাল-অবরোধ। আরো কাজ হারিয়ে গেছে। এই সবদিনে (হরতাল অবরোধ) মানুষ (মালিকরা) কাজ করাতে চান না।
রাজশাহী নগরীর নগরীর গোরহাঙ্গা রেলগেট, বিনোদপুর, কাটাখালী, তালাইমারী, কোর্ট, কাশিয়াডাঙ্গা, আম চত্বর, বায়া বাজারে এলাকায় সারিভাবে বসে থাকতে দেখা যায় শ্রমজীবীদের। তারা প্রতিদিন ডালি, কোদালসহ কাজের বিভিন্ন হাতিয়ার নিয়ে আসেন নগরীতে। এই মানুষগুলো শ্রম বিক্রি করে নিজেদের সংসার চালায়। নির্মাণকাজ, রাজমিস্ত্রির সহযোগী, বস্তা টানা, মাটি কাটা থেকে শুরু করে নানা কাজ করেন তারা। একা অথবা দলবদ্ধ হয়ে তারা নগরীতে ছড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন কাজে। অবরোধের কারণে ঠিকঠাক তাদের কাজ হচ্ছে না। তাই বেশিরভাগ দিন তাদের শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
শ্রমিকরা পুঠিয়া এলাকার কয়েকজন শ্রমিক বলেন, প্রতিদিন তাদেও এলাকা থেকে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শ্রমিক আসেন। সকাল ছয়টা থেকে শ্রমিকেরা জড়ো হতে শুরু করে এখানে। কোদাল, ডালি, খাবারের পোঁটলা নিয়ে শ্রমিকেরা অপেক্ষায় থাকেন। নিজেদের কাজ করাবেন এমন মালিকরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিভিত্তিতে শ্রমিকদের কাজে নেন। এখানে আসা শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রতিদিন কাজ পান। তবে অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের কাজে ভাটা পড়েছে। এখন অল্প কয়েক জনের কাজ হচ্ছে,কিরা বেকার।আমচত্বর এলাকায় কাজের অপেক্ষায় থাকা শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন,
সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, পণ্যের দামের কারণে। হরতাল-অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে কাজ নেই। এ অবস্থায় সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে
উঠেছে। হরতাল-অবরোধ হলে বাড়ি থেকে দু-ভরসায় বের হই; কাজ হলেও হতে পারে বলে।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ের বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের কর্মকর্তারা বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে মানুষজন মানষিক চিন্তায় আছেন এবং পরিবারে অশান্তি বাড়ছে। এর উপরে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে হরতাল- অবরোধ। এতে কাজের সুযোগ না থাকায় দারিদ্রতার হার আরো কমছে। তারা বলেন একারনে সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সূচকও বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অর্থনিতীবিদরা বলেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষজনের জীবনযাত্রা দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এর প্রভাব পড়ছে নিম্ন
আয় ও শ্রমজীবী পরিবারের মধ্যে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে অর্থ উপার্জনের সুযোগ না থাকায় শ্রমিকেরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যাচেছ। এ কারণে মানুষজনের আয়-উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারের বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

জনপ্রিয় সংবাদ

হরতাল-অবরোধে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশা খালি হাতে ফিরছে বাড়িতে

আপডেট সময় : ১২:৫১:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৩

ফজরের আজানের সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ বাইশাইকেলে পাড়ি দিয়ে এসেছেন রাজশাহী নগরীতে। দুপুর পর্যন্ত তীব্র
রোদে-গরমে শরীরের ঘাম ঝরিয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব দিনমজুর কাজেম আলী। তবুও কাজের খোঁজ পাননি। অবশেষে মন খারাপ করে রওয়ানা হয়েছেন বাড়ির পথে। খালি হাতে বাড়ি গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের কী বলে বুঝ দেবেন তা জানা নেই তার।
মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর ভদ্রার মোড়ে কথা হয় কাজেম আলীর। এ সময় তার চোখে-মুখে ছিল কষ্টের ছাপ। কাজেমের মতো ক্ষুুধার্ত মানুষের কাছে রূপ,
লাবণ্য, সৌন্দর্য, আনন্দ সবকিছুই মূল্যহীন। কারণ, ক্ষুধার জ্বালা যে বড় জ্বালা! সন্তানদের ক্ষুধার জ্বালা মেটাতেই প্রায় প্রতিদিনই রাজশাহী নগরীতে আসেন কাজেম আলী।

চলতি মাসের প্রথম থেকেই সারা দেশে চলছে হরতাল-অবরোধ। এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কাজেম আলীর মতো অসংখ্যা শ্রমজীবীদের। কাজ না থাকায় বেকার হয়ে হতাশায় ভরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। এমনই কথা বলছিলেন কাজেম আলী, “‘হরতাল-অবরোধ শুরু হয়েছে।
কাজকামে টান ধরিছে। আসছি আর চলি (চলে) যাচ্ছি। কাম হচে (হচ্ছে) না।’ এমনভাবে আক্ষেপ করে কথা বলছিলেন তিনি। কাজেম আলীর সাথে
থাকায় আরো কয়েকজন শ্রমবীবী রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তাদের দাবি, এমনিতেই প্রতিদিন কাজ হয় না। তার পরে
হরতাল-অবরোধ। আরো কাজ হারিয়ে গেছে। এই সবদিনে (হরতাল অবরোধ) মানুষ (মালিকরা) কাজ করাতে চান না।
রাজশাহী নগরীর নগরীর গোরহাঙ্গা রেলগেট, বিনোদপুর, কাটাখালী, তালাইমারী, কোর্ট, কাশিয়াডাঙ্গা, আম চত্বর, বায়া বাজারে এলাকায় সারিভাবে বসে থাকতে দেখা যায় শ্রমজীবীদের। তারা প্রতিদিন ডালি, কোদালসহ কাজের বিভিন্ন হাতিয়ার নিয়ে আসেন নগরীতে। এই মানুষগুলো শ্রম বিক্রি করে নিজেদের সংসার চালায়। নির্মাণকাজ, রাজমিস্ত্রির সহযোগী, বস্তা টানা, মাটি কাটা থেকে শুরু করে নানা কাজ করেন তারা। একা অথবা দলবদ্ধ হয়ে তারা নগরীতে ছড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন কাজে। অবরোধের কারণে ঠিকঠাক তাদের কাজ হচ্ছে না। তাই বেশিরভাগ দিন তাদের শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
শ্রমিকরা পুঠিয়া এলাকার কয়েকজন শ্রমিক বলেন, প্রতিদিন তাদেও এলাকা থেকে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শ্রমিক আসেন। সকাল ছয়টা থেকে শ্রমিকেরা জড়ো হতে শুরু করে এখানে। কোদাল, ডালি, খাবারের পোঁটলা নিয়ে শ্রমিকেরা অপেক্ষায় থাকেন। নিজেদের কাজ করাবেন এমন মালিকরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিভিত্তিতে শ্রমিকদের কাজে নেন। এখানে আসা শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রতিদিন কাজ পান। তবে অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের কাজে ভাটা পড়েছে। এখন অল্প কয়েক জনের কাজ হচ্ছে,কিরা বেকার।আমচত্বর এলাকায় কাজের অপেক্ষায় থাকা শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন,
সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, পণ্যের দামের কারণে। হরতাল-অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে কাজ নেই। এ অবস্থায় সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে
উঠেছে। হরতাল-অবরোধ হলে বাড়ি থেকে দু-ভরসায় বের হই; কাজ হলেও হতে পারে বলে।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ের বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের কর্মকর্তারা বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে মানুষজন মানষিক চিন্তায় আছেন এবং পরিবারে অশান্তি বাড়ছে। এর উপরে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে হরতাল- অবরোধ। এতে কাজের সুযোগ না থাকায় দারিদ্রতার হার আরো কমছে। তারা বলেন একারনে সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সূচকও বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অর্থনিতীবিদরা বলেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষজনের জীবনযাত্রা দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এর প্রভাব পড়ছে নিম্ন
আয় ও শ্রমজীবী পরিবারের মধ্যে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে অর্থ উপার্জনের সুযোগ না থাকায় শ্রমিকেরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যাচেছ। এ কারণে মানুষজনের আয়-উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারের বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।