চার দিকে সবুজ মাঠ। মাঝখানে বাগানের সারি সারি গাছের ডালে ঝুলছে হলুদ রঙের বড় বড় সুমিষ্ট কমলা। কমলার ভারে হেলে পড়েছে গাছের ডালপালা। এমন নয়নাভিরাম কমলা বাগান দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ আসছেন। ঘুরছেন ফিরছেন। খাচ্ছেন চোঁখের সামনে গাছ থেকে পারা পাকা কমলা।
ছবি/ সেলফি তুলছেন বন্ধু বান্ধব বা পরিবার পরিজন নিয়ে। কমলা কিনে হাসি মুখে বাড়ি ফিরছেন। সমতল ভুমিতে এমন কমলা বাগানের দেখা মিলবে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার উত্তর মালঞ্চাগ্রামে। বাগানটির নাম দেয়া হয়েছে অরেঞ্জ ভ্যালী।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানান, এ অঞ্চলের মাটি কমলা তথা লেবু জাতীয় ফল উৎপাদনের জন্য উপযোগী। এ জন্য এরই মধ্যে অরেঞ্জ ভ্যালী সহ আরো বেশ কয়েকটি কমলা ও মাল্টা বাগান হয়েছে। অরেঞ্জ ভ্যালী সারা দেশে বেশ নাম করেছে। ঐ বাগানের কমলা সুমিষ্ট ও রসালো। ১ ডিসেম্বর থেকে বাগান থেকে কমলা তোলা শুরু হয়েছে। বাইরে বিক্রি করা হয়না এখানকার কমলা। বাগানেই বিক্রি করা হচ্ছে তিন’শ টাকা কেজি দরে। বাগানের সাড়ে চার’শ গাছ থেকে এবার কমলা পাওয়া যাবে প্রায় ১৫ হাজার কেজি। সে হিসেবে ৪৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা বাগান মালিকের।
বাগান মালিক উপজেলার বীরহলি গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আবু জাহিদ ইবনুল ইকরাম জুয়েল জানান, ১৩ বছর আগে আড়াই বিঘা জমিতে ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান করেন তিনি। শুরুতে বাগানটিতে আড়াই’শ কমলা গাছ রোপন করা হয়। এথান থেকে বেশ আয় হয় তার। দু’বছর আগে পাশের আম বাগান কেটে সেখানে আরো দুই’শ কমলা চারা রোপন করা হয়। এবার সব গাছেই ফল ধরেছে। গত বছর এ বাগানের আড়াই’শ গাছের কমলা
থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছিলেন তিনি। এবার সাড়ে চার’শ গাছ থেকে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন। বাগানে প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। তাদের রেষ্ট নিতে এবার বাগানের ভিতরে দুটি কটেজ ও খাবারের জন্য একটি রেষ্টুরেন্টও চালু করা হয়েছে। সন্ধায় বাগানের
নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে বিশেষ আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীর চাপ কমাতে বাগানে প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিন’শ দর্শনার্থী বাগানে আসছেন বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। তার পরেও ভিড় সামাল দিতে মালিক সহ ১৫ জনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ রকম চলবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারীর মাঝা মাঝি পর্যন্ত। উদ্যোক্তা জুয়েল আরো জানান, কমলা একটি অর্থকরী ফসল, যা খুব সহজে ও স্বল্প খরচে উৎপাদন করা যায়। তার বাগানে কমলার চারাও উৎপাদন করা হয়। কেউ যদি এমন বাগান করতে চায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি বিকেএসপি’র পরিচালক ফুয়াদ হাসান কমলা বাগান পরিদর্শনে এসে মুখ হয়ে বাগানে স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীদের জানান, দেশেই এমন কমলা বাগান হতে পারে তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ^াসই করা যায় না। মনে হচ্ছে দার্জিলিং এর কোন এক কমলা বাগানে ঘুড়ছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সেনা কর্মকর্তা জানান, স্বপরিবারে ঘুড়ে আসার মত একটি চমৎকার জায়গা এ কমলা বাগান।
সহকারি অধ্যাপক আসাদুজ্জামান জানান, অরেঞ্জ ভ্যালীর সাফল্য দেখে তারা পীরগঞ্জ-বোচাগঞ্জ পাকা সড়কে বাঁশগাড়া এলাকায় একটি কমলা বাগান করেছেন। তাদের বাগানেও ফল আসতে শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া কমলা তথা লেবু জাতীয় ফলের জন্য উপযোগী। অরেঞ্জ ভ্যালী এর উদাহারণ। এ জাতীয় ফল বাগান করতে তাদের পক্ষ থেকে চাষীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। চাষীরাও আগ্রহী হচ্ছেন। এতে তারা লাভবানও হচ্ছেন। আগামীতে কৃষি অর্থনীতিতে লেবু জাতীয় ফল উৎপাদন বিশেষ ভুমিকা রাখবে বলে মনে করেই এ কৃষিবিদ।

























