দীর্ঘকাল অযত্নে পড়ে থাকা সাড়ে তিনশ বছরের পুরনো ঢাকা গেইট নতুন রূপে ফিরেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর পেরিয়ে টিএসসি যেতে চোখে পড়ে মীর জুমলা মোগল আমলের নান্দনিক স্থাপত্য ‘ঢাকা গেট’।
আজ বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ঢাকা গেইট’ উদ্বোধন করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এই স্থাপনা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল গতবছর মে মাসে। প্রায় ৮ মাস ধরে চলতে থাকা সংস্কার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আজ তা উন্মুক্ত করা হয়। এই গেটটি পুননির্মাণ ব্যয় হয়েছে ৮২ লক্ষ টাকা।
উদ্বোধনের সময় ঢাকা ৮ আসনের সাংসদ আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাসিম, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, স্থপতি ড. আবু সাঈদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, পৃথিবী বড় বড় অট্টালিকা, অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারবে কিন্তু নিজেদের ঐতিহ্য নির্মাণ করতে পারবে না। চারশো বছরের পুরনো এই কামানটা আগামী চারশো বছর পরেও নতুন প্রজন্ম দেখতে আসবে। এটাই আমাদের প্রাপ্তি। অচিরেই লালকুঠি, রূপলাল হাউজ, বড় কাঠরাসহ অন্যান্য স্থাপনাগুলো সংস্কার করে আমরা উন্নত ঢাকা গড়ে তুলব।
স্থপতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ ঢাকা গেইট সংস্কার প্রক্রিয়া এবং সেখানে ব্যবহৃত বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে ধারণা দিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, অতিতের স্থাপনার সাথে মিল রেখে চুনসুরকি আর ছোট ইটের সংমিশ্রণে সংস্কার করা হয়েছে এই স্থাপনার। সংস্কারের কাজের জন্য নওগাঁর পাহাড়পুর থেকে আনা হয়েছিলো ১৮ জন অভিজ্ঞ শ্রমিক। যাদের নিপুণ হাতে ৩ পিলার যুক্ত ৭টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে।
ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির সমন্বয় না হলে এ ধরনের কাজে হাত দেওয়া যায় না। এই স্থাপনাকে জনএলাকা হিসেবে উম্মুক্ত করে দিয়ে দক্ষিণ সিটি মেয়র মেয়র সংস্কৃতিমননের পরিচয় দিয়েছেন। নান্দনিক এই স্থাপত্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান শান্ত বলেন, ঢাকা শহরে বহু পুরাতন স্থাপনা রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা অনেকে অবগত না। আমি এদিক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করি। অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকার কারণে এই স্থাপনা চোখে পড়তো না। বর্তমানে নতুন করে সংস্কারের ফলে দারুণ লাগছে। আমি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
উল্লেখ্য, ইতিহাসে ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নির্মাণ করা হয়েছিল এই ফটক ।বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশে ব্যবহার হতো এ তোরণ। সেই সময় এর নাম ছিল ‘মীর জুমলার গেট’। পরে কখনো ‘ময়মনসিংহ গেট’ কখনো ‘ঢাকা গেট’ বা ‘রমনা গেইট’ নামে পরিচিতি পায়।
স/মিফা


























