০৯:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৭ মিনিটেই শেষ ট্রেনের কক্সবাজার টিকিট

 

 

অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। তবে এটাই সত্য! মাত্র ৭ মিনিটেই অনলাইনে ঢাকা-কক্সবাজারের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ। রোজার ঈদ সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির সপ্তম ও শেষ হওয়ায় চাহিদা আগের কয়েকদিনের চেয়ে বেড়ে যায়। গতকাল শনিবার দুপুর দুইটায় পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বিক্রি শুরু প্রথম সাত মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে প্রায় সব ট্রেনের টিকিট।

 

 

প্রতিদিনের মতো দুপুর ২টায় উম্মুক্ত হয় পূর্বাঞ্চলের রুটের পর্যটক এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি কার্যক্রম। কিন্তু শুরু হওয়ার আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় অবাক হয়ে যান টিকিট প্রত্যাশীরা। এ যেন এক ভুতুড়ে কাণ্ড।

 

 

এবারে নতুন অভিজ্ঞতায় ট্রেনে করে বাড়ির যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র মো. খালেদ। কিন্তু ২:০৮ মিনিটে টিকিট কাটতে গিয়ে দেখেন সব টিকিট শেষ। টিকিট না পেয়ে তিনি জানান রেল ব্যবস্থা এখন কালোবাজারিদের দখলে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগও তাদের দমন করা যাচ্ছে না। এভাবে হলে কীভাবে সাধারণ জনগণ তাদের কাক্সিক্ষত রাষ্ট্রিয় সুবিধাভোগ করবে।

 

 

তিনি আরো জানান, সরকারের উচিত তাদের এই কার্যক্রম দমনের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িদের আইনের আওতায় এনে সঠিক শাস্তি নিশ্চিত করা।

 

আগামী ১১ এপ্রিল ঈদের সম্ভাব্য দিন হিসাব করে ঈদযাত্রার সূচি সাজিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদে ঘুরমুখো মানুষের ট্রেনের টিকিট পেতে ভার্চুয়াল যুদ্ধ শুরু হয় গতকাল শনিবার। ৭ দিন পর সেই যুদ্ধ শেষ হয় গতকাল। কাউন্টার ফাঁকা থাকলেও অনলাইনে টিকিটের জন্য ছিল রীতিমতো যুদ্ধ। বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে।

 

শেষ দিন গতকাল শনিবার বিক্রি হয় ৩৩ হাজার ৫০০ টিকিট। এদিন দেওয়া হয় নিয়মিত ৪২টিসহ তিনটি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট। সকালের শিফটে সকাল ৮টায় শুরু হয় টিকিট বিক্রি। এদিন ৯ এপ্রিলের টিকিট নিতে সার্ভারে ৩০ মিনিটে হিট করেন ১ কোটি ২৩ লাখ বার। দুই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় পশ্চিমাঞ্চলের ১৭ হাজার টিকিট।

 

বরাবরের মতো এদিনও অনলাইনে টিকিট না পেয়ে কাউন্টারে ছুটে আসেন অনেকেই। তবে গতবারের চেয়ে এবার অনলাইনের সক্ষমতা বেড়েছে দাবি করে রেলওয়ে বলছে, সীমিত আসনের বিপরীতে বিপুল চাহিদা থাকায় অনেকেই পাননি টিকিট। টিকিট বঞ্চিতদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে রেল কর্মকর্তারা বলছেন, এবার যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

 

বাংলাদেশ রেলওয়ে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের জন্য অনলাইনে শতভাগ টিকিট রাখায় প্রশ্ন তুলেছে গ্রাহক স্বার্থ অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।

গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৬৩ লাখ। আর ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী ১ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার। এ ছাড়া পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে ৭.৪ শতাংশ নাগরিক কম্পিউটার ব্যবহার করেন, ল্যাপটপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ দশমিক ৯ শতাংশ, আর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ৮৯.৯ শতাংশ। কিন্তু এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ ফিচার ফোন ব্যবহারকারী হওয়ায় তারা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন না।

 

এটি এক ধরনের নাগরিক বৈষম্য সৃষ্টি করছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। আর ডিভাইস এবং ইন্টারনেট না থাকার সুযোগ নিচ্ছেন পাড়া মহল্লায় ফোন-ফেক্সের দোকানিরা। তারা প্রতি টিকিটে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছেন ঘরমুখো মানুষদের কাছ থেকে। তার মানে কালোবাজারি থেকে মুক্ত হওয়া গেলেও অতি লোভী মানুষের হাত থেকে রক্ষা পাননি নাগরিকরা।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

৭ মিনিটেই শেষ ট্রেনের কক্সবাজার টিকিট

আপডেট সময় : ০৫:৩৫:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ মার্চ ২০২৪

 

 

অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। তবে এটাই সত্য! মাত্র ৭ মিনিটেই অনলাইনে ঢাকা-কক্সবাজারের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ। রোজার ঈদ সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির সপ্তম ও শেষ হওয়ায় চাহিদা আগের কয়েকদিনের চেয়ে বেড়ে যায়। গতকাল শনিবার দুপুর দুইটায় পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বিক্রি শুরু প্রথম সাত মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে প্রায় সব ট্রেনের টিকিট।

 

 

প্রতিদিনের মতো দুপুর ২টায় উম্মুক্ত হয় পূর্বাঞ্চলের রুটের পর্যটক এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি কার্যক্রম। কিন্তু শুরু হওয়ার আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় অবাক হয়ে যান টিকিট প্রত্যাশীরা। এ যেন এক ভুতুড়ে কাণ্ড।

 

 

এবারে নতুন অভিজ্ঞতায় ট্রেনে করে বাড়ির যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র মো. খালেদ। কিন্তু ২:০৮ মিনিটে টিকিট কাটতে গিয়ে দেখেন সব টিকিট শেষ। টিকিট না পেয়ে তিনি জানান রেল ব্যবস্থা এখন কালোবাজারিদের দখলে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগও তাদের দমন করা যাচ্ছে না। এভাবে হলে কীভাবে সাধারণ জনগণ তাদের কাক্সিক্ষত রাষ্ট্রিয় সুবিধাভোগ করবে।

 

 

তিনি আরো জানান, সরকারের উচিত তাদের এই কার্যক্রম দমনের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িদের আইনের আওতায় এনে সঠিক শাস্তি নিশ্চিত করা।

 

আগামী ১১ এপ্রিল ঈদের সম্ভাব্য দিন হিসাব করে ঈদযাত্রার সূচি সাজিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদে ঘুরমুখো মানুষের ট্রেনের টিকিট পেতে ভার্চুয়াল যুদ্ধ শুরু হয় গতকাল শনিবার। ৭ দিন পর সেই যুদ্ধ শেষ হয় গতকাল। কাউন্টার ফাঁকা থাকলেও অনলাইনে টিকিটের জন্য ছিল রীতিমতো যুদ্ধ। বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে।

 

শেষ দিন গতকাল শনিবার বিক্রি হয় ৩৩ হাজার ৫০০ টিকিট। এদিন দেওয়া হয় নিয়মিত ৪২টিসহ তিনটি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট। সকালের শিফটে সকাল ৮টায় শুরু হয় টিকিট বিক্রি। এদিন ৯ এপ্রিলের টিকিট নিতে সার্ভারে ৩০ মিনিটে হিট করেন ১ কোটি ২৩ লাখ বার। দুই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় পশ্চিমাঞ্চলের ১৭ হাজার টিকিট।

 

বরাবরের মতো এদিনও অনলাইনে টিকিট না পেয়ে কাউন্টারে ছুটে আসেন অনেকেই। তবে গতবারের চেয়ে এবার অনলাইনের সক্ষমতা বেড়েছে দাবি করে রেলওয়ে বলছে, সীমিত আসনের বিপরীতে বিপুল চাহিদা থাকায় অনেকেই পাননি টিকিট। টিকিট বঞ্চিতদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে রেল কর্মকর্তারা বলছেন, এবার যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

 

বাংলাদেশ রেলওয়ে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের জন্য অনলাইনে শতভাগ টিকিট রাখায় প্রশ্ন তুলেছে গ্রাহক স্বার্থ অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।

গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৬৩ লাখ। আর ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী ১ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার। এ ছাড়া পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে ৭.৪ শতাংশ নাগরিক কম্পিউটার ব্যবহার করেন, ল্যাপটপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ দশমিক ৯ শতাংশ, আর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ৮৯.৯ শতাংশ। কিন্তু এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ ফিচার ফোন ব্যবহারকারী হওয়ায় তারা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন না।

 

এটি এক ধরনের নাগরিক বৈষম্য সৃষ্টি করছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। আর ডিভাইস এবং ইন্টারনেট না থাকার সুযোগ নিচ্ছেন পাড়া মহল্লায় ফোন-ফেক্সের দোকানিরা। তারা প্রতি টিকিটে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছেন ঘরমুখো মানুষদের কাছ থেকে। তার মানে কালোবাজারি থেকে মুক্ত হওয়া গেলেও অতি লোভী মানুষের হাত থেকে রক্ষা পাননি নাগরিকরা।