১১:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রীয় তথ্যসেবা ও নিরাপত্তায় এনটিএমসি

⏺ আইন প্রয়োগকারী, তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য সংস্থাসমূহকে টেলিকমিউনিকেশন সহায়তা প্রদান করছে প্রতিষ্ঠানটি
⏺গত এক বছরে ২৫০২৬০৫২ অনাকাক্সিক্ষত স্ক্যান এবং ২৪২৪ সাইবার হামলা শনাক্ত ও প্রতিহত করেছে
⏺ ডিজিটালি বিভিন্ন প্রতারণা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতারক শনাক্তে তৎপর
⏺ এনআইডি ও পাসপোর্ট যাচাইসহ নানা কাজে সাফল্য

 

 

জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সংস্থা হলো ‘ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)’। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এই সংস্থাটি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী, তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকার নির্ধারিত অন্যান্য সংস্থাকে টেলিকমিউনিকেশন সহায়তা প্রদান করে আসছে।

এনটিএমসিতে স্থাপিত বিভিন্ন সিস্টেমের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাসমূহের সদরদপ্তরের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। উক্ত সংযোগ এবং এনটিএমসি’র অভ্যন্তরীণ সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে উদ্ভাবনী প্রকল্প হিসেবে ২০২১ সালে এনটিএমসিতে সিকিউরিটি অপারেশনস সেন্টার (এসওএস) স্থাপন করা হয়।

এনটিএমসি’র সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার গত এক বছরে সর্বমোট ২ কোটি ৫০ লাখ ২৬ হাজার ৫২ অনাকাক্সিক্ষত স্ক্যান এবং অভ্যন্তরীণ ডিভাইসসমূহে (ওয়ার্কস্টেশন এবং সার্ভার) ২ হাজার ৪২৪ সাইবার হামলা শনাক্ত ও প্রতিহত করেছে।

অবৈধ ভিওআইপি কলের কারণে সরকার বিপুল রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভিওআইপি ফ্রড নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নিলেও পরিপূর্ণভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়নি। বর্তমান সরকারের অর্থায়নে এনটিএমসি কর্তৃক ‘ভিওআইপি ফ্রড ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন’ সিস্টেমটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, ফলশ্রুতিতে অবৈধ ‘ভিওআইপি কল ব্লকিং অ্যান্ড ফ্রড ম্যানেজমেন্ট ডিটেকশন’ কার্যক্রম সহজতর হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাফল্য নিয়ে প্রকাশিত ‘বদলে যাওয়ার ১৫ বছর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে এনটিএমসির বিস্তারিত কার্যক্রম, প্রয়োজনীয়তা, সাফল্য ইত্যাদি বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে।

ভিওআইপি ফ্রড ম্যানেজমেন্ট সল্যুশনের প্রয়োজনীয়তা : অবৈধভাবে সংঘটিত ভিওআইপি ফ্রড কল শনাক্তকরণ ও পর্যবেক্ষণ, ফ্রডের কাজে নিয়োজিত এসআইম শনাক্তকরণ ও এই সংস্থা হতে সরাসরি ব্লক করা, স্ট্রাটেজিক গেজ স্ট্যান্ডডালোন সল্যুশন হবার কারণে ইনস্টলেশনের পর সিস্টেমটির সঙ্গে এনটিএমসি প্রাঙ্গণের বাইরে কোনো প্রকার রিমোট কানেক্টিভিটি নেই এবং ভেন্ডরে সঙ্গে কোনো প্রকার সংযোগ না থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; ভিওআইপি কল ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে উদ্ভূত হওয়া এবং শেষ হওয়া অবধি সব ইনকামিং এবং আউটগোয়িং কল এবং এসএমএস নিরীক্ষণ করার ক্ষমতা; ২৪/৭ অপারেশন এবং পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টারের (এনওসি) মাধ্যমে অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই সিস্টেমটি ব্যবহার করার সুবিধা; সরকারি রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ এবং অবৈধ ভিওআইপি কলের পরিসংখ্যান দৈনিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রদান করার সক্ষমতা রয়েছে, ফ্রডের কাজে নিয়োজিত এসআইএমসমূহের অবস্থান শনাক্তকরণ।

সংশ্লিষ্ট সংস্থা ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের বিশেষ স্বার্থে কেউ যেন ফেক বিটিএস স্থাপনের মাধ্যমে ‘কল ইন্টারসেপ্ট’ না করতে পারে তা নিশ্চিতকল্পে বর্তমান সরকারের অর্থায়নে এনটিএমসি কর্তৃক জড়মঁব ইঞঝ ওফবহঃরভরপধঃরড়হ ঝুংঃবস (আরবিটিএস) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে উক্ত সিস্টেমটি চালু রাখা হয়েছে।

আরবিটিএস এর কার্যক্রমসমূহ : বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে কোনো সেলুলার টেকনোলোজির মাধ্যমে প্রেরিত নেটওয়ার্ক স্ক্যান ও চিহ্নিতকরণ; জড়ঁমব ইঞঝ/ওগঝও ঈধঃপযবৎ যে কোনো মোবাইল মনিটরিং সিস্টেম অ্যাক্টিভ মোডে অপারেশনাল আছে কি না তা চিহ্নিতকরণ; অপারেশনাল থাকা জড়ঁমব ইঞঝ/ওগঝও ঈধঃপযবৎ যে কোনো মোবাইল মনিটরিং সিস্টেমের কার্যকারিতা মনিটর করা; মাঠপর্যায়ে সিস্টেমের মাধ্যমে অ্যাক্টিভ মোডে অপারেশনাল থাকা উক্ত জড়ঁমব ইঞঝ/ওগঝও ঈধঃপযবৎ যে কোনো মোবাইল মনিটরিং সিস্টেমের অবস্থান নিশ্চিতকরণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অর্পণ করা।

জিও লোকেশন সিস্টেম : মুজিববর্ষ উপলক্ষে এনটিএমসি কর্তৃক গৃহীত আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ ‘জিও লোকেশন সিস্টেম’। জিও লোকেশন প্ল্যাটফর্মটি একটি জাতীয় পর্যায়ের প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারী সংস্থাসমূহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইন্টেলিজেন্ট এনালাইসিস করার সক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। প্ল্যাটফর্মটির আওতায় পুরো বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা থাকবে এবং যে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন এর অতীত সময়ের অবস্থানগত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানে সক্ষম থাকবে। এনটিএমসিতে কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার সমন্বিতভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং এর মাধ্যমে দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রচার এবং দেশের বিরুদ্ধে শনাক্তকৃত সব অপপ্রচার রোধে কাজ করে থাকে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থাসমূহ সরাসরি এটি ব্যবহার করে অপরাধের স্থান দ্রুততার সঙ্গে নির্ণয় করতে পারবে।

ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম (এনআইপি): এ প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। সংস্থাসমূহ সফলভাবে এনআইপি হতে নাগরিক সংক্রান্ত তথ্যসেবা লাভ করছে যা তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করছে। এনআইপি সিটিজেন ডাটা ভেরিফিকেশন এবং কোরিলেশন এর লক্ষ্যে তৈরিকৃত একটি কেন্দ্রীয় সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন জাতীয় ডাটাবেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহের মাধ্যমে সমন্বয় করে একক প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শন করা হয়। এ সিস্টেম থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ নাগরিকদের বায়োমেট্রিকসহ অন্যান্য তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারে। এর ফলে মাত্র একটি সিস্টেম ব্যবহার করে তদন্তকাজে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করতে সক্ষম হচ্ছে।
এনআইপি সিস্টেমে সংযুক্ত তথ্য ভাণ্ডার : উক্ত সিস্টেমের মাধ্যমে সংযুক্ত সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিভিন্ন সংস্থা তথ্য যাচাই-বাছাই এবং সমন্বয় করতে সমর্থ হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ডাটাবেজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে প্রোফাইলিং করা যাচ্ছে যা তদন্ত কার্যক্রমে অত্যন্ত সহায়ক।

এনআইপি সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত সুবিধাদি : এনআইপি বিদ্যমান ডাটাবেজসমূহের সঠিক ব্যবহারের ফলে এএফডি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ডিজিএফআই, এসএসএফ, এনএসআই, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, এটিইউ, পিবিআই, সিআইডি, এসবি, ডিএমপি, এপিবিএন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, দুদক, বিআরটিএ, এনবিআর, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, কারা অধিদপ্তর, বিএমইটি, খাদ্য অধিদপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয় ও এটুআই অতি সহজেই কোনো ব্যক্তির তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারে। উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর রিক্রুটিং প্রক্রিয়াকে আরো বেগবান এবং স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে আইটি পরিদপ্তর, জিএস শাখা, সেনাসদর এই এনআইপি থেকে শিক্ষা বোর্ডের ডাটাবেজ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাবেজ হতে তথ্যগ্রহণ করে সব আবেদনকারীর তথ্য যাচাই-বাছাই করছে। এছাড়া, স্টেশন সদর দপ্তর, ঢাকা সেনানিবাসে গাড়ি প্রবেশের স্টিকার তৈরির সময় আবেদনকারী কর্তৃক প্রদত্ত ভেহিকেল রেজিস্ট্রেশন এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য এনআইপির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করছে।

এনটিএমসি’র ডাটা সেন্টার আধুনিকায়ন ও বর্ধিতকরণ : এনটিএমসিতে সব আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাসমূহের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণের নিমিত্ত টায়ার-৪ সমমানের ডাটা সেন্টার অবকাঠামোর বাস্তবায়ন ১৬ আগস্ট ২০১৭ হতে শুরু হয় এবং ১০ এপ্রিল ২০১৮ সালে ডাটা সেন্টারের কাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ডাটা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ক্রমবর্ধমান ডাটা এনটিএমসির ডাটা সেন্টারে স্টোর করে রাখার জন্য বর্তমান সরকারের অর্থায়নে ডাটা সেন্টার সম্প্রসারণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। বর্তমানে ডাটা সেন্টারে ১১৭টি রেকবিশিষ্ট সার্ভার রুমের ব্যবস্থা রয়েছে যা নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টারের মাধ্যমে সংযুক্ত। এ সব সিস্টেমের মধ্যে মনিটরিং সেন্টারের মাধ্যমে সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থা সব মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক তথ্য, সিডিআর এনালাইসিস এবং মনিটর করতে সক্ষম। পিআইডিএস সিস্টেমে বাংলাদেশের সব কারাগারে কয়েদিদের ডাটাবেজের মিরর কপি ডাটা সেন্টারে হোস্ট করা হয়েছে যার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থাসমূহ তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করে সেবাগ্রহণ করে থাকে।

সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল (এসএমএমসি) পরিচালনা : সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল দেশের স্বার্থে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘটিত সব ধরনের সাইবার অপরাধসমূহ যা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ সেগুলো মনিটরিং করার পাশাপাশি কাউন্টার কমেন্ট করে থাকে। সেইসঙ্গে গ্রাফিক্স এবং ভিডিও কমেন্ট তৈরি করে জনগণের সামনে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য তুলে ধরে। এই সেল কর্তৃক সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য সোস্যাল মিডিয়াতে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা করা হয়। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যারা দেশবিরোধী অপপ্রচার তথা অপতৎপরতা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের আলোকে নিয়মিত রিপোর্ট করার পাশাপাশি উক্ত দেশবিরোধী অপশক্তির তালিকা গঠনপূর্বক নিয়মিত বিটিআরসিতে প্রেরণ করা হয়ে থাকে যাতে করে বিটিআরসি বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনানুসারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেলের কার্যক্রমসমূহ : সব সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং (ভাইরাল নিউজ, গুজব, ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু); কাউন্টার ন্যারেটিভ অ্যান্ড ব্লগ রাইটিং এবং বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচার; গ্রাফিক্স কন্টেন্ট ও ভিডিও কন্টেন্ট প্রস্তুত এবং বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচার;
ফেসবুকের মাধ্যমে কিছু কুচক্রী মহল রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সংস্থার নামে অনুমতিবিহীন বিভিন্ন ফেসবুক একাউন্ট পরিচালনার মাধ্যম ব্যক্তিগত সুবিধা হাসিল ও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে বদ্ধ পরিকর। এ সব প্রোপাগান্ডামূলক অপপ্রচার রোধে এনটিএমসি কর্তৃক ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থাসমূহের নামে চালিত ভুয়া ফেসবুক আইডি, ফেসবুক পেইজ, ফেসবুক গ্রুপ, ফেসবুক পোস্ট লিংক নিয়মিত বন্ধ করা হয়।

স্যাটেলাইট ফোন মনিটরিং সিস্টেম বাস্তবায়ন : বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তালমিলিয়ে বাংলাদেশেও স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, সীমান্তবর্তী এলাকা এবং গভীর সমুদ্রে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করে অপরাধ বেড়েই চলেছে। স্যাটেলাইট ফোন এর গুরুত্ব অনুধাবন করে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাসমূহকে অপরাধ দমন ও তদন্তকাজে সহযোগিতার জন্য বর্তমান সরকারের অর্থায়নে স্যাটেলাইট ফোন মনিটরিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সফলভাবে সিস্টেম স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এর ব্যবহারের ওপর ১২টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাসমূহের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি উক্ত সিস্টেমকে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স প্লাটফর্ম এবং মনিটরিং সিস্টেম এ কানেকটিভিটি প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাসমূহ এনটিএমসি’র স্যাটেলাইট ফোন সিস্টেম হতে প্রয়োজনীয় ডাটা সংগ্রহ করতে পারছে।

স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধসমূহ শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম, দেশের সমুদ্র ও নদীপথে মানব পাচার, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কার্যক্রম, সীমান্ত ও নৌপথে অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান, রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী কার্যক্রম।

এনটিএমসি’র উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহ : স্মার্ট বাংলাদেশ সম্মাননা-২০২৩ অর্জন, বিআরটিএ হতে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীদের এনআইডি যাচাই; খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সুবিধাভোগীদের পরিচয়পত্র যাচাই, বিদেশগামী কর্মীদের পাসপোর্ট যাচাই, ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্মাননা-২০১৯ অর্জন, প্রিজন ইনমেট ডাটাবেজ সিস্টেম বাস্তবায়ন, হজ্ব যাত্রীদের পাসপোর্ট যাচাই এবং অর্থ বিভাগ হতে অর্থ সহায়তাকারীদের তথ্য যাচাই।

জনপ্রিয় সংবাদ

নায়ক রিয়াজের মৃত্যুসংবাদ ফেসবুকে, যা জানাল পরিবার

রাষ্ট্রীয় তথ্যসেবা ও নিরাপত্তায় এনটিএমসি

আপডেট সময় : ০৭:০৮:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪

⏺ আইন প্রয়োগকারী, তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য সংস্থাসমূহকে টেলিকমিউনিকেশন সহায়তা প্রদান করছে প্রতিষ্ঠানটি
⏺গত এক বছরে ২৫০২৬০৫২ অনাকাক্সিক্ষত স্ক্যান এবং ২৪২৪ সাইবার হামলা শনাক্ত ও প্রতিহত করেছে
⏺ ডিজিটালি বিভিন্ন প্রতারণা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতারক শনাক্তে তৎপর
⏺ এনআইডি ও পাসপোর্ট যাচাইসহ নানা কাজে সাফল্য

 

 

জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সংস্থা হলো ‘ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)’। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এই সংস্থাটি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী, তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকার নির্ধারিত অন্যান্য সংস্থাকে টেলিকমিউনিকেশন সহায়তা প্রদান করে আসছে।

এনটিএমসিতে স্থাপিত বিভিন্ন সিস্টেমের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাসমূহের সদরদপ্তরের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। উক্ত সংযোগ এবং এনটিএমসি’র অভ্যন্তরীণ সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে উদ্ভাবনী প্রকল্প হিসেবে ২০২১ সালে এনটিএমসিতে সিকিউরিটি অপারেশনস সেন্টার (এসওএস) স্থাপন করা হয়।

এনটিএমসি’র সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার গত এক বছরে সর্বমোট ২ কোটি ৫০ লাখ ২৬ হাজার ৫২ অনাকাক্সিক্ষত স্ক্যান এবং অভ্যন্তরীণ ডিভাইসসমূহে (ওয়ার্কস্টেশন এবং সার্ভার) ২ হাজার ৪২৪ সাইবার হামলা শনাক্ত ও প্রতিহত করেছে।

অবৈধ ভিওআইপি কলের কারণে সরকার বিপুল রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভিওআইপি ফ্রড নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নিলেও পরিপূর্ণভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়নি। বর্তমান সরকারের অর্থায়নে এনটিএমসি কর্তৃক ‘ভিওআইপি ফ্রড ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন’ সিস্টেমটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, ফলশ্রুতিতে অবৈধ ‘ভিওআইপি কল ব্লকিং অ্যান্ড ফ্রড ম্যানেজমেন্ট ডিটেকশন’ কার্যক্রম সহজতর হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাফল্য নিয়ে প্রকাশিত ‘বদলে যাওয়ার ১৫ বছর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে এনটিএমসির বিস্তারিত কার্যক্রম, প্রয়োজনীয়তা, সাফল্য ইত্যাদি বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে।

ভিওআইপি ফ্রড ম্যানেজমেন্ট সল্যুশনের প্রয়োজনীয়তা : অবৈধভাবে সংঘটিত ভিওআইপি ফ্রড কল শনাক্তকরণ ও পর্যবেক্ষণ, ফ্রডের কাজে নিয়োজিত এসআইম শনাক্তকরণ ও এই সংস্থা হতে সরাসরি ব্লক করা, স্ট্রাটেজিক গেজ স্ট্যান্ডডালোন সল্যুশন হবার কারণে ইনস্টলেশনের পর সিস্টেমটির সঙ্গে এনটিএমসি প্রাঙ্গণের বাইরে কোনো প্রকার রিমোট কানেক্টিভিটি নেই এবং ভেন্ডরে সঙ্গে কোনো প্রকার সংযোগ না থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; ভিওআইপি কল ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে উদ্ভূত হওয়া এবং শেষ হওয়া অবধি সব ইনকামিং এবং আউটগোয়িং কল এবং এসএমএস নিরীক্ষণ করার ক্ষমতা; ২৪/৭ অপারেশন এবং পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টারের (এনওসি) মাধ্যমে অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই সিস্টেমটি ব্যবহার করার সুবিধা; সরকারি রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ এবং অবৈধ ভিওআইপি কলের পরিসংখ্যান দৈনিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রদান করার সক্ষমতা রয়েছে, ফ্রডের কাজে নিয়োজিত এসআইএমসমূহের অবস্থান শনাক্তকরণ।

সংশ্লিষ্ট সংস্থা ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের বিশেষ স্বার্থে কেউ যেন ফেক বিটিএস স্থাপনের মাধ্যমে ‘কল ইন্টারসেপ্ট’ না করতে পারে তা নিশ্চিতকল্পে বর্তমান সরকারের অর্থায়নে এনটিএমসি কর্তৃক জড়মঁব ইঞঝ ওফবহঃরভরপধঃরড়হ ঝুংঃবস (আরবিটিএস) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে উক্ত সিস্টেমটি চালু রাখা হয়েছে।

আরবিটিএস এর কার্যক্রমসমূহ : বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে কোনো সেলুলার টেকনোলোজির মাধ্যমে প্রেরিত নেটওয়ার্ক স্ক্যান ও চিহ্নিতকরণ; জড়ঁমব ইঞঝ/ওগঝও ঈধঃপযবৎ যে কোনো মোবাইল মনিটরিং সিস্টেম অ্যাক্টিভ মোডে অপারেশনাল আছে কি না তা চিহ্নিতকরণ; অপারেশনাল থাকা জড়ঁমব ইঞঝ/ওগঝও ঈধঃপযবৎ যে কোনো মোবাইল মনিটরিং সিস্টেমের কার্যকারিতা মনিটর করা; মাঠপর্যায়ে সিস্টেমের মাধ্যমে অ্যাক্টিভ মোডে অপারেশনাল থাকা উক্ত জড়ঁমব ইঞঝ/ওগঝও ঈধঃপযবৎ যে কোনো মোবাইল মনিটরিং সিস্টেমের অবস্থান নিশ্চিতকরণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অর্পণ করা।

জিও লোকেশন সিস্টেম : মুজিববর্ষ উপলক্ষে এনটিএমসি কর্তৃক গৃহীত আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ ‘জিও লোকেশন সিস্টেম’। জিও লোকেশন প্ল্যাটফর্মটি একটি জাতীয় পর্যায়ের প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারী সংস্থাসমূহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইন্টেলিজেন্ট এনালাইসিস করার সক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। প্ল্যাটফর্মটির আওতায় পুরো বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা থাকবে এবং যে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন এর অতীত সময়ের অবস্থানগত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানে সক্ষম থাকবে। এনটিএমসিতে কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার সমন্বিতভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং এর মাধ্যমে দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রচার এবং দেশের বিরুদ্ধে শনাক্তকৃত সব অপপ্রচার রোধে কাজ করে থাকে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থাসমূহ সরাসরি এটি ব্যবহার করে অপরাধের স্থান দ্রুততার সঙ্গে নির্ণয় করতে পারবে।

ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম (এনআইপি): এ প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। সংস্থাসমূহ সফলভাবে এনআইপি হতে নাগরিক সংক্রান্ত তথ্যসেবা লাভ করছে যা তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করছে। এনআইপি সিটিজেন ডাটা ভেরিফিকেশন এবং কোরিলেশন এর লক্ষ্যে তৈরিকৃত একটি কেন্দ্রীয় সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন জাতীয় ডাটাবেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহের মাধ্যমে সমন্বয় করে একক প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শন করা হয়। এ সিস্টেম থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ নাগরিকদের বায়োমেট্রিকসহ অন্যান্য তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারে। এর ফলে মাত্র একটি সিস্টেম ব্যবহার করে তদন্তকাজে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করতে সক্ষম হচ্ছে।
এনআইপি সিস্টেমে সংযুক্ত তথ্য ভাণ্ডার : উক্ত সিস্টেমের মাধ্যমে সংযুক্ত সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিভিন্ন সংস্থা তথ্য যাচাই-বাছাই এবং সমন্বয় করতে সমর্থ হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ডাটাবেজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে প্রোফাইলিং করা যাচ্ছে যা তদন্ত কার্যক্রমে অত্যন্ত সহায়ক।

এনআইপি সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত সুবিধাদি : এনআইপি বিদ্যমান ডাটাবেজসমূহের সঠিক ব্যবহারের ফলে এএফডি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ডিজিএফআই, এসএসএফ, এনএসআই, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, এটিইউ, পিবিআই, সিআইডি, এসবি, ডিএমপি, এপিবিএন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, দুদক, বিআরটিএ, এনবিআর, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, কারা অধিদপ্তর, বিএমইটি, খাদ্য অধিদপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয় ও এটুআই অতি সহজেই কোনো ব্যক্তির তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারে। উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর রিক্রুটিং প্রক্রিয়াকে আরো বেগবান এবং স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে আইটি পরিদপ্তর, জিএস শাখা, সেনাসদর এই এনআইপি থেকে শিক্ষা বোর্ডের ডাটাবেজ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাবেজ হতে তথ্যগ্রহণ করে সব আবেদনকারীর তথ্য যাচাই-বাছাই করছে। এছাড়া, স্টেশন সদর দপ্তর, ঢাকা সেনানিবাসে গাড়ি প্রবেশের স্টিকার তৈরির সময় আবেদনকারী কর্তৃক প্রদত্ত ভেহিকেল রেজিস্ট্রেশন এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য এনআইপির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করছে।

এনটিএমসি’র ডাটা সেন্টার আধুনিকায়ন ও বর্ধিতকরণ : এনটিএমসিতে সব আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাসমূহের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণের নিমিত্ত টায়ার-৪ সমমানের ডাটা সেন্টার অবকাঠামোর বাস্তবায়ন ১৬ আগস্ট ২০১৭ হতে শুরু হয় এবং ১০ এপ্রিল ২০১৮ সালে ডাটা সেন্টারের কাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ডাটা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ক্রমবর্ধমান ডাটা এনটিএমসির ডাটা সেন্টারে স্টোর করে রাখার জন্য বর্তমান সরকারের অর্থায়নে ডাটা সেন্টার সম্প্রসারণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। বর্তমানে ডাটা সেন্টারে ১১৭টি রেকবিশিষ্ট সার্ভার রুমের ব্যবস্থা রয়েছে যা নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টারের মাধ্যমে সংযুক্ত। এ সব সিস্টেমের মধ্যে মনিটরিং সেন্টারের মাধ্যমে সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থা সব মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক তথ্য, সিডিআর এনালাইসিস এবং মনিটর করতে সক্ষম। পিআইডিএস সিস্টেমে বাংলাদেশের সব কারাগারে কয়েদিদের ডাটাবেজের মিরর কপি ডাটা সেন্টারে হোস্ট করা হয়েছে যার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থাসমূহ তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করে সেবাগ্রহণ করে থাকে।

সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল (এসএমএমসি) পরিচালনা : সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল দেশের স্বার্থে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘটিত সব ধরনের সাইবার অপরাধসমূহ যা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ সেগুলো মনিটরিং করার পাশাপাশি কাউন্টার কমেন্ট করে থাকে। সেইসঙ্গে গ্রাফিক্স এবং ভিডিও কমেন্ট তৈরি করে জনগণের সামনে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য তুলে ধরে। এই সেল কর্তৃক সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য সোস্যাল মিডিয়াতে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা করা হয়। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যারা দেশবিরোধী অপপ্রচার তথা অপতৎপরতা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের আলোকে নিয়মিত রিপোর্ট করার পাশাপাশি উক্ত দেশবিরোধী অপশক্তির তালিকা গঠনপূর্বক নিয়মিত বিটিআরসিতে প্রেরণ করা হয়ে থাকে যাতে করে বিটিআরসি বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনানুসারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেলের কার্যক্রমসমূহ : সব সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং (ভাইরাল নিউজ, গুজব, ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু); কাউন্টার ন্যারেটিভ অ্যান্ড ব্লগ রাইটিং এবং বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচার; গ্রাফিক্স কন্টেন্ট ও ভিডিও কন্টেন্ট প্রস্তুত এবং বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচার;
ফেসবুকের মাধ্যমে কিছু কুচক্রী মহল রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সংস্থার নামে অনুমতিবিহীন বিভিন্ন ফেসবুক একাউন্ট পরিচালনার মাধ্যম ব্যক্তিগত সুবিধা হাসিল ও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে বদ্ধ পরিকর। এ সব প্রোপাগান্ডামূলক অপপ্রচার রোধে এনটিএমসি কর্তৃক ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থাসমূহের নামে চালিত ভুয়া ফেসবুক আইডি, ফেসবুক পেইজ, ফেসবুক গ্রুপ, ফেসবুক পোস্ট লিংক নিয়মিত বন্ধ করা হয়।

স্যাটেলাইট ফোন মনিটরিং সিস্টেম বাস্তবায়ন : বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তালমিলিয়ে বাংলাদেশেও স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, সীমান্তবর্তী এলাকা এবং গভীর সমুদ্রে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করে অপরাধ বেড়েই চলেছে। স্যাটেলাইট ফোন এর গুরুত্ব অনুধাবন করে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাসমূহকে অপরাধ দমন ও তদন্তকাজে সহযোগিতার জন্য বর্তমান সরকারের অর্থায়নে স্যাটেলাইট ফোন মনিটরিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সফলভাবে সিস্টেম স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এর ব্যবহারের ওপর ১২টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাসমূহের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি উক্ত সিস্টেমকে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স প্লাটফর্ম এবং মনিটরিং সিস্টেম এ কানেকটিভিটি প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাসমূহ এনটিএমসি’র স্যাটেলাইট ফোন সিস্টেম হতে প্রয়োজনীয় ডাটা সংগ্রহ করতে পারছে।

স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধসমূহ শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম, দেশের সমুদ্র ও নদীপথে মানব পাচার, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কার্যক্রম, সীমান্ত ও নৌপথে অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান, রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী কার্যক্রম।

এনটিএমসি’র উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহ : স্মার্ট বাংলাদেশ সম্মাননা-২০২৩ অর্জন, বিআরটিএ হতে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীদের এনআইডি যাচাই; খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সুবিধাভোগীদের পরিচয়পত্র যাচাই, বিদেশগামী কর্মীদের পাসপোর্ট যাচাই, ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্মাননা-২০১৯ অর্জন, প্রিজন ইনমেট ডাটাবেজ সিস্টেম বাস্তবায়ন, হজ্ব যাত্রীদের পাসপোর্ট যাচাই এবং অর্থ বিভাগ হতে অর্থ সহায়তাকারীদের তথ্য যাচাই।