১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেনকে শত বিলিয়ন ইউরো দেওয়ার আহ্বান ন্যাটোর

➤ তালেবানকে সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে রাশিয়া
➤ এপ্রিলেই ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাতে পারে ফ্রান্স

 

দুই বছর পেরিয়ে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ গড়িয়েছে তৃতীয় বছরে। দীর্ঘ এ সময়ে পাল্টাপাল্টি হামলায় হয়েছে হাজারও মানুষের প্রাণহানি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইউক্রেনকে ১০০ বিলিয়ন ইউরোর সামরিক সহযোগিতা তহবিল দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। এদিকে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর যে তালিকা মস্কোর রয়েছে সেখান থেকে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবানের নাম সরিয়ে ফেলার কাজ করছে পুতিন প্রশাসন।
গত বুধবার ব্রাসেলসে ন্যাটো দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ন্যাটো প্রধান বলেন, ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। আমরা সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি আর্থিক সহায়তা ছাড়াও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে। জোটের সদস্যদের অবশ্যই ইউক্রেনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্র সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারণ, মন্ত্রীরা ১০০ বিলিয়ন ইউরো, পাঁচ বছরের তহবিলের একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ সহায়তা প্রদানে যে কোনো বিলম্বের পরিণতি যুদ্ধক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিণত বয়ে নিয়ে আসবে। তাই আমাদের সমর্থনের গতিশীলতা পরিবর্তন করতে হবে। সহযোগিতার ধরন পালটাতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ইউক্রেনকে নির্ভরযোগ্য ও অনুমানযোগ্য নিরাপত্তা সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে স্বেচ্ছামূলক সহযোগিতা ও ন্যাটো প্রতিশ্রুতির ওপর বেশি নির্ভর করতে না হয়।

কূটনীতিকরা বলছেন, ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গের প্রস্তাবে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করার কাজে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে জোটের আরো বেশি প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করবে। ন্যাটো গঠনের ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপনের লক্ষে আয়োজিত দুই দিনের বৈঠকে এ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে জুলাই মাসে ওয়াশিংটনে জোট নেতাদের সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েও কথা হয়।

তিন বছরে গড়ানো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কিয়েভে প্রাণঘাতী নয় এমন সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে ন্যাটো। ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করলে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের ঝুঁকির আশঙ্কা থেকে এমন পথে হেঁটেছে জোটটি। এদিকে ইউক্রেন ও ফিনল্যান্ড ১০ বছরের নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বুধবার ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ফিনিশ প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার স্টাব এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ফিনিশ প্রেসিডেন্টের ইউক্রেন সফরে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। এ চুক্তির আওতায় দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা ও দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা বাড়বে। চুক্তিতে আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রাজনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা এবং সংস্কার পুনর্গঠনে সহযোগিতা করবে ফিনল্যান্ড। ফিনিশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, ইউক্রেনকে দীর্ঘ মেয়াদে সহযোগিতায় ফিনল্যান্ডের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ এই ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি।

এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে আফগানিস্তান আমাদের প্রতিবেশী দেশ। একভাবে হোক বা অন্যভাবে, আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলি। আমাদেরকে বিষয়গুলো নিয়ে চাপ দিতে হবে, তার জন্যও সংলাপের প্রয়োজন। বস্তুত আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি যেমন করি অন্যদের সঙ্গেও। তারাই তো বস্তুত আফগানিস্তানের ক্ষমতায় রয়েছে। তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রই আনুষ্ঠানিকভাবে কাবুল সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি এ অভিযোগে যে, তারা রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক নয় এবং আফগান নারীদের শিক্ষা ও কর্ম থেকে বঞ্চিত করতে ঢালাও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।

অন্যদিকে সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনে সেনা পাঠানর বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার পর বাড়ে উত্তেজনা। ম্যাক্রোঁর সেই মন্তব্য পশ্চিমা বা ন্যাটো সমর্থন না পেলেও রাশিয়া এখন দাবি করছে, এপ্রিল মাসেই ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাতে পারে ফ্রান্স। আর সেই সৈন্যের সংখ্যা হতে পারে দেড় হাজার পর্যন্ত।
গত বুধবার বার্তাসংস্থা আনাদোলু’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তৃতাকালে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ফ্রেঞ্চ ফরেন লিজিয়নের কমান্ড স্টাফরা গত মার্চের শুরুতে একটি কৌশলগত ব্যাটালিয়ন দল গঠন করেছে, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদেরকে ইউক্রেনে পাঠানো। ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য প্যারিসের একটি সামরিক কন্টিনজেন্টের সক্রিয় প্রস্তুতি সম্পর্কে নতুন গোয়েন্দা তথ্য আসছে। এ লক্ষে গত মার্চের শুরুতে ফ্রেঞ্চ ফরেন লিজিয়নের কমান্ড স্টাফরা প্রায় ১৫০০ জনের সমন্বয়ে একটি ব্যাটালিয়ন কৌশলগত গ্রুপ গঠনের অনুমোদন দেয়। আর এপ্রিলে সম্পূর্ণ যুদ্ধ প্রস্তুতির সঙ্গে তাদেরকে বিমানে করে ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউক্রেনকে শত বিলিয়ন ইউরো দেওয়ার আহ্বান ন্যাটোর

আপডেট সময় : ০৭:৩৬:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০২৪

➤ তালেবানকে সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে রাশিয়া
➤ এপ্রিলেই ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাতে পারে ফ্রান্স

 

দুই বছর পেরিয়ে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ গড়িয়েছে তৃতীয় বছরে। দীর্ঘ এ সময়ে পাল্টাপাল্টি হামলায় হয়েছে হাজারও মানুষের প্রাণহানি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইউক্রেনকে ১০০ বিলিয়ন ইউরোর সামরিক সহযোগিতা তহবিল দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। এদিকে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর যে তালিকা মস্কোর রয়েছে সেখান থেকে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবানের নাম সরিয়ে ফেলার কাজ করছে পুতিন প্রশাসন।
গত বুধবার ব্রাসেলসে ন্যাটো দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ন্যাটো প্রধান বলেন, ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। আমরা সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি আর্থিক সহায়তা ছাড়াও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে। জোটের সদস্যদের অবশ্যই ইউক্রেনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্র সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারণ, মন্ত্রীরা ১০০ বিলিয়ন ইউরো, পাঁচ বছরের তহবিলের একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ সহায়তা প্রদানে যে কোনো বিলম্বের পরিণতি যুদ্ধক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিণত বয়ে নিয়ে আসবে। তাই আমাদের সমর্থনের গতিশীলতা পরিবর্তন করতে হবে। সহযোগিতার ধরন পালটাতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ইউক্রেনকে নির্ভরযোগ্য ও অনুমানযোগ্য নিরাপত্তা সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে স্বেচ্ছামূলক সহযোগিতা ও ন্যাটো প্রতিশ্রুতির ওপর বেশি নির্ভর করতে না হয়।

কূটনীতিকরা বলছেন, ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গের প্রস্তাবে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করার কাজে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে জোটের আরো বেশি প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করবে। ন্যাটো গঠনের ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপনের লক্ষে আয়োজিত দুই দিনের বৈঠকে এ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে জুলাই মাসে ওয়াশিংটনে জোট নেতাদের সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েও কথা হয়।

তিন বছরে গড়ানো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কিয়েভে প্রাণঘাতী নয় এমন সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে ন্যাটো। ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করলে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের ঝুঁকির আশঙ্কা থেকে এমন পথে হেঁটেছে জোটটি। এদিকে ইউক্রেন ও ফিনল্যান্ড ১০ বছরের নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বুধবার ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ফিনিশ প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার স্টাব এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ফিনিশ প্রেসিডেন্টের ইউক্রেন সফরে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। এ চুক্তির আওতায় দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা ও দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা বাড়বে। চুক্তিতে আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রাজনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা এবং সংস্কার পুনর্গঠনে সহযোগিতা করবে ফিনল্যান্ড। ফিনিশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, ইউক্রেনকে দীর্ঘ মেয়াদে সহযোগিতায় ফিনল্যান্ডের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ এই ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি।

এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে আফগানিস্তান আমাদের প্রতিবেশী দেশ। একভাবে হোক বা অন্যভাবে, আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলি। আমাদেরকে বিষয়গুলো নিয়ে চাপ দিতে হবে, তার জন্যও সংলাপের প্রয়োজন। বস্তুত আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি যেমন করি অন্যদের সঙ্গেও। তারাই তো বস্তুত আফগানিস্তানের ক্ষমতায় রয়েছে। তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রই আনুষ্ঠানিকভাবে কাবুল সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি এ অভিযোগে যে, তারা রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক নয় এবং আফগান নারীদের শিক্ষা ও কর্ম থেকে বঞ্চিত করতে ঢালাও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।

অন্যদিকে সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনে সেনা পাঠানর বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার পর বাড়ে উত্তেজনা। ম্যাক্রোঁর সেই মন্তব্য পশ্চিমা বা ন্যাটো সমর্থন না পেলেও রাশিয়া এখন দাবি করছে, এপ্রিল মাসেই ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাতে পারে ফ্রান্স। আর সেই সৈন্যের সংখ্যা হতে পারে দেড় হাজার পর্যন্ত।
গত বুধবার বার্তাসংস্থা আনাদোলু’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তৃতাকালে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ফ্রেঞ্চ ফরেন লিজিয়নের কমান্ড স্টাফরা গত মার্চের শুরুতে একটি কৌশলগত ব্যাটালিয়ন দল গঠন করেছে, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদেরকে ইউক্রেনে পাঠানো। ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য প্যারিসের একটি সামরিক কন্টিনজেন্টের সক্রিয় প্রস্তুতি সম্পর্কে নতুন গোয়েন্দা তথ্য আসছে। এ লক্ষে গত মার্চের শুরুতে ফ্রেঞ্চ ফরেন লিজিয়নের কমান্ড স্টাফরা প্রায় ১৫০০ জনের সমন্বয়ে একটি ব্যাটালিয়ন কৌশলগত গ্রুপ গঠনের অনুমোদন দেয়। আর এপ্রিলে সম্পূর্ণ যুদ্ধ প্রস্তুতির সঙ্গে তাদেরকে বিমানে করে ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে।