১২:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ ১৭ই মার্চ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির জন্মদিন

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা, শোষিত মানুষের মহান নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান একদিনেই ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠেননি। তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠার পেছনে আছে দীর্ঘদিনের আপসহীন সংগ্রাম।আজ সেই সংগ্রামী বাঙালি জাতির স্থাপতি শেখ মুজিবের জন্মদিন।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ এই দিনে বাঙালি জাতির রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ এর টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সাহারা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয় সন্তান শেখ মুজিব। বাবা-মা আদর করে ডাকতেন খোকা বলে।
মুজিবের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৩৯ সালে।
মুজিব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৪৭ সালে। পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যার মাধ্যমে তিনি উক্ত প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক তৎপরতার সূচনা ঘটে। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে বলে ঘোষণা করেন। এতে পূর্ব পাকিস্তানে সাধারন মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।মুজিব মুসলিম লীগের এই পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৫৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের সর্ব কনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে কৃষি-সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন, যাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদও বলা হয়। শেখ মুজিব এই দাবিকে “আমাদের বাঁচার দাবী” শিরোনামে প্রচার করেছিলেন।
১৯৬৬ সালের ৭ই জুন ৬ দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে ১১ জন বাঙালি শহিদ হন।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবসহ ৩৫ জন এর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে যা ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।এতে শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামি করা হয়।উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করার পর শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। সেই থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু নামে ভূষিত হন।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে বিজয়ী হয়। পূর্ব পাকিস্তানের ২টি আসন ছাড়া বাকি সবগুলোতে জয়ী হওয়ায় জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও অর্জন করে আওয়ামী লীগ। ১৭ই ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও সামরিক শাসকগোষ্ঠী দলটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে।বাঙালিরা বুঝতে পারে যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না।আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভায় বিপুলসংখ্যক লোক একত্রিত হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমান সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।তিনি ঘোষণা দেন –
” … রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা। … “
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বর্বর হত্যাকাণ্ড শুরু করে যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ ১০ মাস বন্দী করে রাখে। কিন্তু এ দেশের মানুষেরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের নির্দেশনা মোতাবেক মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করে। বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচালিত হয়েছে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি।
আজ সেই মুজিবের জন্মদিন।যার জন্ম না হলে হয়তো জন্ম হতো না এই স্বাধীন বাংলার।তিনি বাঙালি জাতির পিতা,স্বাধীনতার স্থপতি, বাঙালির রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

আজ ১৭ই মার্চ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির জন্মদিন

আপডেট সময় : ১০:৪৯:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা, শোষিত মানুষের মহান নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান একদিনেই ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠেননি। তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠার পেছনে আছে দীর্ঘদিনের আপসহীন সংগ্রাম।আজ সেই সংগ্রামী বাঙালি জাতির স্থাপতি শেখ মুজিবের জন্মদিন।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ এই দিনে বাঙালি জাতির রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ এর টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সাহারা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয় সন্তান শেখ মুজিব। বাবা-মা আদর করে ডাকতেন খোকা বলে।
মুজিবের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৩৯ সালে।
মুজিব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৪৭ সালে। পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যার মাধ্যমে তিনি উক্ত প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক তৎপরতার সূচনা ঘটে। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে বলে ঘোষণা করেন। এতে পূর্ব পাকিস্তানে সাধারন মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।মুজিব মুসলিম লীগের এই পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৫৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের সর্ব কনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে কৃষি-সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন, যাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদও বলা হয়। শেখ মুজিব এই দাবিকে “আমাদের বাঁচার দাবী” শিরোনামে প্রচার করেছিলেন।
১৯৬৬ সালের ৭ই জুন ৬ দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে ১১ জন বাঙালি শহিদ হন।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবসহ ৩৫ জন এর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে যা ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।এতে শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামি করা হয়।উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করার পর শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। সেই থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু নামে ভূষিত হন।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে বিজয়ী হয়। পূর্ব পাকিস্তানের ২টি আসন ছাড়া বাকি সবগুলোতে জয়ী হওয়ায় জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও অর্জন করে আওয়ামী লীগ। ১৭ই ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও সামরিক শাসকগোষ্ঠী দলটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে।বাঙালিরা বুঝতে পারে যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না।আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভায় বিপুলসংখ্যক লোক একত্রিত হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমান সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।তিনি ঘোষণা দেন –
” … রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা। … “
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বর্বর হত্যাকাণ্ড শুরু করে যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ ১০ মাস বন্দী করে রাখে। কিন্তু এ দেশের মানুষেরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের নির্দেশনা মোতাবেক মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করে। বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচালিত হয়েছে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি।
আজ সেই মুজিবের জন্মদিন।যার জন্ম না হলে হয়তো জন্ম হতো না এই স্বাধীন বাংলার।তিনি বাঙালি জাতির পিতা,স্বাধীনতার স্থপতি, বাঙালির রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।