০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাদ পড়ছেন বহু আলোচিত প্রার্থী

  • তথ্যে গরমিলসহ নানা কারণে আ.লীগসহ বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হচ্ছে।
  • আজ যাচাই-বাছাই শেষ।
  • আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ।

মো. আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করছে নির্বাচন কমিশন। গত ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়া আজ সোমবার শেষ হবে। এরইমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে বহু আলোচিত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
গতকাল রোববার দেশের বিভিন্ন আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের ঘোষণা এসেছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
সারা দেশের ২৯টি দলের মোট ২৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাই চলমানের মধ্যেই বর্তমান এমপি, বিভিন্ন দলের মহাসচিব ও শীর্ষ নেতাসহ প্রায় শতাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

দের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান, বিকল্পধারার নেতা মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান এবং দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী, শিল্পী ডলি সায়ন্তনী, অভিনেত্রী মাহিয়া মাহী, হিরো আলমসহ বেশ কয়েকজন তারকা প্রার্থীও রয়েছেন।
তবে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থিতা বাতিল হলেও তাদের নির্বাচন কমিশনে আপিলের সুযোগ থাকবে। এমনকি সেখানেও বাদ পড়লে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগও রয়েছে। এজন্য যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা সবাই প্রত্যাশা করছেন আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া আলোচিত যারা : গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান এবং দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, নোয়াখালী-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে অংশ নিতে মনোয়নপত্র জমা দিলেও যাচাই-বাছাইতে বাতিল হয়ে গেছে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র। ঋলখেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মাহি বি চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।
তিনি দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে। বিকল্পধারার দুই নেতা মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান ও মাহি বি চৌধুরী সম্পর্কে শ্বশুর জামাতা। এছাড়া তারা দুজনই বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য।

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে। তিনি রাজশাহী-১ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এক শতাংশ ভোটার জালিয়াতির (ভুয়া স্বাক্ষর) অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে রাজশাহী নির্বাচন কমিশন অফিস। মাহিয়া মাহি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে দুটি আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে আলোচিত প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের। তিনি বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। গতকাল রোববার সকালে যাচাই-বাছাই শেষে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন বগুড়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের আলোচিত প্রার্থী বিএনপির সাবেক নেতা মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হলেও একই আসনে বাতিল করা হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুল হক হারুনের মনোনয়নপত্র। তিনি আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এই আসন থেকে মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে আটজনের।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং অফিসার। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হলফনামায় মামলা ও ঋণের তথ্য না দেওয়ায়, তথ্য গোপন করার কারণ উল্লেখ করে তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল ঘোষণা করেন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। একই আসনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০ দলীয় জোটের শরিক ইবরাহিম সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন ত্যাগ করে ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

ফরিদপুর-১ আসনের সাতজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তারা দুজনই আলোচিত প্রার্থী। তারা হলেনÑ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন। হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় কৃকের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। আর ফরমে মনোনীত প্রার্থীর ঘর ফাঁকা থাকায় বাতিল করা হয় দোলনের প্রার্থিতা।
ঋণ খেলাপির অভিযোগে নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরণের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

খেলাপি ঋণের দায়ে পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত খেলাপি ঋণের কারণে রোববার সকালে মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এছাড়া যাচাই-বাছাইয়ের দ্বিতীয় দিনে নড়াইল-০১ আসনের ৭ প্রার্থীর মধ্যে একজন ও নড়াইল -২ আসনে ৯ প্রার্থীর মধ্যে দুইজনের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া ও পেকুয়া) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এই আসনে তিনিসহ পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
ঝালকাঠিতে এমপি বজলুল হক হারুনসহ সাতজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী আমির হোসেন আমু, বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরসহ আটজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সিলেট-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান, সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী ও বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানসহ ৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ে-১ আসনে ১৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও যাচাই-বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু তোয়বুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আকতারুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মিল্টন রায় ও মুক্তিজোটের আব্দুল মজিদ। তবে পঞ্চগড়-২ আসনে পাঁচ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সঠিক রয়েছে। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও রিটার্নিং অফিসার জহুরুল ইসলাম জানান, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে কাগজপত্র ত্রুটি ও অসংগতি থাকায় পঞ্চগড়ের দুইটি আসনের মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনে চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে পঞ্চগড়-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে ১১ জন ও পঞ্চগড়-২ আসনে পাঁচজন রয়েছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কার্যালয়ে নিজ নিজ দলের প্রার্থীরা এসে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এতে পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীসহ ১৫ জন এবং পঞ্চগড়-২ আসনে পাঁচজনসহ মোট ২০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়ার একাংশ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ভুয়া ভোটার দেখানোর দায়ে চট্টগ্রাম-১, ২, ৩, ৪ ও ৫ আসনের ১২ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম নওশের আলী, মোহাম্মদ শাহজাহান, রিয়াজ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়। সবার মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়া যায়। একই অভিযোগে চট্টগ্রাম-৩ আসনের নিজাম উদ্দিন নাছির ও আমিন রসূল নামে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নও বাতিল করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা। অন্যদিকে, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে চট্টগ্রাম-৪ আসনের ৪ প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মোহম্মদ ইমরান, দিদারুল আলম, আখতার হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম-৫ আসনের দুই প্রার্থী নাছির হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও ভোটার-সমর্থকদের ভুল তথ্য দেওয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রথম দফা যাচাই-বাছাই শেষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটার সমর্থকের তালিকায় গরমিল থাকায় মনোনয়নপত্রগুলো বাতিল করা হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাদ পড়ছেন বহু আলোচিত প্রার্থী

আপডেট সময় : ১০:৩৭:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  • তথ্যে গরমিলসহ নানা কারণে আ.লীগসহ বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হচ্ছে।
  • আজ যাচাই-বাছাই শেষ।
  • আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ।

মো. আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করছে নির্বাচন কমিশন। গত ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়া আজ সোমবার শেষ হবে। এরইমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে বহু আলোচিত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
গতকাল রোববার দেশের বিভিন্ন আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের ঘোষণা এসেছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
সারা দেশের ২৯টি দলের মোট ২৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাই চলমানের মধ্যেই বর্তমান এমপি, বিভিন্ন দলের মহাসচিব ও শীর্ষ নেতাসহ প্রায় শতাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

দের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান, বিকল্পধারার নেতা মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান এবং দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী, শিল্পী ডলি সায়ন্তনী, অভিনেত্রী মাহিয়া মাহী, হিরো আলমসহ বেশ কয়েকজন তারকা প্রার্থীও রয়েছেন।
তবে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থিতা বাতিল হলেও তাদের নির্বাচন কমিশনে আপিলের সুযোগ থাকবে। এমনকি সেখানেও বাদ পড়লে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগও রয়েছে। এজন্য যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা সবাই প্রত্যাশা করছেন আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া আলোচিত যারা : গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান এবং দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, নোয়াখালী-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে অংশ নিতে মনোয়নপত্র জমা দিলেও যাচাই-বাছাইতে বাতিল হয়ে গেছে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র। ঋলখেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মাহি বি চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।
তিনি দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে। বিকল্পধারার দুই নেতা মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান ও মাহি বি চৌধুরী সম্পর্কে শ্বশুর জামাতা। এছাড়া তারা দুজনই বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য।

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে। তিনি রাজশাহী-১ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এক শতাংশ ভোটার জালিয়াতির (ভুয়া স্বাক্ষর) অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে রাজশাহী নির্বাচন কমিশন অফিস। মাহিয়া মাহি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে দুটি আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে আলোচিত প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের। তিনি বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। গতকাল রোববার সকালে যাচাই-বাছাই শেষে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন বগুড়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের আলোচিত প্রার্থী বিএনপির সাবেক নেতা মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হলেও একই আসনে বাতিল করা হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুল হক হারুনের মনোনয়নপত্র। তিনি আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এই আসন থেকে মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে আটজনের।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং অফিসার। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হলফনামায় মামলা ও ঋণের তথ্য না দেওয়ায়, তথ্য গোপন করার কারণ উল্লেখ করে তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল ঘোষণা করেন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। একই আসনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০ দলীয় জোটের শরিক ইবরাহিম সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন ত্যাগ করে ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

ফরিদপুর-১ আসনের সাতজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তারা দুজনই আলোচিত প্রার্থী। তারা হলেনÑ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন। হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় কৃকের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। আর ফরমে মনোনীত প্রার্থীর ঘর ফাঁকা থাকায় বাতিল করা হয় দোলনের প্রার্থিতা।
ঋণ খেলাপির অভিযোগে নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরণের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

খেলাপি ঋণের দায়ে পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত খেলাপি ঋণের কারণে রোববার সকালে মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এছাড়া যাচাই-বাছাইয়ের দ্বিতীয় দিনে নড়াইল-০১ আসনের ৭ প্রার্থীর মধ্যে একজন ও নড়াইল -২ আসনে ৯ প্রার্থীর মধ্যে দুইজনের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া ও পেকুয়া) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এই আসনে তিনিসহ পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
ঝালকাঠিতে এমপি বজলুল হক হারুনসহ সাতজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী আমির হোসেন আমু, বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরসহ আটজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সিলেট-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান, সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী ও বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানসহ ৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ে-১ আসনে ১৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও যাচাই-বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন- পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু তোয়বুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আকতারুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মিল্টন রায় ও মুক্তিজোটের আব্দুল মজিদ। তবে পঞ্চগড়-২ আসনে পাঁচ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সঠিক রয়েছে। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও রিটার্নিং অফিসার জহুরুল ইসলাম জানান, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে কাগজপত্র ত্রুটি ও অসংগতি থাকায় পঞ্চগড়ের দুইটি আসনের মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনে চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে পঞ্চগড়-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে ১১ জন ও পঞ্চগড়-২ আসনে পাঁচজন রয়েছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কার্যালয়ে নিজ নিজ দলের প্রার্থীরা এসে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এতে পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীসহ ১৫ জন এবং পঞ্চগড়-২ আসনে পাঁচজনসহ মোট ২০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়ার একাংশ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ভুয়া ভোটার দেখানোর দায়ে চট্টগ্রাম-১, ২, ৩, ৪ ও ৫ আসনের ১২ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম নওশের আলী, মোহাম্মদ শাহজাহান, রিয়াজ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়। সবার মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়া যায়। একই অভিযোগে চট্টগ্রাম-৩ আসনের নিজাম উদ্দিন নাছির ও আমিন রসূল নামে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নও বাতিল করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা। অন্যদিকে, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে চট্টগ্রাম-৪ আসনের ৪ প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মোহম্মদ ইমরান, দিদারুল আলম, আখতার হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম-৫ আসনের দুই প্রার্থী নাছির হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও ভোটার-সমর্থকদের ভুল তথ্য দেওয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রথম দফা যাচাই-বাছাই শেষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটার সমর্থকের তালিকায় গরমিল থাকায় মনোনয়নপত্রগুলো বাতিল করা হয়।