ডয়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৩৯ শিশু যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রচণ্ড শীতের কারণে শিশুরা ডাইরিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন।
৭ মাসের শিশু হুসাইন। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মাঝিয়ালী গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে। মা রোজিনা বেগম জানান, কনকনে শীতের কারণে হুসাইন বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। বাড়িতে রেখে পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছিলো। মঙ্গলবার গভীর রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে যশোর জেনারেল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানিয়েছেন, হুসাইন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।
মণিরামপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের টিপু সুলতানের দুই মাসের সন্তান তাওফা শিশু ওয়ার্ডের ৭ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন। পাশে বসে আছেন মা রহিমা খাতুন। নিউমোনিয়া-ডায়রিয়া ও কাঁশিতে আক্রান্ত হয়ে গত ৫ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি শিশুটি। শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, হুসাইন ও তাওফার মতো ৩৯ শিশু শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন।
এদিকে, বুধবার বিদ্যালয় চলাকালীন বর্ষা (১৪) নামে এক ছাত্রী শীতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সে যশোর শহরের রেলগেট এলাকার মিজান মাতুব্বরের মেয়ে ও মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। এ ছাড়া গত ১ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন শিশু বিভাগের সামনে অসংখ্য রোগীদের ভিড় থাকছে। শিশুদের পাশাপাশি মেডিসিন বিভাগেও শীতজনিত রোগী বেড়েছে।
বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১৬ জানুয়ারি ১৪ ডিগ্রি সেলসেয়িাস, ১৫ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৪ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৩ জানুয়ারি ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১২ জানুয়ারি ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ জানুয়ারি ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১০ জানুয়ারি ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, শীতের প্রকোপ বাড়ায় বেশির ভাগ শিশু সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগ থেকে বাদ পড়ছে না বয়স্ক মানুষেরাও। গত ১ সপ্তাহে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুধুমাত্র শীতজনিত রোগে আক্রান্ত ১ হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সামাদ জানিয়েছেন, শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এ সময় শিশুর প্রতি মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে। গায়ে গরম কাপড় ছাড়াও হাত ও পায়ে মোজা পরাতে হবে। শীতজনিত রোগের বেশিরভাগই স্বল্পমেয়াদী ও সহজ চিকিৎসায় সেরে যায়। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা অন্য যে কোনো ওষুধ সেবন করানো যাবে না।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. পার্থ প্রতীম চক্রবর্ত্তী জানান, প্রচন্ড শীতে শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, শীতের কারণে যশোরে অনেকেই ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছেন। শিশু ও বয়স্করা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি ও কাঁশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে। চিকিৎসাসেবায় চিকিৎসক ও সেবিকারা রোগীদের রাত-দিন চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
যশোরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম জানান, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর ছিন্নমূল মানুষের মাঝে সরকারিভাবে ৬১ হাজার কম্বল বিরতণ করা হয়েছে।
যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম জানান, তীব্র শীত উপেক্ষা করে সকালে শিক্ষার্থীদের স্কুল আসতে কষ্ট হচ্ছে এটা সত্য। কিন্তু নির্দেশনা এসেছে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে থাকলে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করার।


























