০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কালীগঞ্জে শিশুশ্রমিক সজলের অঙ্গহানি!

কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ )প্রতিনিধি

হতদরিদ্র মা বাবার অতিপ্রিয় সন্তান সজল দাস। অভাব-অনটন,ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে আদরের সন্তানকে কাজে পাঠাতে বাধ্য হন। সপ্তাহে মাত্র ২
শত টাকা মজুরিতে শহরের পূজা জুয়েলার্সে প্রায় এক বছর অধিক সময় ধরে কাজ করছে। গত ২৫ নভেম্বর কর্মস্থল মধুগঞ্জ বাজারের করিম কমপ্লেক্স
মার্কেটের নিচতলায় অবস্থিত পূজা জুয়েলার্সের কারখানায় কাজ করতে যেয়ে তারপাতের ইলেকট্রিক মেশিনে সজল দাস এর বামহাতের তর্জনী
আঙ্গুলটি কেটে পড়ে যায়। সজল দাস উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের মাঝপাড়ার মদন দাস ও চম্পা দাস এর ছোট ছেলে। হকারি করে পাঁচজনের
অভাব অনটনের সংসার চালাতে কষ্ট হওয়ায় একপ্রকার বাধ্য হয়ে বাবা মদন দাস তার তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া শিশু সন্তানকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে
কাজে পাঠান। আদরের শিশু সন্তান সপ্তাহে ছয়দিন ৯ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত স্বর্ণের দোকানের কারখানায় কাজ করে যা আয় করে তা সংসারের
জন্য যৎসামান্য। এরই মধ্যে আবার আঙ্গুল কেটে অঙ্গহানি হাওয়ায় পরিবার এই শিশু সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। অসহায় হতদরিদ্র বাবা মায়ের
১৩ বছর বয়সী শিশু সজল নিজ বাড়ির টিনের ছাপড়া ঘরের সামনে বাম হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে সারাদিন বসে থাকে। ভবিষ্যৎ শঙ্কা ও দুশ্চিন্তা তার
চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে । সুজল দাসের দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি ঘটলেও পূজা জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী কোন খোঁজ-খবর রাখেনা তার।
সুজল দাস এর মা চম্পা দাস জানান,পেটের দায় আমার শিশু সন্তানকে কাজে পাঠাইছিলাম। কাজ করতে যেয়ে আমার ছেলের একটা আঙ্গুল কেটে
পড়ে গেলো। অথচ পূজা জুয়েলার্সের মালিক একবারও আমার ছেলের খোঁজ নিলো না এটাই আমাদের দুঃখ।
কালিগঞ্জ উপজেলা অলংকার প্রস্তুতকারী শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক সুশান্ত মালী এবং সদস্য সচিব ইকবল আলী বিশ্বাস জানান, সজল দাসের অঙ্গহানির উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চিকিৎসা খরচ জুয়েলার্সের মালিককেই দিতে হবে।
পূজা জুয়েলার্সের স্বত্তাধিকারী বিজয় কুমার তার অলংকার তৈরির কারখানার শিশু শ্রমিক সুজল দাসের দুর্ঘটনায় অঙ্গহানির বিষয়টি
স্বীকার করে বলেন , সে কারিগরের সহযোগী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। ব্যস্ততার কারনে দুর্ঘটনায় তার আঙ্গুল কাটার পর তার বাড়িতে
গিয়ে খোঁজখবর নিতে পারিনি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবিবুল্লাহ হাবিব জানান,শিশুশ্রম আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যারা শিশুদের দিয়ে সামান্য পারিশ্রমিকের
বিনিময়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করাচ্ছেন প্রথমে তাদেরকে চিহ্নিত করে সতর্ক করতে হবে এবং পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
নিতে হবে। শিশু সজল দাসের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আগামী আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে অলংকার প্রস্তুতকারী কারখানাগুলোর শিশুশ্রম রোধ নিয়ে কথা বলা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

কালীগঞ্জে শিশুশ্রমিক সজলের অঙ্গহানি!

আপডেট সময় : ০৪:০৩:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ )প্রতিনিধি

হতদরিদ্র মা বাবার অতিপ্রিয় সন্তান সজল দাস। অভাব-অনটন,ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে আদরের সন্তানকে কাজে পাঠাতে বাধ্য হন। সপ্তাহে মাত্র ২
শত টাকা মজুরিতে শহরের পূজা জুয়েলার্সে প্রায় এক বছর অধিক সময় ধরে কাজ করছে। গত ২৫ নভেম্বর কর্মস্থল মধুগঞ্জ বাজারের করিম কমপ্লেক্স
মার্কেটের নিচতলায় অবস্থিত পূজা জুয়েলার্সের কারখানায় কাজ করতে যেয়ে তারপাতের ইলেকট্রিক মেশিনে সজল দাস এর বামহাতের তর্জনী
আঙ্গুলটি কেটে পড়ে যায়। সজল দাস উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের মাঝপাড়ার মদন দাস ও চম্পা দাস এর ছোট ছেলে। হকারি করে পাঁচজনের
অভাব অনটনের সংসার চালাতে কষ্ট হওয়ায় একপ্রকার বাধ্য হয়ে বাবা মদন দাস তার তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া শিশু সন্তানকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে
কাজে পাঠান। আদরের শিশু সন্তান সপ্তাহে ছয়দিন ৯ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত স্বর্ণের দোকানের কারখানায় কাজ করে যা আয় করে তা সংসারের
জন্য যৎসামান্য। এরই মধ্যে আবার আঙ্গুল কেটে অঙ্গহানি হাওয়ায় পরিবার এই শিশু সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। অসহায় হতদরিদ্র বাবা মায়ের
১৩ বছর বয়সী শিশু সজল নিজ বাড়ির টিনের ছাপড়া ঘরের সামনে বাম হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে সারাদিন বসে থাকে। ভবিষ্যৎ শঙ্কা ও দুশ্চিন্তা তার
চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে । সুজল দাসের দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি ঘটলেও পূজা জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী কোন খোঁজ-খবর রাখেনা তার।
সুজল দাস এর মা চম্পা দাস জানান,পেটের দায় আমার শিশু সন্তানকে কাজে পাঠাইছিলাম। কাজ করতে যেয়ে আমার ছেলের একটা আঙ্গুল কেটে
পড়ে গেলো। অথচ পূজা জুয়েলার্সের মালিক একবারও আমার ছেলের খোঁজ নিলো না এটাই আমাদের দুঃখ।
কালিগঞ্জ উপজেলা অলংকার প্রস্তুতকারী শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক সুশান্ত মালী এবং সদস্য সচিব ইকবল আলী বিশ্বাস জানান, সজল দাসের অঙ্গহানির উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চিকিৎসা খরচ জুয়েলার্সের মালিককেই দিতে হবে।
পূজা জুয়েলার্সের স্বত্তাধিকারী বিজয় কুমার তার অলংকার তৈরির কারখানার শিশু শ্রমিক সুজল দাসের দুর্ঘটনায় অঙ্গহানির বিষয়টি
স্বীকার করে বলেন , সে কারিগরের সহযোগী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। ব্যস্ততার কারনে দুর্ঘটনায় তার আঙ্গুল কাটার পর তার বাড়িতে
গিয়ে খোঁজখবর নিতে পারিনি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবিবুল্লাহ হাবিব জানান,শিশুশ্রম আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যারা শিশুদের দিয়ে সামান্য পারিশ্রমিকের
বিনিময়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করাচ্ছেন প্রথমে তাদেরকে চিহ্নিত করে সতর্ক করতে হবে এবং পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
নিতে হবে। শিশু সজল দাসের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আগামী আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে অলংকার প্রস্তুতকারী কারখানাগুলোর শিশুশ্রম রোধ নিয়ে কথা বলা হবে।