হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় চার বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ১৯ কোটি টাকা দামের দুটি ক্যাথল্যাব।আর ১৮ কোটি টাকা দামের এমআরআই মেশিনটি স্থাপন করা হলেও সেটিও অলস পড়ে আছে। আর হাসপাতালে থাকা তিনটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের মধ্যে দুটি চালু থাকলেও একটি বন্ধ রয়েছে। এটি মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্র। অলস পড়ে আছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের এসব আধুনিক যন্ত্রপাতিগুলো। সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার মানুষ। ফলে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে অন্যত্র এসব সেবা নিচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ট্রেড হাউস ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এইচটিএমএস প্রতিষ্ঠান দুটি ক্যাথল্যাব সরবরাহ করে। ক্যাথল্যাবের ওয়াশরুম তৈরি না হওয়া ও দক্ষ জনবল সংকটে এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং বসানোর মেশিন চালু করা সম্ভব হয়নি। আর ১৮ কোটি টাকা দামের এমআরআই মেশিনটি স্থাপন করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস। কারিগরি ত্রুটির কারণে তিন বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি সুক্ষ রোগ নির্ণয়ের এই মেশিনটিকে। অপরদিকে, হাসপাতালে থাকা তিনটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের মধ্যে দুটি চালু থাকলেও একটি বন্ধ রয়েছে।
ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি ইউনিয়নের গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের উজ্জ্বল হোসেন বুকের ব্যাথা নিয়ে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভর্তি হন কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজী বিভাগে। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি চলে যান। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, অসুস্থ হয়ে চারদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর আমি আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়েছি। কিন্তু এখানে আসার পর জানতে পারলাম এই হাসপাতালে এনজিওগ্রাম মেশিন আছে কিন্তু সেটির কার্যক্রম বন্ধ। যদি আমার এই পরিক্ষাটি করতে হতো তাহলে এই অসুস্থ শরীর নিয়ে আমায় ঢাকায় ছুটতে হতো। তাই এই সেবাটি দ্রুত চালু করা হোক।
মানিকগঞ্জের পশ্চিম দাশড়া এলাকার স্কুল শিক্ষক আতিয়া সুলতানা জানান, আমার নানা সমস্যার কারণে চিকিৎসক আমাকে এমআরআই পরিক্ষা করার জন্য বলেন। তারপর আমি সেই পরিক্ষা করার জন্য কর্ণেল মালেক মেডিকেল হাসপাতালে আসলে জানতে পারি এমআরআই মেশিন আছে কিন্তু সেটির কার্যক্রম বন্ধ। পরে সাভারে যেয়ে সেই পরিক্ষা করাই। সরকারি হাসপাতালে এই পরীক্ষা করাতে পারলে আমার টাকা ও ঝামেলা অনেক কম হতো।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা গরীব মানুষ। কোন রোগব্যাধি হলে আমাদের একমাত্র ভরসা সরকারি হাসপাতাল। অনেক কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে সম্ভব। তাই সরকারের কাছে নিবেদন সকল পরিক্ষা-নিরিক্ষার ব্যবস্থা এখানে করা গেলে তাহলে বড় রোগের জন্য ঢাকায় ছোটাছুটি করতে হবেনা।
কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, আমাদের হাসপাতালে হৃদরোদে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ৮০টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ২১ শয্যার সিসিইউ, ১৯ শয্যার পোস্ট সিসিইউ ও ৪০ শয্যার সাধারণ ওয়ার্ড আছে। তবে, ৪০ শয্যার সাধারণ ওয়ার্ড চালু না থাকায় ৪০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে পারে না। আর আমরা চাইলেও শয্যার ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি করতে পারিনা। হাসপাতালে ক্যাথল্যাব দুটি চালু হলে এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং বসানোর চিকিৎসা শুরু করা যাবে।
হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, হাসপাতাল শুরুর দিকে এমআরআই মেশিনটি চালু করা হয়েছিল। মেশিনটি গরম হয়ে যাওয়ার কারণে পরামর্শক টিমের সুপারিশে সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ মেশিন দিয়ে একজন রোগীকেও সেবা দেওয়া যায়নি। অপরদিকে, হাসপাতালের জন্য তিনটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের মধ্যে দুটি চালু থাকলেও একটি বন্ধ রয়েছে। এটি চালু থাকলে আরো বেশি পরিমাণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হতো।
কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমি সম্প্রতি এই হাসপাতালে পরিচালক পদে যোগদান করেছি। যোগদানের পরেই আমি বন্ধ থাকা ক্যাথল্যাব, এমআরআই, আইসিইউ ও একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন চালুর জন্য কাজ শুরু করেছি। আমাদের দুইটি ক্যাথল্যাবের একটির ওয়াশরুম তৈরি বাকি রয়েছে। এরজন্য তিনজন নার্স ও দুজন টেকনিশিয়ানকে ঢাকায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার পরই ক্যাথল্যাব দুটি শিগগির এটি চালু করা হবে।


























