০১:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারীর অগ্রযাত্রায় বড় বাধা যৌন নির্যাতন

🔴স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যৌন নির্যাতনের ঘটনা থামছেই না
🔴সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা
🔴বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ক ৫৬ শতাংশ সহপাঠী, ৯ শতাংশ শিক্ষক : গবেষণা তথ্য
🔴যৌন হয়রানি রোধ কমিটির তেমন বাস্তবায়ন নেই

 

➤যৌন সহিংসতা বন্ধে সুদূরপ্রসারী ও তাৎক্ষণিক কর্মসূচি নিতে হবে
-ডা. ফওজিয়া মোসলেম
সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

➤কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়রানির বিচারে কমিটিগুলো কার্যকর নেই

-অ্যাডভোকেট সালমা আলী সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি ও যৌন নিপীড়িনবিরোধী নীতিমালার বাদী

➤যথাযথ বিচার না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা সীমাহীনভাবে বাড়ছে
-জিয়াউল কবির দুলু
সভাপতি, অভিভাবক ঐক্য ফোরাম

দেশের নারীসমাজের অগ্রগতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন মহল। এরই মধ্যে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে প্রায় সবক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি প্রশংসনীয়। যদিও এ অগ্রগতি এখনো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। আর এর পেছনে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে যৌন নির্যাতন ও নানা হয়রানি। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রীরা ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছেন। স্কুুল থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বত্রই নারী শিক্ষার্থীরা নানাভাবে যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর এ জঘন্য অপরাধে জড়িত খোদ কিছু শিক্ষক। এছাড়া সহপাঠী এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হন বলে জানা গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের করা গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ক ৫৬ শতাংশই সহপাঠী। আর শিক্ষক ৯ শতাংশ। সর্বশেষ জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যার প্ররোচণায় শিক্ষক ও সহপাঠীর যৌন হয়রানির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এতে সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন অভিভাবকরা।

তবে নানা কারণে বেশিরভাগ যৌন নির্যাতনের ঘটনাই লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যায়। যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় তারও যথাযথ বিচার না হওয়ার অভিযোগ আছে। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠনের বিষয়ে নির্দেশনা থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়নে তেমন কোনো তদারকি নেই বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় যৌন সহিংসতা বন্ধে সুদূরপ্রসারী ও তাৎক্ষণিক কর্মসূচি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্রমতে, ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যারপর তার সুইসাইড নোটে স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন দিনের পর দিন। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে বরখাস্ত এবং ছাত্র সিদ্দিক আম্মানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আটকের পর এ আত্মহত্যার ঘটনায় তাদের প্ররোচণার সংশ্লিষ্টতাও পেয়েছে পুলিশ।

শনিবার ওই ঘটনার বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ হয়েছে। তার সহপাঠীরাও অভিযোগ করেছেন, যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের বিচার না পাওয়ার যন্ত্রণা তাকে আত্মহনের পথে ঠেলে দিয়েছে। সেখানে গিয়ে আরেকজন ছাত্রী অভিযোগ করেন যে, তার ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষক তাকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিন বছর আগে। তাতে তিনি রাজি না হওয়ায় এখন তাকে শুধু ফেল করানো হচ্ছে। ১০০ নাম্বারের পরীক্ষায় তিন নাম্বার দেয়া হয়েছে। আমি এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছি, অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো বিচার পাইনি।

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন পরিস্থিতি উঠে এসেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের গবেষণায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি নিয়ে এক গবেষণায় দেখতে পান বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়কদের মধ্যে ৯ শতাংশই শিক্ষক। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ ছাত্রীর ওপর ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ওই গবেষণাটি পরিচালনা করেন।

গবেষণার শিরোনাম ‘স্ট্র্যাটেজিস ফর প্রিভেন্টিং মাসকুলিনিটি অ্যান্ড জেন্ডার বেজ্ড ভায়োলেন্স ইন হায়ার এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন ইন বাংলাদেশ : অ্যা স্টাডি অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি’। গবেষণায় অংশ নেয়াদের দেয়া তথ্যমতে, ৫৬ শতাংশ যৌন নিপীড়কই ছাত্রীদের সহপাঠী। ২৪ শতাংশ তাদের চেয়ে ছোট বা বড়। ১১ শতাংশ বহিরাগত ও ৯ শতাংশ শিক্ষক।

১০ শতাংশ ছাত্রী জানান, নির্যাতনের ৩০ শতাংশ বাজে মন্তব্য ও ৬০ শতাংশ সাইবার হয়রানি। নিপীড়নের ঘটনায় মাত্র ১০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে পাঁচ শতাংশ বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এবং বাকি পাঁচ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ সেলে। ৯০ শতাংশ জানান, ন্যায়বিচার না পাওয়া ও চরিত্র হননের ভয়ে তারা সেলে অভিযোগ করেননি।

অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গবেষণাটি হলেও ওই সময়ে আমি আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা একইরকম। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরো খারাপ। আর গবেষণাটি গত বছরের। এর মধ্যে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।

তার কথা, যারা যৌন নিপীড়ক তারা রাজনৈতিক বা অন্য কোনোভাবে প্রভাবশালী। তাদের রক্ষার জন্য রাজনৈতিক এবং প্রভাবশালীদের চাপ থাকে। ফলে অনেক ঘটনাই ধামাচাপা দেয়া হয়। অনেক ঘটনার বিচার হয় না।

বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ওপর এর বাইরে আলাদা কোনো জরিপ নেই। তবে ২০২১ সালে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ‘চ্যালেঞ্জিং ফিয়ার অব ভায়োলেন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয় জনসমাগমস্থলে ৮১ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিনিয়র সহপাঠী ও শিক্ষকদের মাধ্যমে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, হয়রানি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপের শিকার হচ্ছেন ৭৪ শতাংশ। ২০২২ সালে ডাটা ফর ইমপ্যাক্ট এর এক জরিপে বলা হয় বাংলাদেশে অবিবাহিত মেয়েদের প্রতি তিনজনে একজন ১২ মাসে (এক বছর) কমপক্ষে একবার যৌন হয়রানির শিকার হন।

ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানির চিত্র : গত বৃহস্পতিবার যৌন হয়রানির অভিযোগে ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে বরখাস্ত এবং বিভাগীয় প্রধান রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক ছাত্রীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় জরিমানা আদায়, নম্বর কম দেওয়া ও থিসিস পেপার আটকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। আর বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ওই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনায়েদকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয় ১২ ফেব্রুয়ারি। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও দীর্ঘদিন ধরে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন তার বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক বছরে ২০টির মতো যৌন হয়রানির অভিযোগ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্বের থিসিস করতে গিয়ে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন রসায়ন বিভাগের এক ছাত্রী। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, ল্যাবে একা কাজ করার সময় এবং কেমিক্যাল দেয়ার বাহানায় নিজ কক্ষে ডেকে দরজা আটকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন ওই শিক্ষক।

ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি। এগুলো চলতি বছরের ঘটনা। প্রতিটি ঘটনায়ই কর্তৃপক্ষ প্রথমে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে তারা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেন। যেমন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকার ঘটনার পর হজ করায় তাকে মাফ করে দেয়ার সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি।

আবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়। আগে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ছাত্রের বিরুদ্ধে আগে একাধিককার অভিযোগ করেও ফল পাননি আত্মহননকারী ছাত্রী। সে আত্মহত্যার পর এখন তাদের বরখাস্ত করা হলো।

 

শুধু স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ধর্মীয় শিক্ষার পর্দার আড়ালে অনেক মাদ্রাসায়ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়েছে, এমন ঘটনাও নতুন নয়। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকার কয়েক বছর আগে আইন পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করলেও থামছে না এই বর্বরতা।
তিন বছর আগে মাদ্রাসার চার শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় সম্প্রতি এক শিক্ষককে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এছাড়া ‘শিক্ষাশালা’ নামের একটি কোচিং সেন্টারে ধর্ষণের শিকার হয়ে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনার ১১ দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়।

সূত্রমতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি রোধে হাইকোর্ট ২০০৯ সালে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেল গঠনের নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশে অভিযোগ গ্রহণ ও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়। কোনো অভিযোগ পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেল কাজ করার কথা। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানেই এখনো যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কমিটি থাকলেও তা ঠিকমতো কাজ করে না। কমিটির সদস্যরাই বিষয়টি ঠিকমতো বোঝেন না।

তার কথা, এখানে ক্ষমতার একটা বিষয় থাকে। অভিযুক্তরা অনেক সময়ই ক্ষমতার কারণে পার পেয়ে যায়। দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্তও নারী প্রক্টর নিয়োগ হয়নি। একজন মনে হয় হয়েছে। যারা প্রক্টরসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন তাদেন জেন্ডার বুঝতে হয়। আমার মনে হয় তাদের এখন প্রশিক্ষণ দরকার। আর ছাত্রদের কাউন্সেলিং এবং এই বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান দেয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম মনে করেন, শিক্ষক নিয়োগ এবং ছাত্র ভর্তির ব্যাপারে আমাদের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কোনো একটা ব্যবস্থা থাকা উচিত যার মাধ্যমে তাদের সচেতন করা যায়।

শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু সবুজ বাংলাকে বলেন, যথাযথ বিচার না হওয়ার কারণেই এ ধরনের ঘটনা সীমাহীনভাবে বাড়ছে। এসব অপকর্ম বন্ধ করতে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর সাজা প্রয়োগ করতে হবে।

যৌন সহিংসতা বন্ধে সুদূরপ্রসারী ও তাৎক্ষণিক কর্মসূচি নিতে হবে : বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সবুজ বাংলাকে বলেন, আমাদের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমরা তাদের জন্য যৌন সহিংসতার মতো প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারছি না। আবার এ সমস্যা আমরা কমাতেও চাচ্ছি না। এটা হচ্ছে একটা সামগ্রিক সামাজিক পরিস্থিতি। কাজেই সেইটাকে সকলে মিলে যদি দূর করার জন্য একটা সুদূরপ্রসারী ও একটা তাৎক্ষণিক কর্মসূচি না নিই তাহলে তো এটা দূর করা যাবে না।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনায় যে নীতিমালাটা হলো এটার আইনটা হতে আজ কত বছর লেগে যাচ্ছে? আজ পর্যন্ত আমরা আইনটা করতে পারিনি। তার মানে এটার গুরুত্বটা আইন প্রণেতাদের কাছে নেই। একটা আইন করতে হবে সেই কথাটা আজ পর্যন্ত কোনো সংসদ সদস্য বললেন না। এই নির্দেশনা তো বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে আছে। তারা কতটুকু ভূমিকা রেখেছে? তারা কতগুলো প্রতিষ্ঠানে এই কমিটি করার চেষ্টা করেছে। সেটাও আমরা জানি না। আবার, যেখানে এই কমিটিগুলো হয়েছে সেখানে কমিটিগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না যথেষ্ট পরিমাণে। কাজেই এই যে নারী আন্দোলন একটা জায়গা তৈরি করে দিল। নারীরা শিক্ষামুখী, কর্মমুখী হলো সেই জায়গাটা সমাজ ব্যবহার করছে না। সমস্যাটা কিন্তু সমাজের। সমস্যাটা নারীর একার না। শুধু নারী আন্দোলন কতগুলো ক্ষেত্র তৈরি করছে সেই ক্ষেত্রগুলোকে সমাজ ব্যবহার করছে না। বর সেই ক্ষেত্রগুলোকে সমাজ বিতর্কিত করে তুলছে কখনো কখনো। কাজেই আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখতে হবে। তার সাথে সাথে এই ধরনের সমস্যা সমাধানে আইনের প্রয়োগগুলো করতে হবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, যদি এমন হতো যে ৯ শতাংশ শিক্ষক যৌন সহিংসতা করে, তাদের এক শতাংশেরও যদি আমরা বিচার করতে পারতাম তাহলে হয়ত বাকি আট শতাংশ ভয় পেয়ে যেত। ৯১ শতাংশ শিক্ষক যদি প্রতিবাদী হতেন তাহলে তো ৯ শতাংশ বিব্রতবোধ করত অন্তত। সামগ্রিকভাবে সমাজকে কী করতে হবে এই প্রশ্ন এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে সামনে আসছে। তাই যতই প্রতিবন্ধকতা থাকুক যৌন সহিংসতা নির্মূলের ক্ষেত্রে যদি সমাজ আর একটু এগিয়ে আসে, বিচার বিভাগ যদি তৎপর হয় তাহলে কিন্তু অপরাধীরা ভয় পাবে।

কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়রানির বিচারে কমিটিগুলো কার্যকর নেই : বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও যৌন নিপীড়িনবিরোধী নীতিমালার বাদী অ্যাডভোকেট সালমা আলী সবুজ বাংলাকে বলেন, শুধু অবন্তিকার ঘটনা নয়, এইরকম আরো অনেক ঘটনা আছে যেগুলো পত্রিকায় আসেনি। কর্মক্ষেত্রে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন শুধু ছাত্র-ছাত্রী না শিক্ষকদের দ্বারা যে হয়রানিটা হয় তার বিচারের জন্য কমিটিগুলো সেভাবে নেই। কোথাও কমিটি থাকলে সেটা নামেমাত্র আছে সেগুলো সেভাবে কাজ করে না। এখন ভিকটিমরা যায় কমিটির কাছে, সেখানে তারা বিচার না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। সংবিধানের ১১১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘আপীল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রিম কোর্টের যে কোনো বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন অধস্তন সকল আদালতের জন্য অবশ্যপালনীয় হইবে।’ কিন্তু ২০০৯ সালে প্রণীত এই যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালার এখনো কোনো আইন হয়নি।
তবে, এ ধরনের বিচারের ক্ষেত্রে একেবারে কোনো আইন নেই তা বলব না। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারায় যৌন পীড়ন, ইত্যাদির দণ্ড অংশে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে তাহার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তাহার শরীরের যে কোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানি করেন তাহা হইলে তাহার এই কাজ হইবে যৌন পীড়ন এবং তজ্জন্য উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যূন তিন বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডণীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে ও দণ্ডণীয় হইবেন।’ এই আইনের আওতায় মানুষ যাবে কীভাবে? একটা মেয়ে যখন আইনের কাছে যাচ্ছে সে দ্বিতীয়বার ভিকটিম হচ্ছে। আমাদের আসলে এই ধরনের যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।

 

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এই কমিটিগুলো কাজ করে না। সেখানে শিক্ষকরা সবার সামনে এই ধরনের ঘটনা ঘটায়, ভিকটিম যখন দেখে যে শাস্তি হয় না তখন সে আরো বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আমরা জাহাঙ্গীরনগরের ঘটনায় দেখেছি, যে দল ক্ষমতায় আছে তাদেরই কর্মীরা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও এই ঘটনায় অপরাধীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের আটক করল কি না এগুলো তো বিচারের দিক। আমার কথা হচ্ছে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আসলে আমরা কতটুকু দৃষ্টি দিচ্ছি। একজন শিক্ষক যখন নিয়োগ পাচ্ছে তখন তার কাজ কি? সে কী ধরনের আচরণ করবে? এগুলো কী শেখানো হচ্ছে? একজন ছাত্র যখন কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো তখন সেই কোড অব কনডাক্ট সে কী কী করতে পারবে আর কী পারবে না তা কি আমরা শেখাচ্ছি? কোনো ঘটনার অভিযোগ এলে কমিটিগুলো ঠিকমতো তদন্ত করে কি না? কমেন্ট বক্সে কমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য ভিকটিমকে সাহস দেয়া হয় কি না? তার গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় কি না? এগুলোতে আমাদের দৃষ্টি দেয়া দরকার। এখন আমরা মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে এই আইনটা করার প্রতি জোর দিচ্ছি। আমাদের এই ধরনের অবস্থা প্রতিরোধে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, সততা এগুলো সব থেকে বড়।

আমি অবন্তিকার কেসের আইনজীবী হিসেবে এবং একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে বলব, দ্রুতবিচার যেমন দরকার, মেয়ে ভিকটিম হলে তাকে কাউন্সেলিং করা, তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়া, পরিবার পাশে থাকা, এগুলো সবাই মিলে করতে হবে। অবন্তিকার কেসটি যেন দ্রুত তদন্ত করে, দ্রুত বিচার আদালতে আসামীদের শাস্তির আওতায় এনে বিচার করা হয়। সেটা দেখতে চাই। এতে করে অপরাধী যে শাস্তি পায় এটি প্রমাণিত হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

নারীর অগ্রযাত্রায় বড় বাধা যৌন নির্যাতন

আপডেট সময় : ০৭:২৯:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪

🔴স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যৌন নির্যাতনের ঘটনা থামছেই না
🔴সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা
🔴বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ক ৫৬ শতাংশ সহপাঠী, ৯ শতাংশ শিক্ষক : গবেষণা তথ্য
🔴যৌন হয়রানি রোধ কমিটির তেমন বাস্তবায়ন নেই

 

➤যৌন সহিংসতা বন্ধে সুদূরপ্রসারী ও তাৎক্ষণিক কর্মসূচি নিতে হবে
-ডা. ফওজিয়া মোসলেম
সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

➤কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়রানির বিচারে কমিটিগুলো কার্যকর নেই

-অ্যাডভোকেট সালমা আলী সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি ও যৌন নিপীড়িনবিরোধী নীতিমালার বাদী

➤যথাযথ বিচার না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা সীমাহীনভাবে বাড়ছে
-জিয়াউল কবির দুলু
সভাপতি, অভিভাবক ঐক্য ফোরাম

দেশের নারীসমাজের অগ্রগতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন মহল। এরই মধ্যে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে প্রায় সবক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি প্রশংসনীয়। যদিও এ অগ্রগতি এখনো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। আর এর পেছনে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে যৌন নির্যাতন ও নানা হয়রানি। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রীরা ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছেন। স্কুুল থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বত্রই নারী শিক্ষার্থীরা নানাভাবে যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর এ জঘন্য অপরাধে জড়িত খোদ কিছু শিক্ষক। এছাড়া সহপাঠী এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হন বলে জানা গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের করা গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ক ৫৬ শতাংশই সহপাঠী। আর শিক্ষক ৯ শতাংশ। সর্বশেষ জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যার প্ররোচণায় শিক্ষক ও সহপাঠীর যৌন হয়রানির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এতে সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন অভিভাবকরা।

তবে নানা কারণে বেশিরভাগ যৌন নির্যাতনের ঘটনাই লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যায়। যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় তারও যথাযথ বিচার না হওয়ার অভিযোগ আছে। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠনের বিষয়ে নির্দেশনা থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়নে তেমন কোনো তদারকি নেই বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় যৌন সহিংসতা বন্ধে সুদূরপ্রসারী ও তাৎক্ষণিক কর্মসূচি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্রমতে, ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যারপর তার সুইসাইড নোটে স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন দিনের পর দিন। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে বরখাস্ত এবং ছাত্র সিদ্দিক আম্মানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আটকের পর এ আত্মহত্যার ঘটনায় তাদের প্ররোচণার সংশ্লিষ্টতাও পেয়েছে পুলিশ।

শনিবার ওই ঘটনার বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ হয়েছে। তার সহপাঠীরাও অভিযোগ করেছেন, যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের বিচার না পাওয়ার যন্ত্রণা তাকে আত্মহনের পথে ঠেলে দিয়েছে। সেখানে গিয়ে আরেকজন ছাত্রী অভিযোগ করেন যে, তার ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষক তাকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিন বছর আগে। তাতে তিনি রাজি না হওয়ায় এখন তাকে শুধু ফেল করানো হচ্ছে। ১০০ নাম্বারের পরীক্ষায় তিন নাম্বার দেয়া হয়েছে। আমি এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছি, অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো বিচার পাইনি।

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন পরিস্থিতি উঠে এসেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের গবেষণায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি নিয়ে এক গবেষণায় দেখতে পান বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়কদের মধ্যে ৯ শতাংশই শিক্ষক। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ ছাত্রীর ওপর ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ওই গবেষণাটি পরিচালনা করেন।

গবেষণার শিরোনাম ‘স্ট্র্যাটেজিস ফর প্রিভেন্টিং মাসকুলিনিটি অ্যান্ড জেন্ডার বেজ্ড ভায়োলেন্স ইন হায়ার এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন ইন বাংলাদেশ : অ্যা স্টাডি অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি’। গবেষণায় অংশ নেয়াদের দেয়া তথ্যমতে, ৫৬ শতাংশ যৌন নিপীড়কই ছাত্রীদের সহপাঠী। ২৪ শতাংশ তাদের চেয়ে ছোট বা বড়। ১১ শতাংশ বহিরাগত ও ৯ শতাংশ শিক্ষক।

১০ শতাংশ ছাত্রী জানান, নির্যাতনের ৩০ শতাংশ বাজে মন্তব্য ও ৬০ শতাংশ সাইবার হয়রানি। নিপীড়নের ঘটনায় মাত্র ১০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে পাঁচ শতাংশ বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এবং বাকি পাঁচ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ সেলে। ৯০ শতাংশ জানান, ন্যায়বিচার না পাওয়া ও চরিত্র হননের ভয়ে তারা সেলে অভিযোগ করেননি।

অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গবেষণাটি হলেও ওই সময়ে আমি আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা একইরকম। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরো খারাপ। আর গবেষণাটি গত বছরের। এর মধ্যে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।

তার কথা, যারা যৌন নিপীড়ক তারা রাজনৈতিক বা অন্য কোনোভাবে প্রভাবশালী। তাদের রক্ষার জন্য রাজনৈতিক এবং প্রভাবশালীদের চাপ থাকে। ফলে অনেক ঘটনাই ধামাচাপা দেয়া হয়। অনেক ঘটনার বিচার হয় না।

বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ওপর এর বাইরে আলাদা কোনো জরিপ নেই। তবে ২০২১ সালে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ‘চ্যালেঞ্জিং ফিয়ার অব ভায়োলেন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয় জনসমাগমস্থলে ৮১ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিনিয়র সহপাঠী ও শিক্ষকদের মাধ্যমে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, হয়রানি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপের শিকার হচ্ছেন ৭৪ শতাংশ। ২০২২ সালে ডাটা ফর ইমপ্যাক্ট এর এক জরিপে বলা হয় বাংলাদেশে অবিবাহিত মেয়েদের প্রতি তিনজনে একজন ১২ মাসে (এক বছর) কমপক্ষে একবার যৌন হয়রানির শিকার হন।

ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানির চিত্র : গত বৃহস্পতিবার যৌন হয়রানির অভিযোগে ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে বরখাস্ত এবং বিভাগীয় প্রধান রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক ছাত্রীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় জরিমানা আদায়, নম্বর কম দেওয়া ও থিসিস পেপার আটকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। আর বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ওই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনায়েদকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয় ১২ ফেব্রুয়ারি। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও দীর্ঘদিন ধরে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন তার বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক বছরে ২০টির মতো যৌন হয়রানির অভিযোগ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্বের থিসিস করতে গিয়ে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন রসায়ন বিভাগের এক ছাত্রী। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, ল্যাবে একা কাজ করার সময় এবং কেমিক্যাল দেয়ার বাহানায় নিজ কক্ষে ডেকে দরজা আটকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন ওই শিক্ষক।

ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি। এগুলো চলতি বছরের ঘটনা। প্রতিটি ঘটনায়ই কর্তৃপক্ষ প্রথমে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে তারা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেন। যেমন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকার ঘটনার পর হজ করায় তাকে মাফ করে দেয়ার সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি।

আবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়। আগে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ছাত্রের বিরুদ্ধে আগে একাধিককার অভিযোগ করেও ফল পাননি আত্মহননকারী ছাত্রী। সে আত্মহত্যার পর এখন তাদের বরখাস্ত করা হলো।

 

শুধু স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ধর্মীয় শিক্ষার পর্দার আড়ালে অনেক মাদ্রাসায়ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়েছে, এমন ঘটনাও নতুন নয়। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকার কয়েক বছর আগে আইন পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করলেও থামছে না এই বর্বরতা।
তিন বছর আগে মাদ্রাসার চার শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় সম্প্রতি এক শিক্ষককে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এছাড়া ‘শিক্ষাশালা’ নামের একটি কোচিং সেন্টারে ধর্ষণের শিকার হয়ে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনার ১১ দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়।

সূত্রমতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি রোধে হাইকোর্ট ২০০৯ সালে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেল গঠনের নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশে অভিযোগ গ্রহণ ও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়। কোনো অভিযোগ পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেল কাজ করার কথা। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানেই এখনো যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কমিটি থাকলেও তা ঠিকমতো কাজ করে না। কমিটির সদস্যরাই বিষয়টি ঠিকমতো বোঝেন না।

তার কথা, এখানে ক্ষমতার একটা বিষয় থাকে। অভিযুক্তরা অনেক সময়ই ক্ষমতার কারণে পার পেয়ে যায়। দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্তও নারী প্রক্টর নিয়োগ হয়নি। একজন মনে হয় হয়েছে। যারা প্রক্টরসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন তাদেন জেন্ডার বুঝতে হয়। আমার মনে হয় তাদের এখন প্রশিক্ষণ দরকার। আর ছাত্রদের কাউন্সেলিং এবং এই বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান দেয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম মনে করেন, শিক্ষক নিয়োগ এবং ছাত্র ভর্তির ব্যাপারে আমাদের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কোনো একটা ব্যবস্থা থাকা উচিত যার মাধ্যমে তাদের সচেতন করা যায়।

শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু সবুজ বাংলাকে বলেন, যথাযথ বিচার না হওয়ার কারণেই এ ধরনের ঘটনা সীমাহীনভাবে বাড়ছে। এসব অপকর্ম বন্ধ করতে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর সাজা প্রয়োগ করতে হবে।

যৌন সহিংসতা বন্ধে সুদূরপ্রসারী ও তাৎক্ষণিক কর্মসূচি নিতে হবে : বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সবুজ বাংলাকে বলেন, আমাদের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমরা তাদের জন্য যৌন সহিংসতার মতো প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারছি না। আবার এ সমস্যা আমরা কমাতেও চাচ্ছি না। এটা হচ্ছে একটা সামগ্রিক সামাজিক পরিস্থিতি। কাজেই সেইটাকে সকলে মিলে যদি দূর করার জন্য একটা সুদূরপ্রসারী ও একটা তাৎক্ষণিক কর্মসূচি না নিই তাহলে তো এটা দূর করা যাবে না।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনায় যে নীতিমালাটা হলো এটার আইনটা হতে আজ কত বছর লেগে যাচ্ছে? আজ পর্যন্ত আমরা আইনটা করতে পারিনি। তার মানে এটার গুরুত্বটা আইন প্রণেতাদের কাছে নেই। একটা আইন করতে হবে সেই কথাটা আজ পর্যন্ত কোনো সংসদ সদস্য বললেন না। এই নির্দেশনা তো বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে আছে। তারা কতটুকু ভূমিকা রেখেছে? তারা কতগুলো প্রতিষ্ঠানে এই কমিটি করার চেষ্টা করেছে। সেটাও আমরা জানি না। আবার, যেখানে এই কমিটিগুলো হয়েছে সেখানে কমিটিগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না যথেষ্ট পরিমাণে। কাজেই এই যে নারী আন্দোলন একটা জায়গা তৈরি করে দিল। নারীরা শিক্ষামুখী, কর্মমুখী হলো সেই জায়গাটা সমাজ ব্যবহার করছে না। সমস্যাটা কিন্তু সমাজের। সমস্যাটা নারীর একার না। শুধু নারী আন্দোলন কতগুলো ক্ষেত্র তৈরি করছে সেই ক্ষেত্রগুলোকে সমাজ ব্যবহার করছে না। বর সেই ক্ষেত্রগুলোকে সমাজ বিতর্কিত করে তুলছে কখনো কখনো। কাজেই আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখতে হবে। তার সাথে সাথে এই ধরনের সমস্যা সমাধানে আইনের প্রয়োগগুলো করতে হবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, যদি এমন হতো যে ৯ শতাংশ শিক্ষক যৌন সহিংসতা করে, তাদের এক শতাংশেরও যদি আমরা বিচার করতে পারতাম তাহলে হয়ত বাকি আট শতাংশ ভয় পেয়ে যেত। ৯১ শতাংশ শিক্ষক যদি প্রতিবাদী হতেন তাহলে তো ৯ শতাংশ বিব্রতবোধ করত অন্তত। সামগ্রিকভাবে সমাজকে কী করতে হবে এই প্রশ্ন এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে সামনে আসছে। তাই যতই প্রতিবন্ধকতা থাকুক যৌন সহিংসতা নির্মূলের ক্ষেত্রে যদি সমাজ আর একটু এগিয়ে আসে, বিচার বিভাগ যদি তৎপর হয় তাহলে কিন্তু অপরাধীরা ভয় পাবে।

কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়রানির বিচারে কমিটিগুলো কার্যকর নেই : বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও যৌন নিপীড়িনবিরোধী নীতিমালার বাদী অ্যাডভোকেট সালমা আলী সবুজ বাংলাকে বলেন, শুধু অবন্তিকার ঘটনা নয়, এইরকম আরো অনেক ঘটনা আছে যেগুলো পত্রিকায় আসেনি। কর্মক্ষেত্রে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন শুধু ছাত্র-ছাত্রী না শিক্ষকদের দ্বারা যে হয়রানিটা হয় তার বিচারের জন্য কমিটিগুলো সেভাবে নেই। কোথাও কমিটি থাকলে সেটা নামেমাত্র আছে সেগুলো সেভাবে কাজ করে না। এখন ভিকটিমরা যায় কমিটির কাছে, সেখানে তারা বিচার না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। সংবিধানের ১১১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘আপীল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রিম কোর্টের যে কোনো বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন অধস্তন সকল আদালতের জন্য অবশ্যপালনীয় হইবে।’ কিন্তু ২০০৯ সালে প্রণীত এই যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালার এখনো কোনো আইন হয়নি।
তবে, এ ধরনের বিচারের ক্ষেত্রে একেবারে কোনো আইন নেই তা বলব না। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারায় যৌন পীড়ন, ইত্যাদির দণ্ড অংশে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে তাহার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তাহার শরীরের যে কোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানি করেন তাহা হইলে তাহার এই কাজ হইবে যৌন পীড়ন এবং তজ্জন্য উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যূন তিন বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডণীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে ও দণ্ডণীয় হইবেন।’ এই আইনের আওতায় মানুষ যাবে কীভাবে? একটা মেয়ে যখন আইনের কাছে যাচ্ছে সে দ্বিতীয়বার ভিকটিম হচ্ছে। আমাদের আসলে এই ধরনের যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।

 

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এই কমিটিগুলো কাজ করে না। সেখানে শিক্ষকরা সবার সামনে এই ধরনের ঘটনা ঘটায়, ভিকটিম যখন দেখে যে শাস্তি হয় না তখন সে আরো বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আমরা জাহাঙ্গীরনগরের ঘটনায় দেখেছি, যে দল ক্ষমতায় আছে তাদেরই কর্মীরা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও এই ঘটনায় অপরাধীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের আটক করল কি না এগুলো তো বিচারের দিক। আমার কথা হচ্ছে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আসলে আমরা কতটুকু দৃষ্টি দিচ্ছি। একজন শিক্ষক যখন নিয়োগ পাচ্ছে তখন তার কাজ কি? সে কী ধরনের আচরণ করবে? এগুলো কী শেখানো হচ্ছে? একজন ছাত্র যখন কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো তখন সেই কোড অব কনডাক্ট সে কী কী করতে পারবে আর কী পারবে না তা কি আমরা শেখাচ্ছি? কোনো ঘটনার অভিযোগ এলে কমিটিগুলো ঠিকমতো তদন্ত করে কি না? কমেন্ট বক্সে কমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য ভিকটিমকে সাহস দেয়া হয় কি না? তার গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় কি না? এগুলোতে আমাদের দৃষ্টি দেয়া দরকার। এখন আমরা মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে এই আইনটা করার প্রতি জোর দিচ্ছি। আমাদের এই ধরনের অবস্থা প্রতিরোধে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, সততা এগুলো সব থেকে বড়।

আমি অবন্তিকার কেসের আইনজীবী হিসেবে এবং একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে বলব, দ্রুতবিচার যেমন দরকার, মেয়ে ভিকটিম হলে তাকে কাউন্সেলিং করা, তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়া, পরিবার পাশে থাকা, এগুলো সবাই মিলে করতে হবে। অবন্তিকার কেসটি যেন দ্রুত তদন্ত করে, দ্রুত বিচার আদালতে আসামীদের শাস্তির আওতায় এনে বিচার করা হয়। সেটা দেখতে চাই। এতে করে অপরাধী যে শাস্তি পায় এটি প্রমাণিত হবে।