১১:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

থাই-মিয়ানমার সীমান্ত শহরের কাছে ফের সংঘর্ষ শুরু

❖রাখাইনে সহিংসতা ও রোহিঙ্গা নিপীড়নে উদ্বেগ জাতিসংঘের

সপ্তাহখানেক শান্ত থাকার পর থাইল্যান্ডের সীমান্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রের কাছে মিয়ানমারের জান্তা এবং সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ আবার শুরু হয়েছে। গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে একটি সশস্ত্র গ্রুপের মুখপাত্র এবং থাই সেনাবাহিনী।

২০২১ সালের একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমারের বাণিজ্য কেন্দ্র মায়াওয়াদ্দির চারপাশে ভয়ঙ্কর লড়াই শুরু হয় এবং সেনাবাহিনী শহরে তাদের অবস্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। তবে গত সপ্তাহে এলাকাটির বেশিরভাগ শান্ত ছিল এবং স্থানীয়রা কোনো লড়াইয়ের কথা জানায়নি, যদিও একটি আঞ্চলিক ব্লক শুক্রবার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে।

জান্তাবিরোধী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) জানায়, আগের সংঘর্ষের সময় কিছু সৈন্য মায়াওয়াদ্দির সঙ্গে থাই শহর মায়ে সোটের সংযোগকারী একটি সেতুর নিচে আশ্রয় নিয়েছিল। কেএনইউ মুখপাত্র পাদো সাও থাও নী এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন, গ্রুপটি মায়াওয়াদ্দিতে জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, কিন্তু বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

গতকাল ভোরে সীমান্তে অবস্থানরত থাই সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট জানিয়েছে, সেতুর নিচে জান্তা সৈন্যদের লক্ষ্য করে সংঘর্ষ চলছে। রাজামনু স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ফেসবুকে পোস্টে বলেছে, বর্তমানে লড়াইয়ের মাঝখানে কোন ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানা যায়নি। এতে বলা হয়েছে, বাহিনী দ্বিতীয় ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের নিচে অবস্থান করা সৈন্যদের বিরুদ্ধে ‘ড্রোন’ মোতায়েন করেছে, অর্থ সংকটে পড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জন্য এটি একটি প্রধান বাণিজ্য পয়েন্ট। থাই টাস্ক ফোর্সও নিশ্চিত করেছে, সেতুটি বন্ধ রয়েছে এবং সৈন্যরা পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

বাণিজ্যিক শহরের পোস্টগুলো থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি জান্তার জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। মায়াওয়াদ্দি সামরিক বাহিনীর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এপ্রিল থেকে ১২ মাসে এর মধ্য দিয়ে ১.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বাণিজ্য হয়েছে। মায়াওয়াদ্দির একজন ট্রাক চালক এএফপিকে বলেছেন, তারা সংঘর্ষের কথা শুনেছেন। তারা বলেন, যুদ্ধ শহরে নয়, শহরের বাইরে। আমরা এই মুহূর্তে পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু জানি না।
স্থানীয় থাই মিডিয়া শনিবার সকালে থাইল্যান্ডে প্রবেশের জন্য সারিবদ্ধভাবে বহু লোকের ভিডিও শেয়ার করেছে।

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এ সংঘাত সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো ‘ভয়াবহ নিপীড়ন’ প্রতিরোধে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ও জাতিগত রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। আর এর অর্থ হলো, আগের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তির গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে। শঙ্কা থাকলেও অতীতের পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া আমাদের অবশ্যই উচিত নয়। রাখাইন রাজ্যের সব বেসামরিক মানুষকে রক্ষায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারকারী দেশগুলোকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়নের আরেকটি পর্ব প্রতিরোধ করতে হবে। অনানুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৫ টিতে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। এতে শত শত মানুষ হতাহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে তিন লাখের বেশি মানুষ।

এর আগে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানের পর সেখানে অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে শরণার্থীশিবিরে পালিয়ে এসেছিল। এখনো প্রতিবছর হাজার হাজার রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে।

জনপ্রিয় সংবাদ

থাই-মিয়ানমার সীমান্ত শহরের কাছে ফের সংঘর্ষ শুরু

আপডেট সময় : ০৭:৪৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

❖রাখাইনে সহিংসতা ও রোহিঙ্গা নিপীড়নে উদ্বেগ জাতিসংঘের

সপ্তাহখানেক শান্ত থাকার পর থাইল্যান্ডের সীমান্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রের কাছে মিয়ানমারের জান্তা এবং সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ আবার শুরু হয়েছে। গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে একটি সশস্ত্র গ্রুপের মুখপাত্র এবং থাই সেনাবাহিনী।

২০২১ সালের একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমারের বাণিজ্য কেন্দ্র মায়াওয়াদ্দির চারপাশে ভয়ঙ্কর লড়াই শুরু হয় এবং সেনাবাহিনী শহরে তাদের অবস্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। তবে গত সপ্তাহে এলাকাটির বেশিরভাগ শান্ত ছিল এবং স্থানীয়রা কোনো লড়াইয়ের কথা জানায়নি, যদিও একটি আঞ্চলিক ব্লক শুক্রবার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে।

জান্তাবিরোধী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) জানায়, আগের সংঘর্ষের সময় কিছু সৈন্য মায়াওয়াদ্দির সঙ্গে থাই শহর মায়ে সোটের সংযোগকারী একটি সেতুর নিচে আশ্রয় নিয়েছিল। কেএনইউ মুখপাত্র পাদো সাও থাও নী এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন, গ্রুপটি মায়াওয়াদ্দিতে জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, কিন্তু বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

গতকাল ভোরে সীমান্তে অবস্থানরত থাই সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট জানিয়েছে, সেতুর নিচে জান্তা সৈন্যদের লক্ষ্য করে সংঘর্ষ চলছে। রাজামনু স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ফেসবুকে পোস্টে বলেছে, বর্তমানে লড়াইয়ের মাঝখানে কোন ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানা যায়নি। এতে বলা হয়েছে, বাহিনী দ্বিতীয় ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের নিচে অবস্থান করা সৈন্যদের বিরুদ্ধে ‘ড্রোন’ মোতায়েন করেছে, অর্থ সংকটে পড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জন্য এটি একটি প্রধান বাণিজ্য পয়েন্ট। থাই টাস্ক ফোর্সও নিশ্চিত করেছে, সেতুটি বন্ধ রয়েছে এবং সৈন্যরা পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

বাণিজ্যিক শহরের পোস্টগুলো থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি জান্তার জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। মায়াওয়াদ্দি সামরিক বাহিনীর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এপ্রিল থেকে ১২ মাসে এর মধ্য দিয়ে ১.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বাণিজ্য হয়েছে। মায়াওয়াদ্দির একজন ট্রাক চালক এএফপিকে বলেছেন, তারা সংঘর্ষের কথা শুনেছেন। তারা বলেন, যুদ্ধ শহরে নয়, শহরের বাইরে। আমরা এই মুহূর্তে পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু জানি না।
স্থানীয় থাই মিডিয়া শনিবার সকালে থাইল্যান্ডে প্রবেশের জন্য সারিবদ্ধভাবে বহু লোকের ভিডিও শেয়ার করেছে।

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এ সংঘাত সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো ‘ভয়াবহ নিপীড়ন’ প্রতিরোধে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ও জাতিগত রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। আর এর অর্থ হলো, আগের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তির গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে। শঙ্কা থাকলেও অতীতের পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া আমাদের অবশ্যই উচিত নয়। রাখাইন রাজ্যের সব বেসামরিক মানুষকে রক্ষায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারকারী দেশগুলোকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়নের আরেকটি পর্ব প্রতিরোধ করতে হবে। অনানুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৫ টিতে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। এতে শত শত মানুষ হতাহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে তিন লাখের বেশি মানুষ।

এর আগে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানের পর সেখানে অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে শরণার্থীশিবিরে পালিয়ে এসেছিল। এখনো প্রতিবছর হাজার হাজার রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে।