০৮:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধান কাটার শ্রমিক সংকট: বোরোর ভাল ফলন হলেও দু:শ্চিন্তায় কৃষক

ফাইল ছবি

চলতি বোরো মৌসুমে বর্ষা শুরুর আগেই মাঠের পাকা ধান ঘরে তোলার তোড়জোড় চলছে ফেনীর পরশুরাম উপজেলার কৃষকদের। একযোগে মাঠের ধান পেকে যাওয়ায় সবাই ধান কাটা শুরু করেছে। এতে তীব্র শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এবার ধানের ফলনও হয়েছে খুবই ভালো। কিন্তু এক মণ ধানেও মিলছে না একজন শ্রমিক। টানা বৃষ্টি শুরু হলে পাকা ধান ঘরে তুলতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে এমন আশঙ্কায় রয়েছে এলাকার হাজার হাজার কৃষক। শ্রমিক সংকটের কারণে সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারছে না অনেকেই।
বৈশাখী ঝড়ের আগেই ক্ষেতের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে মরিয়া কৃষকরা। ইতোমধ্যে মাঠের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। বর্তমানে আবহাওয়া ধান কাটার উপযোগী হয়ে যাওয়া ও একই সঙ্গে ধান পেকে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক মিলছে না। এমন অবস্থায় কদরও বেড়েছে শ্রমিকদের। কয়দিন আগেও শ্রমিকের মূল্য ছিল ৭শ থেকে ৮শ টাকা। বর্তমানে একজন শ্রমিকের মজুরি হচ্ছে ১৩শ টাকা। কোনো কোনো বাজারে ১৪শ টাকাও হাঁকা হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দুই বেলা খাবার ও চা-নাস্তা। অথচ তার বিপরীতে একমণ ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা।
কৃষকরা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ৪০ শতক জমিতে এবার বৈরী আবহাওয়া বৃষ্টি না হওয়া, সার, বীজের দাম বৃদ্ধি ও সেচ খরচ বেশি হওয়ায় ধান কাটা, মাড়াই করাসহ উৎপাদন খরচ এমনিতেই ২২-২৩ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষক আবদুল খালেক জানান, তার জমির ধান পেকে গেছে কিন্তু এখন কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এখন শ্রমিকের দাম এমন যে, ৪০ শতক জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে আরও ৬ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। এবার ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। আবহাওয়া এমন ভালো থাকলে ধানের সঙ্গে সবাই খড় (গো-খাদ্য) সংগ্রহ করতে পারবে। উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষে ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। এবার উপজেলায় ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর। ইতোমধ্যে মাঠের ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। একযোগে মাঠে ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। সব কৃষক ক্ষেত থেকে ধান ঘরে তোলায় ব্যস্ত হওয়ায় শ্রমিকের কদর বেড়েছে। তারা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম হাঁকাচ্ছে। তবে এ সংকট দ্রুত কেটে যাবে। তপ্ত রোদের ভ্যাপসা গরমে কৃষক তার সোনার ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছে। এবার আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ থাকায় ধানে তেমন ক্ষতি হয়নি। তাই কৃষক মনের আনন্দে ধান কাটা ও মাড়াই কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ না হওয়ায় ধানের ফলনে খুশি কৃষক। আগামীতে ধান চাষাবাদ আরও বাড়বে বলে মনে করেন কৃষিবিভাগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষক আবু তালেব। বয়স ৬৫ ছুঁই ছুঁই। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই বৃদ্ধ কৃষক তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে ধান বাঁধার কাজ করছে। অনেকটা মনের আনন্দে তাঁর ধান কাটা ও মাড়াই শেষ করে ঘরে তুলবে। ফলন ভালো ধানের দামও ভালো। এবারের আবহাওয়া অনুকূল পরিবেশে থাকাতে ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি। তাই বিঘায় খরচের হিসাব নিকাশে ধানের দামে অঙ্কটা মিলবে বলে মনে করেন এই বৃদ্ধ কৃষক আবু তালেব। এই কৃষকের মতো এবার সব কৃষকদের বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা জানায়, গতবারের মৌসুমের মতো এবারও বোরো ধান কাটায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট মুহূর্তে শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি খরচ বেশি। প্রতি মজুরি খরচে ১০০ টাকা বেড়ে ৫০০ টাকা। যা কৃষকদের অনেক খরচ পড়ে যাচ্ছে। একদিকে কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি। অপরদিকে শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি। তাই এক বিঘা জমিতে এবার ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। যা প্রতি বিঘায় ধান হবে ২২ থেকে ২৪ মণ। আর ধানের মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। ভালো ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের বোরো আবাদে খুশি প্রকাশ দেখা গেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩৫ হাজার ৭৩২ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন করা হয়েছে। আর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। এই পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ১০ শতাংশ। কিছু দিনের মধ্যে ধান সব ঘরে তুলবে কৃষক। মাঠজুড়ে কৃষকদের ধানকাটার তোড়জোড় চলছে পুরোদমে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ফলে কৃষক এবার অনেক খুশি। ধানের দামও বেশি। আরও বাড়তে পারে বাজারদর ভালো থাকলে। পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন না থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মূল্যস্ফীতি এখনো ঊর্ধ্বমুখী

ধান কাটার শ্রমিক সংকট: বোরোর ভাল ফলন হলেও দু:শ্চিন্তায় কৃষক

আপডেট সময় : ০৪:৫০:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

চলতি বোরো মৌসুমে বর্ষা শুরুর আগেই মাঠের পাকা ধান ঘরে তোলার তোড়জোড় চলছে ফেনীর পরশুরাম উপজেলার কৃষকদের। একযোগে মাঠের ধান পেকে যাওয়ায় সবাই ধান কাটা শুরু করেছে। এতে তীব্র শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এবার ধানের ফলনও হয়েছে খুবই ভালো। কিন্তু এক মণ ধানেও মিলছে না একজন শ্রমিক। টানা বৃষ্টি শুরু হলে পাকা ধান ঘরে তুলতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে এমন আশঙ্কায় রয়েছে এলাকার হাজার হাজার কৃষক। শ্রমিক সংকটের কারণে সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারছে না অনেকেই।
বৈশাখী ঝড়ের আগেই ক্ষেতের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে মরিয়া কৃষকরা। ইতোমধ্যে মাঠের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। বর্তমানে আবহাওয়া ধান কাটার উপযোগী হয়ে যাওয়া ও একই সঙ্গে ধান পেকে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক মিলছে না। এমন অবস্থায় কদরও বেড়েছে শ্রমিকদের। কয়দিন আগেও শ্রমিকের মূল্য ছিল ৭শ থেকে ৮শ টাকা। বর্তমানে একজন শ্রমিকের মজুরি হচ্ছে ১৩শ টাকা। কোনো কোনো বাজারে ১৪শ টাকাও হাঁকা হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দুই বেলা খাবার ও চা-নাস্তা। অথচ তার বিপরীতে একমণ ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা।
কৃষকরা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ৪০ শতক জমিতে এবার বৈরী আবহাওয়া বৃষ্টি না হওয়া, সার, বীজের দাম বৃদ্ধি ও সেচ খরচ বেশি হওয়ায় ধান কাটা, মাড়াই করাসহ উৎপাদন খরচ এমনিতেই ২২-২৩ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষক আবদুল খালেক জানান, তার জমির ধান পেকে গেছে কিন্তু এখন কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এখন শ্রমিকের দাম এমন যে, ৪০ শতক জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে আরও ৬ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। এবার ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। আবহাওয়া এমন ভালো থাকলে ধানের সঙ্গে সবাই খড় (গো-খাদ্য) সংগ্রহ করতে পারবে। উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষে ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। এবার উপজেলায় ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর। ইতোমধ্যে মাঠের ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। একযোগে মাঠে ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। সব কৃষক ক্ষেত থেকে ধান ঘরে তোলায় ব্যস্ত হওয়ায় শ্রমিকের কদর বেড়েছে। তারা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম হাঁকাচ্ছে। তবে এ সংকট দ্রুত কেটে যাবে। তপ্ত রোদের ভ্যাপসা গরমে কৃষক তার সোনার ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছে। এবার আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ থাকায় ধানে তেমন ক্ষতি হয়নি। তাই কৃষক মনের আনন্দে ধান কাটা ও মাড়াই কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ না হওয়ায় ধানের ফলনে খুশি কৃষক। আগামীতে ধান চাষাবাদ আরও বাড়বে বলে মনে করেন কৃষিবিভাগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষক আবু তালেব। বয়স ৬৫ ছুঁই ছুঁই। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই বৃদ্ধ কৃষক তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে ধান বাঁধার কাজ করছে। অনেকটা মনের আনন্দে তাঁর ধান কাটা ও মাড়াই শেষ করে ঘরে তুলবে। ফলন ভালো ধানের দামও ভালো। এবারের আবহাওয়া অনুকূল পরিবেশে থাকাতে ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি। তাই বিঘায় খরচের হিসাব নিকাশে ধানের দামে অঙ্কটা মিলবে বলে মনে করেন এই বৃদ্ধ কৃষক আবু তালেব। এই কৃষকের মতো এবার সব কৃষকদের বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা জানায়, গতবারের মৌসুমের মতো এবারও বোরো ধান কাটায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট মুহূর্তে শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি খরচ বেশি। প্রতি মজুরি খরচে ১০০ টাকা বেড়ে ৫০০ টাকা। যা কৃষকদের অনেক খরচ পড়ে যাচ্ছে। একদিকে কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি। অপরদিকে শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি। তাই এক বিঘা জমিতে এবার ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। যা প্রতি বিঘায় ধান হবে ২২ থেকে ২৪ মণ। আর ধানের মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। ভালো ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের বোরো আবাদে খুশি প্রকাশ দেখা গেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩৫ হাজার ৭৩২ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন করা হয়েছে। আর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। এই পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ১০ শতাংশ। কিছু দিনের মধ্যে ধান সব ঘরে তুলবে কৃষক। মাঠজুড়ে কৃষকদের ধানকাটার তোড়জোড় চলছে পুরোদমে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ফলে কৃষক এবার অনেক খুশি। ধানের দামও বেশি। আরও বাড়তে পারে বাজারদর ভালো থাকলে। পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন না থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে।