০৬:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কমেছে গোশত-সবজির দাম, বেড়েছে আলুর দাম

◉সবজির দাম কেজিপ্রতি কমেছে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা
◉আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ১২-১৫ টাকা
◉বাজারের এই অস্থিরতার পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ

 

 

 

ঈদ পরবর্তী সময়ে ক্রেতা না থাকায় স্বস্তি ফিরেছে সবজির বাজারে। ঈদের আগে যেসব সবজি কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেসব সবজির দাম কেজিপ্রতি কমেছে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা। তবে সব ধরনের সবজির দাম কমলেও বেড়েছে আলুর দাম। ঈদের পর রাজধানীর বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছে গরু, খাসি ও মুরগির গোশতের দাম। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটি শেষে এখনো জমে ওঠেনি বাজারগুলো। ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে না আসায় অনেক দোকান এখনো বন্ধ। তবে বেশিরভাগ দোকানই খোলা ছিল।

 

গরু ও খাসির গোশতের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর গোশত ৭৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা, যা ঈদের আগেও একই ছিল। তবে দোকানগুলোর মূল্য তালিকায় এখনো ৭৮০ টাকাই লেখা ছিল, যা ঈদের সময় বাড়ানো হয়েছে। ঈদের সময় বাড়ানো ১০০ টাকা কমিয়ে বর্তমানে প্রতি কেজি খাসির গোশত ১ হাজার ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া লেয়ার কেজিপ্রতি ৪০ টাকা কমে এখন ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা কমে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি।

 

আব্দুল আলিম নামে এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, ঈদে ঢাকায় মানুষ না থাকায় মুরগির চাহিদা কমে গেছে। যে কারণে দামও ঈদের পর কমে গেছে। তবে যখন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিস খুলবে তখন চাহিদা বাড়বে, দামও বাড়বে। কারণ তখন চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ থাকবে না।
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি সবজির দামই কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা না থাকায় কম দামে মালপত্র বিক্রি করতে হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি শসা ৪০ টাকা, প্রতি হালি মাঝারি সাইজের লেবু ৩০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, উস্তা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

এছাড়া গত সপ্তাহে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া বেগুন (গোল) প্রতি কেজি দাম কমে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ২০ টাকা কমে ৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, ৪০ টাকায় টমেটো ৩০ টাকায়, ৪০ টাকা কেজি দরের ঢেঁড়স ৩০ টাকা, ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা কেজি, ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া ধুন্দল ৪০ টাকা এবং ৬০ টাকা পিসপ্রতি বিক্রি হওয়া ফুলকপি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

মৌসুমের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণহীন আলুর বাজার। সরকারের নির্ধারিত দাম ২৯ টাকা হলেও, বাজারে কেজিতে ১২-১৫ টাকা বেড়ে আলুর দাম ঠেকেছে হাফ সেঞ্চুরিতে। এর নেপথ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভোক্তারা। ক্রেতারা বলছেন, আলুর বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই সময় সাধারণত আলু ২০ টাকা কেজি থাকার কথা। কিন্তু সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। অথচ সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ২৯ টাকা।

 

কারওয়ান বাজারের আলু বিক্রেতা আমিনুল বলেন, রমজানের আগে থেকে বাড়তি দামে আলু বিক্রি করছি। এখন আলুর মৌসুম। তার পরও আলু বিক্রি করছি ৪৫-৪৮ টাকা। কোথাও ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি করছে। তিনি বলেন, শুধু ঈদের ছুটিতে প্রতিকেজি আলুর দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। বাজারের এই অস্থিরতার পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ তার।

 

আলু ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, মৌসুমের শুরুতেই দাম ৫০ টাকা হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। মজুতদাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অস্থিতিশীল করছেন বাজার। দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবিও করেন তারা। সবজি বিক্রেতা আব্দুস সামাদ বলেন, বাজারে তেমন লোকজন নেই। কাঁচামাল বেশি দিন ঘরে রাখা যায় না। অনেক মাল আছে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। চাহিদা না থাকায় মোটামুটি সব ধরনের সবজির দাম এখন অনেক কম। এখনো অনেকে ঢাকা ফেরেনি। ঢাকা ফিরলেই আবার সবকিছু দাম আগের মতোই হবে।

 

আরেক বিক্রেতা আব্দুর জব্বার মিয়া বলেন, আড়তে এখন কম দামে সবজি পাওয়া যাচ্ছে। কম দাম হলেও কেউ কিনছে না সবজি। ঢাকায় তো মানুষ নাই। ঈদ শেষ করে অনেকেই এখনো ঢাকায় ফেরেনি। মানুষ না থাকায় চাহিদা কম, দামও কম। রবিউল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদে গ্রামে যাওয়া হয়নি। ঢাকাতেই ঈদ করেছি। সবজির দাম এখন তুলনামূলক অনেক কম। সারা বছর এমন দামে সবজি পেলে ভালো হতো। কিন্তু সেটা তো আর পাওয়া যাবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিএনপির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ

কমেছে গোশত-সবজির দাম, বেড়েছে আলুর দাম

আপডেট সময় : ০৭:৪৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

◉সবজির দাম কেজিপ্রতি কমেছে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা
◉আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ১২-১৫ টাকা
◉বাজারের এই অস্থিরতার পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ

 

 

 

ঈদ পরবর্তী সময়ে ক্রেতা না থাকায় স্বস্তি ফিরেছে সবজির বাজারে। ঈদের আগে যেসব সবজি কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেসব সবজির দাম কেজিপ্রতি কমেছে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা। তবে সব ধরনের সবজির দাম কমলেও বেড়েছে আলুর দাম। ঈদের পর রাজধানীর বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছে গরু, খাসি ও মুরগির গোশতের দাম। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটি শেষে এখনো জমে ওঠেনি বাজারগুলো। ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে না আসায় অনেক দোকান এখনো বন্ধ। তবে বেশিরভাগ দোকানই খোলা ছিল।

 

গরু ও খাসির গোশতের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর গোশত ৭৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা, যা ঈদের আগেও একই ছিল। তবে দোকানগুলোর মূল্য তালিকায় এখনো ৭৮০ টাকাই লেখা ছিল, যা ঈদের সময় বাড়ানো হয়েছে। ঈদের সময় বাড়ানো ১০০ টাকা কমিয়ে বর্তমানে প্রতি কেজি খাসির গোশত ১ হাজার ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া লেয়ার কেজিপ্রতি ৪০ টাকা কমে এখন ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা কমে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি।

 

আব্দুল আলিম নামে এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, ঈদে ঢাকায় মানুষ না থাকায় মুরগির চাহিদা কমে গেছে। যে কারণে দামও ঈদের পর কমে গেছে। তবে যখন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিস খুলবে তখন চাহিদা বাড়বে, দামও বাড়বে। কারণ তখন চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ থাকবে না।
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি সবজির দামই কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা না থাকায় কম দামে মালপত্র বিক্রি করতে হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি শসা ৪০ টাকা, প্রতি হালি মাঝারি সাইজের লেবু ৩০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, উস্তা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

এছাড়া গত সপ্তাহে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া বেগুন (গোল) প্রতি কেজি দাম কমে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ২০ টাকা কমে ৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, ৪০ টাকায় টমেটো ৩০ টাকায়, ৪০ টাকা কেজি দরের ঢেঁড়স ৩০ টাকা, ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা কেজি, ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া ধুন্দল ৪০ টাকা এবং ৬০ টাকা পিসপ্রতি বিক্রি হওয়া ফুলকপি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

মৌসুমের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণহীন আলুর বাজার। সরকারের নির্ধারিত দাম ২৯ টাকা হলেও, বাজারে কেজিতে ১২-১৫ টাকা বেড়ে আলুর দাম ঠেকেছে হাফ সেঞ্চুরিতে। এর নেপথ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভোক্তারা। ক্রেতারা বলছেন, আলুর বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই সময় সাধারণত আলু ২০ টাকা কেজি থাকার কথা। কিন্তু সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। অথচ সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ২৯ টাকা।

 

কারওয়ান বাজারের আলু বিক্রেতা আমিনুল বলেন, রমজানের আগে থেকে বাড়তি দামে আলু বিক্রি করছি। এখন আলুর মৌসুম। তার পরও আলু বিক্রি করছি ৪৫-৪৮ টাকা। কোথাও ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি করছে। তিনি বলেন, শুধু ঈদের ছুটিতে প্রতিকেজি আলুর দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। বাজারের এই অস্থিরতার পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ তার।

 

আলু ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, মৌসুমের শুরুতেই দাম ৫০ টাকা হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। মজুতদাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অস্থিতিশীল করছেন বাজার। দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবিও করেন তারা। সবজি বিক্রেতা আব্দুস সামাদ বলেন, বাজারে তেমন লোকজন নেই। কাঁচামাল বেশি দিন ঘরে রাখা যায় না। অনেক মাল আছে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। চাহিদা না থাকায় মোটামুটি সব ধরনের সবজির দাম এখন অনেক কম। এখনো অনেকে ঢাকা ফেরেনি। ঢাকা ফিরলেই আবার সবকিছু দাম আগের মতোই হবে।

 

আরেক বিক্রেতা আব্দুর জব্বার মিয়া বলেন, আড়তে এখন কম দামে সবজি পাওয়া যাচ্ছে। কম দাম হলেও কেউ কিনছে না সবজি। ঢাকায় তো মানুষ নাই। ঈদ শেষ করে অনেকেই এখনো ঢাকায় ফেরেনি। মানুষ না থাকায় চাহিদা কম, দামও কম। রবিউল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদে গ্রামে যাওয়া হয়নি। ঢাকাতেই ঈদ করেছি। সবজির দাম এখন তুলনামূলক অনেক কম। সারা বছর এমন দামে সবজি পেলে ভালো হতো। কিন্তু সেটা তো আর পাওয়া যাবে না।