►যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, পুলিশের ধরপাকড়
ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতিনিয়তই মারা যাচ্ছে তারা। এ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমকে সরব দেখা গেলেও এক মাস ধরে অজ্ঞাত কারণে তাদের সক্রিয়তা কমেছে। যেন বিশ্ব ভুলে গেছে এ নির্দোষদের, যারা বোমা, গুলি ও অনাহারে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। ইউনিসেফের তথ্যমতে, প্রতি ১০ মিনিটে গাজায় একটি শিশু হতাহত হচ্ছে। এ কারণে দ্রুতই একটি যুদ্ধবিরতি দাবি করছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটি। তারা মনে করেন, কেবল যুদ্ধবিরতিই পারে সেখানে অব্যাহত শিশুমৃত্যু ঠেকাতে। এদিকে গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। গতকাল সোমবার কানেকটিকাটে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় চালিয়েছে পুলিশ।
মিডলইস্ট মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলের হামলায় গাজায় গত রোববার পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রাণ গেছে ১৪ হাজার ৬৮৫ শিশুর। নারী রয়েছেন ৯ হাজার ৬৭০ জন। জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র গণমাধ্যম উপদেষ্টা আদনান আবু হাসনা জানান, গাজায় শিশুদের পাশাপাশি প্রতিদিন ৬৭ জন নারী নিহত হচ্ছেন, যাদের মধ্যে ৩৭ জন মা-ও রয়েছেন। শত শত শিশুরা এতিম হয়ে গেছে। গাজায় এখন ১৮ হাজার এতিম শিশুর বাস, যারা সবকিছুই হারিয়েছে– পরিবার, আদর, জীবন।
গাজায় শিশুদের পরিস্থিতি নিয়ে আগেও একাধিকবার সতর্ক করেছে ইউনিসেফ। গত ১৯ মার্চ প্রকাশিত জাতিসংঘের সংস্থাটির প্রতিবেদনে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৫০ উল্লেখ করা হয়। তখন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল বলেন, শিশুদের মৃত্যুর সংখ্যা প্রমাণ করে গাজার অবস্থা কতটা টালমাটাল। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের আর কোনো সংঘাতে এত শিশুর মৃত্যু দেখা যায়নি। গাজায় হত্যার পাশাপাশি পশ্চিমতীরে অব্যহতভাবে ফিলিস্তিনিদের আটক করছে ইসরায়েল। আল জাজিরা জানায়, গত ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৪২৫ জনকে আটক করা হয়েছে যাদের মধ্যে ২৮০ জন নারী ও ৫৪০টি শিশু। সাংবাদিক আটক হয়েছেন ৬৬ জন।
এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভের উদ্বেগের মধ্যে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জন ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে গত সোমবার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সশরীর ক্লাস বন্ধ রাখার ঘোষণার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর ধরপাকড় চালায়। গত সপ্তাহে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউইয়র্ক সিটি ক্যাম্পাসে তাঁবু টানিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ঘটনায় সশরীর সব ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেনে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের আশপাশে বিক্ষোভকারীরা যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারা দাবি জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যেন অস্ত্র উৎপাদনকারীদের থেকে দূরে থাকে। সংবাদপত্র ইয়েল ডেইলি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৫ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিউইয়র্কে গতকাল সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের আগেই হুঁশিয়ার করে বলেছিল, বিক্ষোভস্থল না ছাড়লে তাদের পরিণাম ভোগ করতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়ও বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘আমরা থামব না, বিশ্রাম নেব না। প্রকাশ করুন। বর্জন করুন।’
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইয়েল, কলম্বিয়া, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। গতকাল সোমবার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোশে শফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী ও শিক্ষার্থীদের কাছে একটি ই-মেইল পাঠান। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীর ক্লাস বন্ধ থাকবে এবং অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চলবে। এমন সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তিনি লিখেছেন, বিদ্বেষ প্রশমন এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করার সবাইকে সুযোগ দিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কলম্বিয়ার যেখানে বিক্ষোভকারীরা তাঁবু স্থাপন করেছিল, তা পরিষ্কার করার জন্য গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক পুলিশকে খবর দেন শফিক। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যেন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিনিয়োগ বর্জন করে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, এভাবে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ করা হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন।
গত বৃহস্পতিবার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কলম্বিয়া এবং সংশ্লিষ্ট বারনার্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই বিক্ষোভে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটের রিপাবলিকান সদস্যরা এবং অন্তত একজন ডেমোক্রেটিক সিনেটর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোশে শফিকের পদত্যাগ দাবি করেছেন। গত সোমবার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন।
এক গণকবরেই মিলল ৩০০ লাশ : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার খান ইউনিস শহরে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই গণকবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত সোমবার ফিলিস্তিনি বেসরকারি প্রতিরক্ষা বিভাগ এসব তথ্য জানিয়েছে। খান ইউনিসের বেসরকারি প্রতিরক্ষা বিভাগের পরিচালক কর্নেল ইয়ামেন আবু সুলেমান বলেছেন, গত শনিবার নাসের মেডিক্যাল কমপ্লেক্সে একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছেন তারা। এই গণকবর থেকে সোমবার আরো ৭৩টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২৮৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি লাশের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে। কারো গায়ে মাঠেই ফাঁসি দেওয়ার চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া তাদের জীবিত কবর দেওয়া হয়েছিল নাকি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তা আমরা জানি না। বেশিরভাগ লাশই পচে গেছে। এর আগে খান ইউনিস বেসরকারি প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র এবং এই অনুসন্ধান মিশনের প্রধান রায়েদ সাকার সিএনএনকে বলেছিলেন, গত ৭ এপ্রিল ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পর তারা আরো ৪০০ নিখোঁজ মানুষের লাশের সন্ধান করছেন।


























