➤ সদর দপ্তরসহ সারা দেশে ১৫টি ব্যাটালিয়ন নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে র্যাব
➤ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও সর্বাত্মকভাবে সহায়তা প্রদান করছে
দেশের উন্নয়নের পথে অন্যতম বাধা অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। আর এই বাধাকে দূর করতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে ‘র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-(র্যাব)’ নামে একটি এলিট ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। বর্তমান উন্নয়নশীল বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের নির্ভরতার প্রতীক। নিজ কর্মধারায় উজ্জ্বীবিত হয়ে অর্জন করেছে একমাত্র ‘এলিট ফোর্সের’ উপাধি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিজ কার্যে পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, সততা, নিরপেক্ষতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আসছে এই এলিট ফোর্স। আভিযানিক কার্যক্রম, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যবোধ র্যাবকে দিয়েছে আধুনিক ও অভিজাত বাহিনীর উপমা।
২০০৪ সাল ও তার পূর্ববর্তী সময়ে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ, অবৈধ অস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রবণতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সমাজ বিনষ্টকারী নানাবিধ অপরাধ তৎপরতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনই এক পরিস্থিতিতে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্যারেডে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ‘এলিট ফোর্স’ র্যাব-এর যাত্রা শুরু হয়। জন্মের পরপরই এই ফোর্সের ব্যাটালিয়নসমূহ সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকে এবং স্ব-স্ব এলাকা সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এর মাঝে প্রথম অপারেশনাল দায়িত্ব পায় ১৪ এপ্রিল ২০০৪ তারিখে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান-রমনা বটমুলে নিরাপত্তা বিধান করার জন্য । এর পর আবার র্যাব মূলত তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল। ২১ জুন ২০০৪ থেকে র্যাব ফোর্সেস পূর্ণাঙ্গভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে র্যাব সদর দপ্তরসহ সারাদেশে মোট ১৫টি ব্যাটালিয়ন নিয়ে স্বগৌরবে র্যাব বলিষ্ঠ পদক্ষেপে দায়িত্ব পালন করছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাফল্য নিয়ে প্রকাশিত ‘বদলে যাওয়ার ১৫ বছর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এলিট ফোর্সটির নানা সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে।
দেশের উন্নয়নে র্যাবের কার্যক্রমের প্রভাব : বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে অপরাধীদের গ্রেপ্তার, জঙ্গি নির্মূল ও অস্ত্র উদ্ধারসহ নানা সফলতা দেখিয়েছে র্যাব।
বিগত সময়ে ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৬ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। জঙ্গিবাদ নির্মূল করেছে ২ হাজার ৫৫৪ জন, জলদস্যু/বনদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে ৪০৫ জন, সর্বহারা/চরমপন্থি আত্মসমর্পণের সংখ্যা ৩১৪ জন, অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪১৯টি অস্ত্র ও ২ লাখ ৪ হাজার ৮৯৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার এবং গ্রেপ্তার ৯,৮৫৩ জন, মাদক বিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৬০ জন, অবৈধ ক্যাসিনো বিরোধী বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৩৬ জন, কিশোর গ্যাং রোধ অভিযানে গ্রেপ্তার এক হাজার ৩২৭ জন এবং ভিকটিম উদ্ধার এক হাজার ৭৮০ জন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে সহায়তা প্রদান : র্যাব ফোর্সেস সাধারণত স্বতন্ত্রভাবে নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করার পাশাপাশি বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও সর্বাত্মকভাবে সহায়তা প্রদান করে আসছে।
যেমনÑ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য ভিভিআইপির বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসএসএফ ও পিজিআর এর সঙ্গে নিরাপত্তা প্রদান করার পাশাপাশি র্যাবের বোম্ব ও ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করে সুইপিং-এর মাধ্যমে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে র্যাব বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্তৃক আহুত হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংস এবং ধ্বংসাত্বক কোন কর্মকান্ড যাতে না ঘটে সে জন্য সদা তৎপর।
জাতির পিতার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বিশ্ব ইজতেমা, থার্টিফাস্ট নাইট, বড়দিন, বিভিন্ন ঈদ ও পূজাসহ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সকল আচার অনুষ্ঠানে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে র্যাবও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে র্যাবের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির লক্ষ্য হলো আইনের শাসন সমুন্নত রাখা; সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণ; জনগণের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সামাজিক শান্তি রক্ষা; অপরাধ চিহ্নিতকরণ ও প্রতিরোধ; আইন লংঘনকারীকে বিচারের আওতায় আনা; শান্তি ও জনশৃঙ্খলা রক্ষা; জনগণকে সুরক্ষা, সাহায্য ও সেবা প্রদান এবং আশ্বস্তকরণ; সমব্যথী, বিনম্র ও ধৈর্যশীল হওয়া; বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন ও অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং উন্নততর কর্ম সম্পাদনের পন্থা অন্বেষণ।
উদ্দেশ্য হলোÑ সকল নাগরিককে সেবা প্রদান করা এবং বাসযোগ্য ও কর্মোপযোগী নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
র্যাবের দায়িত্বসমূহের মধ্যে রয়েছে- অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দায়িত্ব; অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক এবং এ জাতীয় অন্যান্য বস্তু উদ্ধার; অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার; আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করা; সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা; সরকার নির্দেশিত যে কোন অপরাধের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা; সরকার নির্দেশিত যে কোন জাতীয় দায়িত্ব পালন করা।






















