১১:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলি গণহত্যাকে সুরক্ষা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : হামাস

◉ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান তুরস্কের

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে । টানা প্রায় সাত মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এমন অবস্থায় গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যাকে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক সুরক্ষা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এমনকি মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েল গাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে বলেও অভিযোগ করেছে হামাস।

গত রোববার বার্তাসংস্থা আনাদোলু’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ গত শনিবার জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েল গাজায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের ভেটো কার্যকরভাবে তেল আবিবের কর্মকাণ্ডের রাজনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করছে।

ইসমাইল হানিয়াহ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রতারণামূলক, যদিও দেশটি বলে, তারা বেসামরিক লোকদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় না, তবে এটি তাদের একটি কৌশল। গাজায় নিহত সমস্ত বেসামরিক নাগরিক, হাজার হাজার শহীদ, মার্কিন অস্ত্র, মার্কিন রকেট, মার্কিন রাজনৈতিক সুরক্ষায় নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর অর্থ কী? এর মানে হলো- গাজায় গণহত্যা ও হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ সুরক্ষা দিচ্ছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পূর্ণ সদস্যপদে মার্কিন ভেটো এটিই দেখায় যে- ওয়াশিংটন ইসরায়েলি অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের বিরোধিতা করছে।

এদিকে হানিয়াহ রাফাহ শহরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সতর্ক করে ইসমাইল হানিয়াহ বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমি সমস্ত ভ্রাতৃপ্রতিম দেশকে, আমাদের মিসরের ভাইদের, আমাদের তুরস্কের ভাইদের, আমাদের কাতারের ভাইদের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে আগ্রাসনকে দমন করতে এবং রাফাহ শহরে অভিযান প্রতিরোধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে এবং সেই সঙ্গে গাজা উপত্যকা থেকে (ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর) সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং গাজায় হামলার সমাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যদি জায়নবাদী শত্রু রাফাহতে প্রবেশ করে, ফিলিস্তিনি জনগণ সাদা পতাকা উত্তোলন করবে না। রাফাহ-এর প্রতিরোধ যোদ্ধারা নিজেদের রক্ষা করতে এবং আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রস্তুত।

অন্যদিকে কেন তারা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হয়েছিলেন তার কারণ ব্যাখ্যা করে হানিয়াহ ইসমাইল বলেন, আমরা আলোচনায় রাজি হয়েছিলাম, কিন্তু এই শর্তে যে- ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর হামলা বন্ধ করা হবে। আমাদের শর্ত হচ্ছে- এই আলোচনার ফলে অবশ্যই একটি ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সম্পূর্ণভাবে সৈন্য প্রত্যাহার এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রত্যাবর্তন এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি হতে হবে। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে দাখিল করা কয়েক ডজন প্রস্তাব নিয়ে এ পর্যন্ত সমস্ত আলোচনা সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়নি। ইসরায়েল যা চায় তা হলো- বন্দিদের ফিরিয়ে নেওয়া এবং তারপর গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করা। এটা সম্ভব নয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে গাজা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। ইসরায়েলও চায় না বাস্তুচ্যুত মানুষ উত্তর গাজায় ফিরে আসুক। তারা (ইসরায়েল) কেবল সীমিত পরিসরে এবং ধীরে ধীরে মানুষকে ফিরে আসতে দিতে চায়। এটা অগ্রহণযোগ্য। ইসরায়েল বন্দি বিনিময়ের জন্য অল্প সংখ্যক লোকের প্রস্তাব দিচ্ছে। যদিও গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীর এবং গাজা থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র (ইসরায়েলের ওপর) কোনো চাপ প্রয়োগ করে না এবং ওয়াশিংটন এ বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতেও বাধা দিচ্ছে। অবশ্য ইসরায়েল এই দাবিগুলো মেনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত থাকব।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান তুরস্কের :

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর বিরোধিতা করতেও সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। এমনকি ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য হতে না দেওয়াকে অন্যায্য বলে মনে করে তুরস্ক। বার্তাসংস্থা আনাদোলু’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের সদস্যপদ ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর বিরোধিতা করতে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান।

এদিন ইস্তাম্বুলে মৌরিতানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ সালেম উলদ মারজুগের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফিদান বলেন, এটা অন্যায্য, ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য হতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই অন্যায়ের বিরোধিতা করার জন্য এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানাই। তারা গাজায় চলমান গণহত্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তুরস্কের মতোই, মৌরিতানিয়াও ফিলিস্তিনি ইস্যু, বিশেষ করে গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবেদনশীল নীতি গ্রহণ করেছে এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছে। তুরস্ক এবং মৌরিতানিয়া গাজার বিষয়ে ‘দৃঢ়ভাবে সংহতি’তে রয়েছে। সেখানে আমরা জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।

 

ইসরায়েলি আগ্রাসন আঞ্চলিক নিরাপত্তাহীনতার কারণ :

গতকাল রোববার ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালতোনেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের অপরাধ ও আগ্রাসন এ অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) নিরাপত্তাহীনতার প্রধান কারণ। পশ্চিম এশিয়ায় অশান্তি, দুশ্চিন্তা ও উত্তেজনা দেখতে চায় না তার দেশ। গাজায় যুদ্ধ থামাতে ইউরোপের দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য ইসরায়েলের কাছে তাদের অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধে সব পক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

 

গণহত্যা থেকে লাভবান হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব :

রাশিয়ার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেছেন, আমেরিকাসহ পুরো পশ্চিমা বিশ্ব সমরাস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ভয়াবহ গণহত্যা থেকে লাভবান হচ্ছে। আমরা যখন বলি আমেরিকা তখন আমরা পুরো পশ্চিমা বিশ্বকে বোঝাই। কারণ, পশ্চিমা বিশ্বকে আমেরিকাই নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের যেকোনো সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসিদ্ধি হচ্ছে। প্রথমে সে সংঘাত বাঁধিয়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায় এবং এরপর মোক্ষম সুযোগে চূড়ান্ত আঘাত হেনে নিজের অবৈধ স্বার্থ হাসিল করে। ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ বা ‘সংঘাত বাঁধিয়ে শাসন করো’ নীতিতে চলে আমেরিকা। কিন্তু ব্ল্যাকমেইল করার এই নীতি সম্পূর্ণ অনৈতিক। মার্কিন সরকার যেকোনো সংঘাতকে ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক মাত্রায় নিয়ে যায় কিন্তু সেই বিপদের ভুক্তভোগী হয় সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষ। আর আমেরিকা দূরে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করে। গাজা উপত্যকায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে গণহত্যামূলক যুদ্ধ চলার জন্য তেল আবিবের প্রতি ওয়াশিংটনের সমরাস্ত্র সরবরাহকেই দায়ী করেছেন তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলি গণহত্যাকে সুরক্ষা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : হামাস

আপডেট সময় : ০৭:০১:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

◉ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান তুরস্কের

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে । টানা প্রায় সাত মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এমন অবস্থায় গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যাকে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক সুরক্ষা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এমনকি মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েল গাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে বলেও অভিযোগ করেছে হামাস।

গত রোববার বার্তাসংস্থা আনাদোলু’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ গত শনিবার জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েল গাজায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের ভেটো কার্যকরভাবে তেল আবিবের কর্মকাণ্ডের রাজনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করছে।

ইসমাইল হানিয়াহ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রতারণামূলক, যদিও দেশটি বলে, তারা বেসামরিক লোকদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় না, তবে এটি তাদের একটি কৌশল। গাজায় নিহত সমস্ত বেসামরিক নাগরিক, হাজার হাজার শহীদ, মার্কিন অস্ত্র, মার্কিন রকেট, মার্কিন রাজনৈতিক সুরক্ষায় নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর অর্থ কী? এর মানে হলো- গাজায় গণহত্যা ও হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ সুরক্ষা দিচ্ছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পূর্ণ সদস্যপদে মার্কিন ভেটো এটিই দেখায় যে- ওয়াশিংটন ইসরায়েলি অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের বিরোধিতা করছে।

এদিকে হানিয়াহ রাফাহ শহরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সতর্ক করে ইসমাইল হানিয়াহ বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমি সমস্ত ভ্রাতৃপ্রতিম দেশকে, আমাদের মিসরের ভাইদের, আমাদের তুরস্কের ভাইদের, আমাদের কাতারের ভাইদের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে আগ্রাসনকে দমন করতে এবং রাফাহ শহরে অভিযান প্রতিরোধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে এবং সেই সঙ্গে গাজা উপত্যকা থেকে (ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর) সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং গাজায় হামলার সমাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যদি জায়নবাদী শত্রু রাফাহতে প্রবেশ করে, ফিলিস্তিনি জনগণ সাদা পতাকা উত্তোলন করবে না। রাফাহ-এর প্রতিরোধ যোদ্ধারা নিজেদের রক্ষা করতে এবং আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রস্তুত।

অন্যদিকে কেন তারা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হয়েছিলেন তার কারণ ব্যাখ্যা করে হানিয়াহ ইসমাইল বলেন, আমরা আলোচনায় রাজি হয়েছিলাম, কিন্তু এই শর্তে যে- ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর হামলা বন্ধ করা হবে। আমাদের শর্ত হচ্ছে- এই আলোচনার ফলে অবশ্যই একটি ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সম্পূর্ণভাবে সৈন্য প্রত্যাহার এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রত্যাবর্তন এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি হতে হবে। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে দাখিল করা কয়েক ডজন প্রস্তাব নিয়ে এ পর্যন্ত সমস্ত আলোচনা সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়নি। ইসরায়েল যা চায় তা হলো- বন্দিদের ফিরিয়ে নেওয়া এবং তারপর গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করা। এটা সম্ভব নয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে গাজা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। ইসরায়েলও চায় না বাস্তুচ্যুত মানুষ উত্তর গাজায় ফিরে আসুক। তারা (ইসরায়েল) কেবল সীমিত পরিসরে এবং ধীরে ধীরে মানুষকে ফিরে আসতে দিতে চায়। এটা অগ্রহণযোগ্য। ইসরায়েল বন্দি বিনিময়ের জন্য অল্প সংখ্যক লোকের প্রস্তাব দিচ্ছে। যদিও গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীর এবং গাজা থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র (ইসরায়েলের ওপর) কোনো চাপ প্রয়োগ করে না এবং ওয়াশিংটন এ বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতেও বাধা দিচ্ছে। অবশ্য ইসরায়েল এই দাবিগুলো মেনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত থাকব।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান তুরস্কের :

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর বিরোধিতা করতেও সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। এমনকি ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য হতে না দেওয়াকে অন্যায্য বলে মনে করে তুরস্ক। বার্তাসংস্থা আনাদোলু’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের সদস্যপদ ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর বিরোধিতা করতে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান।

এদিন ইস্তাম্বুলে মৌরিতানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ সালেম উলদ মারজুগের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফিদান বলেন, এটা অন্যায্য, ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য হতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই অন্যায়ের বিরোধিতা করার জন্য এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানাই। তারা গাজায় চলমান গণহত্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তুরস্কের মতোই, মৌরিতানিয়াও ফিলিস্তিনি ইস্যু, বিশেষ করে গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবেদনশীল নীতি গ্রহণ করেছে এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছে। তুরস্ক এবং মৌরিতানিয়া গাজার বিষয়ে ‘দৃঢ়ভাবে সংহতি’তে রয়েছে। সেখানে আমরা জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।

 

ইসরায়েলি আগ্রাসন আঞ্চলিক নিরাপত্তাহীনতার কারণ :

গতকাল রোববার ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালতোনেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের অপরাধ ও আগ্রাসন এ অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) নিরাপত্তাহীনতার প্রধান কারণ। পশ্চিম এশিয়ায় অশান্তি, দুশ্চিন্তা ও উত্তেজনা দেখতে চায় না তার দেশ। গাজায় যুদ্ধ থামাতে ইউরোপের দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য ইসরায়েলের কাছে তাদের অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধে সব পক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

 

গণহত্যা থেকে লাভবান হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব :

রাশিয়ার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেছেন, আমেরিকাসহ পুরো পশ্চিমা বিশ্ব সমরাস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ভয়াবহ গণহত্যা থেকে লাভবান হচ্ছে। আমরা যখন বলি আমেরিকা তখন আমরা পুরো পশ্চিমা বিশ্বকে বোঝাই। কারণ, পশ্চিমা বিশ্বকে আমেরিকাই নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের যেকোনো সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসিদ্ধি হচ্ছে। প্রথমে সে সংঘাত বাঁধিয়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায় এবং এরপর মোক্ষম সুযোগে চূড়ান্ত আঘাত হেনে নিজের অবৈধ স্বার্থ হাসিল করে। ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ বা ‘সংঘাত বাঁধিয়ে শাসন করো’ নীতিতে চলে আমেরিকা। কিন্তু ব্ল্যাকমেইল করার এই নীতি সম্পূর্ণ অনৈতিক। মার্কিন সরকার যেকোনো সংঘাতকে ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক মাত্রায় নিয়ে যায় কিন্তু সেই বিপদের ভুক্তভোগী হয় সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষ। আর আমেরিকা দূরে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করে। গাজা উপত্যকায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে গণহত্যামূলক যুদ্ধ চলার জন্য তেল আবিবের প্রতি ওয়াশিংটনের সমরাস্ত্র সরবরাহকেই দায়ী করেছেন তিনি।