প্রায় এক দশকের বেশি সময় যাবৎ নিজ মাঠে কোনো টেস্ট সিরিজ না হারা ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে ইংল্যান্ডে আক্রমণাত্মক ‘বাজবল’ স্টাইল। আগামীকাল হায়দরাবাদে শুরু হওয়া ম্যাচ দিয়ে পাঁচ টেস্টের সিরিজ শুরু করবে স্বাগতিক ভারত ও সফরকারী ইংল্যান্ড। অবশ্য ব্যক্তিগত কারণে সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে ভারতের হয়ে খেলছেন না তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলি। তবে তার পরও স্পষ্ট ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামবে স্বাগতিক ভারত।

তবে ইংল্যান্ড কখনো ভারতের মাঠে স্বাগতিকদের হারাতে পারেনি এমনটা নয়। এলিস্টার কুকের নেতৃত্বে ভারতের মাঠে সর্বশেষ চার টেস্ট সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল সফরকারী ইংলিশরা। ভারত সফরে সর্বশেষ সিরিজ জয়ী ইংল্যান্ড দলের সদস্য মন্টি প্যানেসার বলেছেন, স্পিন বড় ভূমিকা পালন করবে এমন সিরিজে সফরকারীদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ইংল্যান্ডের সাবেক এ স্পিনার টক স্পোর্টসকে বলেন, ‘ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ডের টেস্ট জয়ের সম্ভাবনা আছে। তাদের ইতিবাচক মানসিকতা থাকতে হবে, বেন স্টোকসের নিজ থেকেই ভাবতে হবে, ‘টার্নি পিচে বাজবল সফল হবে কি না। এটাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

ভারতে প্রস্তুতি ম্যাচে না খেলে আবুধাবিতে প্রস্তুতি নিয়েছেন অধিনায়ক স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড, যা নিয়ে তার দেশে সমালোচনা কম হয়নি। ইংলিশদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা প্রসঙ্গে প্যানেসার বলেন, ‘ভারতে সিরিজ জিততে সক্ষম হলে তিনি (স্টোকস) ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক এবং টেস্ট ক্রিকেটে সেরা অধিনায়কদের একজন হিসেবে বিবেচিত হবেন।’

সর্বশেষ ২০২১-২২ মৌসুমে ২-২ ব্যবধানে ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজটি শেষ হয়েছিল। ২০২২ সালে স্টোকসদের দায়িত্ব নেয়ার পর লাল বলে ইংল্যান্ডের ভাগ্য পরিবর্তন বড় ভূমিকা রাখেন ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। স্টোকস-ম্যাককালাম জুটি এমন একটি দলের দায়িত্ব নেন, যা আগের ১৭ টেস্টের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছিল। আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের জন্য নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ম্যাককালামের ডাকনাম দেওয়া হয় ‘বাজবল’। তাদের অধীনে ১৮টি টেস্টের মধ্যে ১৩টিতে জয় পায় ইংল্যান্ড।

কিন্তু গত গ্রীষ্মে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অ্যাশেজ সিরিজ ২-২-এ ড্র করায় ‘বাজবল’ নিয়ে প্রথম সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ডের সর্বশেষ টেস্ট জয়ী দলের মধ্যে এবার আছেন বর্ষীয়ান পেসার জেমস এন্ডারসন এবং অভিজ্ঞ ব্যাটার জো রুট।

টেস্টে ৭০০ উইকেট ক্লাবে নাম লেখাতে ১০ উইকেট প্রয়োজন এন্ডারসনের। কিন্তু প্রথম টেস্টের একাদশে সুযোগ হয়নি তার। প্রথম টেস্টের জন্য ইংল্যান্ডের ঘোষিত একাদশে একমাত্র পেসার মার্ক উড। তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে ইংল্যান্ড। অভিষেক হতে যাচ্ছে ২৪ বছর বয়সী বাঁ হাতি স্পিনার টম হার্টলির। তার সঙ্গে আরও আছেন রেহান আহমেদ ও জ্যাক লিচ। ব্যাটিং লাইন আপে জো রুট, জনি বেয়ারস্টো, স্টোকস ও ওলি পোপকে নিয়ে মিডল অর্ডার সাজিয়েছে ইংল্যান্ড।
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১-এ ড্র করেছে ভারত। আগামী জুনে টি-২০ বিশ্বকাপের আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে তারা। ঘরের মাঠে স্পিন ট্রাকে শক্তিশালী দল ভারত। টেস্ট ফরম্যাটের মানিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জ থাকবে রোহিত শর্মাসহ অন্যদের। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে অস্ট্রেলিয়ার পরই আছে ভারত। টেবিলের অষ্টম স্থানে ইংল্যান্ড। আগামী বছর লর্ডসের ফাইনাল খেলতে হলে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে জিততে হবে ইংলিশদের। স্পিন ট্রাকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজার অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করছে ভারত। টেস্টে দু’জনের মোট উইকেট ৭৬৫টি।

প্রথম দুই টেস্টে কোহলির অনুপস্থিতি ভারতকে সমস্যায় ফেলবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন সেঞ্চুরিসহ কোহলির ব্যাটিং গড় ৫৬। তৃতীয় টেস্টে তিনি দলে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে কোহলির পরিবর্তে প্রথম দুই টেস্টের দলে সুযোগ পেয়েছেন রজত পাতিদার। এই সিরিজ দিয়ে টেস্টে নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছেন যশস্বী জয়সওয়াল এবং উইকেটরক্ষক-ব্যাটার কেএস ভারত।

ইংল্যান্ড একাদশ : বেন স্টোকস (অধিনায়ক), জ্যাক ক্রলি, বেন ডাকেট, ওলি পোপ, জো রুট, জনি বেয়ারস্টো, বেন ফোকস, রেহান আহমেদ, টম হার্টলি, মার্ক উড ও জ্যাক লিচ।

ভারত দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, যশস্বী জয়সওয়াল, রজত পাতিদার, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, কেসএ ভারত, ধ্রুব জুরেল, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজ, মুকেশ কুমার, জসপ্রিত বুমরাহ এবং আভেশ খান।

স/মিফা