🔴 মূল পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেপ্তার ৭
🔴 বাসায় লোক নিয়োগে সতর্ক থাকার পরামর্শ
রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জামিনুর রহমান। প্রতিদিন ব্যবসায়ী বাবা আনিসুর রহমানের গাড়িতে করে স্কুলে যাতায়াত করত সে। ওই গাড়িরচালক ছিলেন বাবার নিয়োগপ্রাপ্ত কামরুল হাসান। শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথেও ছিল গাড়িচালকের গভীর সম্পর্ক। সেই সুযোগটিই কাজে লাগায় কামরুল হাসান। তার পরিকল্পনায় অপহরণের শিকার হতে হয়েছে স্কুলছাত্র জামিনুর রহমানের। নিজের দায় এড়াতে কৌশলে নিজেও অপহরণচক্রের কবলে পড়েন। অবশেষে দরকষাকষিতে মুক্তিপণে বেরিয়ে এলেও এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ছায়াতদন্তে ডিবির তৎপরতায় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় মূল পরিকল্পনাকারী নিজ বাবার ব্যক্তিগত গাড়িচালক কামরুল হাসানসহ ৭ জনকে। এরা হলেনÑ আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মাসুদ, নূর আলম, কামরুল হাসান, রনি মিয়া, মনির হোসেন, জনি বিশ্বাস ও আসলাম হাওলাদার। গতকাল রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, জামিনুর রহমানকে নিয়ে গত ২০ মার্চ সকালে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সামনে পৌঁছান কামরুল হাসান। সেখান থেকে সাতজন অপহরণকারী জামিনুরকে তুলে নিয়ে যায়। অপহরণের পর জামিনুর রহমানের পরিবারকে ফোন করে চক্রটি ১ কোটি ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জামিনুর রহমানসহ গাড়িচালক কামরুল হাসানকে ছাড়িয়ে আনা হয়। ভিকটিমের পরিবার তখনও জানতো না কামরুল হাসান অপহরণকারী দলের একজন অন্যতম সদস্য। ভিকটিমের পরিবার জামিনুর ও গাড়িচালককে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনার পর গত ২০ মার্চ ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করে। এরপর এ ঘটনায় ছায়াতদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগ। ছায়া তদন্তের একপর্যায়ে গাড়িচালক কামরুল হাসানসহ সাতজনকে ২০ মার্চের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করে ডিবি রমনা বিভাগ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মাসুদ, নূর আলম, কামরুল হাসান, রনি মিয়া, মনির হোসেন, জনি বিশ্বাস ও আসলাম হাওলাদার। ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবিপ্রধান বলেন, গ্রেপ্তার মাসুদ গাড়িচালক কামরুল হাসানের দুলাভাই। তারা দুজন পরিকল্পনা করে জামিনুর রহমানকে অপহরণ করবে। দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে তারা এই অপহরণের ঘটনা ঘটায়।
হারুন অর রশীদ বলেন, মাস্টার মাইন্ড স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্র জামিনুর রহমান (১১) গত ২০ মার্চ সকালে গাড়িচালক কামরুল হাসানসহ স্কুলে যাচ্ছিল। সকালে তারা স্কুলের সামনে পৌঁছালে তিনজন অপহরণকারী গাড়ির সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। এরপর আরো চারজন অপহরণকারী গাড়ির সামনে আসে। এই সাতজন মিলে গাড়িচালক কামরুল হাসানসহ জামিনুর রহমানকে অপহরণ করে সাভারের গেন্ডা এলাকায় চলে যায়। অপহরণটি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়। গাড়িচালক কামরুল হাসান হলেন চক্রটির মূলহোতা মাসুদের শালা। কামরুল নিজেও এই চক্রের একজন সদস্য। তিনি বলেন, অপহরণের পর চক্রটির একজন জামিনুর রহমানের বাবা আনিসুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণকারীরা ভিকটিমের বাবাকে আরও বলে, যদি এ ঘটনা পুলিশ কিংবা কাউকে জানানো হয় তাহলে জামিনুর রহমানকে হত্যা করা হবে। এই হুমকি দেওয়ার কারণে ভিকটিমের বাবা ভয় পেয়ে মামলা করতে থানায় যায়নি। পরে ঘটনার দিন রাতে ভিকটিমের চাচা হাবিবুর রহমান ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পরেও ভিকটিমের বাবা পুলিশকে বলে আপনারা জাইয়েন না, আপনারা গেলে তারা আমার ছেলেকে হত্যা করে ফেলবে।
ডিবিপ্রধান বলেন, ভিকটিমের বাবার কথা চিন্তা করে আর যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায় সেই চিন্তা করে আমরা প্রাথমিকভাবে যাইনি। পরে ঘটনার দিন রাত ১০টায় ভিকটিমের পরিবার অপহরণকারীদের ১৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে জামিনুর রহমান ও গাড়িচালক কামরুল হাসনাকে ছাড়িয়ে আনে। তবে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনলেও আমরা অপহরণকারীদের ছাড়ব না। এরপর ডিবি রমনা বিভাগ এ বিষয়ে কাজ শুরু করে। মুক্তিপণ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে গাড়িচালক কামরুল হাসানসহ অপহরণকারী চক্রের সাত জনকে ডিবি রমনা বিভাগ গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, এই অপহরণের মূলহোতা হলেন গাড়িচালক কামরুল হাসান ও আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মাসুদ। মাসুদের শালা হলো কামরুল হাসান। এরা দুজনে মিলেই জামিনুরকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। কামরুল হাসানসহ বাকি আসামিরা কারাগারে ছিল। তারা কারাগারে বসে পরিকল্পনা করে যে, কীভাবে বের হয়ে অপহরণ করা যায়। তখন কামরুল কারাগারে গিয়ে তার দুলাভাইয়ের কাছে জামিনুরকে অপহরণের কথা বলে। কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে তারা জামিনুরকে অপহরণ করেন। চক্রটি একটি অপহরণ করে কারাগারে যায়, আবার কারাগার থেকে বের হয়ে অপহরণ করে। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায়, চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন বড় লোক ব্যবসায়ীর গাড়িচালক হিসেবে নিজেদের লোককে চাকরি দেওয়া ব্যবস্থা করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এবং পরে অপহরণ করে। নয়তো বড় লোকের গাড়িচালককে কৌশলে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে তথ্য সংগ্রহ করে অপহরণ করে। এই ঘটনায় ভিকটিমের পরিবারের গাড়িচালক কামরুল নিজেই এই অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং তার সহযোগিতায় ও তার ভগ্নিপতি মামুনের পরিকল্পনায় এই অপহরণের ঘটনাটি সম্পন্ন হয়। ডিবিপ্রধান বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অপররণের ঘটনায় আমরা দেখেছি এসব ঘটনায় গাড়িচালকরা জড়িত থাকেন। মাস্টারমাইন্ডের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর অপরণের ঘটনায়ও গাড়িচালক কামরুল হাসান জড়িত। গাড়িচালক ও বাসার কাজের বুয়াসহ অন্যান্য লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হতে সবার প্রতি আহ্বান জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।


























