০৬:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক পরিবারের ৯ জন নিহত, শুধু বেঁচে রইল মেয়েশিশুটি

❖রাফাহতে বিমান হামলায় নিহত ২৫
❖ইসরায়েলে হামাসের রকেট হামলা
❖রাফাহতে অভিযান হবে সবচেয়ে বিপর্যয়কর : মাহমুদ আব্বাস

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিশর সীমান্তবর্তী শহর রাফায় বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় নিহত হয়েছেন ২০ থেকে ২৫ জন। এছাড়া গাজা নগরীতে ইসরায়েলি হামলায় আরো সাতজনের প্রাণ গেছে এবং আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এ হামলায় নিহতের সংখ্যা আরো বেশি বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অবরুদ্ধ গাজার রাফা শহরের তিনটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৩ জন নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা ১৫ বলে জানিয়েছে হামাস মিডিয়া আউটলেট। রাফায় এই হামলা এমন এক সময়ে হলো যখন ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার জন্য হামাস নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে মিসর। এই হামলার বিষয়ে ইসরায়েল বাহিনী তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।

 

 

 

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় বিরামহীনভাবে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার এই ধ্বংসস্তূপ সরাতে ১৪ বছর লেগে যাবে বলা হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ।

 

 

রাফায় ইসরায়েলি হামলায় এক পরিবারের নয় সদস্য নিহত হয়েছেন। বেঁচে গেছে ওই পরিবারের এক মেয়েশিশু। পরিবারের একমাত্র বেঁচে যাওয়া সদস্য সে। রাফায় আবু ত¦াহা পরিবারের সদস্যরা বাড়িতেই ছিলেন। সেখানে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ওই পরিবারের একজন প্রতিবেশী আল-জাজিরাকে জানান, হামলায় বাড়িতে থাকা পরিবারের ৯ সদস্য মারা গেছেন। তিনি শুধু পরিবারটির এক মেয়েশিশুকে ব্যালকনি থেকে বের করে আনতে পেরেছেন। এতে ওই শিশুর প্রাণ বাঁচে।

 

 

 

এদিকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। লেবানন থেকে এই হামলা চালানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে হামাসের লেবানন শাখা জানিয়েছে, কিরিয়াত শমোনা এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স বলছে, লেবানন থেকে ২০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, হামাসের ছোড়া অধিকাংশ রকেট আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে। কিছু রকেট খোলা জায়গায় পড়েছে। তাছাড়া পাল্টা হামলা চালানো হচ্ছে বলেও জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

 

 

 

অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় প্রায় প্রতিটি ভবন, স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে সাড়ে তিন কোটি টনের বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এক দুই বছরে এসব ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। জাতিসংঘের মাইন অ্যাকশন এজেন্সি বলছে, এসব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিতে এক দশকের বেশি সময় লেগে যেতে পারে।

 

 

 

গাজায় এখনো যুদ্ধবিরতি নিয়ে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। হামাস বা ইসরায়েলি বাহিনী এ বিষয়ে একমত হতে না পারায় যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধ শেষ হলে এসব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি নাগরিকের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাটাই হয়ে উঠবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এরই মধ্যে সেখানে তিন কোটি ৭০ লাখ টন ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে।

 

 

এর আগে, গত রোববার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সম্মেলনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, রাফায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে বিপর্যয়কর ঘটনা হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই রাফায় অভিযান চালাতে পারে ইসরায়েল। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই এ আগ্রাসন বন্ধ করতে পারে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় বর্তমানে ১৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। তাদের প্রায় ১০ লাখই যুদ্ধের কারণে গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চল থেকে পালিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের আগে রাফায় বিমান হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। রাফায় ইসরায়েলের অভিযানের প্রস্তুতির মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হচ্ছে। আলোচনায় অংশ নিতে গতকাল হামাসের একটি প্রতিনিধিদল মিসরের কায়রোতে পৌঁছেছে।

সাধারণ মানুষকে দূরে রেখে আখেরে কেউ লাভবান হয় না

এক পরিবারের ৯ জন নিহত, শুধু বেঁচে রইল মেয়েশিশুটি

আপডেট সময় : ০৭:২৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

❖রাফাহতে বিমান হামলায় নিহত ২৫
❖ইসরায়েলে হামাসের রকেট হামলা
❖রাফাহতে অভিযান হবে সবচেয়ে বিপর্যয়কর : মাহমুদ আব্বাস

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিশর সীমান্তবর্তী শহর রাফায় বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় নিহত হয়েছেন ২০ থেকে ২৫ জন। এছাড়া গাজা নগরীতে ইসরায়েলি হামলায় আরো সাতজনের প্রাণ গেছে এবং আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এ হামলায় নিহতের সংখ্যা আরো বেশি বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অবরুদ্ধ গাজার রাফা শহরের তিনটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৩ জন নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা ১৫ বলে জানিয়েছে হামাস মিডিয়া আউটলেট। রাফায় এই হামলা এমন এক সময়ে হলো যখন ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার জন্য হামাস নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে মিসর। এই হামলার বিষয়ে ইসরায়েল বাহিনী তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।

 

 

 

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় বিরামহীনভাবে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার এই ধ্বংসস্তূপ সরাতে ১৪ বছর লেগে যাবে বলা হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ।

 

 

রাফায় ইসরায়েলি হামলায় এক পরিবারের নয় সদস্য নিহত হয়েছেন। বেঁচে গেছে ওই পরিবারের এক মেয়েশিশু। পরিবারের একমাত্র বেঁচে যাওয়া সদস্য সে। রাফায় আবু ত¦াহা পরিবারের সদস্যরা বাড়িতেই ছিলেন। সেখানে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ওই পরিবারের একজন প্রতিবেশী আল-জাজিরাকে জানান, হামলায় বাড়িতে থাকা পরিবারের ৯ সদস্য মারা গেছেন। তিনি শুধু পরিবারটির এক মেয়েশিশুকে ব্যালকনি থেকে বের করে আনতে পেরেছেন। এতে ওই শিশুর প্রাণ বাঁচে।

 

 

 

এদিকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। লেবানন থেকে এই হামলা চালানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে হামাসের লেবানন শাখা জানিয়েছে, কিরিয়াত শমোনা এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স বলছে, লেবানন থেকে ২০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, হামাসের ছোড়া অধিকাংশ রকেট আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে। কিছু রকেট খোলা জায়গায় পড়েছে। তাছাড়া পাল্টা হামলা চালানো হচ্ছে বলেও জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

 

 

 

অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় প্রায় প্রতিটি ভবন, স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে সাড়ে তিন কোটি টনের বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এক দুই বছরে এসব ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। জাতিসংঘের মাইন অ্যাকশন এজেন্সি বলছে, এসব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিতে এক দশকের বেশি সময় লেগে যেতে পারে।

 

 

 

গাজায় এখনো যুদ্ধবিরতি নিয়ে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। হামাস বা ইসরায়েলি বাহিনী এ বিষয়ে একমত হতে না পারায় যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধ শেষ হলে এসব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি নাগরিকের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাটাই হয়ে উঠবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এরই মধ্যে সেখানে তিন কোটি ৭০ লাখ টন ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে।

 

 

এর আগে, গত রোববার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সম্মেলনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, রাফায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে বিপর্যয়কর ঘটনা হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই রাফায় অভিযান চালাতে পারে ইসরায়েল। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই এ আগ্রাসন বন্ধ করতে পারে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় বর্তমানে ১৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। তাদের প্রায় ১০ লাখই যুদ্ধের কারণে গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চল থেকে পালিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের আগে রাফায় বিমান হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। রাফায় ইসরায়েলের অভিযানের প্রস্তুতির মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হচ্ছে। আলোচনায় অংশ নিতে গতকাল হামাসের একটি প্রতিনিধিদল মিসরের কায়রোতে পৌঁছেছে।