১০:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাদের ফুঁটে ওঠা সবুজ স্বপ্ন: ফল-সবজির স্বনির্ভর খামার এখন নিজের বাড়িতেই

একদিকে নগরায়নের ব্যস্ততা, অন্যদিকে নিরাপদ খাদ্যের অভাব—এই বাস্তবতায় নগরবাসীর চিন্তা এখন ঘুরছে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে। সেই চাহিদা থেকেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ছাদ কৃষি, যা শুধুই একটি চাষ পদ্ধতি নয়, বরং এক নতুন জীবনধারার নাম।

সবুজে ছাদের নবজাগরণ
রামপুরার গৃহিণী সাহিনা রহমান তার ভাড়া বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন একখণ্ড সবুজ খামার। টবে টমেটো, চাষের ব্যাগে লাউ, ড্রামে পেয়ারা আর পাতিলেবু—সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ প্রজাতির ফল ও সবজি।
তিনি বলেন, “আমি চাই আমার পরিবারের সদস্যদের মুখে যেন নিজের হাতে চাষ করা খাবার তুলে দিতে পারি। সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনের মাঝেও যেন বিতরণ করতে পারে। কীটনাশকমুক্ত, তাজা আর পুষ্টিকর খাবার এখন আমার ছাদেই পাওয়া যায়।” মানুষ চাইলে কী না পারে। সাহিনা রহমান ভাড়া বাসায় থেকেও ছাদ বাগান করেছেন। শুধু ছাদ বাগান করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি তার বাসার বারান্দায় কবুতর পালন করছেন। যা থেকে পরিবারের পুষ্টি চাহিদাও মেটছে। সাহিনার মতে, যার যার অবস্থান থেকে একটু চেষ্টা করলেই অর্গানিক সাক-সবিজ, ফলমূল খাওয়া যায়।

সহজ যাত্রা, সৎ ইচ্ছায় সম্ভব
ছাদ কৃষি শুরু করতে বড় বাজেট বা জটিল প্রযুক্তি প্রয়োজন হয় না। পুরনো ড্রাম, বালতি, বোতল, এমনকি থালাও ব্যবহার করা যায় টব হিসেবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ছাদের দেড়-দুই ইঞ্চি মাটি প্রস্তুত করে, উপযুক্ত জল ও আলো নিশ্চিত করলেই এই চাষ শুরু করা যায়। কেঁচো সার বা জৈব সার ব্যবহার করে বিষমুক্ত ফলন পাওয়া যায় সহজেই।

শুধু খাবার নয়, মানসিক প্রশান্তিও
শুধু খাবার নয়, ছাদ কৃষি মানসিক প্রশান্তিরও উৎস। উদ্যানের মাঝখানে হাঁটতে হাঁটতে কাজের ক্লান্তি দূর হয়। শিশুরাও প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে ঘরের মধ্যেই।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদেন, “সবুজ গাছপালার সংস্পর্শে থাকলে উদ্বেগ ও অবসাদ কমে, ঘুমের গুণগত মান বাড়ে।”

পরিবেশে অবদান
ছাদ কৃষি শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, অক্সিজেন সরবরাহ, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা, এমনকি বায়ু দূষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, যারা ছাদ কৃষি করে, তাদের জন্য বাড়তি কর ছাড় ও উৎসাহমূলক সহায়তার পরিকল্পনাও চলমান।

টবে লেবু গাছ

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ
বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন এনজিও নগর কৃষিকে উৎসাহিত করতে নানা প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। ইউটিউব, ফেসবুক ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও উঠতি চাষিদের জন্য টিউটোরিয়াল সহজলভ্য।

কিছু চ্যালেঞ্জও আছে
যদিও ছাদ কৃষির সম্ভাবনা অনেক, তবে এখনও সচেতনতার অভাব, ছাদে সঠিক কাঠামোগত প্রস্তুতি না থাকা, ও নৈতিক স্থায়িত্ব বিষয়ে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এছাড়া কিছু এলাকায় ছাদের ভার বহনের উপযোগিতা যাচাই না করে চাষ শুরু করলে বিপদ হতে পারে।

ডাটা শাক

শেষ কথা
ছাদ কৃষি আজ আর শুধু শখের চর্চা নয়—এটা এখন শহরজীবনের চাহিদা, স্বাস্থ্য সচেতনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
স্বপ্ন দেখতে হয় ছাদের দিকে তাকিয়ে—আর যদি হাতে থাকে একটু ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম, তাহলে ছাদও হয়ে উঠতে পারে একখণ্ড সবুজ স্বপ্নের বাগান।

জনপ্রিয় সংবাদ

নায়ক রিয়াজের মৃত্যুসংবাদ ফেসবুকে, যা জানাল পরিবার

ছাদের ফুঁটে ওঠা সবুজ স্বপ্ন: ফল-সবজির স্বনির্ভর খামার এখন নিজের বাড়িতেই

আপডেট সময় : ০৯:১৬:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

একদিকে নগরায়নের ব্যস্ততা, অন্যদিকে নিরাপদ খাদ্যের অভাব—এই বাস্তবতায় নগরবাসীর চিন্তা এখন ঘুরছে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে। সেই চাহিদা থেকেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ছাদ কৃষি, যা শুধুই একটি চাষ পদ্ধতি নয়, বরং এক নতুন জীবনধারার নাম।

সবুজে ছাদের নবজাগরণ
রামপুরার গৃহিণী সাহিনা রহমান তার ভাড়া বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন একখণ্ড সবুজ খামার। টবে টমেটো, চাষের ব্যাগে লাউ, ড্রামে পেয়ারা আর পাতিলেবু—সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ প্রজাতির ফল ও সবজি।
তিনি বলেন, “আমি চাই আমার পরিবারের সদস্যদের মুখে যেন নিজের হাতে চাষ করা খাবার তুলে দিতে পারি। সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনের মাঝেও যেন বিতরণ করতে পারে। কীটনাশকমুক্ত, তাজা আর পুষ্টিকর খাবার এখন আমার ছাদেই পাওয়া যায়।” মানুষ চাইলে কী না পারে। সাহিনা রহমান ভাড়া বাসায় থেকেও ছাদ বাগান করেছেন। শুধু ছাদ বাগান করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি তার বাসার বারান্দায় কবুতর পালন করছেন। যা থেকে পরিবারের পুষ্টি চাহিদাও মেটছে। সাহিনার মতে, যার যার অবস্থান থেকে একটু চেষ্টা করলেই অর্গানিক সাক-সবিজ, ফলমূল খাওয়া যায়।

সহজ যাত্রা, সৎ ইচ্ছায় সম্ভব
ছাদ কৃষি শুরু করতে বড় বাজেট বা জটিল প্রযুক্তি প্রয়োজন হয় না। পুরনো ড্রাম, বালতি, বোতল, এমনকি থালাও ব্যবহার করা যায় টব হিসেবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ছাদের দেড়-দুই ইঞ্চি মাটি প্রস্তুত করে, উপযুক্ত জল ও আলো নিশ্চিত করলেই এই চাষ শুরু করা যায়। কেঁচো সার বা জৈব সার ব্যবহার করে বিষমুক্ত ফলন পাওয়া যায় সহজেই।

শুধু খাবার নয়, মানসিক প্রশান্তিও
শুধু খাবার নয়, ছাদ কৃষি মানসিক প্রশান্তিরও উৎস। উদ্যানের মাঝখানে হাঁটতে হাঁটতে কাজের ক্লান্তি দূর হয়। শিশুরাও প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে ঘরের মধ্যেই।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদেন, “সবুজ গাছপালার সংস্পর্শে থাকলে উদ্বেগ ও অবসাদ কমে, ঘুমের গুণগত মান বাড়ে।”

পরিবেশে অবদান
ছাদ কৃষি শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, অক্সিজেন সরবরাহ, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা, এমনকি বায়ু দূষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, যারা ছাদ কৃষি করে, তাদের জন্য বাড়তি কর ছাড় ও উৎসাহমূলক সহায়তার পরিকল্পনাও চলমান।

টবে লেবু গাছ

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ
বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন এনজিও নগর কৃষিকে উৎসাহিত করতে নানা প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। ইউটিউব, ফেসবুক ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও উঠতি চাষিদের জন্য টিউটোরিয়াল সহজলভ্য।

কিছু চ্যালেঞ্জও আছে
যদিও ছাদ কৃষির সম্ভাবনা অনেক, তবে এখনও সচেতনতার অভাব, ছাদে সঠিক কাঠামোগত প্রস্তুতি না থাকা, ও নৈতিক স্থায়িত্ব বিষয়ে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এছাড়া কিছু এলাকায় ছাদের ভার বহনের উপযোগিতা যাচাই না করে চাষ শুরু করলে বিপদ হতে পারে।

ডাটা শাক

শেষ কথা
ছাদ কৃষি আজ আর শুধু শখের চর্চা নয়—এটা এখন শহরজীবনের চাহিদা, স্বাস্থ্য সচেতনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
স্বপ্ন দেখতে হয় ছাদের দিকে তাকিয়ে—আর যদি হাতে থাকে একটু ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম, তাহলে ছাদও হয়ে উঠতে পারে একখণ্ড সবুজ স্বপ্নের বাগান।