➤অনিশ্চয়তায় ভিসাধারী ৩০ হাজার কর্মী
➤দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ শেষ আজ
➤উচ্চমূল্য দিয়েও মিলছে না এয়ার টিকিট
➤সময় বাড়াতে কূটনৈতিক উদ্যোগ চান বায়রা নেতারা
➤দেশে ফেরার অপেক্ষায় অবৈধ কর্মীরা
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির দ্বিতীয় বৃহত্তম মালয়েশিয়ার বাজার। দেশটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও কর্মী যাওয়ার সুযোগ শেষ হচ্ছে আজ। এরপর আর কোনো কর্মী দেশটিতে ঢুকতে পারবে না। এজন্য শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ভিসা পেয়েও নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হতে পারে বলে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন। কারণ সিন্ডিকেটের কারণে উচ্চমূল্য দিয়েও মিলছে না এয়ার টিকেট। এ অবস্থায় কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে অন্তত একমাস সময় বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বায়রা নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব এম টিপু সুলতান সবুজ বাংলাকে বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শেষ হচ্ছে শুক্রবার। তবে ফ্লাইট সংকটের কারণে প্রায় ৩০ হাজার ভিসাধারী কর্মী যেতে পারবেন না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে চার/পাঁচটি এয়ারলাইন্স মালয়েশিয়ায় যাত্রী বহন করে। আগে যেখানে ২৫-৩০ হাজার টাকায় কুয়ালালামপুরের এয়ার টিকিট পাওয়া যেত এখন সেই টিকিটের মূল্য দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের টিকিটের দামও ৮০-৯০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এত উচ্চমূল্য দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না টিকিট। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাতে চাই যে, বিশেষ কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে ভিসাধারীদের মালয়েশিয়ায় যেতে অন্তত এক মাস সময় বাড়ানো হোক।
এর আগে বেশ কিছু দিন ধরে প্রচারিত প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু অভিবাসী কর্মীগণকে জানানো হয় যে, বর্তমান কোটার আওতায় মালয়েশিয়ান সরকার বাংলাদেশসহ ১৪টি কর্মী প্রেরণকারী দেশ হতে ৩১ মে এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। এমতাবস্থায়, মালয়েশিয়ায় গমনেচ্ছু অভিবাসী কর্মীদেরকে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ই-ভিসা, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর বহির্গমন ছাড়পত্র এবং এয়ারলাইন্সের ভ্রমণ টিকিটসহ যাবতীয় ডকুমেন্টের সঠিকতা যাচাই-বাছাইপূর্বক মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ করা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, সরকার কর্তৃক মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। এর অতিরিক্ত অর্থ লেনদেন না করার এবং কোনো উপযুক্ত ডকুমেন্ট/রশিদ বা ব্যাংক হিসাব ব্যতিত অন্য কোনোভাবে উক্ত লেনদেন না করার জন্যও অনুরোধ করা হলো। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ান সরকার কর্তৃক সময় বৃদ্ধি বা নতুন কোটা প্রদান করা হলে তা যথাযথভাবে অবহিত করা হবে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম গত বুধবার জানান, মালয়েশিয়া আগামী ৩১ মে থেকে বাংলাদেশসহ সব বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ ১৫টি সোর্স কান্ট্রি থেকে কর্মী নিয়োগ করে মালয়েশিয়া। এই ডেডলাইনের পর কোনো দেশ থেকেই কর্মী নেবে না তারা। অবৈধ বিদেশি কর্মী নিয়ন্ত্রণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর ভবিষ্যতে চাহিদার ভিত্তিতে বাংলাদেশসহ ১৫টি উৎস দেশ থেকে কর্মী নেবে। মালয়েশিয়া অভিবাসন ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণে বদ্ধপরিকর। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নৈতিক মানদণ্ড বজায় রেখে কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়া অঙ্গীকার করেছে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার শেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত চন্দ্র হালদার সবুজ বাংলাকে বলেন, শুক্রবার কর্মী যাওয়া শেষ হবে। আশাকরছি ভিসাধারী সবাই চলে যাবেন। গত এক মাস ধরে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। কর্মীদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্লাইটও বাড়ানো হয়েছে। তবে শেষ দিন পরই বাস্তব তথ্য জানা যাবে। কারণ কর্মী পাঠানোর দায়িত্ব রিক্রুটিং এজেন্সির, মন্ত্রণালয়ের জন্য।
এদিকে ঢাকা বিমানবন্দরে অবস্থিত প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ জানান, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার শেষ দিন শুক্রবার হওয়ায় বিমানবন্দরে কর্মীদের ব্যাপক চাপ হচ্ছে। তবে কিছু কর্মী থাইল্যান্ডের ট্রানজিট ভিসার টিকিট কাটায় মালয়েশিয়ায় যেতে পারছেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সূত্রমতে, প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুললে কর্মী পাঠানোর জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের দায়িত্ব পায় মালয়েশিয়া। তাদের কাছে ১ হাজার ৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠিয়েছিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কিন্তু বেছে নেওয়া হয় মাত্র ২৫টিকে। এজেন্সি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নীতিমালা ছিল না। এ ক্ষেত্রে প্রভাব খাটানো ও ঘুষ লেনদেনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ওদিকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকেই মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ পাচ্ছেন না। কেউ কেউ ঋণ করে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসছেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে গত ১৯ এপ্রিল জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) ওয়েবসাইটে এক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) গত দেড় বছরে মালয়েশিয়া যেতে প্রায় সাড়ে চার লাখ কর্মীর ছাড়পত্র দিয়েছে।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের চার মাসে বিদেশে ৩ লাখ ২২ হাজার ২৩৭ জন কর্মীর মধ্যে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৪৪ হাজার ৭২৭ জন। সবচেয়ে বেশি গেছেন সৌদি আরবে ৫৩ শতাংশ। এরপরই দ্বিতীয় অবস্থানে ১৪শতাংশ কর্মী গেছেন মালয়েশিয়ায়। বৃহৎ এ জনশক্তির বাজার বন্ধ হয়ে ওয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে তাই চরম হতাশা বিরাজ করছে।
বাংলাদেশিদের জন্য আংশিকভাবে ভিসা চালু করছে ওমান : ওমান সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ১২ ক্যাটাগরিতে ভিসা চালু করবে। বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব ওমানের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক এ কথা জানিয়েছেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা প্রদান স্থগিত করে ওমান। এর পর থেকে দেশটিতে বাংলাদেশিদের যাওয়া ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে বাংলাদেশি নাগরিক যাওয়ার সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ২০১।

























