❖ রাহুল গান্ধীর সম্পত্তি ২০ কোটি রুপি, নেই বাড়ি-গাড়ি
❖ মণিপুরে নির্বাচনী প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা
❖ রাজনীতিতে কদর্য ভাষা বাতিলের দাবি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে অন্যান্য দলের ২৫ শীর্ষস্থানীয় নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ‘গুরুতর’ অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল, মামলাও। কিন্তু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর কারো কারো মামলা প্রত্যাহৃত হয়েছে। অধিকাংশ তদন্তের কোনো অগ্রগতিই নেই। বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপিকে বিরোধীরা ‘ওয়াশিং মেশিন’ এর সঙ্গে তুলনা করছেন। তাঁদের অভিযোগ, ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগকে দিয়ে তল্লাশি চালিয়ে বিরোধী নেতাদের বিজেপি ভয় দেখিয়ে দলে টানছে। বিরোধীদের সরকার ভাঙছে। নিজেদের সরকার গড়ছে। গতকাল সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ যে প্রতিবেদন পেশ করেছে, তাতে অবশ্য পরিষ্কার, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যত গুরুতর অভিযোগই থাকুক না, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সব চাপা পড়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো মামলা ‘ক্লোজ’ করে দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের তালিকায় কংগ্রেসের ১০ জন, এনসিপি ও শিবসেনার চারজন করে আটজন, তৃণমূল কংগ্রেসের তিনজন, তেলুগু দেশম পার্টির দুইজন এবং সমাজবাদী পার্টি ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের একজন নেতা রয়েছেন। এদের মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে হয় তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, নয়তো কোনো অগ্রগতিই নেই। দুইজনের বিরুদ্ধে অবশ্য তদন্ত এখনো চলছে। এই ২৫ নেতার মধ্যে ছয়জন নির্বাচনের মুখে এই বছরেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর ইডি, সিবিআই যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত তল্লাশি চালিয়েছিল, তাদের ৯৫ শতাংশই ছিলেন বিরোধী দলের।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজনৈতিক স্বার্থে ইডি-সিবিআইকে কাজে লাগানোর প্রবণতা বিজেপি আমলে বহুগুণ বেড়ে গেছে। ২০০৯ সালের উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে সময় সিবিআই মুলায়ম সিং যাদব ও মায়াবতীর বিরুদ্ধে তদন্তে ঢিলেমি দিয়েছিল। কারণ, ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকার তাদের কাছে টানার চেষ্টায় ছিল। বিজেপি জমানায় এই অতিসক্রিয়তা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায় ২০২২-২৩ সালে। তখন বেশির ভাগ নজর ছিল মহারাষ্ট্রে। ওই সময়ে বিজেপি প্রথমে ভাঙন ধরায় শিবসেনায়, পরে এনসিপিতে। তারপর রাজ্যে সরকার গড়ে। এনসিপির দুই শীর্ষ নেতা অজিত পাওয়ার ও প্রফুল্ল প্যাটেলের বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় মামলা ‘ক্লোজ’ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ দুজনের ‘দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে কামান দাগিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি স্বয়ং। অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ৭০ হাজার কোটি রুপির দুর্নীতি, প্রফুল্ল প্যাটেলের বিরুদ্ধে ৩০ হাজার কোটির। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, শীর্ষ ২৫ নেতার মধ্যে ১২ জনই মহারাষ্ট্রের। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই ২৫ শীর্ষ নেতার নাম, তাদের দল, দুর্নীতির অভিযোগ এবং তদন্ত বর্তমানে কোন অবস্থায় রয়েছে, সব বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করেছে।
গত বুধবার কেরালার ওয়েনাড থেকে লোকসভার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র পেশের সময় হলফনামায় নিজের সম্পত্তির এই হিসাব দিয়েছেন কংগ্রেসের নেতা রাহুল। হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাহুলের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৯ কোটি ২৪ লাখ রুপি ও স্থাবর সম্পত্তি ১১ কোটি ১৫ লাখ। হাতে নগদ আছে মাত্র ৫৫ হাজার রুপি। নগদ ছাড়া অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ব্যাংকে জমা আছে ২৬ লাখ ২৫ হাজার রুপি, ৪ কোটি ৩৩ লাখ রুপির বন্ড ও শেয়ার। আর আছে ৩ কোটি ৮১ লাখ রুপির মিউচুয়াল ফান্ড, ১৫ লাখ ২১ হাজার রুপির সোনার বন্ড এবং ৪ লাখ ২০ হাজার রুপির গয়না। রাহুল গান্ধীর দেনার মোট পরিমাণ ৪৯ লাখ ৭৯ হাজার ১৮৪ রুপি। ২০১৯ সালে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ৮৯ লাখ। রাহুলের নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই। তবে বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে যৌথ মালিকানায় দিল্লির মেহরৌলিতে তার কৃষিজমি আছে। ওই জমি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। দিল্লির অদূরে হরিয়ানার গুরুগ্রামে তার একটি অফিস রয়েছে। বর্তমানে সেটির বাজারমূল্য ৯ কোটি রুপির মতো।
মণিপুর সম্ভবত ভারতের একমাত্র রাজ্য, যেখানে ইম্ফলসহ রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আর নির্বাচনী প্রচার করতে সাহস করবে না। কারণ, মেইতেই সমাজের কট্টরপন্থী এবং আংশিকভাবে সশস্ত্র সংগঠন আরম্বাই টেঙ্গলের দেওয়া ঘোষণা। সম্প্রতি টেঙ্গল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মাইক লাগিয়ে প্রচারের মতো ছোটখাটো প্রচারও মণিপুরে আর করা যাবে না। লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে ১৯ ও ২৬ এপ্রিল নির্বাচন হবে মণিপুরে। শেইসরাম রবার্টসন নামের আরম্বাই টেঙ্গলের সদর দপ্তরের এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনের আগে শব্দদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রকাশ্য স্থানে লাউডস্পিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আরম্বাই টেঙ্গল ব্যাপক শক্তিশালী সংগঠন। অতীতে তাদের কথা না শোনার কারণে প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে এমপি এবং এমএলএদেরও হেনস্তা করা হয়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং টেঙ্গলের কাজের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেননি। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের দলীয় প্রার্থীর পতাকা উত্তোলন বন্ধ করারও নির্দেশ দিয়েছে আরম্বাই টেঙ্গল। এটি মণিপুরে নির্বাচনী প্রচার শুরু করার সময় একটি ঐতিহ্যবাহী রীতি। এর মাধ্যমে রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্রে উন্নীত হয়েছিল। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের ঘরে ঘরে প্রচারণা এবং রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও সাধারণ সমাবেশ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারতে আসন্ন লোকসভা ভোটের আবহে সেই বিষয়টাই যেনো আরো একবার সামনে এসেছে। নির্বাচনী প্রচারে শালীনতা বজায় থাকুক, বিশেষত ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে, সেই আর্জি জানাতে এক অভিনব পন্থা নিয়েছেন কলকাতার বাসিন্দা বাচিকশিল্পী এবং লেখিকা ঝর্ণা ভট্টাচার্য। ভোটের প্রচার-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ভাষা প্রয়োগ রুচিসম্মত হোক, এই আর্জি নিয়ে তার অভিনব উদ্যোগ ‘সরস্বতীর ভাণ্ডার’। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তরের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি এবং সমচিন্তাসম্পন্ন আরো কয়েকজন নাগরিক। প্ল্যাকার্ডে লেখা বার্তা স্পষ্ট ছিল, ‘নির্বাচনী প্রচারে অশালীন ভাষা বন্ধ করুন।’ ঝর্ণা ভট্টাচার্য বলেন, আমরা সবাই চাই রাজনীতিতে শালীনতা বজায় থাকুক। ভোটে দৈহিক রক্তক্ষরণের পাশাপাশি মানসিক রক্তক্ষরণও বন্ধ হোক। সুস্থ স্বাভাবিক ভোট হোক। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভাষা কেন শালীন হবে না, এটাই তো প্রশ্ন। একজন নেতা অন্য নেতার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে যে ভাষা প্রয়োগ করছেন, সেটা রুচিশীল হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। বিরোধীদের বিষয়ে সংযত থেকেও তো কথা বলা যায়। তবে রাজনীতির প্রসঙ্গ এলেই কুরুচিকর ভাষার উল্লেখ আজ থেকে নয়। এই চল বহু যুগ আগে থেকে। ইতিহাসবিদ এবং লেখক নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী বলছেন, প্রাচীনকাল থেকেই রাজনীতির প্রসঙ্গ এলে খারাপ কথা বলার বিষয়টা আসেনি, এমনটা কিন্তু ছিল না। মহাভারতেও রাজনীতির বিষয়টা এলেই ভাষা অশালীন হয়ে উঠেছে।


























