১০:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একীভূত নয়, নিজেরা সবল হতে চায় ন্যাশনাল ব্যাংক

➤নতুন পর্ষদের তথ্য লুকোচুরি ও অসংলগ্ন আচরণে পণ্ড সাংবাদিক সম্মেলন
➤গভর্নরের প্রত্যক্ষ মদতে ব্যাংকের কর্তৃত্ব এস আলম গ্রুপের কব্জায়

 

খেলাপি ঋণের বোঝা ও সুশাসনের অভাবে ডুবতে বসা ন্যাশনাল ব্যাংক (মার্জার) একীভূত হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তকে আগ্রাহ্য করে ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছে সদ্য নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক দখল হওয়ার যে গুঞ্জন চলছে সেটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির নবগঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যাংকের আর্থিক ভিত শক্তিশালী করার শর্তে আপাতত একীভূত না হওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেও জানান তিনি। গতকাল সোমবার ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন নতুন চেয়ারম্যান।

 

 

সূত্র জানায়, নতুন বোর্ড গঠন করার মাধ্যমে ব্যাংকটির আধিপত্য চলে যায় ব্যাংকিং খাতের গত কয়েক বছরে আধিপত্য বিস্তারকারী বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের হাতে। অধিকাংশ পরিচালকই চট্টগ্রামের কিংবা চট্টগ্রামের এই শিল্প গ্রুপটির সঙ্গে জড়িত। গ্রুপটির নিজস্ব একাধিক ব্যক্তিকে পরিচালক হিসেবে বসানো হয়েছে বোর্ডে। গত রোববার প্রথম প্রজন্মের এই ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক খলিলুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ১০ সদস্যের নতুন পরিচালনা পরিষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদের মধ্যে ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালক।

 

 

ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, কোনো ব্যাংকের সঙ্গে তারা একীভূত না হয়ে বরং নিজেরাই সবল হতে চান। এদিকে ব্যাংকটিতে নিযুক্ত প্রতিনিধি পরিচালকদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া এই চেয়ারম্যান। ব্যাংকের নতুন পরিচালকরা কোন কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছেন তা কোম্পানি সচিবের মাধ্যমে পরবর্তীতে সাংবাদিকদের জানানোর আশ্বাস দেন ব্যাংকটির নতুন এ চেয়ারম্যান। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে দ্রুত সংবাদ সম্মেলন স্থল ত্যাগ করেন সিকদার পরিবারকে হটিয়ে চেয়ারম্যান হওয়া ন্যাশনাল ব্যাংকের এই উদ্যোক্তা পরিচালক।

 

 

এর আগে গত রোববার মাত্র সাড়ে চার মাসের মাথায় আবারও বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির বিদ্যমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদও গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

 

সংবাদ সম্মেলনে নতুন পর্ষদ জানায়, নতুন পরচালনা পর্ষদ ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে নিয়ে ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও গ্রাহকের আস্থা অর্জনে নিরলস কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। এছাড়াও বিভিন্ন সূচকে উন্নয়ন নিশ্চিত করে ন্যাশনাল ব্যাংকের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনবে।
এর আগে চার মাস আগে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সময় সিকদার পরিবারের একজন সদস্য পারভীন হক সিকদারকে রেখে বাকিদের বাদ দেওয়া হয়েছিল। তখন চেয়ারম্যান করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে, যিনি মেঘনা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন। অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ব্যাংকটির অধিকাংশ পরিচালক। এরপর নতুন পর্ষদ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকেই গুঞ্জন ওঠে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মাধ্যমে ব্যাংকটি দখল হয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ মদত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

 

 

এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে এবং ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানাতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। তবে চেয়ারম্যান পরিচালকদের তথ্য দিতে লুকোচুরি এবং অসংলগ্ন আচরণের ফলে সংবাদ সম্মেলনটি পন্ড হয়ে যায়।

 

সংবাদ সম্মেলনে নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন বুঝি। ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে ও তাদের পাশে থেকে ন্যাশনাল ব্যাংককে একটি ব্যবসায়ীবান্ধব ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা বন্ধ পরিকর। এর মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে ও তার হারানো এতিহ্য ফিরে পাবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। ন্যাশনাল ব্যাংকের এই অগ্রযাত্রায় আমরা সাংবাদিকদের পাশে চাই।
চেয়ারম্যান প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকে আর লুটপাট হবে না। সবার সহযোগিতায় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করা হবে বলেও জানান তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সামান্তা শারমিনের নতুন বার্তা

একীভূত নয়, নিজেরা সবল হতে চায় ন্যাশনাল ব্যাংক

আপডেট সময় : ০৯:২১:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

➤নতুন পর্ষদের তথ্য লুকোচুরি ও অসংলগ্ন আচরণে পণ্ড সাংবাদিক সম্মেলন
➤গভর্নরের প্রত্যক্ষ মদতে ব্যাংকের কর্তৃত্ব এস আলম গ্রুপের কব্জায়

 

খেলাপি ঋণের বোঝা ও সুশাসনের অভাবে ডুবতে বসা ন্যাশনাল ব্যাংক (মার্জার) একীভূত হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তকে আগ্রাহ্য করে ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছে সদ্য নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক দখল হওয়ার যে গুঞ্জন চলছে সেটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির নবগঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যাংকের আর্থিক ভিত শক্তিশালী করার শর্তে আপাতত একীভূত না হওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেও জানান তিনি। গতকাল সোমবার ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন নতুন চেয়ারম্যান।

 

 

সূত্র জানায়, নতুন বোর্ড গঠন করার মাধ্যমে ব্যাংকটির আধিপত্য চলে যায় ব্যাংকিং খাতের গত কয়েক বছরে আধিপত্য বিস্তারকারী বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের হাতে। অধিকাংশ পরিচালকই চট্টগ্রামের কিংবা চট্টগ্রামের এই শিল্প গ্রুপটির সঙ্গে জড়িত। গ্রুপটির নিজস্ব একাধিক ব্যক্তিকে পরিচালক হিসেবে বসানো হয়েছে বোর্ডে। গত রোববার প্রথম প্রজন্মের এই ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক খলিলুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ১০ সদস্যের নতুন পরিচালনা পরিষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদের মধ্যে ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালক।

 

 

ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, কোনো ব্যাংকের সঙ্গে তারা একীভূত না হয়ে বরং নিজেরাই সবল হতে চান। এদিকে ব্যাংকটিতে নিযুক্ত প্রতিনিধি পরিচালকদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া এই চেয়ারম্যান। ব্যাংকের নতুন পরিচালকরা কোন কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছেন তা কোম্পানি সচিবের মাধ্যমে পরবর্তীতে সাংবাদিকদের জানানোর আশ্বাস দেন ব্যাংকটির নতুন এ চেয়ারম্যান। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে দ্রুত সংবাদ সম্মেলন স্থল ত্যাগ করেন সিকদার পরিবারকে হটিয়ে চেয়ারম্যান হওয়া ন্যাশনাল ব্যাংকের এই উদ্যোক্তা পরিচালক।

 

 

এর আগে গত রোববার মাত্র সাড়ে চার মাসের মাথায় আবারও বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির বিদ্যমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদও গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

 

সংবাদ সম্মেলনে নতুন পর্ষদ জানায়, নতুন পরচালনা পর্ষদ ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে নিয়ে ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও গ্রাহকের আস্থা অর্জনে নিরলস কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। এছাড়াও বিভিন্ন সূচকে উন্নয়ন নিশ্চিত করে ন্যাশনাল ব্যাংকের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনবে।
এর আগে চার মাস আগে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সময় সিকদার পরিবারের একজন সদস্য পারভীন হক সিকদারকে রেখে বাকিদের বাদ দেওয়া হয়েছিল। তখন চেয়ারম্যান করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে, যিনি মেঘনা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন। অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ব্যাংকটির অধিকাংশ পরিচালক। এরপর নতুন পর্ষদ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকেই গুঞ্জন ওঠে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মাধ্যমে ব্যাংকটি দখল হয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ মদত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

 

 

এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে এবং ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানাতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। তবে চেয়ারম্যান পরিচালকদের তথ্য দিতে লুকোচুরি এবং অসংলগ্ন আচরণের ফলে সংবাদ সম্মেলনটি পন্ড হয়ে যায়।

 

সংবাদ সম্মেলনে নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন বুঝি। ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে ও তাদের পাশে থেকে ন্যাশনাল ব্যাংককে একটি ব্যবসায়ীবান্ধব ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা বন্ধ পরিকর। এর মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে ও তার হারানো এতিহ্য ফিরে পাবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। ন্যাশনাল ব্যাংকের এই অগ্রযাত্রায় আমরা সাংবাদিকদের পাশে চাই।
চেয়ারম্যান প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকে আর লুটপাট হবে না। সবার সহযোগিতায় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করা হবে বলেও জানান তিনি।