ম্যাচটা একপেশে হয়নি। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে যেমন রোমাঞ্চ দরকার তার সবটুকুই ছিল। শুরুতে বাংলাদেশের পেসারদের দাপুটে বোলিং। এরপর অষ্টম উইকেট জুটিতে লঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানো। ম্যাচের পুরোটা জুড়ে ইনজুরির মিছিল। হারের শঙ্কা দূর করে রিশাদ ঝড়। রমজানের সময়টাতে যারা টিকিট কিনে কিংবা টিভি স্ক্রিনে বসে ম্যাচটা দেখেছেন,তাদের নিশ্চয়ই উপভোগ্য একটা দিন গেছে। পেন্ডুলামের সুতার মত দুলতে থাকা ম্যাচটা ৫৮ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের জয় বাংলাদেশের। এই জয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের ক্ষত তো লাঘব হয়েছেই বরং লঙ্কার বিরুদ্ধে টানা দুই ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নেয়ার রেকর্ড গড়েছে নাজমুল হাসান শান্তের দল।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচেও শান্তের টস ভাগ্য ছিলনা। শিশিরের বাঁধা না থাকায় এদিন শুরুতেই ব্যাটিংয়ে আসে কুশল মেন্ডিসের দল। গত ম্যাচে টাইগারদের সর্বনাশ করা নিসাঙ্কাকে ফিরিয়ে তাসকিনের শুরু। এরপর আভিষেকা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে শুভসূচনা এনে দেন ঢাকা এক্সপ্রেস।
১৫ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ২৬ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। ১১তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ১৪ রান করা সামারাবিক্রমাকে শিকার করেন তিনি। ৪১ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর নতুন ব্যাটার চারিথ আসালঙ্কাকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন কুশল। তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান স্পিনার রিশাদ হোসেন। ১৮তম ওভারে প্রথম বোলিংয়ে এসে ২৯ রান করা কুশলকে শিকার করেন রিশাদ। জুটিতে ৪২ বলে ৩৩ রান যোগ করেন কুশল-আসালঙ্কা। এরপর পঞ্চম উইকেটে ৪৩ রান যোগ করে শ্রীলংকার রান ১শ পার করেন আসালঙ্কা ও লিয়ানাগে। উইকেটে সেট হওয়া আসালঙ্কা ৫টি চারে ৩৭ রান করে মুস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার হন। আসালঙ্কার পর দুনিথ ওয়েলালাগেকে ১ ও হাসারাঙ্গা ডি সিলভাকে ১১ রানে থামিয়ে লংকানদের চাপে মুখে ঠেলে দেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ১৫৪ রানে সপ্তম উইকেট হারায় লঙ্কানরা। চাপের মুখে এক প্রান্ত আগলে লড়াই করে ৬৫ বলে ওয়ানডেতে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন লিয়ানাগে। অষ্টম উইকেটে মহেশ থিকশানার সাথে ৭৮ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৬০ রান যোগ করেন তিনি। থিকশানা ১৫ রানে আউট হলেও, ইনিংসের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে চার মেরে ক্যারিয়ারের নবম ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান ১০১ বল খেলা লিয়ানাগে। লিয়ানাগের সেঞ্চুরিতে সব উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৩৫ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা। ১১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০২ বলে অপরাজিত ১০১ রান করেন লিয়ানাগে। বাংলাদেশের তাসকিন ৪২ রানে ৩টি, মুস্তাফিজ ৩৯ রানে ও মিরাজ ৩৮ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
জবাবে লিটনের বদলে দলে জায়গা পাওয়া এনামুলের সাথে ওপেনিংয়ে নামেন তানজিদ হাসান তামিম। সৌম্য সরকারের বদলে কনকাশন সাব হিসেবে সুযোগ পান তিনি। সুযোগটা সৌভাগ্যক্রমে পেলেও কাজে লাগাতে ভুল করেননি তানজিদ। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই। খেলেছেন ৮১ বলে ৮৪ রানের ইনিংস। লম্বা সময় বাংলাদেশকে লক্ষ্যে রেখেছিলেন তানজিদ। এই ব্যাটার ফিরলে তাই খানিকটা চাপেই পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর মিরাজকে নিয়ে দলকে টানেন মুশফিক। দু’জনেই বাংলাদেশকে জয়ের পথে রাখছিলেন। তবে মিরাজ ২৫ রানে ফিরলে ফের বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। তবে সেই বিপদ বাড়তে দেননি রিশাদ। পাল্টা আক্রমণে দ্রুত দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন এই ব্যাটার। শেষ দিকে লঙ্কান বোলারদের বিশেষ করে হাসারাঙ্গার ওপর সুনামি বইয়ে দিয়েছেন রিশাদ। করেছেন ১৮ বলে ৪৮ রান। যেখানে ৪টি ছয় ও ৫টি চারের মার রয়েছে।























