১১:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে ১০ চ্যালেঞ্জ

✔স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

✔অসংক্রামক রোগের চিকিৎসাই বড় চ্যালেঞ্জ

✔সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেতনেই খরচ বেশি

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে দুঃখবোধ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। যাদের একটু অর্থের প্রাচুর্য আছে তারাই চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে চলে যান। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা চালু থাকলেও দুটোর ধরণ সম্পূর্ণ আলাদা। যাদের বেশি অর্থ তারাই ছুটছেন বেসরকারি খাতে সেবা নিতে। যাদের অর্থের সাশ্রয় নেই তারা সরকারি চিকিৎসাসেবার উপর নির্ভরশীল। এমন এক সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন। পেশায় চিকিৎসক এবং পাঁচটি পোড়ার রোগীর বেড নিয়ে যার পথচলা শুরু। তিনি সরকারের সহযোগিতায় ৫০০ বেডের শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছেন। এমন একজন জনবান্ধব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে জনগণের প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। এমন অবস্থায় তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে কাজ করবেন। ঢেলে সাজাবেন স্বাস্থ্য খাত। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই আকাক্সক্ষা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে। এক্ষেত্রে তার জন্য স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জগুলো কী? এ নিয়ে সবুজ বাংলা’র সঙ্গে কথা বলেছেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ)’র সাবেক সভাপতি ও জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ডা. রশীদ-ই-মাহবুব।
তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের গত ৫২ বছরে উন্নতি হয়নি তা আমরা বলতে পারি না। তবে, এটি জনপ্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি। চিকিৎসাসেবা খাতে জনপ্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে মাতৃ মৃত্যুরোধ, শিশু মৃত্যুরোধ, নিরাপদ স্যানিটেশন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এসব খাতে আমরা উন্নতি করেছি। স্বাস্থ্যসেবা খাতে আমরা উন্নতি করতে পারিনি। আমাদের এখানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং বৃহৎ পরিসরে বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের প্রথম সমস্যাটা হচ্ছে রোগীর যেখানে ইচ্ছা সেখানে যায়। রোগীকে আমরা সেভাবে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারছি না। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য খাত দুইভাগে বিভক্ত। পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টর। পাবলিক সেক্টরে প্রচুর ভিড় হয়। রোগীর ভিড়ের কারণে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের সঠিক সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। আর এর প্রভাব পড়ে পুরো স্বাস্থ্য খাতের উপর। অন্যদিকে, প্রাইভেট সেক্টরের চিকিৎসাসেবাকে আদর্শ জায়গায় নিয়ে যেতে পারেনি। সেখানে সেবা পেতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। এরপরও সবসময় সঠিক চিকিৎসাসেবা পাওয়া কঠিন হয়।
তৃতীয়ত, স্বাস্থ্য খাতে জড়িত জনশক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট থেকে শুরু করে পুরো স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনশক্তির তালিকা সেভাবে তৈরি করা হয়নি। এর প্রভাব মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য খাতের উপর পড়ছে।
চতুর্থত, ওষুধের মূল্য। দেশে একটি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর আছে। তারা দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যে ফার্মগুলো ওষুধ উৎপাদন করে তারাই ওষুধের দাম নির্ধারণ করে। এই অবস্থায় জনগণের সাধ্যের বাইরেও ওষুধের দাম চলে যায়।
পঞ্চমত, স্বাস্থ্য খাতের জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। কোথায় কাকে কতটুকু স্থান দেয়া যাবে, কোথায় কাকে কতটুকু স্থান নির্ধারণ করে দিতে হবে তা পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর সঠিক রোগ নির্ধারণ করে রেফারেল সিস্টেম চালুর অবস্থা এখনও তৈরি হয়নি।
ষষ্ঠত, স্বাস্থ্য খাতের বাজেট নির্ধারণ। পাবলিক সেক্টরে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় তার বেশির ভাগ টাকা কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতেই চলে যায়। এরপর যে অল্প পরিমাণ অর্থ থাকে তা দিয়ে দেশের বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে সঠিক চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হয় না।
সপ্তমত, অসংক্রামক রোগ (হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার) মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ না থাকা। দেশে এখন সংক্রামক (ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া) রোগের চেয়ে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আর এদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক। এই অবস্থায় এই অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। কাজটি অনেক বড়। এটি কোথা থেকে শুরু করবে তা ভাবা দরকার। এখন অন্যরা মন্ত্রণালয়কে কতটুকু সাহায্য করতে আগ্রহী তার উপর বিষয়টির সাফল্য নির্ভর করবে।
অষ্টমত, স্বাস্থ্য খাতের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা। অনেক টাকা খরচ করে সরকারি হাসপাতালে একটি পরীক্ষার জন্য মেশিন বসানো হলো। দেখা যায়, তিন মাস পর মেশিনটি নষ্ট হয়ে গেল। এক্ষেত্রে সেটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। প্রত্যেক হাসপাতালে এর জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ প্রয়োজন। এটি করতে না পারায় মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে।
নবমত, স্বাস্থ্যনীতির আওতায় গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নির্ণয় করে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিবিদ, সকলের সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে এই খাতের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নির্ণয় করে তা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
দশমত, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতির উন্মেষ ঘটানো। সব বিষয়গুলোকে সমন্বয় করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করা সম্ভব।
ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, এতসব জটিলতার মধ্যে জনগণের যেটা চাহিদা তারা সুস্থ স্বাভাবিক চিকিৎসা চায়। এটা আমরা দিতে পারছি না। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে কাজ করতে চাইছেন এটা খুব ভালো একটি দিক। রোগীর হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রের নীতির প্রয়োজন হয় না। হাসপাতালের পরিচালক নিজেই এই দায়িত্ব চমৎকারভাবে পালন করতে পারেন। স্বাস্থ্য খাতের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা, জনশক্তির সঠিক ব্যবহার করা, চিকিৎসকদের নৈতিক অবস্থান দৃঢ় করা, জনগণকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করার মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব। এই খাতের খুব ছোট ছোট দিকগুলোকে ধরে ধরে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এগিয়ে যেতে পারেন। আর এর মাধ্যমেই বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাফল্য আসতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নায়ক রিয়াজের মৃত্যুসংবাদ ফেসবুকে, যা জানাল পরিবার

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে ১০ চ্যালেঞ্জ

আপডেট সময় : ০৪:২৯:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪

✔স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

✔অসংক্রামক রোগের চিকিৎসাই বড় চ্যালেঞ্জ

✔সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেতনেই খরচ বেশি

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে দুঃখবোধ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। যাদের একটু অর্থের প্রাচুর্য আছে তারাই চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে চলে যান। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা চালু থাকলেও দুটোর ধরণ সম্পূর্ণ আলাদা। যাদের বেশি অর্থ তারাই ছুটছেন বেসরকারি খাতে সেবা নিতে। যাদের অর্থের সাশ্রয় নেই তারা সরকারি চিকিৎসাসেবার উপর নির্ভরশীল। এমন এক সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন। পেশায় চিকিৎসক এবং পাঁচটি পোড়ার রোগীর বেড নিয়ে যার পথচলা শুরু। তিনি সরকারের সহযোগিতায় ৫০০ বেডের শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছেন। এমন একজন জনবান্ধব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে জনগণের প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। এমন অবস্থায় তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে কাজ করবেন। ঢেলে সাজাবেন স্বাস্থ্য খাত। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই আকাক্সক্ষা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে। এক্ষেত্রে তার জন্য স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জগুলো কী? এ নিয়ে সবুজ বাংলা’র সঙ্গে কথা বলেছেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ)’র সাবেক সভাপতি ও জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ডা. রশীদ-ই-মাহবুব।
তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের গত ৫২ বছরে উন্নতি হয়নি তা আমরা বলতে পারি না। তবে, এটি জনপ্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি। চিকিৎসাসেবা খাতে জনপ্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে মাতৃ মৃত্যুরোধ, শিশু মৃত্যুরোধ, নিরাপদ স্যানিটেশন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এসব খাতে আমরা উন্নতি করেছি। স্বাস্থ্যসেবা খাতে আমরা উন্নতি করতে পারিনি। আমাদের এখানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং বৃহৎ পরিসরে বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের প্রথম সমস্যাটা হচ্ছে রোগীর যেখানে ইচ্ছা সেখানে যায়। রোগীকে আমরা সেভাবে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারছি না। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য খাত দুইভাগে বিভক্ত। পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টর। পাবলিক সেক্টরে প্রচুর ভিড় হয়। রোগীর ভিড়ের কারণে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের সঠিক সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। আর এর প্রভাব পড়ে পুরো স্বাস্থ্য খাতের উপর। অন্যদিকে, প্রাইভেট সেক্টরের চিকিৎসাসেবাকে আদর্শ জায়গায় নিয়ে যেতে পারেনি। সেখানে সেবা পেতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। এরপরও সবসময় সঠিক চিকিৎসাসেবা পাওয়া কঠিন হয়।
তৃতীয়ত, স্বাস্থ্য খাতে জড়িত জনশক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট থেকে শুরু করে পুরো স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনশক্তির তালিকা সেভাবে তৈরি করা হয়নি। এর প্রভাব মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য খাতের উপর পড়ছে।
চতুর্থত, ওষুধের মূল্য। দেশে একটি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর আছে। তারা দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যে ফার্মগুলো ওষুধ উৎপাদন করে তারাই ওষুধের দাম নির্ধারণ করে। এই অবস্থায় জনগণের সাধ্যের বাইরেও ওষুধের দাম চলে যায়।
পঞ্চমত, স্বাস্থ্য খাতের জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। কোথায় কাকে কতটুকু স্থান দেয়া যাবে, কোথায় কাকে কতটুকু স্থান নির্ধারণ করে দিতে হবে তা পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর সঠিক রোগ নির্ধারণ করে রেফারেল সিস্টেম চালুর অবস্থা এখনও তৈরি হয়নি।
ষষ্ঠত, স্বাস্থ্য খাতের বাজেট নির্ধারণ। পাবলিক সেক্টরে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় তার বেশির ভাগ টাকা কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতেই চলে যায়। এরপর যে অল্প পরিমাণ অর্থ থাকে তা দিয়ে দেশের বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে সঠিক চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হয় না।
সপ্তমত, অসংক্রামক রোগ (হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার) মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ না থাকা। দেশে এখন সংক্রামক (ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া) রোগের চেয়ে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আর এদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক। এই অবস্থায় এই অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। কাজটি অনেক বড়। এটি কোথা থেকে শুরু করবে তা ভাবা দরকার। এখন অন্যরা মন্ত্রণালয়কে কতটুকু সাহায্য করতে আগ্রহী তার উপর বিষয়টির সাফল্য নির্ভর করবে।
অষ্টমত, স্বাস্থ্য খাতের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা। অনেক টাকা খরচ করে সরকারি হাসপাতালে একটি পরীক্ষার জন্য মেশিন বসানো হলো। দেখা যায়, তিন মাস পর মেশিনটি নষ্ট হয়ে গেল। এক্ষেত্রে সেটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। প্রত্যেক হাসপাতালে এর জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ প্রয়োজন। এটি করতে না পারায় মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে।
নবমত, স্বাস্থ্যনীতির আওতায় গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নির্ণয় করে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। এর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিবিদ, সকলের সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে এই খাতের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নির্ণয় করে তা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
দশমত, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতির উন্মেষ ঘটানো। সব বিষয়গুলোকে সমন্বয় করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করা সম্ভব।
ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, এতসব জটিলতার মধ্যে জনগণের যেটা চাহিদা তারা সুস্থ স্বাভাবিক চিকিৎসা চায়। এটা আমরা দিতে পারছি না। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে কাজ করতে চাইছেন এটা খুব ভালো একটি দিক। রোগীর হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রের নীতির প্রয়োজন হয় না। হাসপাতালের পরিচালক নিজেই এই দায়িত্ব চমৎকারভাবে পালন করতে পারেন। স্বাস্থ্য খাতের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা, জনশক্তির সঠিক ব্যবহার করা, চিকিৎসকদের নৈতিক অবস্থান দৃঢ় করা, জনগণকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করার মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব। এই খাতের খুব ছোট ছোট দিকগুলোকে ধরে ধরে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এগিয়ে যেতে পারেন। আর এর মাধ্যমেই বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাফল্য আসতে পারে।