◉নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা
◉৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ বছরে নির্মাণ করা হবে ১০ তলা মার্কেট
◉বঙ্গবাজার, শিশুপার্কসহ ৪ প্রকল্প আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
গত বছরের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় রাজধানীর সবচেয়ে পুরোনো ও জনপ্রিয় পাইকারি কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজার। অগ্নিকাণ্ডে নিজেদের সব হারিয়ে পথে বসেন ব্যবসায়ীরা। পুড়ে যাওয়া মার্কেটের খালি জায়গায় চৌকি বসিয়ে ব্যবসা করছেন তারা। পুড়ে যাওয়া পুরাতন বঙ্গবাজারকে আধুনিক বহুতল বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপ দিতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ১০ তলাবিশিষ্ট ভবনের সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৮ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এই বিপণিবিতানের নির্মাণকাজ ২০২৮ সালে শেষ হতে পারে।
আজ বেলা ১১টায় বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চারটি বড় প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে এরই মধ্যে নানা প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বঙ্গবাজার ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট পর্যন্ত আট সারির ইনার সার্কুলার রিং রোডের নির্মাণকাজ, ধানমন্ডি লেকের নজরুলসরোবরের নির্মাণকাজ এবং শাহবাগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্কের আধুনিকায়নের কাজ।
বঙ্গবাজার মার্কেটটি মূলত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, আদর্শ ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও গুলিস্তান ইউনিট নিয়ে গঠিত ছিল। গত বছরের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সবগুলো মার্কেটই পুড়ে যায়। এছাড়া মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, এনেক্সকো টাওয়ার, বঙ্গ হোমিও মার্কেট এবং বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের কিছু অংশও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে তিন হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৩০৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ডিএসসিসি সূত্র বলছে, ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’ নির্মাণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছে ৩৩৮ কোটি টাকা। ১০ তলা বিশিষ্ট ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর ও বেজমেন্ট ছাড়াও থাকবে মোট আটটি ফ্লোর। ১.৭৯ একর জায়গার ওপর নির্মিত হতে যাওয়া বহুতল ভবনে থাকবে তিন হাজার ৪২টি দোকান। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০-১০০ স্কয়ার ফুট। ভবনটিতে থাকবে আটটি লিফট, এর মধ্যে চারটি থাকবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য। আর বাকি চারটি কার্গো লিফট থাকবে মালামাল ওঠা-নামানোর জন্য। এছাড়া থাকবে গাড়ি পার্কিং, খাবারের দোকান, সমিতির অফিস, নিরাপত্তা কর্মী এবং সেখানকার কর্মীদের আবাসন ব্যবস্থা। এর আগে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এ ভবন নির্মাণের জন্য নকশা প্রণয়ন করে।
১০ তলাবিশিষ্ট আধুনিক এ ভবনে থাকবে বেজমেন্ট ও গ্রাউন্ড ফ্লোর। গ্রাউন্ড ফ্লোরে মোট ৩৮৪টি, প্রথম তলায় ৩৬৬টি, দ্বিতীয় তলায় ৩৯৭টি, তৃতীয় তলায় ৩৮৭টি, চতুর্থ তলায় ৪০৪টি, পঞ্চম তলায় ৩৮৭টি, ষষ্ঠ তলায় ৪০৪টি ও সপ্তম তলায় ৩১৩টি দোকান থাকবে। এছাড়া অষ্টম তলায় দোকান মালিক সমিতির অফিস, কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীদের আবাসনের ব্যবস্থা রাখা হবে। ভবনের পার্কিংয়ে একসঙ্গে প্রায় ১৮৫টি গাড়ি ও ১১০টি মোটরসাইকেল পার্কিং করা যাবে। ভবনটিতে ২২টি খাবারের দোকান রাখা হবে। সেইসঙ্গে নকশায় আরও ৮১টির বেশি দোকান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০-১০০ স্কয়ার ফুট।
বঙ্গবাজারের নিউ কালেকশন দোকানের মালিক ইমন আহমেদ বলেন, বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ার পর এখানকার ব্যবসায়ীরা বলতে গেলে সবাই পথে বসে গেছেন। পরে টিকে থাকার লড়াইয়ে এখানে খোলা আকাশের নিচে আমারা ব্যবসা পরিচালনা করেছি। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, জলাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা এখানে ব্যবসার আশায় বসে থেকেছি। এই অবস্থায় নতুন বহুতল ভবনের কাজ শুরু হওয়ার খবর অবশ্যই আমাদের আনন্দের তবে আমাদের দাবি একটাই, যারা যোগ্য, যারা এখানেই ব্যবসা করে আসছেন সারা জীবন ধরে, তারাই যেন মার্কেটে দোকান বরাদ্দ পান।
ডিএসসিসি সূত্র বলছে, পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট গেট পর্যন্ত আট সারির ইনার সার্কুলার রিং রোডে নির্মাণকাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৯৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকার এই প্রকল্পের আওতায় ১০ কিলোমিটার নর্দমা, ১০ কিলোমিটার পথচারী হাঁটার পথ, তিনটি ভেহিকেল ওভারপাস, তিনটি পথচারী পারাপার সেতু, দুই কিলোমিটার সংরক্ষণকারী দেয়াল, তিনটি মসজিদ, ছয়টি যানবাহন বিরতির স্থান ও ছয়টি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হবে।
নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ধানমন্ডি লেকে নজরুলসরোবর নির্মাণ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। শনিবার এই কাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া শাহবাগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্কের আধুনিকায়নের কাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাহবাগে জিয়া শিশুপার্কের নতুন নাম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক করা হয়েছে। প্রায় ৬০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই শিশুপার্কের আধুনিকায়নের কাজ করা হবে।






















