০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরানের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা চায় যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ ও ইসরায়েল

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত

➤ইরানের প্রেসিডেন্টকে পুতিনের ফোন
➤এবার লেবানন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
➤কেন বেইমানি করল জর্ডান?

ইসরায়েলে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করায় ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের উপায় খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে বেশ কিছু দেশকে চিঠি পাঠিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। গত অক্টোবরে শেষ হয়েছে এই কর্মসূচির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ। এসব নিষেধাজ্ঞা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার চুক্তির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে এবং নতুন করে নিষেধাজ্ঞা যুক্ত করেছে। এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে ফোনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরো বাড়লে তা ‘বিপর্যয়কর পরিণতি’ বয়ে আনবে।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাৎজ বলেছেন, আমি ৩২টি দেশকে চিঠি পাঠিয়েছি এবং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিতে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আর দেরি নয়। ইরানকে এখনই থামাতে হবে। সরকার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার জবাবে সামরিক প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করছে। ইরানকে প্রতিহত এবং দুর্বল করে দিতে আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গত মঙ্গলবার মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আমি পুরোপুরি আশা করছি যে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা ইরানের বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞামূলক ব্যবস্থা নেব। আমরা আমাদের নিষেধাজ্ঞার আওতা নিয়ে আগেই কিছু প্রকাশ করি না। তবে আমি যত আলোচনায় অংশ নিয়েছি, তাতে ইরানের সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধ করার সব বিকল্প নিয়ে এখনো আলোচনা করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার জন্য ইরানের তেল রপ্তানি একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র, যা আমরা ভেবে দেখতে পারি। স্পষ্টতই কিছু তেল রপ্তানি অব্যাহত রেখেছে ইরান। আমরা হয়তো আরো বেশি কিছু করতে পারতাম। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইরানকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং এর মদদপুষ্ট গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে সমর্থন দেওয়ার ক্ষমতা ব্যাহত করতে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ব্যবহার করছে।

এ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নও কাজ করছে বলে জানিয়ে পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, কয়েকটি সদস্য দেশ ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ইইউর কূটনৈতিক পরিষেবাকে ‘নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করার’ অনুরোধ জানাবেন তিনি।
এদিকে গত মঙ্গলবার ক্রেমলিন জানায়, পুতিন আশা প্রকাশ করেন, সব পক্ষই যুক্তিসংগত সংযম দেখাবে এবং পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি বয়ে আনতে পারে, এমন মুখোমুখি অবস্থান থেকে দূরে থাকবে। ইরানের অনুরোধেই পুতিন এই ফোন করেন। দামেস্কে ইরানের কূটনৈতিক মিশনে ইসরায়েলের বিমান হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। এর জবাবে ইরানের নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

অন্যদিকে এবার লেবানন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের দিকে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন চালু করা হয়েছে। এর আগে ইরান থেকে কয়েক শ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়।

অন্যদিকে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলার পর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে যখন ইরান ড্রোন ও ক্ষেপনাস্ত্র হামলা করে, তখন বেশিরভাগ আরব দেশ ইরানের পক্ষ নিলেও জর্ডান ইসরায়েলের পক্ষ নেয়। জর্ডানের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ধ্বংস করে দেওয়া হয় ইরানের ক্ষেপনাস্ত্রগুলো। এতে খোদ জর্ডানেই শুরু হয়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কেন জর্ডানের এই ইসরায়েলপন্থি পদক্ষেপ?

জর্ডান সরকার এক বিবৃতিতে বলে, আত্মরক্ষার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের জনগণ ও জনবহুল এলাকার জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। এরপর নিজেদেরকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ইরানি হোক আর ইসরায়েলি, জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশ করা যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন প্রতিহত করা হবে। এই বিবৃতির নিন্দা জানিয়ে জর্ডানের সরকারবিরোধীরা দাবি করে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান এর আগেও জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে- বিশেষ করে সিরিয়ায় অভিযানের সময়ে। তখন জর্ডান কোনো বাধা দেয়নি। ইরান থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপনাস্ত্র ছোঁড়ার সময়েও আকাশসীমায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান প্রবেশে বাধা দেয়নি জর্ডান।

আরব বিশ্বের সঙ্গে বেইমানি করে ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মেলানো জর্ডানের জন্য নতুন কিছু নয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে জর্ডানের চারটি যুদ্ধ হয়। ১৯৯৪ সালে এক শান্তি চুক্তি হওয়ার পর থেকে এই দুই দেশের মধ্যে আর কোনো সংঘর্ষ হয়নি। জর্ডানের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ফিলিস্তিনি এবং তাদের বংশধর। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এসব ফিলিস্তিনি ভূমিহীন হয়ে পড়ে এবং জর্ডানে আশ্রয় নেয়। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয়ে আসার সুবাদে ১৯৭০ সালে একবার ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের চেষ্টাও করে জর্ডান। সে সময়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিদের হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ান তৎকালীন জর্ডান রাজা হুসেইন বিন তালাল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে জর্ডানে, যেখান থেকে তারা নিয়মিতই ইসরায়েলকে সহায়তা করে থাকে এবং সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও ইরানে আড়ি পাতার কাজ করে থাকে।

জর্ডানের এমন বেইমানিতে চুপ করে নেই ইরান। ইরানের সামরিক বাহিনীর এক সুত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদ সংস্থা মেহর জানায়, জর্ডানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে ইরান। যদি তারা ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মেলায়, তবে জর্ডান হয়ে উঠবে ইরানের পরবর্তী লক্ষ্য। জর্ডানের সরকারের ওপর এর নাগরিকরাও বিরক্ত। কয়েক সপ্তাহ ধরে আম্মানে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তারা ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডানের মধ্যে সই হওয়া শান্তি চুক্তি বাতিলেরও আহ্বান জানান। এমন অবস্থায় আরব বিশ্ব জর্ডানকে একঘরে করে ফেলবে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে জর্ডান যদি ইসরায়েল-ইরানের এই সংঘর্ষে আগ বাড়িয়ে আর কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তাদের ঘরে বাইরে দুই জায়গাতেই শান্তি বজায় থাকবে।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার জন্য ইসরায়েল দায়ী : গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার এক সভা শেষে আঙ্কারায় সংবাদ সম্মেলনে কড়া ভাষায় ইসরায়েলের সমালোচনা করলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সরকার মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার জন্য দায়ী। ইসরায়েল একটি আঞ্চলিক সংঘাত উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলা ছিল তারই পরিকল্পনার অংশ। যতদিন গাজায় নিষ্ঠুরতা ও গণহত্যা অব্যাহত থাকবে ততদিন আঞ্চলিক সংঘাত থাকবে। এ থেকে উত্তরণে সব পক্ষকে কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় দিতে হবে। পশ্চিমারা ইসরায়েলে ইরানের হামলার নিন্দায় ব্যস্ত, অথচ সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে হামলার ঘটনায় চুপ ছিল।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইরানের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা চায় যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ ও ইসরায়েল

আপডেট সময় : ০৭:৩৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

➤ইরানের প্রেসিডেন্টকে পুতিনের ফোন
➤এবার লেবানন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
➤কেন বেইমানি করল জর্ডান?

ইসরায়েলে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করায় ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের উপায় খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে বেশ কিছু দেশকে চিঠি পাঠিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। গত অক্টোবরে শেষ হয়েছে এই কর্মসূচির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ। এসব নিষেধাজ্ঞা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার চুক্তির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে এবং নতুন করে নিষেধাজ্ঞা যুক্ত করেছে। এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে ফোনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরো বাড়লে তা ‘বিপর্যয়কর পরিণতি’ বয়ে আনবে।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাৎজ বলেছেন, আমি ৩২টি দেশকে চিঠি পাঠিয়েছি এবং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিতে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আর দেরি নয়। ইরানকে এখনই থামাতে হবে। সরকার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার জবাবে সামরিক প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করছে। ইরানকে প্রতিহত এবং দুর্বল করে দিতে আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গত মঙ্গলবার মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আমি পুরোপুরি আশা করছি যে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা ইরানের বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞামূলক ব্যবস্থা নেব। আমরা আমাদের নিষেধাজ্ঞার আওতা নিয়ে আগেই কিছু প্রকাশ করি না। তবে আমি যত আলোচনায় অংশ নিয়েছি, তাতে ইরানের সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধ করার সব বিকল্প নিয়ে এখনো আলোচনা করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার জন্য ইরানের তেল রপ্তানি একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র, যা আমরা ভেবে দেখতে পারি। স্পষ্টতই কিছু তেল রপ্তানি অব্যাহত রেখেছে ইরান। আমরা হয়তো আরো বেশি কিছু করতে পারতাম। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইরানকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং এর মদদপুষ্ট গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে সমর্থন দেওয়ার ক্ষমতা ব্যাহত করতে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ব্যবহার করছে।

এ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নও কাজ করছে বলে জানিয়ে পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, কয়েকটি সদস্য দেশ ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ইইউর কূটনৈতিক পরিষেবাকে ‘নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করার’ অনুরোধ জানাবেন তিনি।
এদিকে গত মঙ্গলবার ক্রেমলিন জানায়, পুতিন আশা প্রকাশ করেন, সব পক্ষই যুক্তিসংগত সংযম দেখাবে এবং পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি বয়ে আনতে পারে, এমন মুখোমুখি অবস্থান থেকে দূরে থাকবে। ইরানের অনুরোধেই পুতিন এই ফোন করেন। দামেস্কে ইরানের কূটনৈতিক মিশনে ইসরায়েলের বিমান হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। এর জবাবে ইরানের নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

অন্যদিকে এবার লেবানন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের দিকে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন চালু করা হয়েছে। এর আগে ইরান থেকে কয়েক শ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়।

অন্যদিকে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলার পর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে যখন ইরান ড্রোন ও ক্ষেপনাস্ত্র হামলা করে, তখন বেশিরভাগ আরব দেশ ইরানের পক্ষ নিলেও জর্ডান ইসরায়েলের পক্ষ নেয়। জর্ডানের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ধ্বংস করে দেওয়া হয় ইরানের ক্ষেপনাস্ত্রগুলো। এতে খোদ জর্ডানেই শুরু হয়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কেন জর্ডানের এই ইসরায়েলপন্থি পদক্ষেপ?

জর্ডান সরকার এক বিবৃতিতে বলে, আত্মরক্ষার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের জনগণ ও জনবহুল এলাকার জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। এরপর নিজেদেরকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ইরানি হোক আর ইসরায়েলি, জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশ করা যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন প্রতিহত করা হবে। এই বিবৃতির নিন্দা জানিয়ে জর্ডানের সরকারবিরোধীরা দাবি করে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান এর আগেও জর্ডানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে- বিশেষ করে সিরিয়ায় অভিযানের সময়ে। তখন জর্ডান কোনো বাধা দেয়নি। ইরান থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপনাস্ত্র ছোঁড়ার সময়েও আকাশসীমায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান প্রবেশে বাধা দেয়নি জর্ডান।

আরব বিশ্বের সঙ্গে বেইমানি করে ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মেলানো জর্ডানের জন্য নতুন কিছু নয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে জর্ডানের চারটি যুদ্ধ হয়। ১৯৯৪ সালে এক শান্তি চুক্তি হওয়ার পর থেকে এই দুই দেশের মধ্যে আর কোনো সংঘর্ষ হয়নি। জর্ডানের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ফিলিস্তিনি এবং তাদের বংশধর। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এসব ফিলিস্তিনি ভূমিহীন হয়ে পড়ে এবং জর্ডানে আশ্রয় নেয়। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয়ে আসার সুবাদে ১৯৭০ সালে একবার ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের চেষ্টাও করে জর্ডান। সে সময়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিদের হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ান তৎকালীন জর্ডান রাজা হুসেইন বিন তালাল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে জর্ডানে, যেখান থেকে তারা নিয়মিতই ইসরায়েলকে সহায়তা করে থাকে এবং সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও ইরানে আড়ি পাতার কাজ করে থাকে।

জর্ডানের এমন বেইমানিতে চুপ করে নেই ইরান। ইরানের সামরিক বাহিনীর এক সুত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদ সংস্থা মেহর জানায়, জর্ডানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে ইরান। যদি তারা ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মেলায়, তবে জর্ডান হয়ে উঠবে ইরানের পরবর্তী লক্ষ্য। জর্ডানের সরকারের ওপর এর নাগরিকরাও বিরক্ত। কয়েক সপ্তাহ ধরে আম্মানে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তারা ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডানের মধ্যে সই হওয়া শান্তি চুক্তি বাতিলেরও আহ্বান জানান। এমন অবস্থায় আরব বিশ্ব জর্ডানকে একঘরে করে ফেলবে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে জর্ডান যদি ইসরায়েল-ইরানের এই সংঘর্ষে আগ বাড়িয়ে আর কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তাদের ঘরে বাইরে দুই জায়গাতেই শান্তি বজায় থাকবে।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার জন্য ইসরায়েল দায়ী : গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার এক সভা শেষে আঙ্কারায় সংবাদ সম্মেলনে কড়া ভাষায় ইসরায়েলের সমালোচনা করলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সরকার মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার জন্য দায়ী। ইসরায়েল একটি আঞ্চলিক সংঘাত উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলা ছিল তারই পরিকল্পনার অংশ। যতদিন গাজায় নিষ্ঠুরতা ও গণহত্যা অব্যাহত থাকবে ততদিন আঞ্চলিক সংঘাত থাকবে। এ থেকে উত্তরণে সব পক্ষকে কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় দিতে হবে। পশ্চিমারা ইসরায়েলে ইরানের হামলার নিন্দায় ব্যস্ত, অথচ সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে হামলার ঘটনায় চুপ ছিল।