◉ ইমরানকে কারাগারে রেখেই আজ ভোটগ্রহণ
◉ ভোটের আগের দিন পরপর বিস্ফোরণে নিহত ২৬
◉ সরকার গঠনে বড় ভূমিকা রাখবে তরুণরা
◉ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৬৭টি রাজনৈতিক দল
◉ ভোটার ১২ কোটি ৮০ লাখ
চরম উত্তেজনার মধ্যে অবশেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগারে রেখেই আজ পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৬তম জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ৪ প্রদেশ ও ৩ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে একযোগে এই ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে দেশটির ১৬৭ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এ নির্বাচন ঘিরে দেশটিতে গত কয়েক মাস ধরে ব্যাপক সহিংসতা চলছে। নির্বাচনের আগের দিনও পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বালুচিস্তান প্রদেশে পরপর জোড়া বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৬ জন। চলছে অর্থনৈতিক নানা সংকট।
এদিকে একাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস (সাইফার) এবং তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে যথাক্রমে ১০ ও ১৪ বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। এই নির্বাচনে প্রার্থিতা করতে পারছেন না তিনি। তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) যেসব প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদেরকে দলের নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও আদালত। ফলে নিজেদের বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থীদের তুলনায় বেশ বেকায়দায় আছেন পিটিআই প্রার্থীরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাজহার আব্বাস গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আদালতের বিচারের সম্মুখীন হচ্ছেন। যেহেতু পিটিআইয়ের নির্বাচনী প্রতীক বাতিল হয়ে গেছে, কার্যতই তারা ভোটে অংশ নিতে পারছে না। পরিস্থিতি খারাপ থেকে অধিকতর খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে পাকিস্তানে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিশ্চয়তা চান পাকিস্তানের বাসিন্দারা। নানা কারণে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তানে উত্তেজনা-উৎসবমুখর পরিবেশ থাকার কথা ছিল, স্বাভাবিকভাবেই তা অনেকটা ফিকে। দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক জটিলতার কারণে নির্বাচনের গতানুগতিক জৌলুস হারিয়ে গেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও অন্যান্য সদস্যদের প্রার্থিতা বাতিলে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পর এবারের নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে গেছে বলেও মত তাদের।
দেশটির শীর্ষ জাতীয় দৈনিক ডন গতকাল বুধবার তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘অর্ধনৈতিক অস্থিতিশীলথা ইস্যুতে প্রধান ৩টি দলের কোনোটিই এখন পর্যন্ত কোনো দিশা দেখাতে পারেনি। সবাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সমস্যার কথা বলছে, কিন্তু কোনো দলের নির্বাচনী ইশতেহারে এটি পরিলক্ষিত হয়নি যে, কীভাবে এসব সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।’ মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো সমান সুবিধা (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) পায়নি।
কিন্তু তার পরও নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তানে যতখানি উত্তেজনা রয়েছে তার মূল অবদান এই দু’টি দলের। এবং অসম হলেও প্রকৃত লড়াই হচ্ছে পিএমএলএন এবং পিটিআইয়ের প্রার্থীদের মধ্যে। একদিকে পিএমএলএন পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল এবং অন্যদিকে পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমরান খান পাকিস্তানের শীর্ষ জনপ্রিয় নেতা। যদিও পাকিস্তানের ১৬৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
এক সময় দুর্নীতির দায়ে রাজনীতিতে আজীবন নিষেধাজ্ঞার দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত নওয়াজ শরিফ লন্ডন ও দুবাইয়ে চার বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে গত ২০২৩ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরেছেন। নির্বাচনী নিষেধজ্ঞা কাটাতে সক্ষম হয়েছেন এবং এবারের নির্বাচনে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থিতাও করছেন।
পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বর্তমানে ওয়াশিংটনের হাডসন ইনস্টিটিউটের গবেষক হুসাইন হাক্কানি বলেন, ‘এই নির্বাচন থেকে আসলে ভবিষ্যতের কোনো দিশা পাওয়ার আশা খুবই ক্ষীণ। কারণ নামে নির্বাচন হলেও এটি আসলে দুই রাজনৈতিক নেতার মধ্যকার লড়াই।
এ ছাড়াও চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুহূর্তে দেশটিতে ১৬তম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যেখানে নির্বাচনের জন্য প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ডলার খরচ ধরা হয়েছে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের ক্ষমতা ছিল সামরিক বাহিনীর হাতে। সরকারি বাজেটের সাড়ে ১২ শতাংশ এখনো তাদের জন্য বরাদ্দ।
২৪ কোটি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৮০ লাখ। যাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ ভোটারের বয়স ৩৫ বছরের কম। ভোটারদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ পুরুষ এবং বাকি ৪৬ শতাংশ নারী। ২৬৬টি আসনের বিপরীতে লড়ছেন ৫ হাজারের বেশি প্রার্থী।
পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে ভারতের সাবেক আইপিএস অফিসার শান্তনু মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘ভারত তার খুবই কাছের প্রতিবেশী দেশের নির্বাচনের গতিপ্রকৃতির উপর নজর রাখছে। যে সরকারই আসুক না কেন, ভারত দেখবে তার স্থায়িত্ব কতটা এবং ভারতের নিরাপত্তার উপর তার কতটা প্রভাব পড়বে। ভারত কখনই চায় না, নিরাপত্তা নিয়ে তাদের চিন্তাটা বেড়ে যায়।’


























