১১:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেতন বোনাস নিয়ে এখনো শঙ্কায় শ্রমিকরা

◉ বিভিন্ন স্থানে গার্মেন্ট-শিল্প প্রতিষ্ঠানে সংঘাত-সংঘর্ষ অব্যাহত
◉ সরকারি নির্দেশনা আমলে নিচ্ছেন না মালিকরা
◉ সড়কে দুর্ভোগে পড়তে হবে ঈদযাত্রীদের
◉ বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য ঠেকাতে সতর্কাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

 

বাংলাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। কয়েকদিন পরই দেশব্যাপী উদযাপিত হবে ঈদ উৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় বেতন-বোনাস দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ শিল্প-কারখানার নির্ধারিত বেতনের পাশাপাশি বোনাস দেওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর দুই ঈদের আগে দেশের তৈরি পোশাক কারখানার বহু শ্রমিকের বেতন-বোনাস বকেয়া থাকে। ঈদের আগে ঘোষণা ছাড়াই হুটহাট বন্ধ করে দেওয়া হয় অনেক কারখানা। ছাঁটাই করা হয় কর্মীদের। এসব কারণে প্রতিবারই ঈদ এলে বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়কে নামতে বাধ্য হন পোশাকশ্রমিকরা। এতে সড়কে দুর্ভোগে পড়তে হয় ঘরমুখি ঈদযাত্রীদের। বিগত বছরগুলোতেও ঈদের আগে সড়ক অবরোধ, যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি পোশাক কারখানা-শিল্প প্রতিষ্ঠানে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা।

এরই মধ্যে গাজীপুর মহানগরীর জরুন এলাকায় বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। শ্রমিকরা কোনাবাড়ী-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। শিল্পপুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। গত সোমবার বিকালে আন্দোলনের মুখে শুধু কেয়া স্পিনিং মিলের শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বকেয়া বেতনের দাবিতে তারা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন।

শ্রমিকরা জানান, গত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস দেওয়া হয়নি। ২২ মার্চ বকেয়া ও বোনাস দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কথা রাখেনি। শ্রমিকদের পাশাপাশি স্টাফদের বেতনও বেশ কয়েক মাস ধরে বাকি রাখা হয়েছে। কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেডের কেয়া স্পিনিং মিলস, কেয়া কটন, কেয়া ইয়ার্ন মিলস, কেয়া নিট কম্পোজিট, কেয়া ডাইং অ্যান্ড নিটিং এবং কেয়া কসমেটিকস শাখার প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক বিক্ষোভে অংশ নেন। গত দুই বছরের ছুটির টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।

নারী শ্রমিক সালেহা আক্তার বলেন, আমরা কাজ করতে এসেছি। আন্দোলন করতে আসিনি। পেটের ক্ষুধায় আন্দোলন করছি। বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির টাকা না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আন্দোলন করার ফলে কেয়া স্পিনিং মিলস, কেয়া কটন, কেয়া ইয়ার্ন মিলসে ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। তবে কেয়া নিট কম্পোজিট (গার্মেন্টস), কেয়া ডাইং অ্যান্ড নিটিং এবং কেয়া কসমেটিকসে ঈদ বোনাস দেওয়া হয়নি। তাই আন্দোলন, বিক্ষোভ চলমান রয়েছে।

গাজীপুর শিল্পপুলিশের কাশিমপুর জোনের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দিপক চন্দ্র মজুমদার বলেন, গত সোমবার থেকে কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তবে তারা বলছে বকেয়া পরিশোধ না করলে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

শ্রমিকদের আন্দোলনে বিষয়ে জানতে চাইলে কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুমন মিয়া জানান, কারখানা শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন আর বোনাস পাবেন। তাদের বকেয়া বেতন-বোনাস দেওয়া হবে এবং গতকাল কিছু সেকশনে বোনাস দেওয়া হয়েছে।
ঈদের আগে শ্রমিদের বেতনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজানের ঈদের ছুটির আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে হবে। ঈদের আগে কারখানাগুলো কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে না। এজন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়নি। কোনো শিল্পের মালিক কখন বেতন-বোনাস দিতে পারবেন, কখন দিতে পারবেন না, সেটা তো আমরা জানি না। আমরা শুধু বলেছি, ঈদের ছুটির আগে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। ঈদের আগে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না। এটা আমাদের কড়া নির্দেশনা। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা বা ভাঙচুর চাই না।

শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, ঈদের আগে বকেয়া বেতন-বোনাস না পেলে শ্রমিকরা দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ সমাবেশ করতে পারে। এটা তাদের প্রারিশ্রমিক হিসেবে যৌক্তিক অধিকার। বিকেএমইএ-বিজেএমইএ নেতারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিসহ সার্বিক দিক থেকেই কারখানার মালিকরা নানামুখী সংকটে রয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যাহতসহ নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি দিতে না পারায় ঈদের আগে টাকা পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে। তবে ঈদের আগে টাকা পেলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৫ মার্চ রাজধানীর উত্তরায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কার্যালয়ে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার তৈরি পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও ডিআইএফইসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান বলেছেন, ঈদের আগে কোনো গার্মেন্টের মালিক বেতন-ভাতা দিতে ব্যর্থ হলে বিকল্প কোনো উপায় বের করার জন্য মালিকপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সম্ভাব্য সংঘাত-সহিংসতা হতে পারেÑ এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। সেই গোয়েন্দা তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ রকম অন্তত ৪১৬টি কারখানা শনাক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মালিক, পুলিশ প্রশাসনÑ কার কী করণীয় সেটাও নির্ধারণ করা হয়েছে। ঈদের আগে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই যেন শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফ না করা হয় এ ব্যাপারে মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে তিন পাশে শিল্পাঞ্চল। এসব পথ ধরেই ঈদে গ্রামে ফিরবে ঘরমুখো মানুষ। পোশাক কারখানার মালিকরা ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ না করলে শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি হবে। এতে সড়ক অবরোধসহ সহিংস পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। এসময়ে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে সড়কে দুর্ভোগে পড়তে হবে ঈদযাত্রীদের।

শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন বলেন, শ্রমিদের আন্দোলন যৌক্তিক। ঈদের আগে তাদের বেতন বোনাস দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে তবে অনেক গার্মেন্ট এই নির্র্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে না। আমরা মনেকরি সরকারের উচিত তাদের এই ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। আর তা না হলে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।

শ্রমিক সংগঠনের একাধিক নেতৃবৃন্দ জানান, ঈদের আগে বকেয়া বেতন-বোনাস এটা তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে যৌক্তিক অধিকার। মালিকপক্ষ যাতে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদানের বিষয়টি নিজ নিজ কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি সমাধান করেন। তাহলে সড়কে ও কারখানায় কোনো নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা ও সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটবে না। এসব ক্ষেত্রে একটি কুচক্রী মহলও ফায়দা লুটার স্বার্থে শ্রমিকদের উস্কে দেয়, সেই বিষয়টিও মাথায় রেখে মালিকপক্ষকে আরও আন্তরিক হতে হবে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রধান বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানায় কোনো রকম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। কোনো কোনো কারখানায় সমস্যা হতে পারে এগুলো শনাক্ত করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা হয়েছে। যদি কোনো কারখানায় সমস্যা হয় তাহলে কার কী করণীয় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আলোচনা করে কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

আসন্ন ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে সমস্যায় পড়তে পারে ৪১৬টি পোশাকশিল্প কারখানা। আর্থিক সংকট, পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ না থাকাসহ নানা কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে এই কারখানাগুলো। পেশাক শিল্পখাতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত শিল্প পুলিশের হিসাবে, দেশে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা ৪১৬টি। তার মধ্যে বিজিএমইএর ১৭১টি, বিকেএমইএর ৭১টি, বিটিএমএর ২৯টি, বেপজার ১৩টি এবং এসবের বাইরে ১৩২টি কারখানা রয়েছে। তিন হাজার ৬০০টি কারখানার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে শিল্প পুলিশ।

অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে ঈদের বোনাস যেন এপ্রিলের শুরুতে দেওয়া হয়। ঈদের ছুটির আগেই যেন মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হয়। মালিক ও শ্রমিকদের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ঈদের ছুটি যেন পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয় সে অনুরোধও করা হয়েছে। ঈদুল ফিতরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতাকে কেন্দ্র করে কোনো অপশক্তি যেন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে- এ বিষয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

ঈদের আগে অনেক শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। এটির সমাধানে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রধান মাহাবুবর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মালিকপক্ষ হয়তো অসামর্থ্য হওয়ার কারণে শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসে। এসব ক্ষেত্রে বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ পুলিশকে সহায়তা করে। অনেক ক্ষেত্রে এক কারখানার যন্ত্রপাতি অন্য কারখানা মালিক কিনে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়েছে। এমনও নজির রয়েছে। ঈদের ছুটির সময় ফাঁকা কলকারখানা অধ্যুষিত এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বিশেষ টহল ডিউটিতে থাকবে। ঈদের ৭ দিন আগে থেকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম ও হটলাইন সচল থাকবে (০১৩২০-১৭০০৯৮)।

 

এসব বিষয়ে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক বেশি সংকট রয়েছে। নানা রকমের সংকটে এখনো কারখানাগুলো আবর্তিত। ব্যাংকের সঙ্গে নানা রকম সংকট, আন্তর্জাতিক মার্কেটে অর্ডার কম, রপ্তানিও কম, এমন নানা সংকট রয়েছে। এদিকে আমাদের সবকিছুরই মূল্য বেড়েছে। গ্যাসের মূল্য বেড়েছে, গ্যাস ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত মানেই নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে না পারলে টাকা না পেলে বেতন-বোনাস দিতে অনেক কারখানা মালিকের সমস্যা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ইনসেনটিভের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এখনো ঈদের বাকি রয়েছে অনেক সময়। এই টাকা যদি ঈদের আগে পায় তবে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া সহজ হবে।

 

বিজেএমইএ’র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হীল রাকিব বলেন, আগের চেয়ে এবার সংকট অনেক বেশি। নানামুখী সংকটে রয়েছে কারখানা মালিকরা। ২০২৪ সাল আমাদের জন্য আরো কঠিন একটা বছর। আরো অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। অনেকেই হয়তো এটি দেখতে পাচ্ছেন না, বর্তমানে ভালো কারখানার মালিকও নানামুখী ভোগান্তিতে পড়ছেন। কারখানার মালিক কোনোভাবেই বেতন-বোনাস বাকি রাখতে চান না। পরিস্থিতির কারণে অনেকেই পিছিয়ে পড়ছেন। নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি দিয়েও ঠিকমতো টাকা হাতে পাচ্ছেন না। তবে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় মালিকদের আরো আন্তরিক হয়ে কাজ করলে এ সমস্যা হবে না বলেও জানান বিজেএমইএ’র শীর্ষ এই নেতা।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার জানাজা-দাফন ঘিরে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

বেতন বোনাস নিয়ে এখনো শঙ্কায় শ্রমিকরা

আপডেট সময় : ০৫:৩০:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০২৪

◉ বিভিন্ন স্থানে গার্মেন্ট-শিল্প প্রতিষ্ঠানে সংঘাত-সংঘর্ষ অব্যাহত
◉ সরকারি নির্দেশনা আমলে নিচ্ছেন না মালিকরা
◉ সড়কে দুর্ভোগে পড়তে হবে ঈদযাত্রীদের
◉ বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য ঠেকাতে সতর্কাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

 

বাংলাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। কয়েকদিন পরই দেশব্যাপী উদযাপিত হবে ঈদ উৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় বেতন-বোনাস দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ শিল্প-কারখানার নির্ধারিত বেতনের পাশাপাশি বোনাস দেওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর দুই ঈদের আগে দেশের তৈরি পোশাক কারখানার বহু শ্রমিকের বেতন-বোনাস বকেয়া থাকে। ঈদের আগে ঘোষণা ছাড়াই হুটহাট বন্ধ করে দেওয়া হয় অনেক কারখানা। ছাঁটাই করা হয় কর্মীদের। এসব কারণে প্রতিবারই ঈদ এলে বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়কে নামতে বাধ্য হন পোশাকশ্রমিকরা। এতে সড়কে দুর্ভোগে পড়তে হয় ঘরমুখি ঈদযাত্রীদের। বিগত বছরগুলোতেও ঈদের আগে সড়ক অবরোধ, যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি পোশাক কারখানা-শিল্প প্রতিষ্ঠানে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা।

এরই মধ্যে গাজীপুর মহানগরীর জরুন এলাকায় বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। শ্রমিকরা কোনাবাড়ী-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। শিল্পপুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। গত সোমবার বিকালে আন্দোলনের মুখে শুধু কেয়া স্পিনিং মিলের শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বকেয়া বেতনের দাবিতে তারা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন।

শ্রমিকরা জানান, গত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস দেওয়া হয়নি। ২২ মার্চ বকেয়া ও বোনাস দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কথা রাখেনি। শ্রমিকদের পাশাপাশি স্টাফদের বেতনও বেশ কয়েক মাস ধরে বাকি রাখা হয়েছে। কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেডের কেয়া স্পিনিং মিলস, কেয়া কটন, কেয়া ইয়ার্ন মিলস, কেয়া নিট কম্পোজিট, কেয়া ডাইং অ্যান্ড নিটিং এবং কেয়া কসমেটিকস শাখার প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক বিক্ষোভে অংশ নেন। গত দুই বছরের ছুটির টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।

নারী শ্রমিক সালেহা আক্তার বলেন, আমরা কাজ করতে এসেছি। আন্দোলন করতে আসিনি। পেটের ক্ষুধায় আন্দোলন করছি। বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির টাকা না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আন্দোলন করার ফলে কেয়া স্পিনিং মিলস, কেয়া কটন, কেয়া ইয়ার্ন মিলসে ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। তবে কেয়া নিট কম্পোজিট (গার্মেন্টস), কেয়া ডাইং অ্যান্ড নিটিং এবং কেয়া কসমেটিকসে ঈদ বোনাস দেওয়া হয়নি। তাই আন্দোলন, বিক্ষোভ চলমান রয়েছে।

গাজীপুর শিল্পপুলিশের কাশিমপুর জোনের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দিপক চন্দ্র মজুমদার বলেন, গত সোমবার থেকে কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তবে তারা বলছে বকেয়া পরিশোধ না করলে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

শ্রমিকদের আন্দোলনে বিষয়ে জানতে চাইলে কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুমন মিয়া জানান, কারখানা শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন আর বোনাস পাবেন। তাদের বকেয়া বেতন-বোনাস দেওয়া হবে এবং গতকাল কিছু সেকশনে বোনাস দেওয়া হয়েছে।
ঈদের আগে শ্রমিদের বেতনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজানের ঈদের ছুটির আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে হবে। ঈদের আগে কারখানাগুলো কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে না। এজন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়নি। কোনো শিল্পের মালিক কখন বেতন-বোনাস দিতে পারবেন, কখন দিতে পারবেন না, সেটা তো আমরা জানি না। আমরা শুধু বলেছি, ঈদের ছুটির আগে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। ঈদের আগে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না। এটা আমাদের কড়া নির্দেশনা। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা বা ভাঙচুর চাই না।

শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, ঈদের আগে বকেয়া বেতন-বোনাস না পেলে শ্রমিকরা দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ সমাবেশ করতে পারে। এটা তাদের প্রারিশ্রমিক হিসেবে যৌক্তিক অধিকার। বিকেএমইএ-বিজেএমইএ নেতারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিসহ সার্বিক দিক থেকেই কারখানার মালিকরা নানামুখী সংকটে রয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যাহতসহ নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি দিতে না পারায় ঈদের আগে টাকা পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে। তবে ঈদের আগে টাকা পেলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৫ মার্চ রাজধানীর উত্তরায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কার্যালয়ে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার তৈরি পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও ডিআইএফইসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান বলেছেন, ঈদের আগে কোনো গার্মেন্টের মালিক বেতন-ভাতা দিতে ব্যর্থ হলে বিকল্প কোনো উপায় বের করার জন্য মালিকপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সম্ভাব্য সংঘাত-সহিংসতা হতে পারেÑ এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। সেই গোয়েন্দা তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ রকম অন্তত ৪১৬টি কারখানা শনাক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মালিক, পুলিশ প্রশাসনÑ কার কী করণীয় সেটাও নির্ধারণ করা হয়েছে। ঈদের আগে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই যেন শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফ না করা হয় এ ব্যাপারে মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে তিন পাশে শিল্পাঞ্চল। এসব পথ ধরেই ঈদে গ্রামে ফিরবে ঘরমুখো মানুষ। পোশাক কারখানার মালিকরা ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ না করলে শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি হবে। এতে সড়ক অবরোধসহ সহিংস পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। এসময়ে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে সড়কে দুর্ভোগে পড়তে হবে ঈদযাত্রীদের।

শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন বলেন, শ্রমিদের আন্দোলন যৌক্তিক। ঈদের আগে তাদের বেতন বোনাস দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে তবে অনেক গার্মেন্ট এই নির্র্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে না। আমরা মনেকরি সরকারের উচিত তাদের এই ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। আর তা না হলে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।

শ্রমিক সংগঠনের একাধিক নেতৃবৃন্দ জানান, ঈদের আগে বকেয়া বেতন-বোনাস এটা তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে যৌক্তিক অধিকার। মালিকপক্ষ যাতে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদানের বিষয়টি নিজ নিজ কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি সমাধান করেন। তাহলে সড়কে ও কারখানায় কোনো নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা ও সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটবে না। এসব ক্ষেত্রে একটি কুচক্রী মহলও ফায়দা লুটার স্বার্থে শ্রমিকদের উস্কে দেয়, সেই বিষয়টিও মাথায় রেখে মালিকপক্ষকে আরও আন্তরিক হতে হবে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রধান বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানায় কোনো রকম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। কোনো কোনো কারখানায় সমস্যা হতে পারে এগুলো শনাক্ত করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা হয়েছে। যদি কোনো কারখানায় সমস্যা হয় তাহলে কার কী করণীয় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আলোচনা করে কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

আসন্ন ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে সমস্যায় পড়তে পারে ৪১৬টি পোশাকশিল্প কারখানা। আর্থিক সংকট, পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ না থাকাসহ নানা কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে এই কারখানাগুলো। পেশাক শিল্পখাতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত শিল্প পুলিশের হিসাবে, দেশে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা ৪১৬টি। তার মধ্যে বিজিএমইএর ১৭১টি, বিকেএমইএর ৭১টি, বিটিএমএর ২৯টি, বেপজার ১৩টি এবং এসবের বাইরে ১৩২টি কারখানা রয়েছে। তিন হাজার ৬০০টি কারখানার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে শিল্প পুলিশ।

অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে ঈদের বোনাস যেন এপ্রিলের শুরুতে দেওয়া হয়। ঈদের ছুটির আগেই যেন মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হয়। মালিক ও শ্রমিকদের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ঈদের ছুটি যেন পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয় সে অনুরোধও করা হয়েছে। ঈদুল ফিতরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতাকে কেন্দ্র করে কোনো অপশক্তি যেন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে- এ বিষয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

ঈদের আগে অনেক শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। এটির সমাধানে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রধান মাহাবুবর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মালিকপক্ষ হয়তো অসামর্থ্য হওয়ার কারণে শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসে। এসব ক্ষেত্রে বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ পুলিশকে সহায়তা করে। অনেক ক্ষেত্রে এক কারখানার যন্ত্রপাতি অন্য কারখানা মালিক কিনে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়েছে। এমনও নজির রয়েছে। ঈদের ছুটির সময় ফাঁকা কলকারখানা অধ্যুষিত এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বিশেষ টহল ডিউটিতে থাকবে। ঈদের ৭ দিন আগে থেকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম ও হটলাইন সচল থাকবে (০১৩২০-১৭০০৯৮)।

 

এসব বিষয়ে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক বেশি সংকট রয়েছে। নানা রকমের সংকটে এখনো কারখানাগুলো আবর্তিত। ব্যাংকের সঙ্গে নানা রকম সংকট, আন্তর্জাতিক মার্কেটে অর্ডার কম, রপ্তানিও কম, এমন নানা সংকট রয়েছে। এদিকে আমাদের সবকিছুরই মূল্য বেড়েছে। গ্যাসের মূল্য বেড়েছে, গ্যাস ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত মানেই নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে না পারলে টাকা না পেলে বেতন-বোনাস দিতে অনেক কারখানা মালিকের সমস্যা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ইনসেনটিভের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এখনো ঈদের বাকি রয়েছে অনেক সময়। এই টাকা যদি ঈদের আগে পায় তবে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া সহজ হবে।

 

বিজেএমইএ’র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হীল রাকিব বলেন, আগের চেয়ে এবার সংকট অনেক বেশি। নানামুখী সংকটে রয়েছে কারখানা মালিকরা। ২০২৪ সাল আমাদের জন্য আরো কঠিন একটা বছর। আরো অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। অনেকেই হয়তো এটি দেখতে পাচ্ছেন না, বর্তমানে ভালো কারখানার মালিকও নানামুখী ভোগান্তিতে পড়ছেন। কারখানার মালিক কোনোভাবেই বেতন-বোনাস বাকি রাখতে চান না। পরিস্থিতির কারণে অনেকেই পিছিয়ে পড়ছেন। নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি দিয়েও ঠিকমতো টাকা হাতে পাচ্ছেন না। তবে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় মালিকদের আরো আন্তরিক হয়ে কাজ করলে এ সমস্যা হবে না বলেও জানান বিজেএমইএ’র শীর্ষ এই নেতা।