০১:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন, যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী

আপাতত সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই সরকারের। তবে আগামীতে চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানো হবে কি হবে না, বাড়ালে ভালো হবে কি না, এটি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আরও আলাপ-আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।

সোমবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় ধাপের অধিবেশনে পৃথক দুটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে চাঁদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের প্রশ্নে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একসময় চাকরির বয়স ছিল ২৭ বছর। সেখান থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য তা ৩২ বছর করা হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে। আমরা সবসময় যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনবল কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করে থাকি। যুগের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আমরা পরিবর্তনও করে থাকি।

‘সরকারি চাকরি ঘিরে এখন বেশ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করছেন। সরকারের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা একটি সম্মানের বিষয়। আবার চাকরির নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বেতন কাঠামো অত্যন্ত সুন্দর এবং কাজের পরিবেশও সুন্দর হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।

বয়স বাড়ানোর প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এটি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা সবসময় বলে আসছি, ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট যারা তাদের রিক্রুট করতে চাই। এটা সরকারের একটা পলিসি। আমরা বিসিএসের মাধ্যমে দেখে থাকি অনেকে ২২/২৩ বছর বয়স থেকেই বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তারা ছয়-সাত বছর সময় পেয়ে থাকেন। এজন্য তারা যোগদানের যথেষ্ট সময় পাচ্ছেন।

শিক্ষামন্ত্রীর চিঠি নিয়ে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নে ফরাদ হোসেন বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে একটি আধাসরকারি পত্র (ডিও লেটার) আমরা পেয়েছি। আগেই বলেছি এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করব। তবে আপাতত চাকরির প্রবেশের বয়স বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত নেই।

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছরে বাড়াতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

সম্প্রতি পাঠানো শিক্ষামন্ত্রীর ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি, আধা সরকারি, রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিতসহ বাংলাদেশে বিদ্যমান সব ধরনের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছরকে মানদণ্ড হিসেবে অনুসরণ করা হয়। এ অবস্থায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩৫ বছর করার দাবির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।

 

সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পাতা নম্বর ৩৩-এর শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

 

এদিকে ১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলনে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি মেনে না নিলে ১১ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ‘চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি চাই ২০২৪’-এর নেতারা।

 

চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি চাই-২০২৪-এর মুখপাত্র মো. শরিফুল হাসান শুভ বলেন, ‘আমরা চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি চাই অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩৫ চাই। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৩০ আগস্ট থেকে লাগাতার কর্মসূচির অংশ হিসেবে দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিক্ষামন্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর ডিও লেটার দিয়েছি; জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি জোর সুপারিশ করেছেন এবং সেই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে ৩২ জন স্থানীয় সংসদ সদস্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নীতিগত সমর্থন দিয়ে জোর সুপারিশ করেছেন। আমরা চাই এ নিয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক।’

জনপ্রিয় সংবাদ

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন, যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৮:৪২:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

আপাতত সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই সরকারের। তবে আগামীতে চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানো হবে কি হবে না, বাড়ালে ভালো হবে কি না, এটি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আরও আলাপ-আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।

সোমবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় ধাপের অধিবেশনে পৃথক দুটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে চাঁদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের প্রশ্নে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একসময় চাকরির বয়স ছিল ২৭ বছর। সেখান থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য তা ৩২ বছর করা হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে। আমরা সবসময় যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনবল কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করে থাকি। যুগের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আমরা পরিবর্তনও করে থাকি।

‘সরকারি চাকরি ঘিরে এখন বেশ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করছেন। সরকারের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা একটি সম্মানের বিষয়। আবার চাকরির নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বেতন কাঠামো অত্যন্ত সুন্দর এবং কাজের পরিবেশও সুন্দর হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।

বয়স বাড়ানোর প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এটি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা সবসময় বলে আসছি, ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট যারা তাদের রিক্রুট করতে চাই। এটা সরকারের একটা পলিসি। আমরা বিসিএসের মাধ্যমে দেখে থাকি অনেকে ২২/২৩ বছর বয়স থেকেই বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তারা ছয়-সাত বছর সময় পেয়ে থাকেন। এজন্য তারা যোগদানের যথেষ্ট সময় পাচ্ছেন।

শিক্ষামন্ত্রীর চিঠি নিয়ে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নে ফরাদ হোসেন বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে একটি আধাসরকারি পত্র (ডিও লেটার) আমরা পেয়েছি। আগেই বলেছি এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করব। তবে আপাতত চাকরির প্রবেশের বয়স বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত নেই।

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছরে বাড়াতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

সম্প্রতি পাঠানো শিক্ষামন্ত্রীর ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি, আধা সরকারি, রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিতসহ বাংলাদেশে বিদ্যমান সব ধরনের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছরকে মানদণ্ড হিসেবে অনুসরণ করা হয়। এ অবস্থায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩৫ বছর করার দাবির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।

 

সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পাতা নম্বর ৩৩-এর শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

 

এদিকে ১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলনে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি মেনে না নিলে ১১ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ‘চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি চাই ২০২৪’-এর নেতারা।

 

চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি চাই-২০২৪-এর মুখপাত্র মো. শরিফুল হাসান শুভ বলেন, ‘আমরা চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি চাই অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩৫ চাই। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৩০ আগস্ট থেকে লাগাতার কর্মসূচির অংশ হিসেবে দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিক্ষামন্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর ডিও লেটার দিয়েছি; জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি জোর সুপারিশ করেছেন এবং সেই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে ৩২ জন স্থানীয় সংসদ সদস্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নীতিগত সমর্থন দিয়ে জোর সুপারিশ করেছেন। আমরা চাই এ নিয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক।’