০৮:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্যবীমায় এখনো পিছিয়ে দেশ

◉ অর্থ সংকটে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে অনেক রোগী
◉ ৭৮টি বীমা কোম্পানির মধ্যে তিনটিতে চালু আছে স্বাস্থ্যবীমা
◉ সরকারি ‘জীবন বীমা’তেও চালু হয়নি এই সুবিধা

◼দেশে স্বাস্থ্যবীমা চালু হলে সবারই উপকার হবে : ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ
◼বীমা না করলে অনেক দেশে ঢুকতেই দেয়না : ডা. রশীদ-ই-মাহবুব

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হলেও এক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দেশে সরকারি একটিসহ ৭৮টি বীমা কোম্পানি থাকলেও মাত্র তিনটিতে চালু আছে স্বাস্থ্যবীমা। বিশেষ করে রাষ্টায়ত্ত ‘জীবন বীমা করপোরেশনেও’ আজও চালু হয়নি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ এই সুবিধাটি। এতে জরুরি প্রয়োজনেও অর্থের সংকটে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে অনেক রোগী। এই অবস্থায় দেশে ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগী বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সব নাগরিকের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবীমা চালু করা এখন সময়ের দাবি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারত সরকার ২০১৮ সালে ১০ কোটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু করেছে। যার আওতায় জটিল রোগের জন্য ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছে। এই অর্থের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ৬০ শতাংশ এবং রাজ্য সরকার ৪০ শতাংশ খরচ বহন করছে।

বিশে^র মধ্যে কানাডার চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ সুন্দর বলে আখ্যায়িত করা হয়। কানাডার স্বাস্থ্যখাত হেলথ অ্যাক্ট, ১৯৮৪ এর মাধ্যমে পরিচালিত। কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার হিসেবে পরিচালিত এবং সেখানকার শহর এবং গ্রামের সকল রোগী সমানভাবে স্বাস্থ্য চিকিৎসা পান, যার অর্থ মেডিকেয়ার অর্থাৎ দেশের সব নাগরিকের দেয়া স্বাস্থ্যবীমার অর্থের মাধ্যমে ব্যয় করা হয়।
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের বহু নাগরিক চিকিৎসা নিতে যান। দেশটি তার দেশে প্রবেশকারী প্রত্যেক বিদেশি নাগরিককে ২০১৩ সাল থেকে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় নিয়ে এসেছে। স্বাস্থ্যবীমা না করে সেই দেশে কেউ প্রবেশ করতে পারে না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর নাগরিকরা একটি স্বাস্থ্যবীমা কার্ডের মাধ্যমে নিজের দেশ এবং সদস্যভুক্ত সব দেশে স্বাস্থ্যচিকিৎসার সুবিধাভোগ করে।
রাশিয়া যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীন ছিল তখন দেশটির সব নাগরিকের জন্য চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি ছিল। পরবর্তীতে রাশিয়ার প্রত্যেক নাগরিক অবলিগেটরি মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্স (ওএমআই) এর আওতায় সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসাসেবা পায়। সেদেশেও কোনো নাগরিক প্রবেশ করলে তার স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আসা বাধ্যতামূলক।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, দেশের নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা হওয়া উচিত এটা নিয়ে আমিও অনেক লেখালেখি করেছি। কিন্তু আমার নিজেরই এই বীমা নেই। এটা থাকবে কিভাবে? দেশে তো স্বাস্থ্যবীমা সেভাবে চালুই হয়নি। এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীরও আগ্রহ আছে। আশা করছি, অচিরেই এটি চালু হবে। দেশে স্বাস্থ্যবীমা চালু হলে আমাদের সবারই খুবই উপকার হবে। এটি জরুরিভিত্তিতে চালু করা দরকার। উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই কেবল এটি চালু হওয়া সম্ভব।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ডা. রশীদ-ই-মাহবুব দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, বিদেশে যাবার সময় আমার বীমা করতে হয় কারণ বীমা না করলে সেই দেশগুলো তাদের দেশে ঢুকতেই দেয় না। আমাদের দেশে বেসরকারি পর্যায়ে কিছু স্বাস্থ্যবীমা চালু আছে তারা পুরো চিকিৎসার খরচ দেয় না।

বাংলাদেশের বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী দেশের মোট বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৭৮টি। এরমধ্যে দেশে লাইফবীমার সংখ্যা ৩২টি ও নন-লাইফ বীমার সংখ্যা ৪৬টি। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশে জীবনবীমা করপোরেশন কাজ করে যাচ্ছে। জীবন বীমা করপোরেশনের বীমা পলিসির তালিকায় ১১ নম্বরে আছে স্বাস্থ্যবীমা। কিন্তু এখনও এটি চালু হয়নি। এ প্রসঙ্গে জীবন বীমা করপোরেশনের উন্নয়ন বিভাগের ম্যানেজার মো. রুহুল আমীন দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, আমাদের এখানে স্বাস্থ্যবীমাটি এখনও চালু হয়নি। এটির স্কিম হয়ে গেছে। এটি ভবিষ্যতে চালু করা হবে।
বীমা কোম্পানি সূত্রগুলো জানায়, বিদেশে যাবার জন্য তিন সপ্তাহের জন্য ওয়ান টাইম প্রিমিয়াম স্বাস্থ্য বীমার সুযোগ দিচ্ছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জেনারেল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যার কোনো রিটার্ন হয় না।
মেটলাইফ (আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী) এর ম্যানেজার মো. আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যবীমা চালু আছে এর আওতায় ৫২টি রোগের চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায়। হাসপাতালে ভর্তি থাকলে প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পাওয়ার সুযোগ আছে। আবার কোনো অসুস্থতা তৈরি না হলে বীমা ম্যাচিউরড হওয়ার পর অর্থ ফেরত পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে নিয়মিত প্রিমিয়াম দিয়ে যেতে হয়।

 

স্বাস্থ্যবীমায় এখনো পিছিয়ে দেশ

আপডেট সময় : ০৭:৩০:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

◉ অর্থ সংকটে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে অনেক রোগী
◉ ৭৮টি বীমা কোম্পানির মধ্যে তিনটিতে চালু আছে স্বাস্থ্যবীমা
◉ সরকারি ‘জীবন বীমা’তেও চালু হয়নি এই সুবিধা

◼দেশে স্বাস্থ্যবীমা চালু হলে সবারই উপকার হবে : ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ
◼বীমা না করলে অনেক দেশে ঢুকতেই দেয়না : ডা. রশীদ-ই-মাহবুব

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হলেও এক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দেশে সরকারি একটিসহ ৭৮টি বীমা কোম্পানি থাকলেও মাত্র তিনটিতে চালু আছে স্বাস্থ্যবীমা। বিশেষ করে রাষ্টায়ত্ত ‘জীবন বীমা করপোরেশনেও’ আজও চালু হয়নি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ এই সুবিধাটি। এতে জরুরি প্রয়োজনেও অর্থের সংকটে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে অনেক রোগী। এই অবস্থায় দেশে ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগী বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সব নাগরিকের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবীমা চালু করা এখন সময়ের দাবি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারত সরকার ২০১৮ সালে ১০ কোটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু করেছে। যার আওতায় জটিল রোগের জন্য ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছে। এই অর্থের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ৬০ শতাংশ এবং রাজ্য সরকার ৪০ শতাংশ খরচ বহন করছে।

বিশে^র মধ্যে কানাডার চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ সুন্দর বলে আখ্যায়িত করা হয়। কানাডার স্বাস্থ্যখাত হেলথ অ্যাক্ট, ১৯৮৪ এর মাধ্যমে পরিচালিত। কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার হিসেবে পরিচালিত এবং সেখানকার শহর এবং গ্রামের সকল রোগী সমানভাবে স্বাস্থ্য চিকিৎসা পান, যার অর্থ মেডিকেয়ার অর্থাৎ দেশের সব নাগরিকের দেয়া স্বাস্থ্যবীমার অর্থের মাধ্যমে ব্যয় করা হয়।
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের বহু নাগরিক চিকিৎসা নিতে যান। দেশটি তার দেশে প্রবেশকারী প্রত্যেক বিদেশি নাগরিককে ২০১৩ সাল থেকে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় নিয়ে এসেছে। স্বাস্থ্যবীমা না করে সেই দেশে কেউ প্রবেশ করতে পারে না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর নাগরিকরা একটি স্বাস্থ্যবীমা কার্ডের মাধ্যমে নিজের দেশ এবং সদস্যভুক্ত সব দেশে স্বাস্থ্যচিকিৎসার সুবিধাভোগ করে।
রাশিয়া যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীন ছিল তখন দেশটির সব নাগরিকের জন্য চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি ছিল। পরবর্তীতে রাশিয়ার প্রত্যেক নাগরিক অবলিগেটরি মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্স (ওএমআই) এর আওতায় সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসাসেবা পায়। সেদেশেও কোনো নাগরিক প্রবেশ করলে তার স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আসা বাধ্যতামূলক।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, দেশের নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা হওয়া উচিত এটা নিয়ে আমিও অনেক লেখালেখি করেছি। কিন্তু আমার নিজেরই এই বীমা নেই। এটা থাকবে কিভাবে? দেশে তো স্বাস্থ্যবীমা সেভাবে চালুই হয়নি। এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীরও আগ্রহ আছে। আশা করছি, অচিরেই এটি চালু হবে। দেশে স্বাস্থ্যবীমা চালু হলে আমাদের সবারই খুবই উপকার হবে। এটি জরুরিভিত্তিতে চালু করা দরকার। উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই কেবল এটি চালু হওয়া সম্ভব।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ডা. রশীদ-ই-মাহবুব দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, বিদেশে যাবার সময় আমার বীমা করতে হয় কারণ বীমা না করলে সেই দেশগুলো তাদের দেশে ঢুকতেই দেয় না। আমাদের দেশে বেসরকারি পর্যায়ে কিছু স্বাস্থ্যবীমা চালু আছে তারা পুরো চিকিৎসার খরচ দেয় না।

বাংলাদেশের বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী দেশের মোট বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৭৮টি। এরমধ্যে দেশে লাইফবীমার সংখ্যা ৩২টি ও নন-লাইফ বীমার সংখ্যা ৪৬টি। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশে জীবনবীমা করপোরেশন কাজ করে যাচ্ছে। জীবন বীমা করপোরেশনের বীমা পলিসির তালিকায় ১১ নম্বরে আছে স্বাস্থ্যবীমা। কিন্তু এখনও এটি চালু হয়নি। এ প্রসঙ্গে জীবন বীমা করপোরেশনের উন্নয়ন বিভাগের ম্যানেজার মো. রুহুল আমীন দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, আমাদের এখানে স্বাস্থ্যবীমাটি এখনও চালু হয়নি। এটির স্কিম হয়ে গেছে। এটি ভবিষ্যতে চালু করা হবে।
বীমা কোম্পানি সূত্রগুলো জানায়, বিদেশে যাবার জন্য তিন সপ্তাহের জন্য ওয়ান টাইম প্রিমিয়াম স্বাস্থ্য বীমার সুযোগ দিচ্ছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জেনারেল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যার কোনো রিটার্ন হয় না।
মেটলাইফ (আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী) এর ম্যানেজার মো. আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যবীমা চালু আছে এর আওতায় ৫২টি রোগের চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায়। হাসপাতালে ভর্তি থাকলে প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পাওয়ার সুযোগ আছে। আবার কোনো অসুস্থতা তৈরি না হলে বীমা ম্যাচিউরড হওয়ার পর অর্থ ফেরত পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে নিয়মিত প্রিমিয়াম দিয়ে যেতে হয়।