০১:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘ওরা ক্ষুধার্ত, না খেয়ে মরছে’

বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে সংযম সাধনার মাস রমজান। কিন্তু এ মাসেও দখলদার ইসরায়েলি আগ্রাসন, বোমা হামলা থেকে নিস্তার নেই ফিলিস্তিনের বাসিন্দাদের। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় এ পর্যন্ত ৩১ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি মারা গেছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’ হয়ে উঠেছে। সামান্য কিছু খাবার ও সুপেয় পানির ওপর বেঁচে রয়েছেন আনুমানিক তিন লাখ মানুষ। তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন নর্দান আয়ারল্যান্ডের বংশোদ্ভূত ফিলিস্তিনি খালিদ আল-এস্তাল। খালিদের স্ত্রী ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন।

খালিদ বলছিলেন, পবিত্র রমজানে আমরা রোজা রাখছি আর তারা রোজা রাখতে পারছেন না। তারা ক্ষুধার্ত, না খেয়ে মরছেন। ইসলামি ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে পবিত্র মাসগুলোর একটি রমজান। তবে এ মাস তিনি উদ্যাপন করতে পারছেন না। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার মুখে গত নভেম্বর মাসে অন্যদের সঙ্গে গাজা ছেড়ে পালিয়ে যায় খালিদের দুই শিশুসন্তান। পরে তাদের ফিরে পেয়েছেন তিনি।

খালিদ বলেন, তার বাবা, দুই ভাই ও বন্ধুরা এখনো গাজায় রয়ে গেছেন। তাদের জন্য সেখানকার পরিস্থিতি ‘মরিয়া’। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। প্রতিটা দিন যেন আগের দিনের চেয়ে খারাপ। সেখানে যা ঘটছে, তা অবিশ্বাস্য, প্রত্যেকটা মানুষ (জীবন বাঁচাতে) মরিয়া, সবাই ভিক্ষা করছেন…। তারা (গাজায় অবস্থানরত স্বজন ও বন্ধুরা) মনে করছেন, আমি তাদের সবকিছু বদলে দিতে পারবো। সবাই আমাকে ডাকছেন, যেনো গাজা থেকে তাদের নিয়ে যাই।

খালিদ বলেন, এ বছর রমজান মাসেও গাজায় যুদ্ধ চলছে। তাই মাসটি উদ্যাপনের কথা ভাবতে পারছি না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো (খ্রিষ্টানদের) যেমন বড়দিন, আমাদের কাছেও তেমন রমজান (গুরুত্বপূর্ণ)। এ মাসের প্রতিটি দিন আমাদের কাছে বিশেষ মর্যাদার। কিন্তু গাজায় যা ঘটছে, তাতে এ বছরের রমজান সম্পূর্ণ ভিন্ন।
নর্দান আয়ারল্যান্ডের রাজধানী বেলফাস্টে জন্মগ্রহণ করেন ফিলিস্তিনি খালিদ আল-এস্তাল। সে সময় তার বাবা কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। খালিদের বয়স যখন ৮, তখন তার পরিবার গাজায় চলে যায়। পরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ত্রী আসওয়াকের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় তার। ইসরায়েলি হামলায় স্ত্রী আসওয়াক নিহত হওয়ার সময় খালিদ সৌদি আরবে কাজ করছিলেন। সে সময় চার বছরের ছেলে আলী ও এক বছরের মেয়ে সারাকে ফিরে পেতে সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। পরে গত নভেম্বরে আয়ারল্যান্ড সরকারের সহায়তায় এ দুই শিশু গাজা থেকে মিসর হয়ে আয়ারল্যান্ডে তাদের বাবার কাছে ফিরতে সক্ষম হয়। স্বাভাবিক সময়ে খালিদ আল-এস্তাল রমজান মাস আসার আগে স্ত্রীকে নিয়ে কেনাকাটা করতেন, রংবেরঙের বাতিতে ঘর সাজাতেন। তবে এ বছর এ কাজে ঘর থেকে বের হতে পারেননি। খালিদ বলেন, রোজা উপলক্ষে আমি এখন কোনো কিছু করার চিন্তা করতে পারছি না। এ যেন অন্যান্য দিনের মতোই। গাজায় যা ঘটছে, তা নিয়ে ভাবা খুব কষ্টের।

খালিদ বলছিলেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে আহত অবস্থায় ডাবলিনে এসেছিল আলী ও সারা। ওরা তাঁর সঙ্গেই থাকছে এখন। দিন দিন সুস্থও হয়ে উঠছে। আলী প্রাক্–প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছে ও ইংরেজি শিখতে শুরু করেছে। এখন বাচ্চা দুটির জন্য সবই করতে হচ্ছে আমাকে। প্রতিটি দিন সংগ্রামের। স্বাভাবিক জীবনে থাকার সময় কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না। কিন্তু এখন রাতের সবটুকু সময় সবকিছু নিয়ে ভাবতে হচ্ছে—পরিবার নিয়ে, আমার স্ত্রীর সঙ্গে যা হয়ে গেল তা নিয়ে। গাজায় রয়ে যাওয়া পরিবারের অন্য সদস্য ও বন্ধুদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি মানসিক চাপ অনুভব করেন বলে জানান খালিদ। তাঁদের জন্য কিছুই করতে পারছেন না তিনি। আমি সবাইকে নিয়ে ভাবি। মানুষগুলোকে (ফিলিস্তিনবাসী) নিয়ে ভাবি। কখনো কখনো আপনি সারা দিন ঘুমান সব ভুলে যেতে, যা ঘটছে তা এড়িয়ে যেতে।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘ওরা ক্ষুধার্ত, না খেয়ে মরছে’

আপডেট সময় : ০৬:৩১:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে সংযম সাধনার মাস রমজান। কিন্তু এ মাসেও দখলদার ইসরায়েলি আগ্রাসন, বোমা হামলা থেকে নিস্তার নেই ফিলিস্তিনের বাসিন্দাদের। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় এ পর্যন্ত ৩১ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি মারা গেছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’ হয়ে উঠেছে। সামান্য কিছু খাবার ও সুপেয় পানির ওপর বেঁচে রয়েছেন আনুমানিক তিন লাখ মানুষ। তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন নর্দান আয়ারল্যান্ডের বংশোদ্ভূত ফিলিস্তিনি খালিদ আল-এস্তাল। খালিদের স্ত্রী ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন।

খালিদ বলছিলেন, পবিত্র রমজানে আমরা রোজা রাখছি আর তারা রোজা রাখতে পারছেন না। তারা ক্ষুধার্ত, না খেয়ে মরছেন। ইসলামি ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে পবিত্র মাসগুলোর একটি রমজান। তবে এ মাস তিনি উদ্যাপন করতে পারছেন না। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার মুখে গত নভেম্বর মাসে অন্যদের সঙ্গে গাজা ছেড়ে পালিয়ে যায় খালিদের দুই শিশুসন্তান। পরে তাদের ফিরে পেয়েছেন তিনি।

খালিদ বলেন, তার বাবা, দুই ভাই ও বন্ধুরা এখনো গাজায় রয়ে গেছেন। তাদের জন্য সেখানকার পরিস্থিতি ‘মরিয়া’। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। প্রতিটা দিন যেন আগের দিনের চেয়ে খারাপ। সেখানে যা ঘটছে, তা অবিশ্বাস্য, প্রত্যেকটা মানুষ (জীবন বাঁচাতে) মরিয়া, সবাই ভিক্ষা করছেন…। তারা (গাজায় অবস্থানরত স্বজন ও বন্ধুরা) মনে করছেন, আমি তাদের সবকিছু বদলে দিতে পারবো। সবাই আমাকে ডাকছেন, যেনো গাজা থেকে তাদের নিয়ে যাই।

খালিদ বলেন, এ বছর রমজান মাসেও গাজায় যুদ্ধ চলছে। তাই মাসটি উদ্যাপনের কথা ভাবতে পারছি না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো (খ্রিষ্টানদের) যেমন বড়দিন, আমাদের কাছেও তেমন রমজান (গুরুত্বপূর্ণ)। এ মাসের প্রতিটি দিন আমাদের কাছে বিশেষ মর্যাদার। কিন্তু গাজায় যা ঘটছে, তাতে এ বছরের রমজান সম্পূর্ণ ভিন্ন।
নর্দান আয়ারল্যান্ডের রাজধানী বেলফাস্টে জন্মগ্রহণ করেন ফিলিস্তিনি খালিদ আল-এস্তাল। সে সময় তার বাবা কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। খালিদের বয়স যখন ৮, তখন তার পরিবার গাজায় চলে যায়। পরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ত্রী আসওয়াকের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় তার। ইসরায়েলি হামলায় স্ত্রী আসওয়াক নিহত হওয়ার সময় খালিদ সৌদি আরবে কাজ করছিলেন। সে সময় চার বছরের ছেলে আলী ও এক বছরের মেয়ে সারাকে ফিরে পেতে সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। পরে গত নভেম্বরে আয়ারল্যান্ড সরকারের সহায়তায় এ দুই শিশু গাজা থেকে মিসর হয়ে আয়ারল্যান্ডে তাদের বাবার কাছে ফিরতে সক্ষম হয়। স্বাভাবিক সময়ে খালিদ আল-এস্তাল রমজান মাস আসার আগে স্ত্রীকে নিয়ে কেনাকাটা করতেন, রংবেরঙের বাতিতে ঘর সাজাতেন। তবে এ বছর এ কাজে ঘর থেকে বের হতে পারেননি। খালিদ বলেন, রোজা উপলক্ষে আমি এখন কোনো কিছু করার চিন্তা করতে পারছি না। এ যেন অন্যান্য দিনের মতোই। গাজায় যা ঘটছে, তা নিয়ে ভাবা খুব কষ্টের।

খালিদ বলছিলেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে আহত অবস্থায় ডাবলিনে এসেছিল আলী ও সারা। ওরা তাঁর সঙ্গেই থাকছে এখন। দিন দিন সুস্থও হয়ে উঠছে। আলী প্রাক্–প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছে ও ইংরেজি শিখতে শুরু করেছে। এখন বাচ্চা দুটির জন্য সবই করতে হচ্ছে আমাকে। প্রতিটি দিন সংগ্রামের। স্বাভাবিক জীবনে থাকার সময় কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না। কিন্তু এখন রাতের সবটুকু সময় সবকিছু নিয়ে ভাবতে হচ্ছে—পরিবার নিয়ে, আমার স্ত্রীর সঙ্গে যা হয়ে গেল তা নিয়ে। গাজায় রয়ে যাওয়া পরিবারের অন্য সদস্য ও বন্ধুদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি মানসিক চাপ অনুভব করেন বলে জানান খালিদ। তাঁদের জন্য কিছুই করতে পারছেন না তিনি। আমি সবাইকে নিয়ে ভাবি। মানুষগুলোকে (ফিলিস্তিনবাসী) নিয়ে ভাবি। কখনো কখনো আপনি সারা দিন ঘুমান সব ভুলে যেতে, যা ঘটছে তা এড়িয়ে যেতে।