◉ সময়ের বিধিনিষেধ মানবে না সাংস্কৃতিক জোট
অন্ধকারের শক্তিকে পরাজিত করে আলোর আহ্বান জানিয়ে এবারের নব বর্ষবরণ উৎসবের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এ বছর চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে সকাল ৯টায়। শাহবাগ মোড় হয়ে শিশুপার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে ফের শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে।
প্রস্তুতির সবশেষ অবস্থা জানাতে রোববার চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নববর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, অন্ধকারের বিরুদ্ধে আমরা আলোর দিশারী। অন্ধকার ভেদ করে আমরা সমাজে আলো ছড়াতে চাই। এজন্যই আমরা এবার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছিÑ ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’। কবি জীবনানন্দ দাশের ‘তিমির হননের গান’ কবিতার পঙ্্ক্তি থেকে এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবারের আয়োজনে চারটি বড় মোটিফ বা শিল্পকর্ম তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান ঢাবি চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন।
তিনি বলেন, প্রতি বছরই আমরা আমাদের লোকজ মাটির পুতুল থেকে এসব মোটিফ তৈরি করি। এবার আমরা আশা করছি চারটি মোটিফ তৈরি করা হবে। আর যদি সম্ভব হয়, পাঁচটিও হতে পারে।
ঈদের ছুটির কারণে আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেকেই ঢাকার বাইরে থাকবে, সেজন্য নিশ্চিত করে এখনই বলছি না। তবে চারটি হবে এটা নিশ্চিত, সম্ভব হলে পাঁচটি মোটিফ থাকবে।
চারটি মোটিফের মধ্যে থাকবে পাখি, হাতি, ভোঁদর এবং চাকার মধ্যে চোখ নিয়ে ভিন্ন রকম একটি শিল্পকর্ম।
নিসার হোসেন বলেন, যে মোটিফ তৈরি করা হচ্ছে এগুলো আমাদের লোকজ জীবনে রয়েছে। সেগুলোকেই আমরা একটু বড় করে তৈরি করি। এছাড়া মুখোশসহ নানা রকম শিল্পকর্মও থাকবে।
শিল্পী রফিকুন্নবী বলেন, এবার দুটো আনন্দ একসঙ্গে। ঈদের পরপরই বর্ষবরণ। আমরা আশা করি, মানুষ দ্বিগুণ আনন্দে মেতে উঠবে।
অন্যদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠক রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সময়ের বিধিনিষেধ মানবে না সাংস্কৃতিক জোট : নববর্ষ উদযাপন করতে বেঁধে দেওয়া সময়ের নির্দেশনা না মানার ঘোষণা দিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। গতকাল চারুকলা অনুষদে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। পহেলা বৈশাখে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সে প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু জানান, পহেলা বৈশাখে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকাল ৪টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমরা যদি পহেলা বৈশাখ উদযাপন না করি, তাহলে মৌলবাদ শক্তিশালী হবে। পহেলা বৈশাখ একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব। মৌলবাদ ঠেকাতে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে হবে।
এর আগে, বাংলা নববর্ষ উদযাপনে ফানুস, আতশবাজির ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ১৩ নির্দেশনা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় বলা হয়, বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে। নির্দেশনা পেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশও (ডিএমপি) জানিয়েছে, নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এরপরই গত ২৯ মার্চ এক বিবৃতিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জানায়, প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, বৈশাখি উৎসব এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় সরকারি বরাদ্দ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের নির্দেশনা থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত বলেই বিবেচিত হচ্ছে। সব জাতীয় দিবস এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের সময়ের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও শুধুমাত্র বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ আয়োজনকে সীমিত করে দেওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, এই সিদ্ধান্তের ফলে বাঙালি সংস্কৃতি-বিরোধী শক্তি উল্লসিত হবে।





















