যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে অস্ত্র স্থাপনের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়া। গতকাল মহাকাশে অস্ত্রের বিস্তারে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে জাতিসংঘে মস্কোর আনীত প্রস্তাবে ওয়াশিংটন ভেটো দেওয়ার পরে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারো প্রমাণ করেছে, মহাকাশের ক্ষেত্রে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য মহাকাশকে অস্ত্রমুক্ত রাখা নয়, বরং মহাকাশে অস্ত্র স্থাপন করা এবং এটিকে সামরিক সংঘর্ষের আখড়ায় পরিণত করা। বাহ্যিক মহাকাশকে যেকোনো ধরনের অস্ত্রমুক্ত রাখতে এবং এটিকে উত্তেজনা ও সশস্ত্র সংঘর্ষের আরেকটি ক্ষেত্র হয়ে উঠতে বাধা দেওয়ার জন্য চলমান প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে রাশিয়া।
এনডিটিভি জানিয়েছে, এই দুই পরাশক্তি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মহাকাশে অস্ত্র স্থাপনের জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন বলেছিল, তারা রাশিয়ার তৈরি করা একটি স্যাটেলাইটবিরোধী ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তখন মার্কিন মিডিয়াগুলো জানিয়েছিল, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের মিত্রদের সতর্ক করেছে যে, রাশিয়া মহাকাশের কক্ষপথে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করতে পারে। জবাবে মস্কো এই অভিযোগগুলোকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বলেছিল যে, তাদের কোনো স্যাটেলাইটে এই ধরনের কোনো সিস্টেম নেই। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনলো রাশিয়া। মস্কো বলেছে, ওয়াশিংটন মহাকাশে অস্ত্রের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে আগ্রহী নয়। এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেছেন, রাশিয়ার প্রস্তাব, যা সমস্ত দেশকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মহাকাশে সর্বদা অস্ত্র স্থাপন রোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানায়, সেটি আসলে একটি বিভ্রান্তি।
উল্লেখ্য, মহাকাশই হলো একমাত্র স্থান যেখানে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আক্রমণের মধ্যে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে এখনও সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশ একে অপরের ক্রু সদস্যদেরকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাদের মহাকাশচারীরা যৌথভাবে অবস্থান করে।
গত সোমবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে মিত্রদের সরাসরি জড়িত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এসময় রুশ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে প্রতিহত করতে এবং দেশটির সীমান্তের কাছে জড়ো হওয়া সামরিক সরঞ্জামগুলোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি চেয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমে মিত্র দেশগুলোকে এই যুদ্ধে আরও সরাসরিভাবে জড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। এটি ইচ্ছার ব্যাপার। তবে প্রত্যেকে এমন একটি কথা উচ্চারণ করে যা প্রতিটি ভাষায় একই রকম শোনায়: সবাই সংঘাত বৃদ্ধির ভয় পায়। ইউক্রেনীয়দের মৃত্যুর খবরে প্রত্যেকেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। প্রতিবেশী ন্যাটো দেশগুলোর চাইলে ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করতে পারেন। এ জন্য তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে আসা রুশ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
পশ্চিমা মিত্রদের অতিরিক্ত বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলছিলেন, আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য আমাদের কমপক্ষে ১২০-১৩০টি বিমান দরকার। রুশরা ইউক্রেনের ভূখণ্ডে ৩০০টি বিমান ব্যবহার করছে। ইউক্রেনে মার্কিন নকশাকৃত এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সেগুলো দেশটিতে পৌঁছাতে দীর্ঘ বিলম্ব হচ্ছে। দেশগুলো যদি সরাসরি বিমান সরবরাহ করতে না পারে তবে প্রতিবেশী ন্যাটো রাষ্ট্রগুলো থেকে তারা সেগুলো উড়াতে পারে এবং রুশ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে গুলি করতে পারে। সীমান্তে এবং রাশিয়ার আরও অভ্যন্তরে রুশ সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা করার জন্য আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে তাদের অস্ত্র ব্যবহার করা নিয়ে আলোচনা করছে ইউক্রেন। তবে এ নিয়ে ‘এখন পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি’ বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
২০২২ সালে ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে রাশিয়া। এর পর থেকে ইউক্রেনে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ করেছে দেশটি। ১০ মে খারকিভের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলে নতুন করে হামলা শুরু করেছে রুশ সেনারা। সেখানে দেড় বছরের মধ্যে বৃহত্তম আঞ্চলিক অগ্রগতি করেছে তারা।


























