০১:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফিরে দেখা ২০২৩: গবেষণাময় একটি বছর কেটেছে বাকৃবির

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং প্রাচীন কৃষি বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। সূচনালগ্ন থেকেই বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষকরা
কৃষিখাতে যুগান্তকারী উদ্ভাবনে তৎপর। এখানে বছরজুড়েই চলেছে নতুন নতুন
গবেষণা। তেমনি ২০২৩ সাল বাকৃবির জন্য ছিলো গবেষণাময় একটি বছর।
জেলাটিন তৈরি, শুক্রানু সংরক্ষনে সাফল্য, কাসাভা থেকে মুখরোচক খাদ্যপণ্য তৈরি,
ধান সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি, অরহর থেকে খাদ্যপণ্য তৈরির মতো গবেষণা কার্যক্রম
পরিচালিত হয়েছে গত বছর। এর বাইরেও  অনেক গবেষণা নিয়ে বছরজুড়ে
আলোচনায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার এসব
আলোচিত ঘটনা নিয়ে সাজানো হয়েছে এ সালতামামি।
বাউরেসের অধীনে ৩৮৭৪ টি গবেষণা প্রকল্প সমাপ্ত
বাকৃবি গবেষণা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত
হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে
এ পর্যন্ত বাউরেসের অধীনে সর্বমোট ৩হাজার ৮৭৪ টি গবেষণা প্রকল্পের কাজ
সমাপ্ত হয়েছে। একই সাথে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩২ টি গবেষণা
প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া গত এক বছরে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন
জার্নালে মোট ৫৩৪ টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। জেলাটিন তৈরি
দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ত্বক থেকে জেলাটিন নিষ্কাশন করে প্রাথমিক
সফলতা পেয়েছেন বাকৃবির  ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.
ইসমাইল হোসেন ও তার গবেষক দল । এই জেলাটিন থেকে জেলি আইসক্রিম, জেলি
ক্যান্ডি, জেলি পুডিং খাদ্যদ্রব্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন গবেষক দল।
নিষ্কাশিত এই জিলাটিন থেকে একদিকে যেমন বিদেশ থেকে  জেলাটিন
আমদানির খরচ কমাবে, তেমনি মাছের ফেলে দেওয়া বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা করা
সম্ভব হবে।

কাসাভা থেকে মুখরোচক খাদ্যপণ্য তৈরি বাকৃবির ফসল উদ্ভিদ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মো. ছোলায়মান
আলী ফকির কাসাভার (যা শিমুল আলু হিসেবে পরিচিত) ১৩ পদের মুখরোচক খাবার
তৈরি করেছেন। যার ব্যবহার দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পাশাপাশি তরুণদের সফল
উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করেছেন ওই গবেষক।

তিনি এবং তার গবেষণা দল দীর্ঘ সময় ধরে কাসাভা (শিমুল আলু) নিয়ে গবেষণা
করে প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। কাসাভার মূলের অংশ
প্রক্রিয়াজাত করে কাসাভা-অড়হড় রুটি, চিপস, কাসাভা-স্টার্চ, পশুখাদ্য, অড়হড়
পাই, কেক, আটা, পাকুড়া, সিদ্ধ কাসাভা আলু, হালুয়া, তেল পিঠা,স্লাইচ, চপস,
কাসাভা আলুর তরকারিসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাদ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন ওই
গবেষক দল।
ভ্রূণ স্থানান্তরের মাধ্যমে বছরে ২৫-৩০ টি বাছুর উৎপাদন সম্ভব
বাংলাদেশে সাধারণত এখন পর্যন্ত কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন করা
হয়। এ পদ্ধতিতে বছরে গাভী থেকে একটি বাচ্চা পাওয়া যায়। কিন্তু ভ্রূণ স্থানান্তরের
মাধ্যমে বছরে ২৫-৩০ টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভ্রূণ উৎপাদন এবং প্রতিস্থাপনের
মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজননের তুলনায় অধিক সংখ্যক বাছুর উৎপাদন সম্ভব বলে
জানান  প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. নাসরীন সুলতানা জুয়েনা। প্রাণিসম্পদ
অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পটি (এলডিডিপি)
পরিচালিত হয়।
মাছ চাষে শুক্রাণু সংরক্ষণে সাফল্য
প্রজাতি ও শুক্রাণুর বিশুদ্ধতা রক্ষা করে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্যে দীর্ঘদিন ধরে
গবেষণা করছেন বাকৃবির এক দল গবেষক। সম্প্রতি গবেষকদল শুক্রাণু সংরক্ষণে
সাফল্য অর্জন করেছেন। ক্রায়োপ্রিজার্ভড বা সংরক্ষিত শুক্রাণু (মাইনাস ১৯৬
ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়) ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাণিজ্যিক
হ্যাচারিতে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, বিগহেডকার্প এবং
গ্রাসকার্প মাছের পোনা উৎপাদনে বাকৃবি গবেষকরা এ সফলতা পেয়েছেন।
গরুর জাত উন্নয়নে দেশীয় জাতের গরুর কৃত্রিম প্রজননে উন্নত জাতের গরুর
সংরক্ষণ করা শুক্রাণু দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে এলেও, মাছের ক্ষেত্রে গবেষকরা এবারই
প্রথম ক্রায়োপ্রিজার্ভড শুক্রাণু ব্যবহার করে বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে পোনা
উৎপাদনে সফল হলেন।
অড়হর ডালের মুখরোচক ৭ টি পণ্য উদ্ভাবন
অড়হর গাছের বীজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মুখরোচক ৭টি পণ্য উদ্ভাবন করে
সফলতা পেয়েছেন বাকৃবির ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.
ছোলায়মান আলী ফকির। অড়হর গাছ থেকে সফলতা পাওয়া উদ্ভাবিত পণ্যগুলো হলো-
শুকনো বীজের অড়হর-রুটি, অড়হর-পুরী, অড়হর-সিংগাড়াসহ সেদ্ধ কাঁচা বীজের
পেষ্ট দিয়ে অড়হর-হালুয়া ও অড়হর-কাবাব, অড়হর বীজ ভাজা এবং কাঁচা বীজের
সবজি।
হাওর অঞ্চলে ধান চাষে সহায়ক হবে স্বল্পমেয়াদি জাত

হাওর অঞ্চলের জমিগুলো মূলত এক ফসলি। প্রায় সম্পূর্ণ জমিতেই ধান চাষ করা হয়।
এ অঞ্চল ধান উৎপাদনের সবচেয়ে বড় বাধা হলো ফ্ল্যাশ ফ্লাড (হঠাৎ বন্যা)। পানি
সরে যাওয়ার পর এবং পরবর্তী বন্যার আগেই ফসল কর্তন করতে স্বল্প মেয়াদি ধান চাষ
করাই অন্যতম সমাধান। দীর্ঘমেয়াদি ধান চাষে উৎপাদন যতই বেশি হোক বন্যায়
ধ্বংস হতে পারে পুরো উৎপাদন। তাই হাওর অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি ধান চাষ হতে পারে ধান
উৎপাদনের মূল সহায়ক।থ গবেষণা উপ প্রকল্পের বিষয়ে বাকৃবি অধ্যাপক ড. মো.
হাবিবুর রহমান প্রামাণিক এসব কথা বলেন।
সাব ক্লিনিক্যাল ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত ২৮ ভাগ গাভীর ওলান
দুধেল গাভীর একটি অন্যতম রোগ হলো ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগ।
রোগটি গাভীর নীরব ঘাতক রোগ হিসেবে পরিচিত। ওলান ফোলা রোগ দুই ধরণের
হয়, ক্লিনিক্যাল ও সাব ক্লিনিক্যাল। লক্ষণ দেখে ক্লিনিক্যাল ম্যাসটাইটিস
সহজে নির্ণয় করা গেলেও লক্ষণ প্রকাশ না করায় সাব ক্লিনিক্যাল ম্যাসটাইটিস
সহজে নির্ণয় করা যায় না। ওলান ফোলা রোগ হলে গাভীর দুধের উৎপাদন কমে যায়।
এতে খামারিদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ২৮
দশমিক ৭৫ শতাংশ গাভীর ওলানের এক চতুর্থাংশ সাব ক্লিনিক্যাল
ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত। গবেষণা সম্পর্কে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রকল্পের প্রধান
গবেষক ও প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু হাদী নূর আলী খান।
ধান শুকানো ও সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন
বর্তমানে রিপার ও কম্বাইন্ড হারভেস্টর থাকায় খুব সহজেই ধান কেটে ঘরে তুলছেন
হাওরসহ অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকরা। কিন্তু ধান কাটার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কাজ ধান
শুকিয়ে তা সংরক্ষণ করা। এক্ষেত্রে কৃষকদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । এ
সমস্যার সমাধানে ধান শুকানো ও সংরক্ষণ পদ্ধতিকে যান্ত্রিকীকরণের আওতায় নেওয়ার
জন্যে কাজ শুরু করে বাকৃবির পোস্ট হারভেস্ট লস রিডাকশন ইনোভেশন ল্যাবের
(পিএইচএলআইএল) একদল গবেষক। উদ্ভাবন করেছেন বিএইউএসটিআর ড্রায়ার
এবং কোকুন সমৃদ্ধ পাঁচ স্তরবিশিষ্ট হারমেটিক ব্যাগ।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

ফিরে দেখা ২০২৩: গবেষণাময় একটি বছর কেটেছে বাকৃবির

আপডেট সময় : ০৪:০৪:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জানুয়ারী ২০২৪

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং প্রাচীন কৃষি বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। সূচনালগ্ন থেকেই বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষকরা
কৃষিখাতে যুগান্তকারী উদ্ভাবনে তৎপর। এখানে বছরজুড়েই চলেছে নতুন নতুন
গবেষণা। তেমনি ২০২৩ সাল বাকৃবির জন্য ছিলো গবেষণাময় একটি বছর।
জেলাটিন তৈরি, শুক্রানু সংরক্ষনে সাফল্য, কাসাভা থেকে মুখরোচক খাদ্যপণ্য তৈরি,
ধান সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি, অরহর থেকে খাদ্যপণ্য তৈরির মতো গবেষণা কার্যক্রম
পরিচালিত হয়েছে গত বছর। এর বাইরেও  অনেক গবেষণা নিয়ে বছরজুড়ে
আলোচনায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার এসব
আলোচিত ঘটনা নিয়ে সাজানো হয়েছে এ সালতামামি।
বাউরেসের অধীনে ৩৮৭৪ টি গবেষণা প্রকল্প সমাপ্ত
বাকৃবি গবেষণা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত
হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে
এ পর্যন্ত বাউরেসের অধীনে সর্বমোট ৩হাজার ৮৭৪ টি গবেষণা প্রকল্পের কাজ
সমাপ্ত হয়েছে। একই সাথে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩২ টি গবেষণা
প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া গত এক বছরে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন
জার্নালে মোট ৫৩৪ টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। জেলাটিন তৈরি
দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ত্বক থেকে জেলাটিন নিষ্কাশন করে প্রাথমিক
সফলতা পেয়েছেন বাকৃবির  ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.
ইসমাইল হোসেন ও তার গবেষক দল । এই জেলাটিন থেকে জেলি আইসক্রিম, জেলি
ক্যান্ডি, জেলি পুডিং খাদ্যদ্রব্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন গবেষক দল।
নিষ্কাশিত এই জিলাটিন থেকে একদিকে যেমন বিদেশ থেকে  জেলাটিন
আমদানির খরচ কমাবে, তেমনি মাছের ফেলে দেওয়া বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা করা
সম্ভব হবে।

কাসাভা থেকে মুখরোচক খাদ্যপণ্য তৈরি বাকৃবির ফসল উদ্ভিদ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মো. ছোলায়মান
আলী ফকির কাসাভার (যা শিমুল আলু হিসেবে পরিচিত) ১৩ পদের মুখরোচক খাবার
তৈরি করেছেন। যার ব্যবহার দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পাশাপাশি তরুণদের সফল
উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করেছেন ওই গবেষক।

তিনি এবং তার গবেষণা দল দীর্ঘ সময় ধরে কাসাভা (শিমুল আলু) নিয়ে গবেষণা
করে প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। কাসাভার মূলের অংশ
প্রক্রিয়াজাত করে কাসাভা-অড়হড় রুটি, চিপস, কাসাভা-স্টার্চ, পশুখাদ্য, অড়হড়
পাই, কেক, আটা, পাকুড়া, সিদ্ধ কাসাভা আলু, হালুয়া, তেল পিঠা,স্লাইচ, চপস,
কাসাভা আলুর তরকারিসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাদ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন ওই
গবেষক দল।
ভ্রূণ স্থানান্তরের মাধ্যমে বছরে ২৫-৩০ টি বাছুর উৎপাদন সম্ভব
বাংলাদেশে সাধারণত এখন পর্যন্ত কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন করা
হয়। এ পদ্ধতিতে বছরে গাভী থেকে একটি বাচ্চা পাওয়া যায়। কিন্তু ভ্রূণ স্থানান্তরের
মাধ্যমে বছরে ২৫-৩০ টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভ্রূণ উৎপাদন এবং প্রতিস্থাপনের
মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজননের তুলনায় অধিক সংখ্যক বাছুর উৎপাদন সম্ভব বলে
জানান  প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. নাসরীন সুলতানা জুয়েনা। প্রাণিসম্পদ
অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পটি (এলডিডিপি)
পরিচালিত হয়।
মাছ চাষে শুক্রাণু সংরক্ষণে সাফল্য
প্রজাতি ও শুক্রাণুর বিশুদ্ধতা রক্ষা করে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্যে দীর্ঘদিন ধরে
গবেষণা করছেন বাকৃবির এক দল গবেষক। সম্প্রতি গবেষকদল শুক্রাণু সংরক্ষণে
সাফল্য অর্জন করেছেন। ক্রায়োপ্রিজার্ভড বা সংরক্ষিত শুক্রাণু (মাইনাস ১৯৬
ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়) ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাণিজ্যিক
হ্যাচারিতে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, বিগহেডকার্প এবং
গ্রাসকার্প মাছের পোনা উৎপাদনে বাকৃবি গবেষকরা এ সফলতা পেয়েছেন।
গরুর জাত উন্নয়নে দেশীয় জাতের গরুর কৃত্রিম প্রজননে উন্নত জাতের গরুর
সংরক্ষণ করা শুক্রাণু দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে এলেও, মাছের ক্ষেত্রে গবেষকরা এবারই
প্রথম ক্রায়োপ্রিজার্ভড শুক্রাণু ব্যবহার করে বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে পোনা
উৎপাদনে সফল হলেন।
অড়হর ডালের মুখরোচক ৭ টি পণ্য উদ্ভাবন
অড়হর গাছের বীজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মুখরোচক ৭টি পণ্য উদ্ভাবন করে
সফলতা পেয়েছেন বাকৃবির ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.
ছোলায়মান আলী ফকির। অড়হর গাছ থেকে সফলতা পাওয়া উদ্ভাবিত পণ্যগুলো হলো-
শুকনো বীজের অড়হর-রুটি, অড়হর-পুরী, অড়হর-সিংগাড়াসহ সেদ্ধ কাঁচা বীজের
পেষ্ট দিয়ে অড়হর-হালুয়া ও অড়হর-কাবাব, অড়হর বীজ ভাজা এবং কাঁচা বীজের
সবজি।
হাওর অঞ্চলে ধান চাষে সহায়ক হবে স্বল্পমেয়াদি জাত

হাওর অঞ্চলের জমিগুলো মূলত এক ফসলি। প্রায় সম্পূর্ণ জমিতেই ধান চাষ করা হয়।
এ অঞ্চল ধান উৎপাদনের সবচেয়ে বড় বাধা হলো ফ্ল্যাশ ফ্লাড (হঠাৎ বন্যা)। পানি
সরে যাওয়ার পর এবং পরবর্তী বন্যার আগেই ফসল কর্তন করতে স্বল্প মেয়াদি ধান চাষ
করাই অন্যতম সমাধান। দীর্ঘমেয়াদি ধান চাষে উৎপাদন যতই বেশি হোক বন্যায়
ধ্বংস হতে পারে পুরো উৎপাদন। তাই হাওর অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি ধান চাষ হতে পারে ধান
উৎপাদনের মূল সহায়ক।থ গবেষণা উপ প্রকল্পের বিষয়ে বাকৃবি অধ্যাপক ড. মো.
হাবিবুর রহমান প্রামাণিক এসব কথা বলেন।
সাব ক্লিনিক্যাল ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত ২৮ ভাগ গাভীর ওলান
দুধেল গাভীর একটি অন্যতম রোগ হলো ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগ।
রোগটি গাভীর নীরব ঘাতক রোগ হিসেবে পরিচিত। ওলান ফোলা রোগ দুই ধরণের
হয়, ক্লিনিক্যাল ও সাব ক্লিনিক্যাল। লক্ষণ দেখে ক্লিনিক্যাল ম্যাসটাইটিস
সহজে নির্ণয় করা গেলেও লক্ষণ প্রকাশ না করায় সাব ক্লিনিক্যাল ম্যাসটাইটিস
সহজে নির্ণয় করা যায় না। ওলান ফোলা রোগ হলে গাভীর দুধের উৎপাদন কমে যায়।
এতে খামারিদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ২৮
দশমিক ৭৫ শতাংশ গাভীর ওলানের এক চতুর্থাংশ সাব ক্লিনিক্যাল
ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত। গবেষণা সম্পর্কে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রকল্পের প্রধান
গবেষক ও প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু হাদী নূর আলী খান।
ধান শুকানো ও সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন
বর্তমানে রিপার ও কম্বাইন্ড হারভেস্টর থাকায় খুব সহজেই ধান কেটে ঘরে তুলছেন
হাওরসহ অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকরা। কিন্তু ধান কাটার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কাজ ধান
শুকিয়ে তা সংরক্ষণ করা। এক্ষেত্রে কৃষকদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । এ
সমস্যার সমাধানে ধান শুকানো ও সংরক্ষণ পদ্ধতিকে যান্ত্রিকীকরণের আওতায় নেওয়ার
জন্যে কাজ শুরু করে বাকৃবির পোস্ট হারভেস্ট লস রিডাকশন ইনোভেশন ল্যাবের
(পিএইচএলআইএল) একদল গবেষক। উদ্ভাবন করেছেন বিএইউএসটিআর ড্রায়ার
এবং কোকুন সমৃদ্ধ পাঁচ স্তরবিশিষ্ট হারমেটিক ব্যাগ।