◉ দেশটিতে গেল ৫০ সদস্যের টিম
◉চলতি মাসেই চীন যান ১৪ দলের প্রতিনিধিরা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। বিপরীতে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটেছে কয়েক যোজন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি যেখানে ছিলো বৈরি, সেখানে চীনের পক্ষ থেকে পূর্ন সমর্থন ছিলো সরকারের প্রতি। নির্বাচনের ৪ মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভুল বোঝাবুঝি দূরে রেখে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা নিয়ে ঢাকা সফর করেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তবে তাতে আওয়ামী লীগের চীনমুখী তৎপরতায় প্রভাব পড়েনি কোনো। ডোনাল্ড লু’র সফরের সময় চীন সফরে ছিলেন ১৪ রদলের প্রতিনিধি দল। যদিও কয়েক বছর ধরেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে চীন সফর করছেন ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা। তবে এবার তাঁদের চীন সফর বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রমতে, গতকাল চীনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ৫০ সদস্যের একটি দল। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়ের নেতৃত্বে এই সফরে থাকবেন আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সদস্যরা। সফর শেষে আগামী ৫ জুন তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
এরআগে ডোনাল্ড লু যখন ঢাকায়, তখন চীন সফরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা। গত ১৩ মে চীনের উদ্দেশ্যে ঢাক ছাড়েন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের ৯ সদস্যের একটি দল। তাদের মধ্যে ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ শীর্ষ নেতারা ।
এছাড়াও দলীয় সূত্র বলছে, ২৫ জুন আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের ১০ সদস্যের আরেকটি দলের চীন সফরের কথা রয়েছে। এই দলটির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্যাহকে।
গতকাল চীন সফরে যাওয় দলটির নেতৃত্বে থাকা তানভীর শাকিল জয় বলেন, চীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে আমরা চীন সফরে যাচ্ছি। সফরটি প্রশিক্ষণ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে হচ্ছে। যার মূলে থাকবে রাজনৈতিক নানা বিষয়। বিশেষ করে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গঠনতন্ত্র, দল কীভাবে চলে, তারা তৃণমূলে কীভাবে কাজ করে, সেসব ব্যাপারে জানা। এছাড়া চীনের সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় হবে।
১৪ দলের বামপন্থী শরিকদের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আগে থেকেই একধরনের যোগাযোগ ছিল। নেতাদের সফরও নিয়মিত হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গেও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সখ্য বেড়েছে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আগ্রহই বেশি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছর দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের এক বা একাধিক প্রতিনিধি দল চীন সফরে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে একাধিক সফরের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু। তাদের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খানকে দুইবার চীন সফরে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
আওয়ামী লীগ ও জোট নেতারা বলছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে তারা দেশটিতে যাচ্ছেন। জোটের বাম নেতারা প্রায় প্রতি বছরই চীন সফরে যান। চলতি বছর কয়েক ধাপে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা সফরে যাবেন, তাদের এই চীন সফর একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটিকে অন্য কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে দেখার মতো কোনও কারণ নেই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা বাংলাদেশমুখী, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। আমাদের দলের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্ক করতে চায়। তারা নিমন্ত্রণ জানিয়েছে আমাদের প্রতিনিধি দল যাচ্ছে, এতে দোষের কিছু নেই। এর মাধ্যমে চীনমুখী বলা যায় না, বিষয়টি দৃষ্টিভঙ্গিগত।
























