সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে গত বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবার জমি আবাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। গত প্রায় এক মাস ধরে জমি পরিচর্চা, জমিতে হাল দেয়া ও জমি রোপন সহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার কৃষক, শ্রমিক ও জমির মালিকেরা। তবে গত বছর বড় জাতের ধান সহ অন্যান্য ধানের বাম্পার ফলন হলেও ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ছোট ধানের ফলন ভালো হয়নি।
যে কারণে এবার কৃষকেরা ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান আবাদ না করে ভালো জাতের ধান আবাদ করছেন। সেই সঙ্গে গত বছর থেকে এবার আবাদি জমির পরিমাণও বেড়েছে। ফলে প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে আগামী বৈশাখ মৌসুমে শতভাগ বাম্পার ফলন উঠবে কৃষকদের গোলায়। এমন লক্ষ্য বাস্তবায়নে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাঠে-ময়দানে কাজ করছেন।
গত ২ জানুয়ারি মঙ্গলবার জহির উদ্দিন, শাহিন মিয়া, আবদুল খালিক, এনামুল হক, রবি দাসসহ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে অনেকে জানান, জমিতে ধান রোপনে আমরা ব্যস্ত আছি। অন্য কৃষকেরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানাগেছে, এবার জগন্নাথপুর উপজেলার সকল অনাবাদি পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে নানাভাবে কাজ করছে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। ফলশ্রæতিতে ইতোমধ্যে আমন ও শাক-সবজিতে অসংখ্য পতিত জমি আবাদের আওতায় এসেছে। পাশাপাশি বোরোতেও অনাবাদি অনেক জমি আবাদের আওতায় আসে। যা চাষাবাদ করা হয়েছে। জগন্নাথপুরে ধান সহ সব ধরণের ফলমুল ও শাক-সবজি উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষি বিপ্লব ঘটাতে অত্যান্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে কৃষি অধিদপ্তর।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জমি আবাদে কৃষকদের পুরনো সংস্কৃতি থেকে বের করে নিয়ে এসে আধুনিক প্রযুক্তিতে জমি আবাদে উৎসাহিত করা। কম খরচে অল্প জমিতে বেশি ফলন পেতে কৃষি প্রশিক্ষণ ও মাঠে-ময়দানে গিয়ে সরেজিমেন আধুনিক প্রযুক্তিতে জমি আবাদ শিখিয়ে দেয়াসহ নানামুখি পদক্ষেপ সফল হয়েছে। এছাড়া সরকারি ভাবে উপজেলার সকল এলাকার প্রান্তিক দরিদ্র কৃষকদের বিনামূল্যে সার-বীজ সহ কৃষি উপকরণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে জমি আবাদে উৎসাহিত করা হয়। কৃষি অধিপ্তরের সহায়তা ও সঠিক পরামর্শে আমনে বাম্পার ফলন পেয়ে এখন বোরোতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, গত বছর জগন্নাথপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় নলুয়ার হাওর সহ সকল হাওর ও নন হাওর রকম ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছিল। এবার নতুন করে আরো ৪৫ হেক্টর পতিত জমি আবাদের আওতায় এসেছে। ফলে নতুন করে সরকারি ভাবে জমি আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমি। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৫০২ মেট্রিকটন ধান।
কার আগে কে জমি রোপন করবে, এ নিয়ে হাওরে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। শহিদ আলী, আলমগীর মিয়া, আবদুল জলিলসহ অন্যান্য কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে জমিতে ধান লাগিয়ে লাভবান হয়েছি। যদিও ২৮ ও ২৯ জাতের ধান সাদা হয়ে মরে গিয়ে নষ্ট হওয়ায় অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন। যে কারণে এবার আর ২৮ ও ২৯ জাতের ধান আবাদ না করতে বলে দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তাদের পরামর্শ নিয়ে ২৮ ও ২৯ বাদ দিয়ে বেশির ভাগ বড় জাতের ধান জমিতে লাগানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ সবুজ বাংলাকে বলেন, জগন্নাথপুরে বোরোতেও আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে ফলনেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে জমি রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। এ পর্যন্ত ৪৪ ভাগ জমি রোপন হয়ে গেছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই শতভাগ শেষ হয়ে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছর ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ফলন ভালো না হওয়ায় এবার তা বাদ দিয়ে ভালো জাতের ধান আবাদ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সরকারি ভাবে বিনামূল্যে কৃষি সহায়তা প্রদান সহ প্রয়োজনীয় কৃষি প্রশিক্ষণ ও মাঠে-ময়দানে গিয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যাতে আগামী বৈশাখ মৌসুমে কৃষকদের ভাইদের গোলায় উঠে বাম্পার ফলন।
















