০৭:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এমপি-মন্ত্রীদের খপ্পরে আওয়ামী লীগ

❖ বেপরোয়া এমপি-মন্ত্রীরা ও তাদের পছন্দের প্রার্থীরা
❖ দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপেও মাঠে তিন ডজন স্বজন
❖ মনিটরিং চলছে, সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি কেন্দ্রের

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ আগামী ২১ মে, প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ রাত ১২টায়। প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় ধাপের ভোটেও প্রায় উপজেলাতে প্রতীদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। তবে যে উদ্দেশ্যে উপজেলাতে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করেছে ক্ষমতাসীন দলটি তা অনেকটাই উপেক্ষিত হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা ভোটও অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দলটি। তৃণমূলে সংঘাত-সহিংসতা নির্মূলে দলের পক্ষ থেকে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

 

তবে প্রথম ধাপেই দলের এমন নির্দেশনা হোঁচট খায়। নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষেই হস্তক্ষেপ নয়, প্রায় ১৩ উপজেলায় স্বজনদের প্রার্থী করেন এমপি-মন্ত্রীরা। স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিলেও তা কাজে আসেনি। বরঞ্চ প্রথম ধাপের ধারাবাহিকতা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপেও রয়েছে। স্বজন ও মাইম্যান রাজনীতিতেই সয়লাব উপজেলা ভোটের পরবর্তী ধাপ গুলোও। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব প্রার্থী ও তাদের পক্ষে এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠছে। যা দলের হাইকমান্ডকেও স্পষ্টতই বিব্রত করছে।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী ফোরাম সূত্র বলছে, উপজেলা ভোটের ১ম ধাপে প্রার্থিতা উন্মুক্তকরণ সফল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মুখেও নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতির হারও ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও নির্বাচনের আগে সংঘাত-সহিংসতার পরিমাণও কমানো গেছে বলেও মনে করছেন নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সদস্যরা। ফলে ভোটের দিন কিছু স্থানে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। সারাদেশেই শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। এর ধারাবহিকতা ধরে রাখার চিন্তা নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সদস্যদের। তবে প্রথম ধাপে হুঁশিয়ারির পরও শাস্তি না হওয়ায় দ্বিতীয় ধাপে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন এমপি-মন্ত্রীরা। যা দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সদস্যদের নতুন করে ভাবাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম ধাপে অন্তত ১৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা মাঠে ছিল। এর মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন ১০ জন। এর বাইরেও অধিকাংশ উপজেলায় বিজয়ীদের পেছনে এমপি-মন্ত্রীরা হস্তক্ষেপ করছেন। এসব উপজেলার পরাজিত প্রার্থীদের অনেকেই ভোটের পরে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের প্রচারণা পর্বে এমপিদের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ ও নির্বাচনি আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে।

সবশেষ গত ১২ মে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বাকী বিল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্থানীয় এমপি পুত্র ও চেয়ারম্যান প্রার্থী রাসেল আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর নানা অত্যাচার-নির্যাতন করছে। হামলা-মামলার ভয় দেখানোর কারণে তারা হতাশাগ্রস্ত। এমন পরিস্থিতিতে আমার নির্বাচন করা মোটেও সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় লক্ষীপুর-১ আসনের এমপি আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী ইমতিয়াজ আরাফাত। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৭টি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠান। এ ঘটনায় গত শুক্রবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াঙ্কা দত্ত এক চিঠিতে আনোয়ার হোসেন খানেকে সতর্ক করেন এবং যে কোনো ধরনের প্রচারণায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।

এছাড়া গেলো ৮ মে উপজেলা ভোটে বরিশাল-৬ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাফিজ মল্লিক প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ায় কমিশনে এসে দুঃখ প্রকাশ করেন। ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, শুনানিতে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই জামিল হাসান দুর্জয়। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জামিল হাসানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী নিজ বাসভবনে অবস্থান করে তার সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী কাউছার ভূঁইয়ার পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন অপর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোখলেছুর রহমান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন থেকে ভোট বর্জন ও নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান প্রার্থী এস এম অহিদুজ্জামান। নির্বাচনের পরিবেশ নেই উল্লেখ করে অহিদুজ্জামান বলেন, যেখানে প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন মাননীয় এমপি শেখ হেলাল উদ্দীনের বরাত দিয়ে ভোট চাইছে, সেখানে নির্বাচন কখনোই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না। অশোক কুমার বড়াল মাননীয় এমপি সাহেব মনোনীত ও সমর্থিত বলে ভোট চাইছে। এতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জমা পড়েছে ইসিতে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহজালাল মিয়া ইসিতে দেওয়া অভিযোগে জানিয়েছেন, আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাচনে হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু নিজের পছন্দের প্রার্থী ঘোষণা করে প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের নাম ব্যবহার করে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারুল ইসলামের পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে মাঠে আছেন অন্তত ২০ এমপির স্বজন। তাদের মধ্যে আছেন-এমপির স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, ভাই-ভাতিজা, শ্যালক, ভগ্নিপতি, মামা-ভাগ্নে, বেয়াই। এর বাইরেও অধিকাংশ উপজেলাতে রয়েছেন এমপি-মন্ত্রীদের পছন্দের প্রার্থী। নির্বাচনে নিজ-নিজ প্রার্থীদের জেতাতে তারা বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তারও করছেন।
দ্বিতীয় ধাপে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে প্রার্থী হয়েছেন কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সহোদর গোলাম সারোয়ার। একই জেলায় বরুড়া উপজেলাতে প্রার্থী হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের শ্যালক হামিদ লতিফ ভুইয়া। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার এমপি। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের ভগ্নিপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ রায়পুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী, নরসিংদীর পলাশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খানের স্ত্রীর বড় ভাই মো. শরীফুল হক। নরসিংদীর শিবপুরের এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী ফেরদৌসি ইসলাম শিবপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন।

নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা শামীম আহমেদ সাগর লালপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ ও ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য খান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদীর বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম খান রাজু চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুনের ভাতিজা নঈম হাসান জোয়ার্দার চেয়ারম্যান প্রার্থী। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল-৬ আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিকের ছোট ভাই আবদুল সালাম মল্লিক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিনুল ইসলাম তুষার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী। কক্সবাজারের রামু উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের বড় ভাই সোহেল সরওয়ার কাজল। উখিয়া উপজেলায় মাঠে আছেন স্থানীয় এমপি শাহীন আক্তারের ভাই জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। লক্ষ্মীপুর সদরে চেয়ারম্যান পদে রয়ে গেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের শালা। কুমিল্লায় ভোটের মাঠে রয়েছেন দেবিদ্বার উপজেলায় স্বতন্ত্র এমপি আবুল কালাম আজাদের ভাই মামুনুর রশিদ, মুরাদনগর উপজেলায় এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে আহসানুল আলম কিশোর ও নাতি আল আমিন সরকার। ব্রাহ্মণপাড়ায় রয়েছেন এমপির ভাতিজা আবু তৈয়ব অপি। কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের ছোট ভাই আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে প্রার্থী হয়েছেন। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেন।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্দেশনা দেওয়া হলেও মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন না সেটি মাথায় রেখেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে নির্দেশের সরাসরি প্রভাব পড়ে ১ম ধাপের নির্বাচনে। নির্দেশনার পর থেকে উপজেলা পর্যায় থেকে কেন্দ্রে মন্ত্রী-এমপি ও তাদের আত্মীয় প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আসার সংখ্যা কমে আসে। মন্ত্রী-এমপিরা যেমন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থেকে সরে এসেছেন, তাদের আত্মীয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসেন। প্রশাসনও অনেকটা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হন। তবে দ্বিতীয় ধাপে এসে দৃশ্যমান কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেক এমপিই বেপরোয়া হয়ে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সবশেষ গত রোববার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে তাদের শাস্তি পেতেই হবে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৭৩ জন এমপি মনোনয়ন পাননি, ২৫ জন ক্যাবিনেটে বাদ পড়েছেন। শাস্তিটা অনেকভাবেই আসতে পারে।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সবুজ বাংলাকে বলেন, নির্বাচনে আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল আমাদের স্বজনরা কেউ নির্বচনে অংশ নিতে পারবে না। তারপরও কিছু জায়গায় অংশ নিয়েছে, কিছু জায়গায় তারা প্রার্থীতা তুলে নিয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ হোক এটাই আমাদের লক্ষ।

দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমি মনে করি দলের সিদ্ধান্ত সবারই মানা উচিত। কারণ দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। ফলে এই সার্বিক বিষয়গুলো মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হচ্ছে। সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পে স্কেলের সুপারিশ জমার ‘ডেডলাইন’ নিয়ে যা জানা গেল

এমপি-মন্ত্রীদের খপ্পরে আওয়ামী লীগ

আপডেট সময় : ০৭:৪৭:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

❖ বেপরোয়া এমপি-মন্ত্রীরা ও তাদের পছন্দের প্রার্থীরা
❖ দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপেও মাঠে তিন ডজন স্বজন
❖ মনিটরিং চলছে, সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি কেন্দ্রের

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ আগামী ২১ মে, প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ রাত ১২টায়। প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় ধাপের ভোটেও প্রায় উপজেলাতে প্রতীদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। তবে যে উদ্দেশ্যে উপজেলাতে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করেছে ক্ষমতাসীন দলটি তা অনেকটাই উপেক্ষিত হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা ভোটও অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দলটি। তৃণমূলে সংঘাত-সহিংসতা নির্মূলে দলের পক্ষ থেকে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

 

তবে প্রথম ধাপেই দলের এমন নির্দেশনা হোঁচট খায়। নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষেই হস্তক্ষেপ নয়, প্রায় ১৩ উপজেলায় স্বজনদের প্রার্থী করেন এমপি-মন্ত্রীরা। স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিলেও তা কাজে আসেনি। বরঞ্চ প্রথম ধাপের ধারাবাহিকতা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপেও রয়েছে। স্বজন ও মাইম্যান রাজনীতিতেই সয়লাব উপজেলা ভোটের পরবর্তী ধাপ গুলোও। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব প্রার্থী ও তাদের পক্ষে এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠছে। যা দলের হাইকমান্ডকেও স্পষ্টতই বিব্রত করছে।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী ফোরাম সূত্র বলছে, উপজেলা ভোটের ১ম ধাপে প্রার্থিতা উন্মুক্তকরণ সফল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মুখেও নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতির হারও ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও নির্বাচনের আগে সংঘাত-সহিংসতার পরিমাণও কমানো গেছে বলেও মনে করছেন নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সদস্যরা। ফলে ভোটের দিন কিছু স্থানে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। সারাদেশেই শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। এর ধারাবহিকতা ধরে রাখার চিন্তা নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সদস্যদের। তবে প্রথম ধাপে হুঁশিয়ারির পরও শাস্তি না হওয়ায় দ্বিতীয় ধাপে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন এমপি-মন্ত্রীরা। যা দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সদস্যদের নতুন করে ভাবাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম ধাপে অন্তত ১৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা মাঠে ছিল। এর মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন ১০ জন। এর বাইরেও অধিকাংশ উপজেলায় বিজয়ীদের পেছনে এমপি-মন্ত্রীরা হস্তক্ষেপ করছেন। এসব উপজেলার পরাজিত প্রার্থীদের অনেকেই ভোটের পরে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের প্রচারণা পর্বে এমপিদের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ ও নির্বাচনি আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে।

সবশেষ গত ১২ মে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বাকী বিল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্থানীয় এমপি পুত্র ও চেয়ারম্যান প্রার্থী রাসেল আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর নানা অত্যাচার-নির্যাতন করছে। হামলা-মামলার ভয় দেখানোর কারণে তারা হতাশাগ্রস্ত। এমন পরিস্থিতিতে আমার নির্বাচন করা মোটেও সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় লক্ষীপুর-১ আসনের এমপি আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী ইমতিয়াজ আরাফাত। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৭টি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠান। এ ঘটনায় গত শুক্রবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াঙ্কা দত্ত এক চিঠিতে আনোয়ার হোসেন খানেকে সতর্ক করেন এবং যে কোনো ধরনের প্রচারণায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।

এছাড়া গেলো ৮ মে উপজেলা ভোটে বরিশাল-৬ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাফিজ মল্লিক প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ায় কমিশনে এসে দুঃখ প্রকাশ করেন। ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, শুনানিতে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই জামিল হাসান দুর্জয়। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জামিল হাসানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী নিজ বাসভবনে অবস্থান করে তার সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী কাউছার ভূঁইয়ার পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন অপর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোখলেছুর রহমান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন থেকে ভোট বর্জন ও নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান প্রার্থী এস এম অহিদুজ্জামান। নির্বাচনের পরিবেশ নেই উল্লেখ করে অহিদুজ্জামান বলেন, যেখানে প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন মাননীয় এমপি শেখ হেলাল উদ্দীনের বরাত দিয়ে ভোট চাইছে, সেখানে নির্বাচন কখনোই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না। অশোক কুমার বড়াল মাননীয় এমপি সাহেব মনোনীত ও সমর্থিত বলে ভোট চাইছে। এতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জমা পড়েছে ইসিতে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহজালাল মিয়া ইসিতে দেওয়া অভিযোগে জানিয়েছেন, আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাচনে হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু নিজের পছন্দের প্রার্থী ঘোষণা করে প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের নাম ব্যবহার করে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারুল ইসলামের পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে মাঠে আছেন অন্তত ২০ এমপির স্বজন। তাদের মধ্যে আছেন-এমপির স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, ভাই-ভাতিজা, শ্যালক, ভগ্নিপতি, মামা-ভাগ্নে, বেয়াই। এর বাইরেও অধিকাংশ উপজেলাতে রয়েছেন এমপি-মন্ত্রীদের পছন্দের প্রার্থী। নির্বাচনে নিজ-নিজ প্রার্থীদের জেতাতে তারা বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তারও করছেন।
দ্বিতীয় ধাপে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে প্রার্থী হয়েছেন কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সহোদর গোলাম সারোয়ার। একই জেলায় বরুড়া উপজেলাতে প্রার্থী হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের শ্যালক হামিদ লতিফ ভুইয়া। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার এমপি। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের ভগ্নিপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ রায়পুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী, নরসিংদীর পলাশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খানের স্ত্রীর বড় ভাই মো. শরীফুল হক। নরসিংদীর শিবপুরের এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী ফেরদৌসি ইসলাম শিবপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন।

নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা শামীম আহমেদ সাগর লালপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ ও ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য খান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদীর বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম খান রাজু চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুনের ভাতিজা নঈম হাসান জোয়ার্দার চেয়ারম্যান প্রার্থী। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল-৬ আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিকের ছোট ভাই আবদুল সালাম মল্লিক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিনুল ইসলাম তুষার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী। কক্সবাজারের রামু উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের বড় ভাই সোহেল সরওয়ার কাজল। উখিয়া উপজেলায় মাঠে আছেন স্থানীয় এমপি শাহীন আক্তারের ভাই জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। লক্ষ্মীপুর সদরে চেয়ারম্যান পদে রয়ে গেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের শালা। কুমিল্লায় ভোটের মাঠে রয়েছেন দেবিদ্বার উপজেলায় স্বতন্ত্র এমপি আবুল কালাম আজাদের ভাই মামুনুর রশিদ, মুরাদনগর উপজেলায় এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে আহসানুল আলম কিশোর ও নাতি আল আমিন সরকার। ব্রাহ্মণপাড়ায় রয়েছেন এমপির ভাতিজা আবু তৈয়ব অপি। কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের ছোট ভাই আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে প্রার্থী হয়েছেন। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেন।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্দেশনা দেওয়া হলেও মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন না সেটি মাথায় রেখেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে নির্দেশের সরাসরি প্রভাব পড়ে ১ম ধাপের নির্বাচনে। নির্দেশনার পর থেকে উপজেলা পর্যায় থেকে কেন্দ্রে মন্ত্রী-এমপি ও তাদের আত্মীয় প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আসার সংখ্যা কমে আসে। মন্ত্রী-এমপিরা যেমন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থেকে সরে এসেছেন, তাদের আত্মীয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসেন। প্রশাসনও অনেকটা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হন। তবে দ্বিতীয় ধাপে এসে দৃশ্যমান কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেক এমপিই বেপরোয়া হয়ে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সবশেষ গত রোববার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে তাদের শাস্তি পেতেই হবে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৭৩ জন এমপি মনোনয়ন পাননি, ২৫ জন ক্যাবিনেটে বাদ পড়েছেন। শাস্তিটা অনেকভাবেই আসতে পারে।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সবুজ বাংলাকে বলেন, নির্বাচনে আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল আমাদের স্বজনরা কেউ নির্বচনে অংশ নিতে পারবে না। তারপরও কিছু জায়গায় অংশ নিয়েছে, কিছু জায়গায় তারা প্রার্থীতা তুলে নিয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ হোক এটাই আমাদের লক্ষ।

দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমি মনে করি দলের সিদ্ধান্ত সবারই মানা উচিত। কারণ দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। ফলে এই সার্বিক বিষয়গুলো মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হচ্ছে। সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।