১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সোনারগাঁয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় ১ যুবক নিহত, থানায় মামলা দায়ের

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিতে হৃদয় ভূঁইয়া নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হন আরও এক যুবক। এ ঘটনায় শনিবার রাতে নিহত হৃদয়ের বড় ভাই মো. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী আজিজ সরকারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহসিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে ৯ মার্চ শনিবার বিকেলে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ফল ঘোষণা নিয়ে পুলিশ ও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিদর্শকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।

নিহত হৃদয় ভূঁইয়া (২৩) দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি ইউপি সদস্য প্রার্থী কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক। গুলিবিদ্ধ আরেক যুবক একই গ্রামের কামাল ভূঁইয়ার ছেলে ওমর ফারুককে (২৭) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, শনিবার উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইউপি সদস্য পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোরগ প্রতীকে আবদুল আজিজ সরকার ও তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু প্রতিদ্বন্দ্ধীতা করেন। দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে আজিজ সরকার মোরগ প্রতীকে ৯২৯ ভোট এবং তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু ৮১১ ভোট পান।

ফল জানার পর ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে ফের ভোট গণনার অনুরোধ করেন রাজু। পরে ভোট গণনা করে রাজুর পক্ষে এক ভোট যুক্ত হয়। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে রাজু প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে তৃতীয় দফা ভোট গণনার দাবি জানান। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় রাজুর সমর্থক হৃদয় ভূঁইয়া ও ওমর ফারুক গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে হৃদয় মারা যান। এছাড়া আপন, সাখাওয়াত, মফিজুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, রাশেদ, রিপনসহ ১২ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) সাইফুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) খবিরউদ্দিন, কনস্টেবল মঞ্জু মিয়া, জুয়েল রানা, আবদুস সালাম, কবির হোসেন, নূর মোহাম্মদ ও আল আমিন আহত হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

নিহত হৃদয়ের বড় ভাই জহিরুল ইসলামের দাবি, নির্বাচনে রাজু জয়ী হন। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন আজিজ সরকারকে জয়ী ঘোষণা করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ফের ভোট গণনার অনুরোধ করলে আজিজ সরকার বহিরাগত লোকজন নিয়ে গুলি করে। এ সময় পুলিশও রাজুর সমর্থকদের ওপর গুলি চালায়। তিনি জানান, তাঁর ভাই পেশায় টাইলস মিস্ত্রি ছিলেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাঁকে আজিজ সরকারের ভাড়াটিয়া বহিরাগত সস্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, গুলিটি নিহত যুবকের বুকের ডান পাশে লেগেছে। গুলিবিদ্ধ আহত আরেকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আট পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচন শেষে ফল ঘোষণা করে ফেরার পথে কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা করে। এ সময় একজন নারী পোলিং এজেন্ট আহত হন।

সোনারগাঁ থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামান জানান, নির্বাচন শেষে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় আজিজ সরকারের সমর্থকদের গুলিতে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের মধ্যে হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২০ মে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমান ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুরন করলে তার পদটি শূন্য থাকে। গতকাল শনিবার সেখানে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

সোনারগাঁয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় ১ যুবক নিহত, থানায় মামলা দায়ের

আপডেট সময় : ০৬:৪১:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিতে হৃদয় ভূঁইয়া নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হন আরও এক যুবক। এ ঘটনায় শনিবার রাতে নিহত হৃদয়ের বড় ভাই মো. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী আজিজ সরকারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহসিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে ৯ মার্চ শনিবার বিকেলে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ফল ঘোষণা নিয়ে পুলিশ ও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিদর্শকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।

নিহত হৃদয় ভূঁইয়া (২৩) দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি ইউপি সদস্য প্রার্থী কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক। গুলিবিদ্ধ আরেক যুবক একই গ্রামের কামাল ভূঁইয়ার ছেলে ওমর ফারুককে (২৭) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, শনিবার উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইউপি সদস্য পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোরগ প্রতীকে আবদুল আজিজ সরকার ও তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু প্রতিদ্বন্দ্ধীতা করেন। দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে আজিজ সরকার মোরগ প্রতীকে ৯২৯ ভোট এবং তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু ৮১১ ভোট পান।

ফল জানার পর ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে ফের ভোট গণনার অনুরোধ করেন রাজু। পরে ভোট গণনা করে রাজুর পক্ষে এক ভোট যুক্ত হয়। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে রাজু প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে তৃতীয় দফা ভোট গণনার দাবি জানান। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় রাজুর সমর্থক হৃদয় ভূঁইয়া ও ওমর ফারুক গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে হৃদয় মারা যান। এছাড়া আপন, সাখাওয়াত, মফিজুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, রাশেদ, রিপনসহ ১২ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) সাইফুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) খবিরউদ্দিন, কনস্টেবল মঞ্জু মিয়া, জুয়েল রানা, আবদুস সালাম, কবির হোসেন, নূর মোহাম্মদ ও আল আমিন আহত হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

নিহত হৃদয়ের বড় ভাই জহিরুল ইসলামের দাবি, নির্বাচনে রাজু জয়ী হন। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন আজিজ সরকারকে জয়ী ঘোষণা করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ফের ভোট গণনার অনুরোধ করলে আজিজ সরকার বহিরাগত লোকজন নিয়ে গুলি করে। এ সময় পুলিশও রাজুর সমর্থকদের ওপর গুলি চালায়। তিনি জানান, তাঁর ভাই পেশায় টাইলস মিস্ত্রি ছিলেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাঁকে আজিজ সরকারের ভাড়াটিয়া বহিরাগত সস্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, গুলিটি নিহত যুবকের বুকের ডান পাশে লেগেছে। গুলিবিদ্ধ আহত আরেকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আট পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচন শেষে ফল ঘোষণা করে ফেরার পথে কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা করে। এ সময় একজন নারী পোলিং এজেন্ট আহত হন।

সোনারগাঁ থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামান জানান, নির্বাচন শেষে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় আজিজ সরকারের সমর্থকদের গুলিতে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের মধ্যে হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২০ মে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমান ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুরন করলে তার পদটি শূন্য থাকে। গতকাল শনিবার সেখানে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।