৬৬টি সংগঠনের উদ্যোগ
অভিন্ন পারিবারিক আইন না হলে ক্ষমতার জায়গাটা নিশ্চিত হবে না
মানবাধিকার বাস্তবায়নে উত্তরাধিকার আইন সংশোধনের দাবি
পরিবার ও সমাজে নারীর সমঅংশীদারত্ব না থাকা এবং ক্ষমতার ভারসাম্য পুরুষের হাতে থাকাকে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, অভিন্ন পারিবারিক আইন না হলে নারীর ক্ষমতার জায়গাটা নিশ্চিত হবে না।
গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সমাবেশে তিনি একথা বলেন। ৬৬টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের এই প্ল্যাটফর্ম থেকে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করা, সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার ও সমঅংশীদারত্ব নিশ্চিত করাসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা জিনিস প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি যে সমাজে নারী ও পুরুষের বৈষম্য আছে। আজকে রাষ্ট্রগুলো অন্তর্ভুক্তি সমাজ গঠন করার কথা বলছে। তবে দেশে দেশে বিদ্বেষ-বিভাজন, হিংসা-ঘৃণাও তৈরি হচ্ছে। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে যেভাবে গণতন্ত্র চর্চা করা হচ্ছে, তাতে কোনো রাজনৈতিক শক্তি বিকশিত হতে পারছে না, সুশাসন-ন্যায়বিচারের অভাব রয়েছে। এসব জায়গা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে নারীসমাজেরও মুক্তি আসবে।
তিনি বলেন, ৪৪টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জেন্ডার বাজেট দেওয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই কিন্তু এই বাজেটটা কীভাবে খরচ হচ্ছে, কতটুকু সুফল পাওয়া যাচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। আমরা বিনিয়োগ চাইছি নারীর কর্মসংস্থান, নির্যাতন প্রতিরোধে আইনি ব্যবস্থাকে নারীর জন্য সহজগম্য করার জন্য, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে আইনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য। নারীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে আমরা বিনিয়োগ চাই। এক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা লাগবে। সবক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ এবং অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে। নারীর বিষষে মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান ও সামাজিক ধ্যান-ধারণা এবং প্রথা-আচারে পরিবর্তন শুধু বক্তৃতা-গান-কবিতা দিয়ে হবে না। তার জন্য একটা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এরজন্যও বিনিয়োগ প্রয়োজন।
সমাবেশের আগে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বৈষম্যপূর্ণ পারিবারিক আইন পরিবর্তন করো, নারীর অগ্রসর হওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করো’।
সমাবেশের ঘোষণা পাঠ করেন ব্র্যাকের জেন্ডার, জাস্টিস ও ডাইভার্সিটি কর্মসূচির পরিচালক নবনীতা চৌধুরী। এতে বলা হয়, নারীর জন্য প্রচলিত ক্ষতিকর প্রথা, পারিবারিক আইনসহ বৈষম্যমূলক অন্যান্য আইন, ধর্মের নামে নানা বিধিনিষেধ ও নারীবিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণায় প্রতিনিয়ত নারীর মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা লঙ্ঘিত হচ্ছে। সংবিধানের অঙ্গীকার অনুযায়ী, সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য আইনগতভাবে অবৈধ। অথচ দুঃখজনকভাবে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসকের মাধ্যমে প্রণীত বৈষম্যমূলক ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনের বলে উত্তরাধিকারসহ সম্পদ ও সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাওয়া থেকে দেশের নারীসমাজকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, নারী নির্যাতনের মূল কারণ পারিবারিক অর্থনীতি ও সম্পদে নারীর ভূমিকা না থাকা। এগুলোতে নারী সমান অধিকার পাচ্ছে না। এটা সংবিধানের লঙ্ঘন। উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার লাগবে। কিন্তু বিদ্যমান পারিবারিক আইন এক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করছে। পারিবারিক আইনে নারীর সমান অধিকার কায়েম করতে হবে। এর জন্য এই সংসদে আইন প্রণয়ন করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাই।
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সব রাজনৈতিক দলের কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানান দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের প্রতিনিধি দিলীপ কুমার সরকার। জেন্ডার বাজেটের বরাদ্দ সঠিক প্রক্রিয়ায় খরচ করার দাবি জানান দীপ্ত ফাউন্ডেশন ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান। অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের দাবি জানান বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী।























