◉প্রথম দশ মাসে রপ্তানিতে আয় ৮৭ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার
◉চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয় কমেছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ৪০ হাজার ডলার
◉চামড়া রপ্তানি আয় বেড়েছে ১ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলার বা ১০ শতাংশ
➤ রপ্তানি নীতিমালায় চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, এতে নতুন বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছে -মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সোহেল- সিনিয়র সহ-সভাপতি, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি)
➤ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে পারলে ২০২৬ সালের মধ্যে চামড়াজাত জুতা খাত কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হবে -আব্দুস সামাদ, সহকারী মহাব্যবস্থাপক, আকিজ ফুটওয়্যার লিমিটেড
দেশের রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। রপ্তানি আয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইতিবাচক ধারা থাকলেও চলতি অর্থবছরের দশ মাসে আগের অর্থবছরের তুলনায় কমেছে ১৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৮৭ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ১০০ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার। এতে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে খাতটি থেকে রপ্তানি আয় কমেছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ১৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ১০১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এরপরের অর্থবছরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ কমে রপ্তানি নেমে আসে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারে। এরপর থেকে ধারাবাহিক খাতটি থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৯৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে ১৮ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে ১২৪ কোটি ৫২ লাখ ডলার, আর সর্বশেষ অর্থবছরে (২০২২-২৩) রপ্তানি আয় হয়েছে ১২২ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।
অর্থবছরের দশ মাসে রপ্তানি আয়ের মধ্যে শুধু চামড়ার জুতা রপ্তানিতে চলতি বছরে আয় হয়েছে ৪৩ কোটি ৬ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৫৮ কোটি ৪ লাখ ডলার। এতে আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে আয় কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ। আর এই সময়ে সরকারের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। ফলে লক্ষ্যমাত্রা থেকে রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরে চামড়া রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১১ কোটি ৩৫ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একইসময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১০ কোটি ৩১ লাখ ডলারের। অর্থাৎ এ খাতে আয় বেড়েছে ১ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলার বা ১০ শতাংশ। আর সরকারের লক্ষ্যমাত্রা থেকে রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ২৯ শতাংশ।
চামড়াজাত পণ্য চলতি অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৩২ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরে একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৩২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অন্যদিকে এ পণ্যটিতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ।
চামড়া খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা এখনও শতভাগ পরিবেশসম্মত হয়ে ওঠেনি। বিশেষ করে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীকে পরিবেশসম্মত হিসেবে গড়ে তোলা। এ খাতের পুরো প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম পরিবেশসম্মত হওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে স্বীকৃতি পেতে হবে। তবেই এ খাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানি আয় বাড়ানো যাবে।
এ বিষয়ে লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সোহেল বলেন, ইউরোপ অঞ্চলের মানুষ চামড়াজাত সামগ্রী বিলাসবহুল পণ্য কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় রপ্তানি কমেছে। আর সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে (সিইটিপি) লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেট না থাকায় বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো স্থানীয় চামড়া নেয় না। এছাড়া রপ্তানি নীতিমালায় চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে ,এতে নতুন বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছে।
ধারাবাহিক রপ্তানি আয় বেড়ে যাওয়ার পর চলতি অর্থবছরে কমে যাওয়ার বিষয়ে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা দিলীপ কাজুরি বলেন, রপ্তানি আদেশ কমায় চামড়াজাত পণ্যে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে পড়ছে। এছাড়া ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হারের কারণে ওভারহেড খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা রপ্তানি আয়কে বাধাগ্রস্ত করছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনি-ইসরাইল যুদ্ধ প্রভাবে রপ্তানিমুখী দেশগুলো থেকে রপ্তানি আদেশ কমেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আকিজ ফুটওয়্যার লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদ বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো মোকাবিলা করতে পারলে ২০২৬ সালের মধ্যে চামড়াজাত জুতা খাত কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হবে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, দেশে চামড়ার বড় রপ্তানি বাজার হচ্ছে চীন। এরপরের অবস্থান যথাক্রমে রয়েছে ইতালি, স্পেন, ভিয়েতনাম, হংকং, জাপান ও ভারত। এছাড়া তাইওয়ান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া, পর্তুগাল ও তুরস্কে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে চামড়া যায় বাংলাদেশ থেকে। আর তৈরি চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয় ইতালিতে। এছাড়া জাপান, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, হংকং, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়।






















