পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে আগামী ১২ মার্চ। সেই হিসাবে আর এক মাসও বাকি নেই। রোজার আগে বাজারে প্রায় প্রতিবছর নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে প্রতিনিয়ত বহুমুখি পরিকল্পনা নিয়ে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে সরকারের তিনটি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর। রোজার আগে দামের রাশ টানতে চাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে সরকার। সরকারের ঘোষণার সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও বাজারে তার কোন প্রভাব পড়েনি। অতিতের মত এবারও সেই সিন্ডিকেটের কারসাজিতে প্রতিনিয়ত দাম বেড়ে যাচ্ছে সকল ভোগ্যপণ্যের। এতে করে সরকারের নানামুখি সুবিধার ফায়দা নিচ্ছে তারা। ফলে সরকারের বহুমুখী সুবিধার সুফল পাচ্ছে না সাধারাণ মানুষ।
রাজধানীর অন্যতম বড় কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়েছে খেজুর ও পাম অয়েলের। পাশাপাশি দাম বেড়েছে ছোলারসহ ইফতার সামগ্রির। রোজায় ছোলার পাশাপাশি ইফতারির অপরিহার্য অনুষঙ্গ পিঁয়াজু ও বেগুনি। বাড়তি চাহিদার কারণে তখন এই দুই পণ্যের দামও বেড়ে যায়। কিন্তু এবার ভরা মৌসুম থেকেই পেঁয়াজ ও বেগুনের বাজার চড়া। রমজানে এই দুটি পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ না হলে বাজার আরো চড়া হয়ে উঠতে পারে। কারণ প্রতিবছরই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
গত এক সপ্তাহ আগে ছেলার দাম ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কিন্ত গতকাল বাজারে বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। সরকারের শুল্ক কমানোর পরও প্রতিনিয়ত দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে হাজী মিজান এন্টারপ্রাইজের মো: ফরহাদ জানান, দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমার যেখান থেকে পণ্য ক্রয় করি সেখানে দাম বেড়েছে এতে আমাদের করার কিছু নেই। সিন্ডিকেট করে প্রতিনিয়ত দাম বাড়ানো হচ্ছে। সরকারের উচিত সঠিক জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা । এই কর্মকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা।
কারওয়ান বাজারের খেজুর ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকায় মানভেদে পাঁচ কেজি ওজনের প্রতি কার্টন খেজুর ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের খেজুরের খুচরা বিক্রেতা মো: খায়রুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহ আগে এক কার্টন মরিয়ম খেজুরের দাম ছিল দুই হাজার ৭০০ টাকা। এখন তা বেড়ে তিন হাজার টাকা হয়েছে। মেদজুল খেজুরের দাম কার্টনপ্রতি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ছয় হাজার টাকা হয়েছে। আমরা পাইকারদের কাছে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, আমদানি খরচ বাড়ে যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়েছে। ‘শুনেছি, কিছু আমদানিকারক শুল্ক ছাড়ের আশায় বন্দরে আমদানি করা খেজুর ফেলে রেখেছিলেন।’ এ জন্য তাদেরকে জরিমানা দিতে হওয়ায় বাজারে খেজুরের দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।
কারওয়ান বাজারের সয়াবিন তেলের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেড়েছে।’ তবে কারওয়ান বাজারে অন্যান্য ভোজ্যতেল ও চিনির দাম অপরিবর্তিত আছে।
ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন শুল্ক কমানোয় চিনির দাম কেজিতে এক টাকা, পাম ও সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে আট থেকে নয় টাকা এবং খেজুরের দাম সাত থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত কমানোর সুযোগ আছে। বাজারে এসব পণ্যের দামে পরিবর্তন আসতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলেও উল্লেখ করেন তারা।
বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়ছে। গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়তে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা যায়। ঢাকার খুচরা বাজারে এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরায় মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। টিসিবি বলছে, এক মাস আগে পেঁয়াজের দাম ছিল ৭০ থেকে ৯০ টাকা। গত বছর এই সময়ে ছিল ৩০ থেকে ৩৮ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো: কালাম বলেন, ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ মোকাম থেকে নিয়ে আসতে খরচ হচ্ছে ১১৭ টাকার মতো। আমরা পাইকারিতে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি। মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষের পথে। আমদানি কম হচ্ছে। তাই বাজার বাড়ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান কাছে শুল্ক কমানো হলেও সাধারণ মানুষ কতটুকু সুবিধা পাচ্ছেন বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি সবুজ বাংলাকে বলেন, জনগণের সুবিধার জন্য চাল, সয়াবিন, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক কমানোর বিষয়টি ভাল। সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি ও প্রাপ্যতা যদি বাড়ে তাহলে সাধারণ ভোক্তার এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে। যতদিন পর্যন্ত এই পরিস্থিতির উন্নতি না হবে । ততদিন পর্যন্ত এর সুবিধা পাবে কিনা সন্দেহ আছে।
বাজারে সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাস্তবতা আমাদের মানতে হবে। শুধুমাত্র মিটিং করে পরিস্থিতির উত্তরণ করা সম্ভব না। যদি এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই তাহলে এর বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
গতকাল বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, আগামী রমজানে কোনো পণ্যের সংকট হবে না। এর মধ্যে মন্ত্রীর নির্দেশে চারটি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সপ্তাহেই আমদানিকারক ও প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে বসে তেলের দাম ঠিক করে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে খেজুরের শুল্কও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভারত আমাদের কাছে পেঁয়াজ ও চিনি রপ্তানি করতে রাজি হয়েছে৷ ভারতসহ পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে কাজ করব। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, চালের কোনো সংকট নেই৷ আমাদের প্রায় ১৭ লাখ টনের বেশি চাল মজুদ রয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, আমনের আবাদ ভালো হয়েছে।
স/মিফা

























