পানিশূন্য হয়ে পড়েছে রংপুর বিভাগের ৫ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা তাদের জমিতে সঠিক সেচ দিতে পারছেন না। সেচের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ শতাংশও পূরণ না হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে রংপুর অ লের লাখো কৃষক।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তিস্তা ব্যারেজের উজানে ১০০০-১৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া গেলেও ভাটির দিকে ১০০ কিউসেক পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। তিস্তা ব্যারেজ থেকে শুরু হয়ে সেচ প্রকল্পের ৭৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খাল নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলায় বিস্তৃত হয়েছে। মূল খাল থেকে টারশিয়ারি ও সেকেন্ডারি নালার মাধ্যমে পানি পৌঁছায় কৃষকের জমি পর্যন্ত। পানি সঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সেচ কৃষকরা। সুবিধাভোগী কৃষকরা বলেন, নদীতে পানি না থাকায় আর পানির প্রবাহ নিশ্চিত না হওয়ায় সেচনালা কাজে আসছে না। এতে বোরো চাষ করতে পারছে না তারা। বিকল্প উপায়ে জমিতে সেচ দিতে খরচ বেশি হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, ১৯৭৯ সালে উত্তরের আট জেলার কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সেচ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৫ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু ব্যারেজের উজানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করে একতরফা ভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় বাধাগ্রস্থ হয় প্রকল্পটি।
পরে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১ লক্ষ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্পের অপারেশনাল কার্যক্রম চালু করা হলেও কখনোই তা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। ফলে সেচযন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হয় কৃষকদের। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিস্তা নদীতে ৬০-৬৫ হাজার কিউসেক পানিপ্রবাহ থাকলেও অক্টোবর থেকে পানি কমতে শুরু করে। ডিসেম্বরে তিস্তা শুকিয়ে যায়। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত তিস্তায় ৭০০-১৫০০ কিউসেক পানি থাকলেও সেসময় সেচের জন্য পানি প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ৫ হাজার কিউসেক। কৃষকরা বলেন, পুরো মৌসুম সেচ প্রকল্প থেকে পানি না পাওয়ায বিদ্যুৎচালিত সেচপা¤প থেকে তাদের জমিতে পানি নিতে দ্বিগুণেরও বেশি ব্যায় হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা যায়, তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৬ সালে ১০ হাজার, ২০১৭ সালে ৮ হাজার, ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার, ২০১৯ সালে ৪০ হাজার, ২০২০ সালে ৪১ হাজার এবং ২০২১ ও ২০২২ সালে ৫৩ হাজার, ২০২৩ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। নদী নিয়ে গবেষণা বিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপর্লস এর সিনেটর ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, যেখানে তিস্তার পানিই অনিশ্চিত, সেখানে সেচ খাল সংস্কার করা অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই না। তিনি আরও বলেন, আগে নদীকে বাঁচাতে হবে তারপর সেচের কথা ভাবতে হবে। ব্যারেজের জলকপাট বন্ধ করে উজানের পানি সেচ কাজে লাগানোর জন্য ভাটিতে নদী মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে শুনেছি তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা।
বাস্তবে তিস্তাকে বাঁচানোর কোনো উদ্যোগ এখনো সরকার গ্রহণ করা হয়নি। আমরা চাই উত্তরা লকে মরুকরণের হাত থেকে বাঁচাতে সরকার দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, নির্বাচনের পূর্বে রংপুর জিলা স্কুল মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


























