০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পূর্ণিমার জোঁতে বজ্রপাতসহ বৃষ্টির অপেক্ষায় হালদার কার্পজাতীয় মা মাছ

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মিঠাপানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। মেজরকার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য এটি বিখ্যাত। প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসের অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে পাহাড়ী ঢল নেমে পানিতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি করে এবং পানির তাপমাত্রা কমে (২৫-২৮) ডিগ্রী সেলসিয়াস ও বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (পানির তাপমাত্রা, পানির স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদি) মিত্রস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হলেই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে। স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা এসব ডিম সংগ্রহ করে মাটির তৈরি কূয়া বা হ্যাচারীতে ফুটিয়ে উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোনা উৎপাদন করে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের নেতিবাচক প্রভাবে বিগত কয়েক বছর হালদা থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ব্যাপকহারে কমেছে। বর্তমানে হালদা নদীতে চলছে মেজর কার্পজাতীয় মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম। কিন্তু  বজ্রপাতসহ বৃষ্টি না হওয়ায় হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় বিগত এপ্রিল মাসের দুটি তিথিতে/জো’তে (অমাবস্যার ও পূর্ণিমার) ডিম ছাড়েনি কার্পজাতীয় মা মাছ। হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্র কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার উপযোগী কিনা জানতে চাইলে হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড.মো.শফিকুল ইসলাম জানান, নদীর স্পনিং গ্রাউন্ডের পানির নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায় পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক গুনাবলী আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে নদীর পানিতে লবণাক্ততা ও দূষণ নেই। তবে কার্পজাতীয় মাছের প্রজননের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার পানির তাপমাত্রা আদর্শ মানের একটু বেশি রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারী হ্যাচারী ও ডিম সংগ্রহকারীদের নানাবিধ প্রস্তুতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি একেবারে শেষের দিকে। পরিবেশ অনুকুলে থাকলে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল নেমে আসলে চলতি মাসের পূর্ণিমার জোঁ’তে (১০ মে- ১৪ মে) না হয় অমাবস্যার জোঁ’তে (২৫ মে- ২৯ মে) হালদা নদীতে মেজর কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মো: নরুল আলম নামের এক ডিম সংগ্রহকরী জানান, ৫০ বছর ধরে আমরা ডিম সংগ্রহ করছি। নৌকাসহ সবকিছু আমরা প্রস্তুিত করছি। এখন আশায় আছি। নদীতে কবে ডিম ছাড়বে। জানা গেছে, প্রতি বৎসর চৈত্র মাস থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। প্রবল বর্ষণ ও বজ্রপাত হলে নদীতে পানির গভীরতা বৃদ্ধি পাবে৷ ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে নদীর পানি ঘোলাটে হলে পানির গভীরতা তৈরি হয়ে সেখানে ডিম দেয় মা মাছরা।
এদিকে হালদা নদীতে মাছের আগমন অবাদ ও নিরাপদ করতে রাউজান ও হাটহাজারী এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মৎস্য বিভাগ ও হালদার নৌ পুলিশ সার্বক্ষণিক নদী পাহাড়া নদীতে অভিযান জোরদার করছে। নদীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি মাধ্যমে মা মাছের নিরাপত্তায় জোরদার করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

পূর্ণিমার জোঁতে বজ্রপাতসহ বৃষ্টির অপেক্ষায় হালদার কার্পজাতীয় মা মাছ

আপডেট সময় : ০৫:৪৩:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মিঠাপানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। মেজরকার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য এটি বিখ্যাত। প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসের অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে পাহাড়ী ঢল নেমে পানিতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি করে এবং পানির তাপমাত্রা কমে (২৫-২৮) ডিগ্রী সেলসিয়াস ও বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (পানির তাপমাত্রা, পানির স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদি) মিত্রস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হলেই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে। স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা এসব ডিম সংগ্রহ করে মাটির তৈরি কূয়া বা হ্যাচারীতে ফুটিয়ে উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোনা উৎপাদন করে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের নেতিবাচক প্রভাবে বিগত কয়েক বছর হালদা থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ব্যাপকহারে কমেছে। বর্তমানে হালদা নদীতে চলছে মেজর কার্পজাতীয় মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম। কিন্তু  বজ্রপাতসহ বৃষ্টি না হওয়ায় হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় বিগত এপ্রিল মাসের দুটি তিথিতে/জো’তে (অমাবস্যার ও পূর্ণিমার) ডিম ছাড়েনি কার্পজাতীয় মা মাছ। হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্র কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার উপযোগী কিনা জানতে চাইলে হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড.মো.শফিকুল ইসলাম জানান, নদীর স্পনিং গ্রাউন্ডের পানির নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায় পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক গুনাবলী আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে নদীর পানিতে লবণাক্ততা ও দূষণ নেই। তবে কার্পজাতীয় মাছের প্রজননের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার পানির তাপমাত্রা আদর্শ মানের একটু বেশি রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারী হ্যাচারী ও ডিম সংগ্রহকারীদের নানাবিধ প্রস্তুতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি একেবারে শেষের দিকে। পরিবেশ অনুকুলে থাকলে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল নেমে আসলে চলতি মাসের পূর্ণিমার জোঁ’তে (১০ মে- ১৪ মে) না হয় অমাবস্যার জোঁ’তে (২৫ মে- ২৯ মে) হালদা নদীতে মেজর কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মো: নরুল আলম নামের এক ডিম সংগ্রহকরী জানান, ৫০ বছর ধরে আমরা ডিম সংগ্রহ করছি। নৌকাসহ সবকিছু আমরা প্রস্তুিত করছি। এখন আশায় আছি। নদীতে কবে ডিম ছাড়বে। জানা গেছে, প্রতি বৎসর চৈত্র মাস থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। প্রবল বর্ষণ ও বজ্রপাত হলে নদীতে পানির গভীরতা বৃদ্ধি পাবে৷ ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে নদীর পানি ঘোলাটে হলে পানির গভীরতা তৈরি হয়ে সেখানে ডিম দেয় মা মাছরা।
এদিকে হালদা নদীতে মাছের আগমন অবাদ ও নিরাপদ করতে রাউজান ও হাটহাজারী এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মৎস্য বিভাগ ও হালদার নৌ পুলিশ সার্বক্ষণিক নদী পাহাড়া নদীতে অভিযান জোরদার করছে। নদীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি মাধ্যমে মা মাছের নিরাপত্তায় জোরদার করা হয়েছে।