০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অব্যাহত রুশ হামলায় পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে ইউক্রেন

◉রাশিয়ার কাছে আরো ৩ গ্রাম হারাল ইউক্রেন
◉নাভালনি হত্যায় পুতিন জড়িত নন : যুক্তরাষ্ট্র

পূর্ব রণাঙ্গনের আরো তিনটি গ্রাম থেকে পিছু হটেছে ইউক্রেনের সেনারা এবং এসব অঞ্চলে রুশ সেনাদের অবস্থান আরো দৃঢ় হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব রণাঙ্গনের এসব গ্রামের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পাশাপাশি ইউক্রেনীয় বাহিনী দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের আশপাশে সেনা সংখ্যা বাড়াচ্ছে। শহরটি বর্তমানে রাশিয়ার দখলে আছে। একই সঙ্গে শহরটিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের আশঙ্কা, রাশিয়া এখান থেকে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলে নতুন করে আক্রমণ চালাতে পারে।

গতকাল রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান কর্নেল জেনারেল ওলেকজান্দর সিরস্কি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে শেয়ার করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, মূলত সেনা সংকটের কারণেই ইউক্রেনীয়রা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। রণাঙ্গনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রুশ বাহিনীর দখল করা মারিয়াঙ্কার পশ্চিমে ও আভদিভকার উত্তর-পশ্চিমে (যুদ্ধ পরিস্থিতি) সবচেয়ে কঠিন। কিয়েভের সৈন্যরা আভদিভকার উত্তরের দুই গ্রাম বেরদিচি ও সেমেনিভকার পশ্চিমে অবস্থান নিয়েছে এবং মারিয়াঙ্কার দক্ষিণে অবস্থিত নভোমিখাইলিভকা গ্রামের আরও দক্ষিণে অবস্থান নিয়েছে। শত্রুরা এই এলাকায় কিছু কৌশলগত সাফল্য অর্জন করেছে কিন্তু অপারেশনাল সুবিধা অর্জন করতে পারেনি। এই গ্রামগুলো আক্রমণের জন্য রাশিয়া চারটি ব্রিগেড মোতায়েন করেছে। তাদের মোকাবিলায় বিশ্রাম নেওয়া ইউক্রেনীয় ব্রিগেডগুলোকে ওই এলাকাগুলোর দিকে নেওয়া হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিটগুলোকে প্রতিস্থাপনের জন্য। এদিকে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ ঘিরে সেনা সংখ্যা বাড়াচ্ছে রাশিয়া। বিষয়টি চিন্তিত করে তুলেছে ইউক্রেনী নীতিনির্ধারকদের।

বিবিসি বলছে, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংকটে যুদ্ধে প্রতিনিয়তই ইউক্রেনের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। আর এই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে সৈন্য ও সামরিক দিক থেকে কিয়েভের চেয়ে শক্তিশালী রুশ বাহিনী। যুদ্ধে ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিয়েভকে নতুন করে অস্ত্র দেওয়া সংক্রান্ত ৬১ বিলিয়ন ডলারের একটি বিল কয়েক মাস আটকে থাকার পর গত সপ্তাহে তাতে অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। যত দ্রুত সম্ভব কিয়েভে নতুন করে অস্ত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ওয়াশিংটন। এতে জরুরি হয়ে পড়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাবে ইউক্রেনীয় বাহিনী।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মতপার্থ্যক্যের জেরে পদত্যাগ করেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি। এরপরই তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন জেনারেল ওলেক্সান্দার সাইরস্কি। চলতি মাসের শুরুর দিকে জেনারেল সাইরস্কি সতর্ক করে বলেছিলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য সার্বিক পরিস্থিতি উল্লেখ করার মতো অবনতি ঘটেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা মনে করছেন, রাশিয়ার সরকারবিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় সম্ভবত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জড়িত নন। নাভালনিকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা তার ছিল না। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আর্কটিক কারাগারে বন্দী অবস্থায় মারা যান ৪৭ বছর বয়সি নাভালনি। তিনি পুতিনের কট্টর সমালোচক ছিলেন। নাভালনির সহযোগীদের অভিযোগ, পুতিনই নাভালনিকে হত্যা করিয়েছেন। অভিযোগের পক্ষে তারা প্রমাণ দেবেন। রাশিয়ার কর্মকর্তারা শুধু বলেছেন, নাভালনির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন সরাসরি নাভালনিকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে কোনো প্রমাণ গোয়েন্দারা পাননি। তার মৃত্যুর জন্য চূড়ান্ত অর্থে পুতিনকে দায়ী মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। কারাগারে তাকে নির্মম পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছিল। ২০২০ সালে তাকে স্নায়ু বিকল করার বিষাক্ত এক রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছিল।

যদিও এ নেতা দাবি করেছিলেন, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে নাভালনির মৃত্যুর ঘটনায় পুতিন সরাসরি জড়িত নন বলে মার্কিন কর্মকর্তারা যে ধারণা করছেন, তা মানতে রাজি নয় কিছু ইউরোপীয় দেশ। কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন, রাশিয়ার মতো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি দেশে প্রেসিডেন্টের অজান্তে নাভালনির কোনো ক্ষতি হতে পারে, এমনটা তারা কোনোভাবেই মনে করেন না। এ ধরনের তথ্য নাকচ করে নাভালনির জ্যেষ্ঠ সহযোগী লিওনিড ভলকভও বলেন, নাভালনির মৃত্যুতে পুতিন জড়িত নন বলে যারা মনে করছেন, তারা আসলে আধুনিক যুগে রাশিয়া কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তা জানেন না। পুতিন জানতেন না এবং নাভালনিকে হত্যার অনুমতি দেননি-এমন ধারণাটি হাস্যকর।

অব্যাহত রুশ হামলায় পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে ইউক্রেন

আপডেট সময় : ০৭:৪২:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

◉রাশিয়ার কাছে আরো ৩ গ্রাম হারাল ইউক্রেন
◉নাভালনি হত্যায় পুতিন জড়িত নন : যুক্তরাষ্ট্র

পূর্ব রণাঙ্গনের আরো তিনটি গ্রাম থেকে পিছু হটেছে ইউক্রেনের সেনারা এবং এসব অঞ্চলে রুশ সেনাদের অবস্থান আরো দৃঢ় হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব রণাঙ্গনের এসব গ্রামের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পাশাপাশি ইউক্রেনীয় বাহিনী দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের আশপাশে সেনা সংখ্যা বাড়াচ্ছে। শহরটি বর্তমানে রাশিয়ার দখলে আছে। একই সঙ্গে শহরটিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের আশঙ্কা, রাশিয়া এখান থেকে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলে নতুন করে আক্রমণ চালাতে পারে।

গতকাল রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান কর্নেল জেনারেল ওলেকজান্দর সিরস্কি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে শেয়ার করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, মূলত সেনা সংকটের কারণেই ইউক্রেনীয়রা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। রণাঙ্গনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রুশ বাহিনীর দখল করা মারিয়াঙ্কার পশ্চিমে ও আভদিভকার উত্তর-পশ্চিমে (যুদ্ধ পরিস্থিতি) সবচেয়ে কঠিন। কিয়েভের সৈন্যরা আভদিভকার উত্তরের দুই গ্রাম বেরদিচি ও সেমেনিভকার পশ্চিমে অবস্থান নিয়েছে এবং মারিয়াঙ্কার দক্ষিণে অবস্থিত নভোমিখাইলিভকা গ্রামের আরও দক্ষিণে অবস্থান নিয়েছে। শত্রুরা এই এলাকায় কিছু কৌশলগত সাফল্য অর্জন করেছে কিন্তু অপারেশনাল সুবিধা অর্জন করতে পারেনি। এই গ্রামগুলো আক্রমণের জন্য রাশিয়া চারটি ব্রিগেড মোতায়েন করেছে। তাদের মোকাবিলায় বিশ্রাম নেওয়া ইউক্রেনীয় ব্রিগেডগুলোকে ওই এলাকাগুলোর দিকে নেওয়া হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিটগুলোকে প্রতিস্থাপনের জন্য। এদিকে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ ঘিরে সেনা সংখ্যা বাড়াচ্ছে রাশিয়া। বিষয়টি চিন্তিত করে তুলেছে ইউক্রেনী নীতিনির্ধারকদের।

বিবিসি বলছে, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংকটে যুদ্ধে প্রতিনিয়তই ইউক্রেনের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। আর এই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে সৈন্য ও সামরিক দিক থেকে কিয়েভের চেয়ে শক্তিশালী রুশ বাহিনী। যুদ্ধে ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিয়েভকে নতুন করে অস্ত্র দেওয়া সংক্রান্ত ৬১ বিলিয়ন ডলারের একটি বিল কয়েক মাস আটকে থাকার পর গত সপ্তাহে তাতে অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। যত দ্রুত সম্ভব কিয়েভে নতুন করে অস্ত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ওয়াশিংটন। এতে জরুরি হয়ে পড়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাবে ইউক্রেনীয় বাহিনী।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মতপার্থ্যক্যের জেরে পদত্যাগ করেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি। এরপরই তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন জেনারেল ওলেক্সান্দার সাইরস্কি। চলতি মাসের শুরুর দিকে জেনারেল সাইরস্কি সতর্ক করে বলেছিলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য সার্বিক পরিস্থিতি উল্লেখ করার মতো অবনতি ঘটেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা মনে করছেন, রাশিয়ার সরকারবিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় সম্ভবত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জড়িত নন। নাভালনিকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা তার ছিল না। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আর্কটিক কারাগারে বন্দী অবস্থায় মারা যান ৪৭ বছর বয়সি নাভালনি। তিনি পুতিনের কট্টর সমালোচক ছিলেন। নাভালনির সহযোগীদের অভিযোগ, পুতিনই নাভালনিকে হত্যা করিয়েছেন। অভিযোগের পক্ষে তারা প্রমাণ দেবেন। রাশিয়ার কর্মকর্তারা শুধু বলেছেন, নাভালনির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন সরাসরি নাভালনিকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে কোনো প্রমাণ গোয়েন্দারা পাননি। তার মৃত্যুর জন্য চূড়ান্ত অর্থে পুতিনকে দায়ী মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। কারাগারে তাকে নির্মম পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছিল। ২০২০ সালে তাকে স্নায়ু বিকল করার বিষাক্ত এক রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছিল।

যদিও এ নেতা দাবি করেছিলেন, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে নাভালনির মৃত্যুর ঘটনায় পুতিন সরাসরি জড়িত নন বলে মার্কিন কর্মকর্তারা যে ধারণা করছেন, তা মানতে রাজি নয় কিছু ইউরোপীয় দেশ। কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন, রাশিয়ার মতো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি দেশে প্রেসিডেন্টের অজান্তে নাভালনির কোনো ক্ষতি হতে পারে, এমনটা তারা কোনোভাবেই মনে করেন না। এ ধরনের তথ্য নাকচ করে নাভালনির জ্যেষ্ঠ সহযোগী লিওনিড ভলকভও বলেন, নাভালনির মৃত্যুতে পুতিন জড়িত নন বলে যারা মনে করছেন, তারা আসলে আধুনিক যুগে রাশিয়া কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তা জানেন না। পুতিন জানতেন না এবং নাভালনিকে হত্যার অনুমতি দেননি-এমন ধারণাটি হাস্যকর।