০২:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
খালেদা জিয়া

আপসহীন নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য এক রাজনৈতিক অধ্যায়

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যাঁর নাম উচ্চারিত হলেই দৃঢ়তা, আপসহীনতা ও সংগ্রামের কথা উঠে আসে—তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে উত্থান–পতন, কারাবাস, মামলা–মোকদ্দমা, ব্যক্তিগত শোক ও শারীরিক যন্ত্রণা পেরিয়ে তিনি যে জীবন অতিবাহিত করেছেন, তা কেবল একটি রাজনৈতিক জীবনী নয়—এটি একটি সময়ের ইতিহাস।

রাজনীতিতে আপসহীন অবস্থানের কারণে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত খালেদা জিয়া জীবনের শেষপ্রান্তে এসে আত্মসমর্পণ করেন পরম সত্যের কাছে। তাঁর প্রয়াণের খবরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে আসে গভীর শোক ও মর্মবেদনা।

১৯৭৬ সালে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের সাথে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া।

শৈশব ও পারিবারিক জীবন

খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে। তাঁর বাবা ইস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরামের শ্রীপুর গ্রামে এবং মা তৈয়বা বেগমের জন্ম পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার চন্দনবাড়িতে। পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় খালেদা খানম। শৈশবে রূপসী হওয়ায় পরিবারের সবাই তাঁকে ‘পুতুল’ নামে ডাকতেন।

প্রাথমিক শিক্ষা নেন সেন্ট জোসেফ কনভেন্টে। পরে দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণ হন। জীবনীকারদের ভাষ্য অনুযায়ী, শৈশব থেকেই তিনি পরিচ্ছন্নতা, পরিপাটি থাকা ও ফুলের প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন—যা পরবর্তী জীবনেও বজায় ছিল।

১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের আগে খালেদা জিয়া ও বিএনপির অন্য নেতারা কাঁদানে গ্যাসের শেলের শিকার হন

১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট দিনাজপুরের বালুবাড়িতে সেনাবাহিনীর তরুণ কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তিনি ‘খালেদা জিয়া’ নামে পরিচিত হন। তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় দুই পুত্র—তারেক রহমান (জন্ম ১৯৬৫) ও আরাফাত রহমান কোকো (জন্ম ১৯৭০)। কোকো ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

মুক্তিযুদ্ধ ও ব্যক্তিগত সংগ্রাম

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান সরাসরি যুদ্ধে যুক্ত থাকায় দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েন খালেদা জিয়া। আত্মগোপনে থাকতে হয় তাঁকে। ১৯৭১ সালের ২ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীর একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি সেনারা এবং সেনানিবাসে যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক রাখে। যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলো তাঁকে একাকী ও নিদারুণ কষ্টের মধ্যে কাটাতে হয়।

১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু ১৯৮১ সালের ৩০ মার্চ সেনাবাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের হাতে তিনি শহীদ হন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে খালেদা জিয়া অকাল বৈধব্য বরণ করেন। এই শোকই পরবর্তীকালে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

গুলশানের বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয় খালেদা জিয়াকে

রাজনীতিতে আগমন ও নেতৃত্বের উত্থান

স্বামীর মৃত্যুর পর সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বিএনপি। এমন প্রেক্ষাপটে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বিএনপির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। রাজনীতিতে এটি ছিল এক অনিবার্য আকস্মিক প্রবেশ। ধীরে ধীরে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে গড়ে ওঠে ৭ দলীয় ঐক্যজোট। ১৯৮৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৮৭ সালে শুরু করেন ‘এরশাদ হটাও’ একদফা আন্দোলন।

১৯৯১ সালের ২০ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বেগম খালেদা জিয়া

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব

দীর্ঘ আন্দোলন–সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়। ২০ মার্চ তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। পরে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আরও দুইবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি মোট ২৩টি সংসদীয় আসনে নির্বাচন করে কখনোই পরাজিত হননি। টানা দীর্ঘ সফর ও মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে সক্রিয় উপস্থিতি তাঁকে জনগণের কাছে শক্ত অবস্থানে রাখে।

বিতর্ক, কারাবাস ও নির্যাতন

সাফল্যের পাশাপাশি তাঁর শাসনামলে দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে। ‘হাওয়া ভবন’ ইস্যু ও ২০০১–২০০৫ সময়ে বাংলাদেশের দুর্নীতির সূচক নিয়ে সমালোচনা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিতর্কিত অধ্যায় হয়ে থাকে।

জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি কারাবাস ও গৃহবন্দিত্বের শিকার হন। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন পর্বে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ সময় বন্দী রাখা হয়। ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান।

খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছালে স্বাগত জানান ছেলে তারেক রহমান ও পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান। জানুয়ারি ২০২৫

চিকিৎসা ও বিদায়

চলতি বছরের শুরুতে লন্ডনে তাঁর চিকিৎসা হয় এবং কিছুটা সুস্থতা ফিরে আসে। তবে দীর্ঘদিনের রোগভোগ ও শারীরিক দুর্বলতায় তিনি বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি জীবনের শেষ অধ্যায়ে পৌঁছান।

দীর্ঘ সংগ্রাম, দৃঢ়তা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত চিরবিদায় নিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুধু একটি দলের ইতিহাস নয়—এটি বাংলাদেশের রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় গুড়িয়ে দেয়া হয় দু’টি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

খালেদা জিয়া

আপসহীন নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য এক রাজনৈতিক অধ্যায়

আপডেট সময় : ০৫:১১:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যাঁর নাম উচ্চারিত হলেই দৃঢ়তা, আপসহীনতা ও সংগ্রামের কথা উঠে আসে—তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে উত্থান–পতন, কারাবাস, মামলা–মোকদ্দমা, ব্যক্তিগত শোক ও শারীরিক যন্ত্রণা পেরিয়ে তিনি যে জীবন অতিবাহিত করেছেন, তা কেবল একটি রাজনৈতিক জীবনী নয়—এটি একটি সময়ের ইতিহাস।

রাজনীতিতে আপসহীন অবস্থানের কারণে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত খালেদা জিয়া জীবনের শেষপ্রান্তে এসে আত্মসমর্পণ করেন পরম সত্যের কাছে। তাঁর প্রয়াণের খবরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে আসে গভীর শোক ও মর্মবেদনা।

১৯৭৬ সালে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের সাথে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া।

শৈশব ও পারিবারিক জীবন

খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে। তাঁর বাবা ইস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরামের শ্রীপুর গ্রামে এবং মা তৈয়বা বেগমের জন্ম পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার চন্দনবাড়িতে। পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় খালেদা খানম। শৈশবে রূপসী হওয়ায় পরিবারের সবাই তাঁকে ‘পুতুল’ নামে ডাকতেন।

প্রাথমিক শিক্ষা নেন সেন্ট জোসেফ কনভেন্টে। পরে দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণ হন। জীবনীকারদের ভাষ্য অনুযায়ী, শৈশব থেকেই তিনি পরিচ্ছন্নতা, পরিপাটি থাকা ও ফুলের প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন—যা পরবর্তী জীবনেও বজায় ছিল।

১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের আগে খালেদা জিয়া ও বিএনপির অন্য নেতারা কাঁদানে গ্যাসের শেলের শিকার হন

১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট দিনাজপুরের বালুবাড়িতে সেনাবাহিনীর তরুণ কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তিনি ‘খালেদা জিয়া’ নামে পরিচিত হন। তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় দুই পুত্র—তারেক রহমান (জন্ম ১৯৬৫) ও আরাফাত রহমান কোকো (জন্ম ১৯৭০)। কোকো ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

মুক্তিযুদ্ধ ও ব্যক্তিগত সংগ্রাম

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান সরাসরি যুদ্ধে যুক্ত থাকায় দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েন খালেদা জিয়া। আত্মগোপনে থাকতে হয় তাঁকে। ১৯৭১ সালের ২ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীর একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি সেনারা এবং সেনানিবাসে যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক রাখে। যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলো তাঁকে একাকী ও নিদারুণ কষ্টের মধ্যে কাটাতে হয়।

১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু ১৯৮১ সালের ৩০ মার্চ সেনাবাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের হাতে তিনি শহীদ হন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে খালেদা জিয়া অকাল বৈধব্য বরণ করেন। এই শোকই পরবর্তীকালে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

গুলশানের বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয় খালেদা জিয়াকে

রাজনীতিতে আগমন ও নেতৃত্বের উত্থান

স্বামীর মৃত্যুর পর সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বিএনপি। এমন প্রেক্ষাপটে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বিএনপির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। রাজনীতিতে এটি ছিল এক অনিবার্য আকস্মিক প্রবেশ। ধীরে ধীরে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে গড়ে ওঠে ৭ দলীয় ঐক্যজোট। ১৯৮৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৮৭ সালে শুরু করেন ‘এরশাদ হটাও’ একদফা আন্দোলন।

১৯৯১ সালের ২০ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বেগম খালেদা জিয়া

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব

দীর্ঘ আন্দোলন–সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়। ২০ মার্চ তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। পরে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আরও দুইবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি মোট ২৩টি সংসদীয় আসনে নির্বাচন করে কখনোই পরাজিত হননি। টানা দীর্ঘ সফর ও মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে সক্রিয় উপস্থিতি তাঁকে জনগণের কাছে শক্ত অবস্থানে রাখে।

বিতর্ক, কারাবাস ও নির্যাতন

সাফল্যের পাশাপাশি তাঁর শাসনামলে দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে। ‘হাওয়া ভবন’ ইস্যু ও ২০০১–২০০৫ সময়ে বাংলাদেশের দুর্নীতির সূচক নিয়ে সমালোচনা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিতর্কিত অধ্যায় হয়ে থাকে।

জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি কারাবাস ও গৃহবন্দিত্বের শিকার হন। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন পর্বে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ সময় বন্দী রাখা হয়। ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান।

খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছালে স্বাগত জানান ছেলে তারেক রহমান ও পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান। জানুয়ারি ২০২৫

চিকিৎসা ও বিদায়

চলতি বছরের শুরুতে লন্ডনে তাঁর চিকিৎসা হয় এবং কিছুটা সুস্থতা ফিরে আসে। তবে দীর্ঘদিনের রোগভোগ ও শারীরিক দুর্বলতায় তিনি বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি জীবনের শেষ অধ্যায়ে পৌঁছান।

দীর্ঘ সংগ্রাম, দৃঢ়তা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত চিরবিদায় নিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুধু একটি দলের ইতিহাস নয়—এটি বাংলাদেশের রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।